Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং শিল্পী



ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট জৌলুস ঠিক আগের মতো নেই। দিনে দিনে রঙ হারিয়ে ফিকে হয়ে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকান মহাদেশের এই ক্রিকেট খেলুড়ে দেশটির। দেশ বললে ভুল হবে, কয়েকটি ছোট ছোট স্বাধীন দ্বীপ মিলে একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে খেলে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজই উত্তর আমেরিকা মহাদেশের এক মাত্র টেস্ট ক্রিকেট খেলুড়ে দল। দলটির বর্তমান হাল দেখে কে বলবে এক সময় এই দলটি পুরো ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করত, কে বলবে এক সময় গ্রেটেস্ট কিংবদন্তী স্যার ভিভিয়ান রির্চাডস, গ্যারি ফিল্ড সোর্বাস, কার্টলে অ্যামব্রোস, ম্যালকম মার্শালদের, ব্রয়ান লারাদের মতো গ্রেট ক্রিকেটাররা দলটিতে খেলেছিলেন। খেলার পারফর্মে অধারাবাহিকতা এবং বড় তারকা না থাকার কারণে দিন দিন এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ক্রিকেট খেলার প্রসার কমে যাচ্ছে । কারণটা না হয় পরে বলা যাবে, আজকে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন কিংবদন্তী খেলোয়াড়কে নিয়ে আলাপ করা যাক। তাকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে এবি ডি ভিলিয়ারস কিংবা হালের সেনসেশন বিরাট কোহলির মতো মাতামাতি হয় না। তিনি নীরবে তার কাজটা ঠিকই করে যাচ্ছেন এবং মাঠে ঠিকই প্রমাণ করছেন কেন তিনি সর্বকালের সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজদের মধ্যে একজন। তিনি যদিও গেইল,পোলার্ডেরের মতো কোন দানবীয় ব্যাটসম্যান না যে এক ওভারে খেলার মোর ঘুরিয়ে দিতে পারে, কিংবা তার ব্যাটিং এ শচীন, লারা, পন্টিং দের মতো শৈল্পিক প্রতিভা নেয়। তিনি শ্রমিক ব্যাটসম্যান যিনি পরিশ্রম দিয়ে ব্যাটিংটাকে শিল্প বানিয়েছেন, বলছি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান শিবনারায়ণ চান্দারপলের কথা।

১৯৭৪ সালের ১৬ আগস্ট গায়ানাতে জন্মগ্রহণ করেন ৪০ বছর ২৮৫ দিন বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তাকে বর্তমান সময়ের সেরা টেকনিক্যালি টেস্ট ব্যাটসম্যান মানা হয়ে থাকে। তার সাথের সমসাময়িক ব্যাটসম্যানরা যখন “দেখো আর মারো” পন্থা অবলম্বন করে খেলে তখন চান্দারপল “বল দেখে লিভ করো” পন্থা অবলম্বন করে খেলেন। তার এই ধীর গতির টেস্ট মেজাজের ব্যাটিং তার খেলার সৌন্দর্য। তার জন্মই যেন টেস্ট খেলার জন্য হয়েছে। তিনি ব্যাট হাতে নিরব ঘাতক । চান্দারপলের সৌন্দর্য হল তিনি ক্রিস গেইল কিংবা পোলার্ডের মতো দানবীয় ব্যাটিং ধারা বোলার খুন করেন না, চান্দারপল বরং আসতে আসতে ঠিক কিং কোবরা সাপ যেমন তার শিকারকে ধীরে ধীরে দম বন্ধ করে খুন করেন ঠিক তেমনি নিজের ইনিংসে বড় করে বিপক্ষ দলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি এমন ভাবে ধীরে ধীরে তার ইনিংসটাকে টেনে বড় করেন বিপক্ষ দল অনেক সময় বুজতেই পারে না এবং দেখা যায় তিনি সেট হয়ে তার ইনিংসটাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন । তিনি একবার উইকেটে সেট হয়ে গেলে টাকে আউট করা অনেক কষ্ট হয়ে পারে, মাঝে মাঝে বোলাররা চান্দারপলকে আউট করতে না পেরে ফ্রাস্টেট হয়ে পরে। একজন শ্রমিক যেমন একটি, দুইটি ইট দিয়ে বড় বড় ইমারত তৈরি করে চান্দারপলও তেমনি একটি দুইটি করে রান নিয়ে তার ইনিংস বড় করেন ।

চান্দারপল প্রমাণ করেছেন ক্রিকেট ব্যকারণের বাইরে থেকেও টেস্ট ব্যাটিং করা যায়।২০০০ সালের একটি এক্সিডেন্টের পর থেকে চান্দারপল অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের মতো স্বাভাবিক ব্যাটিং স্ট্যান্ড নিয়ে পারেন না । অনেকটা ৪৫ ডিগ্রি কোণ হয়ে তিনি তার স্ট্যান্ড নিয়ে থাকেন। এই কারণে তিনি অন্য ব্যাটসম্যানদের মতো “ভি” এরিয়া অথবা ফ্রান্ট ফুটে এসে খেলতে পারেন না। শর্ট খেলার জন্য তিনি বলের লাইনে গিয়ে সফট হ্যান্ডে বলটাকে কভার কিংবা এক্সট্রা কভারের দিকে ঠেলে দেন। এছাড়া তিনি ভালো পুল এবং হুক শর্টও খেলতে পারেন। অন সাইডে খেলার জন্য তিনি বলের লাইনে গিয়ে বলটাকে কব্জির মোচরে মিড উইকেটের দিকে ঠেলে দেন। ব্রয়ান লারা যখন তার ঈশ্বর প্রদত্ত ব্যাটিং ট্যালেন্ট দিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে মোহে ফেলে রেখেছিলেন তখন চান্দারপল তার শ্রমতুল্য ব্যাটিং দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন প্রতিভা ছাড়াও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিসের ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পেছনে চান্দারপলের মুখ্য ভূমিকা ছিল। ব্রয়ান লারার পর ২য় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান হিসাবে শিব চান্দারপল ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১০৩ রানের মাধ্যমে তার ক্যারিয়ারের দশ হাজার রানের মাইল ফলক স্পর্শ করেন। ২০০৫ সালে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিস দলের অধিনায়ক করা হয়েছিল। অধিনায়কত্বের চাপ তার ব্যাটিংএ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল যার কারণে ঠিক এক বছর পর ২০০৬ সালে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিস দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন। চান্দারপল এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ (জাতীয় দল), গায়ানা (১ম শ্রেণী ), ডার্বিশায়ার (কাউন্টি) , দুরহাম (কাউন্টি), লঙ্কাশায়ার(কাউন্টি),­ খুলনা রয়েল বেঙ্গলস (বিপিএল), রয়েল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরুসহ (আইপিএল) আরও অনেক দলের হয়ে খেলেছেন।

এক নজরে চান্দারপলের টেস্ট স্ট্যাটাস-
ম্যাচ-১৬৪ ইনিংস-২৮০ রান-১১,৮৬৭ গড়-৫১.৩৭ সর্বোচ্চ-২০৩ (অপ.) হাফসেঞ্চুরি-৬৬ সেঞ্চুরি-৩০ স্ট্রাইক রেট-৪৩.৩১ ক্যাচ- ৬৬