Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Lifestyle Image

লাইফ স্টাইল - বেঁচে থাকার উপায়



লাইফস্টাইল হচ্ছে মূলত বেঁচে থাকার উপায়। এর মাধ্যমে একটি আদর্শ পন্থা নির্ণীত হয় যা একজন ব্যক্তি, গ্রুপ বা সংস্কৃতি কিভাবে চলবে তা বের করা যায়। ইংরেজী Lifestyle শব্দটি অস্ট্রিয়ান মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড এ্যাডলার (১৮৭০-১৯৩৭) সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। শব্দটি প্রথমে আধুনিকতাবাদী শিল্প শৈলী হিসেবে ব্যবহৃত হত যা দ্বারা বাস্তব বিষয়ের সংমিশ্রণ বোঝান হয়। এটি দ্বারা মানুষের ব্যক্তিগত মান, পছন্দ, এবং বহিবারণ প্রকাশ পায় বা মানুষ মানসিকভাবে কতটা রুচিশীল তা বোঝা যায়।

গ্রামের পরিবেশ থেকে শহরের পরিবেশ অবশ্যই আলাদা। জীবনযাত্রার মান, পদ্ধতি ইত্যাদিতে গ্রাম ও শহরের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য। নির্দিষ্ট জায়গার জীবনযাত্রার পদ্ধতির সাথে মানুষের জীবনও প্রভাবিত হয়। আশেপাশের পরিবেশের সাথে নিজেকে মিলিয়েই মানুষ জীবন ধারণ করতে পারে। এবার এই জীবনযাত্রা ভৌগলিক কারণেও ভিন্ন হতে পারে। যে দেশে মরুভূমি আছে সে দেশের জীবনযাত্রা আর নদীমাতৃক দেশের জীবনযাত্রা অবশ্যই ভিন্ন হতে বাধ্য। আবার সাগরের কাছাকাছি অঞ্চলে যারা বাস করেন তাদের জীবন পদ্ধতি আবার ভিন্ন রকমের। এমনকি পোশাক, খাদ্য ইত্যাদিও ভিন্ন হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট জায়গার লাইফস্টাইল আবার দিন বদলের সাথে পাল্টাতে থাকে। যেমন মানুষ একসময় ঢোলা প্যান্ট পছন্দ করলেও এক যুগ পর তা পছন্দ নাও করতে পারে। এই পরিবর্তনের সময় কত হবে তা নির্ণয় করা কঠিন।

যেকোন জীবনধারায় সাধারণত কোনো ব্যক্তির মনোভাব, মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রতিফলিত হয়। অতএব, কোন জীবনধারা হচ্ছে একজন মানুষের ব্যক্তিগত ধারণা যা ব্যক্তিগত পরিচয়ের সাথে অনুরণিত হয়ে তার সাংস্কৃতিক চিহ্ন তৈরি করে। এটি মানুষ সামাজিক এবং প্রযুক্তগত বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সামাজিক নৈতিকতা, মূল্যবোধ তৈরি হয় যা থেকে অন্যায় কাজকে চিহ্নিত করতে সক্ষম।এইজন্যে একই দেশে থেকেও মানুষের জীবনযাত্রা একরূপ হয় না। পরিবেশগত কারণে হোক অথবা ভৌগলিক কারণেই হোক, মানুষ এর মাধ্যমেই ভালো-খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়।



লাইফস্টাইল এর মধ্যে রাজনীতি, ধর্ম , স্বাস্থ্য, অন্তরঙ্গতা , এবং আরো অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ভাবধারাই কারো জীবনধারা গঠন করার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এমনকি একজন মানুষের স্বাস্থ্যও তাদের জীবনধারা এর উপর অনেকটা নির্ভরশীল। কোনো ব্যক্তির জীবন ধারণের জন্যে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন এমন অনেকেই আছেন যারা স্বাস্থ্যবিধি মানেন, সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ করেন, নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় ধরে ব্যায়াম করেন অর্থাৎ স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা কাটান তারাই জীবনে সুখী হন। মানসিক অসুস্থতা জীবনধারা কারণেও ঘটতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়; বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার মাধ্যমে একজন মানুষ অসুস্থ হতে পারে।

মজার কথা হচ্ছে একটি সুস্থ বা অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাল্টায় এবং বয়ে নিয়ে যায়।Case et al. (2002) এর সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ০-৩ বছর বয়সী বাচ্চাদের মা যদি সুস্থ জীবনযাত্রা অধিকারিণী হন তবে শিশুদের সেই জীবনধারাকে বেছে নেওয়ার সম্ভবনা ২৭%। আবার যে শিশুগুলোর বাবা মা বেশি আয় করেন তাদের শিশুরা ভাল জৈব খাদ্য খায়, অবসর বিনোদন ইত্যাদির সুযোগ পায় ফলে তারা উন্নত জীবনযাত্রার অধিকারী হয়। অন্যদিকে স্বপ্ল আয়ের পিতামাতার শিশুরা দারিদ্র্য সংক্রান্ত চাপ ও বিষণ্নতা অনুভব করে। ফলে এসব চাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা শুরু করে। তাই এটা বলা যায় মাতা পিতাই শিশুকে জীবনযাত্রা শেখানোর প্রথম শিক্ষক যার মাধ্যমে পরবর্তীতে তা তাদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।

প্রথমদিকে বলা হয়েছিল, গ্রাম ও শহরের মধ্যে জীবনযাত্রার আকাশ পাতাল তফাতের কথা। বাংলাদেশে এই পার্থক্যটি অনেক বেশি। যেমন, গ্রামের মানুষরা সকালে ঘুম থেকে আগে উঠে এবং রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাই। কিন্তু শহুরে মানুষেরা দেরি করে উঠে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে পছন্দ করেন। গ্রামীণ মানুষেরা সাধারণত দেশীয় জিনিসপত্র, কালচারে অভ্যস্ত কিন্তু শহুরে মানুষেরা দিন দিন ওয়েস্টার্ন কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

এরকম অসংখ্য পার্থক্য রয়েছে। একজন মানুষ পরিবেশ ও ভৌগলিক কারণে প্রভাবিত হয়ে নিজেই নিজের জীবনযাত্রা ঠিক করেন এবং তিনি সেটিকেই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মনে করেন।