গেন্দু মাঝি নদীতে খেয়াপারাপারের কাজ করেন ষাটের দশক থেকে। ৭১ এ বৈঠা হাতেই নেমেছিলেন যুদ্ধে। নদী তার জীবনকে দিয়েছে সময়ের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা; সেই সঙ্গে দিয়েছে বেঁচে থাকার আশ্বাস। কালের বিবর্তনে নদীর উপর তৈরি হয়েছে দীর্ঘ সেতু। যোগাযোগের এবং নদী পারাপারের মাধ্যম এখন সেই সেতু, সঙ্গত কারণেই গেন্দু মাঝির নৌকার আরোহী কমে শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু তাঁর জীবনের সঙ্গে এখন যে জড়িয়ে আছে আরো দু’টি জীবনের গল্প; তার দুই মেয়ে পারুল এবং শিউলী। আবার শুরু হয় তার এক নতুন যুদ্ধ। এবারের যুদ্ধে সহযোদ্ধা তাঁর বিধবা কন্যা পারুল, যার জীবন নিয়ে গ্রামের লোকের মাঝে রয়েছে নানান সংশয়। দারিদ্রতার বিপক্ষে টিকে থাকার সমস্ত চেষ্টা শুরু করেন গেন্দু মাঝি। কখনও রিকশা চালানো, কখনও ইটের ভাটায় কাজ, কখনও বা কারো গোমস্তা। কিন্তু সবকটি কর্মস্থলে কর্তৃত্বস্থানীয় জায়গায় রয়েছে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের শক্তিশালী প্রভাব। একজন যোদ্ধা হয়ে ঘৃন্য এই নরপিশাচদের সঙ্গে সমঝোতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না গেন্দু মাঝি। বাবার বিশ্বাস এবং জীবনবোধের এই বিপর্যস্ততা মানতে চায় না মেয়ে পারুল। দীর্ঘ অভাবময় জীবন কখনই পারুলের দৃঢ়তাকে ভাঙ্গতে পারেনি। কিন্তু বাবার পরাজয়ের সম্মূখীনতা আঘাত হানে পারুলের চেতনায় এবং জীবন ধারায়। অদৃশ্য এক দ্বন্দ শুরু হয় জীবনের প্রয়োজন এবং মূল্যবোধের মাঝে। নীরব এক প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে পারুল। অন্ধকার এক মধ্য রাতে স্বর্গীয় আলোর পথে শুরু হয় পারুলের অনির্দিষ্ট যাত্রা...
এমনি একটি বিষয়বস্তু নিয়ে প্রসূন রহমানের রচনা এবং রাজারাজ ও শাহাদাত সাহেব এর যৌথ পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বৈঠা’। স্বাধীনতার চেতনা এবং জীবনের টানাপোড়েন, সেই সঙ্গে আবহমানকালের বাস্তবতার একটি খণ্ড চিত্রের বিশ্লেষনাত্বক রূপ ফুটে উঠেছে এই গল্পে। মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীর তীরে সম্প্রতি শেষ হলো এই স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ। এই চলচ্চিত্রটির প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন,- মামুনুর রশিদ, ফারজানা ছবি এবং শতাব্দী ওয়াদুদ।