যুগস্রষ্টা রাজনীতিবিদদের নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক আলোচিত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিঙ্কন, লেনিনসহ অনেকেই আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি কোনো চলচ্চিত্র। ছোট ছোট কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হলেও তার জীবন, কর্ম ও আদর্শকে ধারণ করতে পারে এমন পূর্ণাঙ্গ কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। এ আক্ষেপ সাধারণ মানুষের পাশাপশি দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যেও আছে।
দুর্ভাগ্য হলো, কেউ সাহসই করেনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের। বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গীতিকার আব্দুল গাফফার চৌধুরী তাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও তার অগ্রগতির কোনো খবর নেই।।
দেশের খ্যাতিমান নির্মাতারা কি বলছেন এ প্রসঙ্গে…
বিনিয়োগের ঘাটতি ও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেয়ার আশংকাই বড় প্রতিবন্ধকতা
মোরশেদুল ইসলাম
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখনো চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি, সত্যিকার অর্থেই এটা লজ্জার ব্যাপার। তবে বাস্তবসম্মতভাবে দেখতে হলে বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলে তা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ হবে। বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে হবে। দায়সারা গোছের কিছু বানালে তো হবে না। অনেক আয়োজনের ব্যাপার আছে। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা রাখা উচিৎ। সরকার যদি এগিয়ে আসতো তাহলে হয়তো সম্ভব হতো। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে; সরকারি অর্থে যখন চলচ্চিত্রটি নির্মাণ হবে তখন সরকার চাইবে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান নেতাকে নিয়ে স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে দেয়া না হলে সত্যিকার বঙ্গবন্ধুকে চলচ্চিত্রে তুলে আনা সম্ভব হবে না।
সরকার ও ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে
শহীদুল ইসলাম খোকন
একটা পৃষ্ঠা কাগজ হলে একটা কবিতা লেখা সম্ভব হবে, একশ পৃষ্ঠা কাগজ হলে উপন্যাস, কিন্তু চলচ্চিত্র বানাতে টাকা লাগে। আবার কোটি টাকা হলেও সবসময় সব চলচ্চিত্র বানানো যায় না। মূল সমস্যা হলো আমাদের বিনিয়োগকারী নাই। পৃথিবীর সব দেশে চলচ্চিত্রের জন্য ব্যাংকগুলো লোন দেয়। আমাদের দেশে দেয়া হয় না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র আজও হয়নি এ ব্যথা আমার বুকেও আছে। কিন্তু আমি হতাশাবাদী নই। আমি সবসময় আশাবাদী। স্বাধীনতার এত বছর পরও দেশে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমরা পাইনি। তেমনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব হয়নি। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আহমদ ছফার ভাবশিষ্য। তিনি বলেছেন, যার বুকে সূর্যি নেই তিনি কখনো সফল হতে পারেন না। আমার বুকে সূর্যি আছে। আমি আশাবাদী। একদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো বাজেট আমরা পাবো।
দুই দলের সংকীর্ণ মানসিকতাই নির্মোহ নির্মাণের প্রধান অন্তরায়
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
বঙ্গবন্ধু বা যে কোনো জাতীয় চরিত্রকে নিয়ে যদি ছবি নির্মাণ করা হয় তবে সে ছবি গ্রহণ করার মতো অবস্থা বঙ্গবন্ধুর পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তি কারোরই নেই। আমরা সকল বিষয়ে এত বেশি দ্বিধাবিভক্ত যে আমাদের পক্ষে নির্মোহভাবে এরকম কোনো ছবি গ্রহণ করা মুশকিল। মানে এখন যদি আপনি নির্মোহভাবে শিল্পীর পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বঙ্গবন্ধুর ওপর ছবি বানান তাহলে তা গ্রহণ করার মতো ক্ষমতা আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি কারোরই নাই। কারণ একদল চাইবে এই জাতীয় চরিত্রকে দেবতার আসনে নিয়ে বসানোর জন্য, অন্যদল চাইবে নিন্দা। এধরনের পরিস্থিতিতে এতবড় জাতীয় চরিত্রকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, জাতীয় বড় বড় চরিত্রদের নিয়ে মিনিমাম আরো বিশ বছর পর চলচ্চিত্র নির্মাণ করা উচিৎ। ততদিনে আশা করি দ্বিধাবিভক্তির জায়গাগুলো একটু কমবে।
তাঁকে নিয়ে অসম্পূর্ণ কিছু নির্মাণের চেয়ে তা না করাই ভালো
আবু সাইয়িদ
বড় বড় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘটনা আমাদের দেশে খুবই কম। শুধু বড় ব্যক্তিত্বই নয় ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো নিয়েওতো খুব কম চলচ্চিত্রই হয়েছে। এই কিছুদিন আগেইতো আমাদের মাস্টারদা সূর্যসেনকে নিয়ে ইন্ডিয়া চলচ্চিত্র বানালো। আসলে বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বকে নিয়ে যে ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে সে ধরনের চলচ্চিত্রে বিশাল আয়োজন দরকার। সেজন্যই হয়তো কেউ সাহস করেনি। কিন্তু করা দরকার ছিল। আবার একথাও ঠিক, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসম্পূর্ণ কিছু নির্মাণের চেয়ে নির্মাণ না হওয়াই ভালো। নিশ্চয়ই কেউ কোনোদিন সাহস করবেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন বলেছিলেন। তার কী অবস্থা কে জানে?