Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ওপার সৌন্দর্যের হাতছানি সুন্দরবন





এ বনাঞ্চলের খ্যাতি পৃথিবী জুড়ে। এত বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বিশ্বের আর কোথাও নেই। বাংলাদেশের আয়তনের ৪ দশমিক ২ শতাংশ ভূমির প্রায় ৪৪ ভাগ এই সুন্দরবন। এখানকার জোয়ারভাটা, সবুজ বনানী আর বিচিত্র বন্যপ্রাণী সব সময় হাতছানি দেয় মানুষকে। পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের রাজকীয় পদচারণা রয়েছে এ বনাঞ্চল জুড়ে। বনের দক্ষিণ কোল ঘেঁষে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। নিকটবর্তী সাগরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের অবতারণা করে। এ বনকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহত্ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অংশবিশেষ নিয়ে সুন্দরবনের বিস্তার। এ বনেই বাস করে ভুবনবিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য হাতছানি দেয় দেশি-বিদেশি নানা রংয়ের মানুষকে। চিত্রল হরিণ, সুন্দরী গাছ, জলের কুমির আর নানা জাতের মাছ, গাছে গাছে শত শত প্রজাতির রং-বেরংয়ের পাখিই এই আকর্ষণের মূল কারণ। বনভূমি ও বন্যপ্রাণী দেখতে প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে ভিড় করছেন পর্যটকরা। প্রকৃতির অপরূপ অনাবিল সৌন্দর্যমণ্ডিত রহস্যঘেরা এ বনভূমি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা। সুন্দরবন বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণের জন্য। তবে এখানে বানর, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর ও বনমোরগ ছাড়াও রয়েছে ৩৩০ প্রজাতির গাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ৩২ প্রজাতির চিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ। এসব বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।জালের মতো অসংখ্য নদী আর খাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সুন্দরবন জুড়ে। সুন্দরবন সৌন্দর্য বিস্তারের পাশাপাশি বৃহত্তর খুলনার লাখ লাখ উপকূলবাসীকে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করে থাকে। একই সঙ্গে তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বনও এই বন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ বনজ সম্পদ রক্ষায় জাতীয় অভয়ারণ্য হিসেবে সুন্দরবন ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যের মহিমায় মহিমান্বিত। এ পর্যন্ত ঘোষিত ৫২২টি বিশ্বঐতিহ্যের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা-এই তিন জেলায় সুন্দরবনের বিস্তার। আইআরডিপির শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩০ প্রজাতির সাপ, ১৪ প্রজাতির কচ্ছপ এবং ৫৪ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বন হল সরীসৃপ পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসভূমি। এর মধ্যে চিত্রা হরিণ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৩৫০ থেকে ৪০০, বন্য শূকর ২০ থেকে ২৫ হাজার, বানর ৪০ থেকে ৫০ হাজার, উদবিড়াল, লাল হরিণ, বাদুড়, কাঠবিড়ালি, ডলফিন, কুমির ১৫০ থেকে ২০০। এ ছাড়া অজগর, কালো গোখরা, কচ্ছপ, সোনাব্যাঙ, কাঁকড়া, বনবিড়ালসহ অসংখ্য প্রাণী রয়েছে এ বনে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার হল সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এর গায়ে লালচে হলুদ বর্ণের ওপর কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। এ ছাড়া এই বাঘের রয়েছে রাজকীয় চলন ও ক্ষিপ্রগতি। সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গায় এর বিচরণ লক্ষ করা যায়। কখনও সে গভীর অরণ্যে লুকিয়ে থাকে, কখনও নদী-খালের পাড়ে হেতাল বা গোলগাছের নিচে আয়েশি ভঙ্গিতে বিশ্রাম নেয় অথবা ঘাসের ওপর শুয়ে থাকে। কখনও বা সাঁতার কেটে খাল বা নদী পার হয় অথবা সৈকতের পাড় দিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিমায় হেঁটে চলে।












মায়াবী চিত্রল হরিণ সুন্দরবনের সব জায়গায় বিচরণ করে। তবে সব জায়গায় এদের প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় না। কটকা, কচিখালী, নীলকমল, কালিরচর, মান্দারবাড়িয়া ইত্যাদি এলাকায় প্রায়ই খুব কাছ থেকে হরিণ দেখার সৌভাগ্য হয় পর্যটকদের। দ্রুতগতির এই হরিণগুলো সুন্দরবনের বাঘের প্রধান খাদ্য। করমজল দর্শনার্থী কেন্দ্রে বেশ কিছু চিত্রল হরিণকে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বেড় দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
দুষ্টু বানরের চঞ্চলতা, ক্ষিপ্রতা, মেধাসহ সব ধরনের আচরণ পর্যটকদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে। সুন্দরবনের বানরগুলো আকারে খুব বেশি বড় হয় না। সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গায়ই এই বানরগুলো দেখা যায়। বিশেষ করে ভাটার সময় নদী বা খালের পাড়ে খাবারের সন্ধানে এলে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়াও গাছের ডালে ডালে এদের বিচরণ লক্ষ করা যায়।
সুন্দরবন অঞ্চলে লোনাপানির কুমির পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, সমগ্র সুন্দরবনে ১৫০ থেকে ২০০টি কুমির আছে। শীতকালে এদের প্রায়ই নদী বা খালের চরে রোদ পোহাতে দেখা যায়। কুমিরগুলো ১৫ ফুটের বেশি লম্বা হয়। রাতে কুমিরের চোখে আলো পড়লে হরিণের চোখের মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে।
তিনশ’রও বেশি প্রজাতির বিচিত্র রং-বেরংয়ের পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সুন্দরবন। মাছরাঙা, শিকারি পাখিসহ বিচিত্র ধরনের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এই বন। সুন্দরবনের সব জায়গায়ই এ সমস্ত পাখি দেখা যায়। তবে নিবিড়ভাবে পাখি দেখতে হলে ভোরে বা বিকেলে ইঞ্জিনবিহীন নৌকা নিয়ে বের হতে হবে। ডিমের চর, পক্ষীর চর, মান্দারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী ও করমজল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়।
সমগ্র সুন্দরবনের প্রায় ৩১ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। এই বিশাল জলভাগ অসংখ্য নদ-নদী ও খাল দ্বারা আবৃত। এই নদ-নদী ও খালগুলো সমগ্র সুন্দরবনে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই সুন্দরবনের যে কোনো নদ-নদী ও খালে নৌকাভ্রমণের সময় উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের নানা রকম পাখির বৈচিত্র্য। দুপুরের নৌকাভ্রমণে উপভোগ করা যেতে পারে লোনাপানির কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য। ভাগ্য ভালো থাকলে উপভোগ করা যেতে পারে বিশ্ববিখ্যাত বেঙ্গল টাইগারের নদী বা খাল পারাপারের দৃশ্যও। বিকেলের নৌকাভ্রমণে উপভোগ করা যায় ছায়াঘেরা পরিবেশে পাখপাখালির কোলাহল এবং সেই সঙ্গে নয়নাভিরাম চিত্রল হরিণ ও বানরের অবাধ বিচরণ। সুন্দরবনের স্থলভাগ যেহেতু জোয়ারের পানিতে সব সময় কাদাময় থাকে সেহেতু সুন্দরবনকে উপভোগ করার সবচেয়ে উত্কৃষ্ট উপায় হচ্ছে নৌকাভ্রমণ।
সুন্দরবনে অমাবস্যার রাতে গভীর অন্ধকার কিংবা চাঁদনি রাতে ঝলমলে অরণ্য এক ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়। এ সৌন্দর্য যেন এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সুন্দরবনে রাতযাপনের মাধ্যমে এই রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বিশেষত সুন্দরবনে চাঁদনি রাতের সৌন্দর্য ও অমাবস্যা রাতের সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন ভিন্ন। চাঁদনি রাতে চাঁদের আলো যখন বনের ওপর ছড়িয়ে পড়ে তখন হালকা আলোয় বনের গাছগাছালির সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর চোখ থেকে লাল আলো ছড়ানোর দৃশ্য লক্ষ করা যায়। আর অমাবস্যার রাতে বনের আসল নির্জনতা উপভোগ করা যায়। অমাবস্যার রাতে সুন্দরবনের বৃক্ষের ওপর জোনাকি পোকার আলো ছড়ানোর দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়।
সুন্দরবনে প্রতিবছর তিন মাস মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময় শত শত নৌকাযোগে মৌয়ালরা দল বেঁধে মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে যাত্রা করে। তাদের এই মধু সংগ্রহের দৃশ্যও পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে।
নদী বা খালের পাড়ে সারি সারি গোলপাতার মনোরম দৃশ্য যে কোনো লোককেই মুগ্ধ করে। বাওয়ালীরা যেভাবে গোলপাতা কাটে এবং নৌকায় সাজায় তাও উপভোগ করার মতো বিষয়। গোলপাতার সুদৃশ্য ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিল মাসে।
২৪ ঘণ্টায় সুন্দরবন কমপক্ষে ছয়বার তার রূপ বদলায়। সন্ধ্যা, মধ্যরাত, ভোর, সকাল, দুপুর-এই সময়গুলোতে সুন্দরবন আলাদা আলাদা রূপে ধরা দেয়। সুন্দরী সুন্দরবনের এই রূপের কথা লিখে বা বলে বোঝাবার নয়।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলো
সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল, কটকা, কচিখালী সমুদ্র সৈকত, নীলকমল, দুবলার চর, শেখেরটেক মন্দির, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, হারবাড়িয়া, দোবেকী, কালির চর, মৃগামারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব স্থানের প্রতিটিরই আলাদা আলাদা আকর্ষণ করার ক্ষমতা আছে।

ঢাইনমারী অতিক্রম করলেই মংলার বহির্নোঙরে দেখা যাবে একের পর এক বিদেশি জাহাজ। দেশ-বিদেশের পতাকাবাহী এসব বড় বড় জাহাজ দেখতে দেখতেই চোখে ভেসে উঠবে সুন্দরবনের সবুজ বেষ্টনী। এসব কেওড়া, গরান, সুন্দরী গাছ আর গোলপাতার বাগান দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব কচিখালী, কটকা কিংবা হিরণ পয়েন্টে। পর্যটকদের এখন মূল আকর্ষণ কটকা। হিরণ পয়েন্টের চেয়েও কটকা ইদানীং আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সেখানে পৌঁছতে মংলা থেকে সময় লাগবে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। কটকায় খুব সহজেই ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ দেখা যায়। ছোট ট্রলার কিংবা নৌকায় করে কটকার এপার-ওপার ঘুরে হরিণ ও বানরসহ বিরল প্রজাতির পাখি দেখা সম্ভব। এখানে দেখা সম্ভব হরিণ ও বানরের মিতালি। বানর গাছ থেকে খাবার নিচে ফেলে দেয়। হরিণ নিচে বসে অনায়াসে খাবার খায়। বাঘ আসতে দেখলে আগেভাগেই বানর হরিণকে সঙ্কেত দেয়। হরিণ সঙ্কেত পেয়ে পালিয়ে যায়। কটকায় রয়েছে বন বিভাগের ওয়াচ টাওয়ার। গাছের সমান উঁচু এ টাওয়ারে অনায়াসেই উঠে পড়া যায়। কটকাসহ সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকাকে সরকারিভাবে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ।

সুন্দরবন ভ্রমণ এবং সুন্দরবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার জন্য করমজল হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত ও আকর্ষণীয় স্থান। মংলা সমুদ্রবন্দরের খুব নিকটবর্তী হওয়ায় মংলা ফরেস্ট ঘাট থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে এই স্থান পরিদর্শন করে ফেরত আসা যায়। করমজলকে সুন্দরবনের মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানকার প্রধান আকর্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে হরিণ, কুমির, বানর, কাঠের ট্রেইল, টাওয়ার, ম্যানগ্রোভ আরবোরেটাম, পাখি, নৌকা চালনা, পশুর নদী, বিদেশি জাহাজ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ইত্যাদি। বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি রয়েছে করমজলে।

সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত কটকা সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি মংলা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের প্রধান কেন্দ্র। এখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খাল। এসব খালের পাশেই দেখা যায় চিত্রল হরিণ, বানর, উদবিড়াল, সাপ, বনমোরগ। মাঝে মধ্যে বাঘের গর্জন এবং রাতের বেলা জোনাকির আলোর মেলা। আশপাশের হরিণের পাল এবং বাঘের বিচরণ সত্যিই উপভোগ করার মতো। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দেখা যায় হরিণের বিচরণ, শূকরের দৌড়াদৌড়ি, বাঘের হরিণ শিকারের কিংবা রাজকীয় ভঙ্গিতে হেঁটে চলার দৃশ্য।

কচিখালীও সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। সমুদ্র সৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত পায়ে হাঁটা পথ রয়েছে। এ পথের পাশে ঘন অরণ্যের মধ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির এক গা ছমছম করা পরিবেশ। এখানে রয়েছে একটি অভাবনীয় সুন্দর ও নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত, যার সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। মাঝে মধ্যে এই সৈকতে বাঘের বিচরণ লক্ষ করা যায়।

নীলকমলকে সবাই হিরণ পয়েন্ট নামেই বেশি চেনে। খুলনা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এর অবস্থান। এখানে রয়েছে প্রচুর হরিণের বিচরণ। আরও আছে বাঘ, বন্য শূকর, বানর, উদবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এবং পাখি। নীলকমলের প্রাকৃতিক দৃশ্যও অপূর্ব। এ ছাড়াও আছে দুবলার চর। সমগ্র সুন্দরবন ঘুরে মানুষের দেখা না মিললেও বন থেকে ফেরার পথে আলোরকোল হয়ে দুবলার চরে যাত্রাবিরতি করলে দেখা মিলবে হাজার হাজার মত্স্য শিকারির। সাগর সংলগ্ন বনের একটি অংশ কেটে সেখানে ৫ মাসের জন্য অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজার হাজার জেলে। এদের মধ্যে কেউ বরিয়ালী, কেউ বাওয়ালী ও জেলে। প্রতিবছর অক্টোবর মাস এলেই এরা দল বেঁধে ছুটে আসে দুবলার চরে। ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হলেই ফিরে যায় বাড়িঘরে। বঙ্গোপসাগরে মত্স্য শিকারের জন্য অস্থায়ীভাবে দুবলার চরে তাদের বসবাস।

কীভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন
খুলনা কিংবা মংলা থেকে নৌপথে সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে প্রবেশ করা যায়। মংলার অদূরেই ঢাইনমারীতে রয়েছে বন বিভাগের কার্যালয়। সেখান থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের আনুষঙ্গিকতা সারতে হয়। পর্যটকদের জনপ্রতি ৫০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৭০০ টাকা এবং ছোট ও বড় লঞ্চের জন্য আলাদা আলাদা ফি দিতে হয়। পর্যটকদের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা থাকলে অতিরিক্ত একশ’ টাকা বন বিভাগকে দিতে হয়। প্যাকেজ ট্যুরে গেলে এসব ঝামেলা পর্যটকদের পোহাতে হয় না। ট্যুরিজম লিমিটেডের লোকজনই আনুষঙ্গিকতা সেরে নেয়। ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষকে শুধু নির্ধারিত তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করলেই তিন রাত দু’দিন সুন্দরবনে ভ্রমণ ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে তারা। আর সরকারিভাবে যেতে চাইলে আছে কটকা ও কচিখালী গেস্ট হাউস। কটকার রেস্ট হাউসে ৮ জনের বেশি থাকা যায় না। কচিখালী গেস্ট হাউসে থাকা যায় ৬ জন। এসব রেস্ট হাউসের ভাড়া ৩ হাজার টাকা করে। গেস্ট হাউস দেখাশোনার জন্য একজন বনকর্মী রয়েছেন। এসব গেস্ট হাউস ভাড়া নিতে হয় বাগেরহাটের ডিএফওর কাছ থেকে।