Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

রানী ভবানীর বাপের বাড়ি



রানী ভবানী একটি পরিচিত নাম। কিন্তু আমরা ক’জন জানি রানীভবানীর বাবার বাড়ি বগুড়ার সান্তাহারের ছাতিয়ানগ্রামে। আর সেখানেই এককালের অর্ধে বঙ্গেঁশ্বরী পরিচিতিন ’’রানীভবানীর” বিজরিত ছাতিয়ানগ্রামে তার স্মৃতি টুকু ও আজ ধংশের পথে। সংস্কার ও সংরক্ষনের অভাবে মহিয়সী এই নারীর জন্মস্থান হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। ভেঙ্গেঁ ফেলা হয়েছে তার পিতার বাড়ী যেখানে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়ে ছিলে। এখন তার পিতৃগৃহের ধবংশবশেষ আছে মাত্র। ভেঙ্গেঁ ফেলা হয়েছে মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত জয় দুর্গা মন্দির এবং শিব মন্দির। এগুলি রক্ষার জন্য সরকারী উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়নি কখনো। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে পাকা রাস্তার ছাতিনগ্রাম। সপ্তদশ শতাব্দীর কথা ছাতিয়ানগ্রামে ছিলেন ছোট খাটো জমিদার নাম ছিল আত্মারাম চৌধুরী ও শ্রী জয়দুর্গা দেবী চৌধুরানী। ছিলেন নিঃসন্তান সন্তান লাভের আশায় জমিদার তার বাড়ীর অদুরে নির্জন এক পুকুর পাড়ে ঈশ্বরের সাধনা অর্চনা শুরু করেন। শ্রী জয় দুর্গার গর্ভে জন্মে ছিলেন এক ফুট ফুটে কন্যা সন্তান তান নাম রাখা হয় ভবানী। আত্মারাম চৌধুরী যে স্থানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করে ছিলেন সে স্থানটি আজও সিদ্ধেশ্বরী নামে স্মৃতি বহন করে আসছে। ভবানীর বয়স যখন ৯/১০ বৎসর। একদিন নাটোর রাজবাড়ীর দেওয়াল (মগনেহর) দয়ারাম নবাব আলীবর্দী খানের দরবার থেকে ফেরার পথে ছাতিয়ানগ্রামে এসে রাত হয়ে যায়। সে খানে তাবু ফেলা হয় রাত্রি যাপনের জন্য।

নিয়মিত প্রাতঃভ্রমনের অভ্যাস ছিল দয়ারামের। ভোরে তিনি শয্যা ত্যাগ করে বেরুলেন তাবু থেকে। দেখলেন ফুট ফুটে একটি মেয়ে লাল শাড়ী পরে পুজার জন্য ফুল তুলছে। দেওয়ান দয়ারামের পছন্দ হল ঐ মেয়েটিকে। তিনি পিছু নিলেন মেয়েটির। পৌঁছলেন তিনি আত্মারাম চৌধুরীর বাড়ীতে জানলেন মেয়েটি আত্মারাম চৌধুরীর। নাম তার ভবানী। দেওয়ান নাটোরের রাজকুমার রামকান্তের সাথে ভবানীর বিয়ের প্রস্তাব দিলেন আত্মারামের কাছে। তিনি ভবানীর মতামত জানতে গেলে ৩টি শর্তে বিয়েতে রাজী হন। প্রথম শর্ত ছিল বিয়ের পর তিনি এক বছর পিতার বাড়ীতে থাকবেন। এক বছরে প্রতিদিন একটি করে পুকুর স্থাপনের জন্য ছাতিয়ানগ্রামে ৩৬৫ টি পুকুর খনন করে দিতে হবে। ২য় র্শত ছিল ছাতিয়ানগ্রাম থেকে নাটোর পযর্ন্ত নতুন রাস্তা নির্মান করে পুরো রাস্তায় লাল সালুর কাপড় দিয়ে ছাউনী তৈরী করতে হবে। যার ভিতর দিয়ে স্বামীর বাড়ী যাবেন। তৃতীয় র্শত ছিল এলাকার প্রজাদের ভূমিদান করে তাদেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ছাতিয়ানগ্রামে ৩৬৫টি পুকুরের স্মৃতি চিহ্ন আজও বিদ্যমান। ছাতিয়ানগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বদিকে যে রাস্তাটির স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। সে রাস্তাটির নাম ছিল ভবানীর জাঙ্গাঁল। উক্ত সড়কটি ছাতিয়ান গ্রাম থেকে নাটোর পযর্ন্ত বিস্মৃত ছিল এ থেকে প্রমান হয় রাজকুমার রাম কান্ত সকল শর্ত পূরন করে রানী বানিয়ে ছিলেন। ভবানীর বিয়ের পর মা জয়দূর্গা দেবী দেহ ত্যাগ করেন। রানী ভবানী তার মায়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যে স্থানে তিনি মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে ছিলেন যেখানে মন্দির তৈরী করেন। যার নাম ছিল জয় দূর্গামন্দির। এই মন্দিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন অষ্টধাতু নির্মিত এক দূর্গা প্রতিমা। রানীভবানীর জন্ম হয়েছিল কৃষ্টামী তিথিতে নিয়মিত পূজা ছাড়া ও তিথিতে বিশেষ পূজা অর্জনা হতো। রানী ভবানী শিশুকাল থেকেই ছিলেন ধর্ম পরায়ন ও মানব কল্যানে নিয়োজিত একটি প্রান। তার বিয়ের শর্ত ৩৬৫টি পুকুর এবং রাস্তাটি তার নিজের জন্য করেননি, করেছিলেন জনসাধারনের উপকারের জন্য। ১৭৪৮ সালে রাজ রামকানের মৃত্যুর পর রানী ভবানী নবাব আলি বদিখানের কাছ থেকে নাটোরের জমিদারের ভার গ্রহন করে ছিলেন। ১৮০২ সালে পযর্ন্ত তিনি জমিদারী পরিচালনা করেন। প্রবাদ আছে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কাশিম বাজার কটিতে যে ষড়যন্ত্র সভা হয়েছিল সেখানে রানী ভবানী আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি ইংরেজদের বিরোধিতা করে ছিলেন, জমিদারদের এবং খাল কেটে কুমির না আনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। নাটোরের বাজার কাচাড়ী ছিল ছাতিয়ানগ্রাম। ১৯৫০ সালে সান্তাহারে সংঘটিত হয় সাম্পদায়িক দাঙ্গাঁ। জয়দুর্গা মন্দিরে অষ্ঠধাতুর দুর্গা নিরাপত্তার অভাবে তিনি নাটোরে নিয়েযান। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হবার সময় রানীভবানীর জন্মস্থান ছাতিয়ানগ্রামের জয় দুর্গা মন্দির নাটোর সহ তার সময় নির্মিত সকল ধম প্রতিষ্ঠানের সম্পদ চয়েজ অবল্যান্ড হিসাবে রাখা হয়েছিল। পাকিস্থান আমলেও ছাতিয়ানগ্রামের জয়দুর্গা মন্দিরের বিশাল এলাকা রানী ভবানীর চয়েজ ল্যান্ড হিসাবে ব্যবহার ছিল। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন একজন এসডিও রানীভবানীর ব্যস্ত ভিটাটি মোস্তাকিন পালোয়ান নামের একজন ব্যক্তিকে নিজ হিসাবে প্রদান করেন। পরে হিন্দু সম্প্রদায় লিজ বাতিলের নিকট মামলা দায়ের করলে উক্ত প্লটের ১৭ শতাংশ বাড়ী করার জন্য রায়দেন।

চয়েজ ল্যান্ড হিসাবে অবশিষ্ঠ জমিগুলি ফেরত দিতে বলেন। অতিরিক্ত এসডিও (রাজস্ব) আগের কথা বহাল রাখেন এবার উক্ত জায়গাগুলির সমদয় সম্পত্তি দখল করে জয়দুর্গা, শিবমন্দির এবং রানী ভবানীর নিতৃগৃহ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ছাতিয়ানগ্রামের হাট খোলার উত্তর পশ্চিম কোনার উঠনে একটি মঠের ভগ্লাশেষ আজও কালের সাক্ষী হিসাবে দাড়িয়ে থাকলে সেটিও আজও নিঃচিহ্ন করে ফেরা হয়েছে। এটা ছিল রানী ভবানীর পিতৃকুলের দোলমনত। দোলনা যাত্রা উৎসব এখানে মহাধুমধামে পালন করা হতো। একটু সামান্য পশ্চিমে রয়েছে বুড়া শিব এর স্থান দোলনা মরোত্তর দক্ষিন পার্শেই রয়েছে পাতলা পীর সাহেবের মাজার। প্রতি শুক্রবারে শতশত লোক দেলেন আর স্মৃতি রোমস্থন করেন। মহিয়সী রানীভবানীর জন্ম স্থান নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক স্থান। অথচ সরকার কর্তৃক সংস্থার বা সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। এলাকাবাসীর দাবী এই রানী ভবানীর জন্মস্থানও তার কীর্তি সমূহ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষন করা হোক। ১৯৯৬ সালে গাজীপাতলাপীর হাফেজিয়া কওমী মাদ্রাসা স্থাপিত হলে ভবানীভবন লাইব্রেরী ভেঙ্গে গেছে। নির্মান করা হয়েছে মাদ্রাসার ভবন। আজও রানী ভবানী ছোট বেলার দোলনার স্মৃতি বহন করছে।

যেভাবে যাবেন এবং যেখানে থাকবেন
ঢাকার মহাখালী আর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সান্তাহারের উদ্দ্যেগে এক ঘন্টা পর পর বাস আছে। আপনি শ্যামলী, এসআর, হানিফ, টিআর, বাবলু, ফতেহ আলী এই বাসগুলোতে যেতে পারেন। ভাড়া লাগবে ৩৮০ টাকা। আর কমলাপুর থেকে দ্রুতযান, লালমনি এক্সপ্রেস, একতা ট্রেনেও আপনি যেতে পাবরেন। সেক্ষেত্রে যেমন সিট নিবেন তার উপর ভাড়া নির্ভর করবে। সান্তাহারে সোজা চলে আসুন এরপর রিক্সাতে মাত্র ২০ টাকা নিবে। আপনি রানী ভবানীর বাবার বাড়ি দেখে আবার সান্তাহার আসুন সেখানে ভালো ভালো খাবার ও থাকার হোটের আছে।