Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

দ্যা হার্ট অফ লায়ন




যারা নব্বইয়ের দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জয় যাত্রা দেখেছেন তারা হয়তো কোর্টনি ওয়ালশ নামটির সাথে খুব ভালো করেই পরিচিত থাকবেন। কোর্টনিকে ক্যারিবীয়ান দলের সবচেয়ে সফল ফাস্ট বোলার বলা হয়ে থাকে। নব্বইয়ের দশকে কোর্টনি ওয়ালশ এবং কার্টলি অ্যামব্রোসের ওপেনিং বোলিং জুটিকে মোকাবেলা করতে যেকোন দলের ব্যাটসম্যানদেরই ঘাম ঝরে যেত। তারা দুইজন টেস্টে ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের জন্য এক প্রকার ত্রাসই ছিলেন বলা চলে।

সাবেক এই ক্যারিবীয় অধিনায়কের জন্মদিন আজ। জন্মদিনের এই শুভক্ষণে তার বর্ণাঢ্য ও সফল ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জনের কথা জানা যাক।

কোর্টনি ওয়ালশকে বলা হত ক্রিকেটের সবচেয়ে উৎসাহী এবং আগ্রসী ফাস্ট বোলার। ক্রিকেটের প্রতি তার ছিলো অসামান্য দৃঢ়তা এবং আগ্রহ।

কোর্টনি ওয়ালশের জন্ম ১৯৬২ সালের ৩০ অক্টোবর, জ্যামাইকার কিংসটনে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিলো তার অগাধ ঝোঁক। তিনি স্কুল ক্রিকেটে একবার এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন এবং তখন থেকেই মুলত সে সবার নজরে আসেন।

১৯৮১ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে কোর্টনির। এরপর থেকেই তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ৪২৯টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচে ২১.৭১ গড়ে উইকেট নেন ১৮০৭টি। এর মধ্যে তিনি ১০৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট এবং ২০ বার ইনিংসে ১০ উইকেট লাভ করেন।

১৯৮৪ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে অভিষেক হয় কার্টনির। অভিষেক টেস্টে ৪৩ রান দিয়ে ২টি উইকেট পেয়েছিলেন কোর্টনি। তার ন্যাচারাল রান-আপ এবং সহজ বোলিং অ্যাকশনের কারনে তিনি উভয় দিকেই বল সুইং করাতে পারতেন যা ব্যাটসম্যানদের জন্য হয়ে উঠতো মারাত্মক।

১৯৯৪ সালে রিচি রিচার্ডসের অবসরের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেন কোর্টনি। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর যেন আরো জ্বলে ওঠেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি যেন নিজের ইচ্ছামতই উইকেট তুলে নিতেন। ১৯৯৫ সালে তিনি অবিশ্বাস্য ২১ গড়ে তুলে নেন ৬২টি উইকেট।

ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে তার বলের গতি কিছুটা কমে গেলেও বোলিংয়ের ধার ছিল আগের মতই। ২০০০ সালে ১৮ গড়ে তিনি তুলে নেন ৬৬টি টেস্ট উইকেট। একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে তিনি শিকার করেন ৩৪টি উইকেট।

২০০০ সালের মার্চ মাসে সাবাইনা পার্কে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ১১৪তম টেস্টে তিনি ভারতীয় বোলার কপিল দেবের ৪৩৪ উইকেটের রেকর্ডকে পিছনে ফেলে টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হন।

২০০১ সালে এপ্রিলে সাবাইনা পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে অবসর গ্রহনের সময় তিনি মোট ৫১৯টি টেস্ট উইকেটের মালিক ছিলেন। একই সাথে তিনিই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বপ্রথম বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কান স্পিনার মুরালিধরন কার্টনিকে পিছনে ফেলে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী বোলারের মর্যাদা লাভ করেন।

২০০১ সালে অবসর গ্রহণের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তিনি ১৩২ টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৪.৪৪ গড়ে উইকেট পেয়েছেন ৫১৯টি। এর মধ্যে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২২ বার এবং ১০ উইকেট নিয়েছেন ৩ বার।

কোর্টনি ওয়ালশের স্মরনীয় টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ১৯৯৩ সালে এডিল্যাডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা টেস্টটি হয়তো সবার উপরেই থাকবে। ম্যাচে তিনি অসি ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ম্যাকডারমটকে আউট করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ১ রানের জয় পায়।

ক্রিকেটকে পাগলের মত ভালবাসতেন এই ক্যারিবীয় ডানহাতি পেসার। ১৯৯৭ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক টেস্ট ম্যাচে ক্যারিবীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কার্টনি। ম্যাচের এক মূহুর্তে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। কিন্তু ক্রিকেট পাগল কোর্টনি সারা রাত তার ফিজিওকে জাগিয়ে রেখে তার পায়ে বরফ দিতে বলেছিলেন এবং পরের দিন তিনি বল করতে নামেন। সকলে ভেবেছিলেন হয়তো দুই একটি ওভার করেই উঠে যাবেন তিনি। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে তিনি সেদিন টানা ২০ ওভার বল করেন এবং ম্যাচে ক্যারিবীয়দের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। ম্যাচ শেষে প্রায় হাঁটতে না পারা কার্টনি বলেন ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে তার এই কষ্ট স্বার্থক হয়েছে।

টেস্টের মত ওয়ানডে ক্রিকেটে ঠিক ততটা সফল ছিলেন না কোর্টনি। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২০৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন ২২৭টি। তবে ওয়ানডেতে তার সবচেয়ে স্মরনীয় বোলিংটি ছিলো ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে মাত্র এক রান দিয়ে শ্রীলঙ্কার ৫টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন কোর্টনি। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৯৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কোর্টনি বোলিংয়ে যতটা ধ্বংসাত্মক ছিলেন ঠিক ততটাই অসহায় ছিলেন ব্যাট হাতে। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে তিনি মোট ৪৩ বার শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন।