শচীনের ছেলেবেলা:
শচীনের বাবা রমেশ টেন্ডুলকার। পেশায় ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক। মা রাজোনি, যিনি কাজ করতেন একটি জীবন বীমা কোম্পানিতে। বাবা শখ করে ছেলের নাম একজন বিখ্যাত সংগীতশিল্পীর নামানুসারে রাখলেও ছোটবেলায় সংগীতের প্রতি তার কোনো টান ছিল না। যে ক্রিকেটেশ্বর হবে তার ক্রিকেটের প্রতিও কোনো টান ছিল না। শচীন টান অনুভব করতেন টেনিসের প্রতি। টানটা যেনতেন নয়। ব্যাপক টান। কিন্তু বড় ভাই অজিত তার দুরন্তপনায় অতিষ্ঠ হয়ে শচীনকে ক্রিকেটের প্রতি টানতে থাকেন। তার ধারণা ছিল ক্রিকেট খেলায় শচীন মজা পেলে হয়তো দুরন্তপনা কিছুটা হলেও কমবে। তাই ছোট ভাইকে ক্রিকেটে হাতেখড়ি দেন অজিত। কিন্তু অজিতের কথা ঠিকমতো শুনতে চাইত না শচীন। তাই বাধ্য হয়ে অজিত দ্বারস্থ হন তত্কালীন সময়ের খ্যাতনামা কোচ রামকান্ত আখেরকারের কাছে। রামকান্ত প্রথম দর্শনে দুরন্ত শচীনকে পছন্দ না করলেও পরে শচীনের প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়ে যান। তিনি অজিতকে পরামর্শ দেন শচীনকে সারাদাশরাম বিদ্যামন্দির স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে। কারণ তখন এই স্কুল থেকে বেশ কয়েকজন নামকরা ক্রিকেটার উঠে এসেছিল।
এ ছাড়া স্কুলটিতে ভালো একটি ক্রিকেট দলও ছিল। স্কুলের রুটিনের চাপে পরে দুরন্তপনা কমতে থাকে শচীনের। আস্তে আস্তে ক্রিকেটের মজা পেয়ে যেতে থাকে। তবে শচীনের ক্রিকেটের হাতেখড়ি কেবল বিদ্যামন্দিরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি এটার পাশাপাশি শিবাজি পার্কের কোচ রামকান্তের তত্ত্বাবধানেও ক্রিকেট দীক্ষা নিতেন। কোচের কাছে নিয়মিত নেটে অনুশীলন করতেন। সেটা শেষ হয়ে গেলে নেটের বাইরেও প্রতিদিন এক ঘণ্টা বেশি অনুশীলন করতেন। ছোটবেলায় দুরন্তপনার শীর্ষে ছিল বিস্ময় বালক। পাড়ার এমন কোনো ছেলে ছিল না যে শচীনের হাতের দু-একবার মার খায়নি। কম করে হলেও একটা কানমলা খেয়েছে।
শচিন ও অঞ্জলির পরিচয় এবং বিয়ে:
১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড সফর থেকে ফেরার সময় মুম্বাই এয়ারপোর্টে প্রথম অঞ্জলিকে দেখে টেন্ডুলকার। মুহূর্তের ভালো লাগা থেকে পরিচয়, এরপর মন দেওয়া-নেওয়া। পাঁচ বছরের প্রেম পরিণয়ে রূপ নেয়। বয়সে ছয় বছরের বড় অঞ্জলিকে ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন টেন্ডুলকার। বিয়ের পর অঞ্জলি মেহতা হয়ে যান অঞ্জলি টেন্ডুলকার।
গুজরাটের শিল্পপতি আনন্দ মেহতা ও ব্রিটিশ সমাজকর্মী অ্যানাবেল মেহতার মেয়ে অঞ্জলি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন চিকিত্সক। এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীও পেয়েছিলেন। হয়তো চিকিত্সা পেশায়ও ভালো করতেন। কিন্তু বেশি দিন সেটা চালিয়ে যাননি অঞ্জলি। টেন্ডুলকারের জন্য উত্সর্গ করেন নিজের সব স্বপ্ন, ক্যারিয়ার। বিয়ের দুই পছর পরই (১৯৯৭ সালে) টেন্ডুলকার-অঞ্জলির ঘর আলোকিত করে আসে মেয়ে সারা। ১৯৯৯ সালে জন্ম হয় ছেলে অর্জুনের।
শচীনের ব্যাটিং যে কারণে মাঠে বসে দেখেন না তার স্ত্রী অঞ্জলি:
মেলবোর্নে ১০ বছর আগে এক বারই শচীনের ব্যাটিং দেখতে সাহস করে ঢুকেছিলেন। তবে গ্যালারিতে নয়, বক্সে। কয়েক মিনিটের মধ্যে হেঁটে বেরিয়ে যান স্বামীকে এক বলে আউট হয়ে যেতে দেখে। তারপর থেকে শচীন ক্রিজে থাকলে অঞ্জলির রুটিন হলো, বাড়িতে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বসে থাকা। কোনো ফোন না নেয়া। কারো সঙ্গে কথা না বলা। এক পা-ও নড়াচড়া না করা। এমনকি ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতেও তিনি যাননি। তবে শেষ বারের মত মাঠে বসে স্বামীর খেলা দেখার সুযোগ অঞ্জলি হাতছাড়া করেননি। কাউকে না জানিয়ে হঠাত্ কলকাতা ইডেন গার্ডেনে উপস্থিত হন। টেন্ডুলকারকে ‘সারপ্রাইজ’ দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁর জন্য যেন বিশেষ কোনো আয়োজন না করা হয়, সে জন্যই হঠাত্ উপস্থিত হন অঞ্জলি।
অবশেষে শচিনের মা মাঠে এলেন:
লিটল মাস্টারকে সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়েছেন তাঁর মা রজনী টেন্ডুলকার। এই প্রথম মাঠে বসে ছেলের খেলা দেখছেন তিনি! এত দিন মাঠে যাননি এই কুসংস্কার ধারণ করে যে ছেলের খেলা খারাপ হবে। কিন্তু ছেলের বিদায়ী টেস্ট নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব উদ্বেলিত, তখন ঘরে বসে থাকতে পারেননি মা রজনী। নিজে হুইলচেয়ারে বসে পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে টেন্ডুলকারের খেলা দেখছেন।