Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

মেসির সংক্ষিপ্ত জীবনী (পর্ব ২)

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ‘এল ক্ল্যাসিকো’তে মেসির হ্যাট্রিক



মেসি ২০০৬–০৭ মৌসুমে নিজেকে দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে স্থাপন করে নেন এবং ২৬ খেলায় ১৪ গোল করেন। মেসি ১০ মার্চ এল ক্ল্যাসিকোতে হ্যাট্রিক করেন যার ফলে খেলাটি ৩–৩ গোল ড্র হয়। বার্সেলোনা খেলায় তিনবার পিছিয়ে পরলেও, প্রত্যেকবারই মেসি দলকে সমতায় ফেরান, যার মধ্যে একটি গোল তিনি দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে করেছিলেন। এর আগে এল ক্ল্যাসিকোতে সর্বশেষ হ্যাট্রিক করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ইভান জামোরানো, ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে। অবশেষে ক্ল্যাসিকোতে হ্যাট্রিকের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটান মেসি এবং একই সাথে তিনি এল ক্ল্যাসিকোতে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার এর খেতাব অর্জন করেন। মৌসুমের শেষের দিকে মেসি আগের চেয়ে আরও বেশি গোল করতে শুরু করেন। লীগে তার করা ১৪টি গোলের ১১টিই এসেছিল শেষ ১৩টি খেলা থেকে।

২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে মেসির খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল

২০০৫–০৬ মৌসুমে ইনজুরির কারনে ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে মেসির খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবুও মেসি দলে ডাক পান। বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে আর্জেন্টিনা অনুর্ধ্ব ২০ দলের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে একটি খেলায় তিনি ১৫ মিনিট খেলেন এবং অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় ৬৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন। আইভরি কোস্টের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় মেসি সাইড বেঞ্চে বসেছিলেন। পরের খেলায় সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে খেলার ৭৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেসি এবং ৭৮তম মিনিটে হের্নান ক্রেসপোর একটি গোলে সহায়তা করেন। খেলার ৮৮তম মিনিটে মেসি একটি গোল করেন। এতে করে আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ এবং ইতিহাসের ৬ষ্ঠ কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। খেলায় আর্জেন্টিনা ৬–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।
নেদারল্যান্ড এর বিপক্ষে পরের খেলায় মেসি প্রথম দলে সুযোগ পান। খেলাটি ০–০ সমতায় শেষ হয়। মেক্সিকোর বিপক্ষে রাউন্ড ১৬ এর খেলায় ৮৪তম মিনিটে মেসি বদলি হিসেবে খেলতে নামেন। খেলায় উভয় দল তখন ১–১ গোলে সমতায় ছিল। খেলতে নেমেই তিনি একটি গোল করলেও তা অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ে রদ্রিগুয়েজের গোলে আর্জেন্টিনা ২–১ ব্যবধানে জয় পায়। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কোচ জোসে পেকারম্যান মেসিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন। পেনাল্টি শুটআউটে ৪–২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা হেরে যায় এবং টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে।

‘নতুন মারাদোনা’ রূপে মেসির আত্মপ্রকাশ

মেসি ২০০৬–০৭ মৌসুমেই কিংবদন্তী দিয়েগো মারাদোনার বিখ্যাত কিছু গোলের পুনরাবৃত্তি ঘটান এবং নিজেকে ‘‘নতুন মারাদোনা’’ রূপে প্রকাশ করেন। ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিলে কোপা দেল রে‘র সেমিফাইনালে খেতাফের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। যার মধ্যে একটি গোল ছিল মারাদোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দ্বিতীয় গোলটির মত, যে গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে খ্যাত। বিশ্বের ক্রীড়া মাধ্যম মেসিকে মারাদোনার সাথে তুলনা করতে শুরু করে এবং স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যম তাকে‘‘মেসিদোনা’’ উপাধিতে ভূষিত করে। মারাদোনার মত মেসিও প্রায় ৬২ মিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে গোলরক্ষকসহ ছয় জনকে কাটিয়ে একই স্থান থেকে গোল করেছিলেন এবং কর্ণার ফ্লাগের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। ২১ বছর আগে মেক্সিকো বিশ্বকাপে যেমনটি করেছিলেন মারাদোনা। ইস্পানিওলের বিপক্ষেও মেসি একটি গোল করেছিলেন যা ছিল মারাদোনার ‘‘হ্যান্ড অব গড’’ খ্যাত গোলটির মত। যেটি ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মারাদোনার করা প্রথম গোল ছিল।

বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন

২০০৭ সালে স্পেনীয় সংবাদপত্র মার্কা তাদের অনলাইন সংস্করনে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য ভোটের আয়োজন করে যেখানে মেসি ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম হন। বার্সেলোনা ভিত্তিক সংবাদপত্র এল মুন্দো দেপোর্তিভো এবং দেইলি স্পোর্ত সে বছর “ব্যালোন দি’অর” মেসিকে দেওয়ার জন্য দাবি করে। ফ্রাঞ্চেসকো তোত্তি’র মত ফুটবল ব্যক্তিত্ব মেসিকে বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার হিসেবে ব্যক্ত করেন। ২০০৭ সালের “ব্যালোন দি’অর” পুরষ্কারে মেসি তৃতীয় হন এবং ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরষ্কারে তিনি দ্বিতীয় হন।

আবার ইনজুরিতে মেসি

২০০৭–০৮ মৌসুমে সেল্টিকের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলায় মেসি বাম পায়ের মাংস পেশীর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন এবং ছয় সপ্তাহের জন্য মাঠের বাহিরে চলে যান। তিনটি মৌসুমে চতুর্থবারের মত মেসি একই ধরনের ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। যদিও তার আগে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসি ৬ গোল করেন এবং ১টি গোলে সহায়তা করেন। যদিও বার্সেলোনা সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে বিদায় নেয়। মৌসুমে মেসি বার্সেলোনার হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ১৬ গোল করেন এবং ১৩টি গোলে সহায়তা করেন।

মেসির ১০ নম্বর জার্সি অর্জন



দল থেকে রোনালদিনিয়ো’র প্রস্থানের পর মেসি তার ১০ নম্বর জার্সি পেয়ে যান। এই মৌসুমে মেসি ২০০৮ ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার-এর পুরস্কারে ৬৭৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা দেল রে’র একটি খেলায় মেসি ২০০৯ সালে তার প্রথম হ্যাট্রিক করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, মেসি রেসিং স্যান্তেনদার এর বিপক্ষে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোল করেন। ঐ খেলায় ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও মেসির কর্তৃত্বে বার্সেলোনা ১–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে।