Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

সিনেমা বানাতে দম লাগে



"সুতপার ঠিকানা" নিয়ে প্রসুন রহমান যা বললেনঃ

‘আমি কিন্তু একই সঙ্গে পরিচালক ও প্রযোজক। ফলে ছবিটির প্রতি আমার দরদ একটু বেশিই। খুটিনাটি সবকিছুই পারফেক্টলি করার চেষ্টা করেছি। সময় নিয়ে কাজটা করেছি। আমার দেখা নারী আর তার ঠিকানা হীনতার গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আর বেসিক্যালি কাজটি নারী দিবস উপলক্ষ্যেই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা না হওয়ায় মা দিবসে মুক্তি দিয়েছি। আমরা তো আর ঐভাবে সিনেমা হল পাইনি তাই কয়েকটা সিনেপ্লেক্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আমার ‘সুতপার ঠিকানা’।



‘এটা আমাদের নারীদের গল্প। আমরা কি দেখি। আমাদের নারীরা বড় হয় বাবার বাড়ি, তারপর যায় স্বামীর বাড়ি, স্বামী মারা গেলে সন্তান বা ভাইয়ের বাড়ি কিন্তু তার নিজস্ব কোনো ঠিকানা থাকে না। এই বিষয়টিই সুতপার ঠিকানার মূল প্রেক্ষাপট। আর নারীর প্রতিরূপ হিসেবে আমরা আসলে মাকেই দেখি। নারী আমাদের প্রতিপালন করে বড় করেন। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের জীবনে নারী আসে। তাদের ভালোবাসায় আমরা সিক্ত হই। এই জায়গাগুলো সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখাতে চেয়েছি।’



কাদের দেখে দেখে মাথার ভেতরে সুতপাকে লালন করলেন প্রসূন রহমান?
কালক্ষেপণ না করেই বলা শুরু করলেন, ‘এই অবজার্ভেশনটা আমার দীর্ঘদিনের। আমি তো বড় হয়েছি নারীর নিঃশর্ত ভালোবাসা পেয়ে। মা, বোনেরা, খালাদের ভালোবাসায় বড় হয়েছি। তখন থেকেই তাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা লালন করে আসছি। বলে রাখি শুরুতে কিন্তু আমি সাহিত্যচর্চার মধ্যে ছিলাম। ২০০৩ সালে একটা কাব্যগল্প লিখি। আমরা অনেক কবিতা লেখি যেখানে গল্প থাকে। আমি একটু ডিফরেন্ট টাইপে লেখার চেষ্টা করি বলেই কাব্য গল্প। ২০০৭ সালে এ গল্পটা তারেক ভাইকে দেখাই। উনার পছন্দ হয়েছিল। উনি বলেছিলেন আগে আমার কাগজের ফুলটা হোক তারপর তোমারটা তুমি করো। আমার দুর্ভাগ্য যে উনাকে আমার কাজটা দেখাতে পারলাম না। তবে দেখাতে না পারলেও আমি বলবো তারেক মাসুদ আমার গাইড এবং ফিলোসোফার। আমার এই কাজের সঙ্গেও উনার স্পিরিটটা লেগে আছে। স্পিরিচুয়ালি উনি সবসময় আমার পাশে আছেন। আরেকটা কথা বলতে চাই এই ছবিটার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার মা।’



মিডিয়ায় এত অভিনেত্রী থাকতে অপর্ণাকেই কেন বেছে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রসূন আশ্রয় নিলেন পুরনো স্মৃতির,
‘সুতপার ঠিকানার মূল চরিত্র সুতপা। যে চরিত্রটি রূপায়ণ করেছেন অপর্ণা ঘোষ। এখানে একজন নারীর শৈশব, যৌবন এবং বৃদ্ধ বয়সের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম এই তিনটা স্টেইজে তিনটা ফেইস ব্যবহার করতে। কিন্তু পরে দেখলাম সেটা ইমোশনালি অনেক ব্রেক করে। যদি এই তিনটা স্টেইজকেই একজন ক্যারি করতে পারে তাহলে বেটার হয়। এই বিষয়টা আমার মাথায় আসার কারণ ছিল অনেক আগে একটা মঞ্চ নাটক দেখেছিলাম। নাটকের নাম ছিল ‘গ্যালিলিও’। আমি কিন্তু আজ থেকে আঠারো বছর আগের কথা বলছি। এই নাটকে আমি আলি জাকেরকে দেখেছি। দেড়ঘন্টার একটা নাটকে গ্র্যাজুয়ালি তিনি কিশোর থেকে যুবক হচ্ছেন যুবক থেকে বৃদ্ধ হচ্ছেন এবং এই দেড়ঘন্টার মধ্যেই তিনি পুরোটা নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। আমার ভাবনা ছিল এটা যদি একজনেই পুরোটা পারে তাহলে সেটা করা। এর জন্য অনেকগুলো নাম আসছে তার মধ্যে ওকেই আমাকে সবচেয়ে পটেনশিয়াল মনে হয়। এরপর তাকে নানাভাবে নানা ম্যাকআপে টেস্টও নেই।আমি আরেকটা বিষয় গুরুত্ব দেই যে শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিনয়ের প্রতি ডেডিকেটেড কে বশি। তাকে নিয়েই কাজ করার চেষ্টা করি। যে চরিত্রটাকে অনুভব করে সময় দেয়। ও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। চেষ্টা করেছে। আমিও ওকে সুযোগ করে দিয়েছি। ধরেন গান গাইছেন সামিনা চৌধুরী সেখানে তাকে নিয়ে গেছি সেটা নিজের মতো করে অনুধাবন যেন করতে পারে।’

শুরুতেই আপনি বলেছিলেন আপনি একই সঙ্গে প্রযোজক ও পরিচালক। এই দুই সত্তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
‘দেখেন, একজন প্রযোজকের কাজ শুধু টাকা লগ্নি করা নয়। একটি ছবির প্রতিটি পার্ট তাকে বুঝতে হয়। পরিচালক, আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান থেকে সবকিছু নিয়োগ দেওয়া একজন প্রযোজকের কাজ। বলতে গেলে সিনেমায় একজন প্রোডাকশন বয়ের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয় একজন প্রযোজককে। কিন্তু আমাদের দেশে কি দেখি, আমরা দেখি প্রযোজক টাকা লগ্নি করে বসে থাকেন তার আর কোন দায়িত্ব নেই। কিন্তু একজন প্রযোজককে যেমন আর্ট বুঝতে হবে তেমনি ব্যবসাটাও বুঝতে হবে। আর পরিচালক একটি ছবি নির্মাণ করবেন। তিনি তার গল্পটা শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলবেন পর্দায়। এ জায়গায় সে ডেডিকেটেড থাকবে।’



তাহলে একজন প্রযোজক ও পরিচালকের জায়গা থেকে আপনার চোখে সিনেমা কেমন হওয়া উচিত?
‘বিনোদন মানেই যে নাচগান বা সিনেমার পোস্টার মানেই যে নায়ককে অস্ত্র ধরে রাখতে হবে এমন নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই জীবন ঘনিষ্ঠ ছবি নির্মিত হচ্ছে। চলচ্চিত্র মানেই যে তা হতে হবে তা নয়। জীবন ঘনিষ্ঠ হলেই যে সেটা নাটক টেলিফিল্ম বলতে হবে তা কিন্তু নয়। ছবি হতে হবে। সিনেমা হয়ে উঠতে হবে। সিনেমা হয়ে ওঠার জায়গাটা অন্য। আবার সিনেমা নির্মাণ করে টেলিভিশনে প্রচার করে বলা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার, এটাও ঠিক নয়। চলচ্চিত্র টেলিভিশনের জন্য নয়, চলচ্চিত্র বড়পর্দায় দেখার জিনিস।’

আপনি বলেছেন চলচ্চিত্র হয়ে ওঠার ক্ষেত্রটা অন্য জায়গা । এই অন্য জায়গাটা কি?
‘এই অন্য জায়গাটা আসলে সাবজেক্টের উপর নির্ভর করে। চলচ্চিত্র যেহেতু বড়পর্দার জন্য সেজন্য বড়পর্দার জন্য কতটুকু ক্লোজআপ প্রয়োজন, কতটা গতির দরকার, বড়পর্দার জন্য আলাদা শর্টডিভিশন প্রয়োজন। সর্বপরি আলাদা কিছু কারিশমা দাবী করে সিনেমা। ঋত্তিক ঘটকের কথায় চলচ্চিত্র বানাতে আলাদা এলেম লাগে। তারেক মাসুদও ঐ একই কথা বলেন। আর আমি বলবো সিনেমা বানাতে দম লাগে। অনেক বেশি দম লাগে…