Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

ডায়াল এম ফর মার্ডার: হিচককের বিশ্ব সেরা থ্রিলার



বিশ্ব সিনেমার সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি হলিউড। ইচ্ছা থাকলেও পৃথিবীর এই প্রভাবশালী সিনেমা কারখানা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। আর সিনেমার এই কারখানাতেই জন্ম হয়েছে পৃথিবী সেরা সব সিনেমা, নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রী আর সিনেমা সম্পর্কিত কলাকূশলীদের। আর তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নির্মাতা ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন আলফ্রেড হিচকক। বিশ্ব সিনেমার অভিভাবকও বলা হয় তাঁকে। ‘সাইকো’, ‘দ্য বার্ড’ কিংবা ‘রেবেকা’র মতো অসংখ্য সিনেমার জনক হিচকক। আজ এই মহান নির্মাতার মৃত্যুবার্ষিকী, সে উপলক্ষ্যে থাকছে তার বিশ্ব জনপ্রিয় থ্রিলার সিনেমা ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’-নিয়ে আলোচনা।

অসম্ভব প্রিয়দের একজন হচ্ছেন নির্মাতা আলফ্রেড হিচকক। তাকে রহস্য বা থ্রিলারের জনক বলা হয় এবং তাকে সর্বকালের সেরা পরিচালকদের মাঝেও একজন বলে মান্য করা হয়। হিচককের ছবি দেখার আগে তার প্রচুর নাম ডাক শুনেছিলাম, সবচেয়ে বেশি শুনেছিলাম তার বিখ্যাত "সাইকো" ছবির কথা। সাদাকালো ছবি দেখার আগে তার প্রতি একধরনের অনীহা ছিল, কারণ জানিনা, সম্ভবত ছোটবেলা থেকে রঙ্গিন টিভি দেখে অভ্যাস, তাই মনে হয়! তো একদিন সাহস করে দেখে ফেললাম সাইকো, দেখার পর মাথা পুরোই আউলে গেলো! ৬০ এর দশকে এই মানুষ কিভাবে এমন অসাধারণ ছবি নির্মাণ করলেন! ভাবতে লাগলাম, প্রযুক্তির এই যুগে হিচকক বেঁচে থাকলে তো নাড়িয়ে দিতো!

যাইহোক, সাদাকালো সিনেমার প্রতি যে অনীহা ছিলো,তা একরকম দূর করে দিলো হিচককের ‘সাইকো’। তারপর একে একে হিচককের বাকিমুভিগুলো দেখা হয়েছে। সবগুলোই যেনো এক একটা মাস্টারপিস! তবে যেই ছবিটা সবচেয়ে বেশি অসাধারণ, যেই ছবিটা বিনা সন্দেহে বেস্ট, বেস্ট এবং বেস্ট থ্রিলার মুভি, তার নাম ‘ডায়াল এম ফোর মার্ডার’।


কাহিনীটা বলে নিলে পাঠকের একটু বুঝতে সুবিধা হওয়ার কথা যে, কি কারণে হিচককের নির্মাণে ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’ একটি বিশ্ব সেরা থ্রিলার ছবি।

টনি ওয়েন্ডিস (রে মিল্যান্ড) আর তার স্ত্রী মার্গট(গ্রেস কেলি) লন্ডনের একটা ফ্ল্যাটে থাকে। টনি তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরেই ব্যস্ত থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার স্ত্রী রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক মার্ক (রবার্ট কামিংস)এর সাথে পরকীয়া প্রেম করে চলেছে।

দুর্ভাগ্যবশত একদিন মার্গট এর একটি পার্স হারিয়ে যায় এবং তার ভেতর ছিল মার্ক এর দেওয়া একটা প্রণয় পত্র। সেই পার্স এর চিঠি কোন একভাবে টনির হাতে যায় । বিচক্ষণ টনি আস্তে আস্তে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম সম্পর্কে জেনে ফেলেন আর ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী কে খুন করার নিখুঁত পরিকল্পনা করেন।

যাকে দিয়ে তার স্ত্রীকে খুন করাবেন টনি, সে আসলে তারই ছোটবেলার সহপাঠি। তাকেও পরিকল্পনা করে ব্ল্যাকমেইল করে সবকিছু ঠিকঠাক করে টনি। রাত এগারোটায় পরিকল্পনা মতো স্ত্রীকে খুন করা হবে। ...টনি থাকবে টেলিফোনের একপাশে আর একপাশে তার স্ত্রী। এই পাশ থেকে তার স্ত্রীকে খুন করা হবে টনি ওপর পাশ থেকে শুনবে তার আর্তনাদ। যাকে বলে একদম সুপরিকল্পনা। সাপও মরবে কিন্তু লাঠিও ভাঙবে না!


কিন্তু এমন একটা অসাধারণ পরিকল্পনাও শুধু ‘কপালের লিখন যায় না খণ্ডণ’-এর জন্য একদম ভেস্তে যায়। শুধমাত্র ছোট্ট একটা অসতর্কতার জন্য? কি সেই অসতর্কতা? এমন নিখুঁত পরিকল্পনায় অকৃতকার্য হওয়ার পর ফের স্ত্রীকে মারতে টনি প্ল্যান-২ বানাতে মগ্ন হয়? কি সেই প্ল্যান-২? জানতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে বিশ্ব সেরা থ্রিলার ছবি ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’।

১০৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই মুভিতে আপনি এক সেকেন্ডের জন্যও চোখের পলক ফেলতে পারবেন না, এটা আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি! টানটান উত্তেজনার ছবি! সবার অভিনয় অসাধারণ! তবে যিনি সম্ভবত তার জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন এবং যেই চরিত্রে শুধু তাকে ছাড়া আর কাওকে মানাত না, তিনি হলেন টনি চরিত্রে রুপদানকারী রে মিলানড! কোনো বিশেষণ নাই তার অভিনয় দক্ষতা বুঝানোর জন্য! এটা সাংঘাতিক শক্ত স্নায়ুর একজন মানুষের চরিত্রে, একজন পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যানকারীর চরিত্রে তিনি যা দেখিয়েছেন তার যত প্রশংশা করবো ততটাই কম হবে!

১৯৯৮ সালে খোদ হলিউড এ " অ্যা পারফেক্ট মার্ডার" এই ছবির রিমেক হয় যাতে অভিনয় করেন মাইকেল ডগলাস এর মত অভিনেতা। এছাড়া ১৯৮৫ সালে বলিউড এ "আইতবার" এবং সেই বছরেই তামিল ছবি "চাভি" এবং ২০০২ সালে "হামরাজ" নামক ছবি মুক্তি পায় এই ছবির উপর অনুপ্রাণিত হয়ে। যদিও একটা ছবিও হিচককের ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’ ছবির ধারে কাছেও যায়নি, এমনকি হলিউডে নির্মিত ‘অ্যা পারফেক্ট মার্ডার’ ও না!


এক নজরে আলফ্রেড হিচকক এবং ‘ডায়াল: এম ফর মার্ডার’:

নাম: স্যার অ্যালফ্রেড যোসেফ হিচকক
একজন ইংরেজ চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র ইন্ড্রাস্টিতে তিনি নির্বাক ও সবাক দুইধরনের চলচ্চিত্র নির্মান করেই সাফল্য পেয়েছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে সাফল্য পাওয়ার পর ১৯৩৯ সালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে হলিউডে চলে আসেন এবং তিনি ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।

ডায়াল: এম ফর মার্ডার
৬৭,৪৭৯ জন ইউজার আর ক্রিটিকদের কাছ থেকে পাওয়া এই ছবির আইএমডিবি রেটিং ৮ দশমিক এক! আইএমডিবি টপ ২৫০ এ এই ছবির অবস্থান ১৬৬ তম! রটেন টমেটো ছবিকে দিয়েছে ৮৮% রেটিং।

AFI's এর ১০০ বছরের নির্বাচিত বেস্ট ১০০ থ্রিলারের মাঝে এই ছবির অবস্থান ৪৮ তম। AFI's এর ‘শীর্ষ দশ’ mystery film এর লিস্টে এই ছবির অবস্থান নবম!