Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়েছে





দেশের ইতিহাসে চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মর থেংগারি’ বা মাই বাইসাইকেল। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন অং রাখাইন। গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত ১৪তম ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪২১’ এ চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে।

নির্মাতা অং রাখাইন একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র এবং নাট্য আন্দোলনের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘মর থেংগারি’ তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তিনি জানান, চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয় ২০০২ সালে। কিন্তু বাকি কাজ সম্পন্ন করে প্রথম প্রদর্শনী হয় ২০১৪ সালের ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যাল এ। আদিবাসী মানুষের জীবন ও তাদের যাপনের নানা সংগ্রামচিত্র চলচ্চিত্রটিতে ফুটে উঠেছে।

পরবর্তী চলচ্চিত্রের কাজে হাত দিয়েছেন অং। এবার আদিবাসী সম্প্রদায়কে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন তিনি। এ বছরই চলচ্চিত্রটির কাজে হাত দিতে যাচ্ছেন তিনি।

‘মর থেংগারি (মাই বাইসাইকেল)’ চলচ্চিত্রের কাহিনিসংক্ষেপ:
শহরে টিকতে না পেরে আবার পাহাড়ের কোলে গ্রামে ফিরে আসে এক প্রান্তিক মানুষ কমল, সাথে একমাত্র সম্বল একটি সাইকেল। কমলের ছোট ছেলেটা বাবা আর সাইকেলে উল্লসিত হয়ে উঠলেও, স্ত্রী তার এই খালি হাতে বাড়ি ফেরা মোটেও ভালভাবে নিতে পারে না। কমল ঠিক করে সে আর শহরে যাবে না। শহরে গিয়েও তো খালি হাতেই ফেরত আসতে হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ে কাজ কোথায়। যেখানে মাটি ছিল সেখানে এখন পানি। এইখানে থাকলে অন্যদের মতো বসে বসে মদ খাওয়া আর গ্যাঞ্জাম হল্লা করা ছাড়া কাজ খুবই কম। কিন্তু কোণঠাসা মানুষই উত্তরণের উপায় খুঁজে নেয়। সে বুদ্ধি করে তার সাইকেল নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শুরু করে। মানুষদের তার সাইকেলে এগিয়ে দেবার প্রস্তাব দিতে থাকে যাকে পায় তাকেই। প্রথমে তো কেউ সাইকেলে উঠতেই চায় না। দেশের এই কোণায় কস্মিনকালেও কেউ কখনও সাইকেল দেখেছে? ধীরে ধীরে একজন একজন করে তার সাইকেলে উঠতে থাকে, কমলও তাদের বাজারে কি বাড়িতে এগিয়ে দেয়। কিন্তু কমল কারো কাছে কিছু চাইতে পারে না; কেউ কেউ টাকা দেয়, কেউ কেউ আবার দেয় না।




পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পথে বিপদও কম নয়। দুর্ঘটনা ঘটে, এবং যাত্রী আহতও হয়। সালিশে সাজাও হয় কমলের। বুড়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে! আর যেহেতু পাহাড়ে যানবাহনের কারবার খুবই বিপদজনক, আর ও তো কারও সাথে কোনো আলোচনাও করেনি, সেহেতু সাইকেলে আর কোনো মানুষ ওঠানো নিষেধ, তবে মালপত্র নেয়া যাবে। একা কমল চুপ করে শোনে, মেনেও নেয় হয়তো, তার উন্নতি যে কারও জন্য চোখের কাঁটা হয়ে যাচ্ছে তা সে বেশ বুঝতে পারে। এবার তাকে সাইকেলে বিভিন্ন ধরনের মালামাল পৌঁছে দিতে দেখা যায়। বিনিময়ে টাকা নেয়। সে টাকায় বাজার সদাই করে সংসার চালায়, ছেলেকে স্কুলে দেয়। কিন্তু তার যে আরেকটা সামাজিক দায়িত্ব আছে সেটাও কেউ কেউ তাকে মনে করিয়ে দেয়- গ্রামের দাদাদের দিকেও একটু নজর-টজর দেয়ার কথা, বিভিন্ন সংগঠনকে কিছু চাঁদা দেয়ার কথা ইত্যাদি। কমল স্রেফ না করে দেয়, এতো কষ্টের কামাই, প্রশ্নই আসে না। আর পরিণতিতে নেমে আসে তার সাইকেলটির এর উপর হামলা। কারা যেনো রাতের অন্ধকারে আসে কমলের স্বপ্ন ছিনিয়ে নিতে। ভাঙা সাইকেলটা পড়ে থাকে সামনেই।

আদিবাসী চাকমা সমাজের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে চাকমাভাষায় নির্মিত এ প্রথম চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।