Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ডালিম গাছের নীচে চিরনিদ্রায় শায়িত পল্লীকবি





গ্রামের নাম অম্বিকাপুর । সাধারন মানুষের জণ্য এক তীর্থস্থান যেন । ক্ষীনতোয়া কুমার নদের তীরে নিভৃত এই পল্লী ফরিদপুর শহর থেকে খুব কাছেই । মুল শহর থেকে বড়জোর দুই কিলোমিটার হবে এর দূরত্ব ! পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের বাড়ি এই গ্রামে । প্রতিদিন অনেক মানুষ দেখতে আসেন এই বাড়ি । নকশীকাঁথার মাঠের কবিকে নীরবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । কবি লিখেছিলেন ,‘এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে /তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে ’। এখন তাঁর নিজের কবরের শিয়রেই রঙিন ফুল আর সবুজ পাতায় ভরা ডালিম গাছ । তার ছায়াশীতল স্নেহে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত । বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ল কবরস্থান । উঁচু, বাঁধানো । প্রবেশপথে চোখে পড়ে কবি জসীম উদ্দীনের লেখা কবিতাংশ । ‘এই নদীতটে বরষ বরষ পুলের মহোৎসবে /আসিবে যাহারা তাহাদের মাঝে মোর নাম নাহি রবে / সেদিন কাহারো পড়িবে না মনে, অভাগা গাঁয়ের কবি/ জীবনের কোন কনকবেলায় দেখেছিল কার ছবি। কবির বাবা-মা ,ভাই,পুএ, নাতির কবর আছে এখানে । কবরস্থানে পুবপাশের গাছপালা ও ফুলবাগানের মাঝে আরেকটি জায়গা এখানে আগত মানুষের নজর কাড়ে । সেটি হলো জাতীয় কবি নজরুল ইসলমের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা। বরেন্য দুই কবির পুন্য স্মৃতিসিক্ত এই জায়গাটুকু কবির বাড়িতে ঢোকার বা দিঁয়ে পড়ে কলাগাছ, ঘাস, জবা ফুলের গাছ ও পেঁপে গাছের সমাহার এখানে । সাইনবোর্ডে এই স্থানমাহাত্ম্য লেখা আছে কবির নিজেস্ব জীবনীতে । তিনি লিখেছেন , “ কবি নজরুল ইসলামকে আমাদের নদীতীরে বাশঁবনের ছায়াতলে মাদুর পাতিয়া দিলাম ( এই স্থান ) ....আধা ঘন্টার মধ্যে কবি একটি অপূর্ব কবিতা লিখিয়া ফেলিলেন ‘আকাশেতে একলা দোলে একাদশীর চাঁদ / নদীর তীরে ডিঙি তরী পথিক-ধরা ফাঁদ ।

”অম্বিকাপুরে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের বাড়ি । বাঁ থেকে কবি নজরুলের স্মৃতি জড়ানো স্থান , চৌচালা ঘর ছিল কবির ঘর , কবির কবরের দক্ষিন পাশে ডালিম গাছ , বাড়ির লাগোয়া খোলা মাঠে বিশ্রামের জায়গা ‘রাখালী ছায়াঘর ’। এই মাঠে প্রতি বছর জসীম পল্লীমেলা হয়ে থাকে নদীর তীরে বিরাট খোলা জায়গা । এর নাম রাখা হয়েছে জসীম উদ্যান । এখানে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে কবির জম্মতিথিতে পক্ষকালের মেলা বসে। পুবে-পশ্চিমে লম্বাকৃতি এই জায়গায় জসীম পল্লীমেলায় বহু লোকসমাগম ঘটে থাকে । রোধ-বৃষ্টি থেকে আশ্রয় নেয়া ও বিশ্রমের জন্য ছাদতলা পাকা ঘর রয়েছে কয়েকটি এগুলোর নামও কবির কাব্য এবং কাব্যের চরিএ থেকে নেয়া । যেমন , রাখালী ছায়াঘর; সাজু ছায়াঘর । বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখলাম পুব পাশের যে চৌচালা টিনের ঘর , সেটির দরজায় লেখা ’ কবির বাসভবন ’। দরজা তালাবদ্ধ । ঠিক উল্টোদিকে পশ্চিমে কবির সেজ ভাই ,দক্ষিন পাশে বড় ভাই এবং উওর দিকে (এটি একতলা পাকা ঘর ) কবির বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের ঘর । কবির ঘর যেহেতু তালাবন্দী , সেহেতু দর্শনার্থীরা সেটা দেখার সুযোগ পান না । দরজা ও জানালার ফাঁক দিয়ে সামান্যটুকুই দেখলাম-খাটের উপর মশারি , কয়েকটি ফটোগ্রাফ । বাড়ির দক্ষিন পাশে বড়সড় সফেদা গাছ , গুঁড়িতে সাইনবোর্ড আঁটা –‘শবির লাগানো গাছ ’ । 

 কবির বাড়ি দেখা যায় গভির নলকুপ , তাতে আর্সেনিক দূষন রয়েছে, সেই লাল চিহ্ন দেয়া । নলকুপের গায়ে লেখা বিষাক্ত পানি । পাশেই পাতকুয়ো ,লেখা আছে আর্সেনিক মুক্ত পানি । এই স্থাপন করা হয়েছে কবি কন্যা বেগম হাসনা জসীম উদ্দীন মওদুদের এনজিও কার্ডমার উদ্যেগে। অদূরে আছে গনশৌচাগার , জসীম পল্লীমেলায় আগত লোকজনের ব্যবহারের জন্য। কবির বাড়ি হবে বিঘা চারেকের মতো । কবির পরিবারের চাষের জমি ছিল ৩৩বিঘার মতো ।



কবি জসীম উদ্দীন কেমন মানুষ ছিলেন ? কবির মতো লোক পাই নাই আমার এই জীবনে । গ্রামের পোলাপানরে খুবই ভালোবাসতো । কবি আইসা ধুলার মধ্যেই বইসা পড়ত । গল্পগুজব কইরা শেষে জামাকাপড়ের ধুলা হাতে ঝাইড়া লইত চকলেট খাওয়াইত আমাদের সবাইকে , উপস্থিত যারা থাকত সবাইরে । দুঃখ এইটাই , কবির ছেলেমেয়েদের কেউই কবি হইল না!’” প্রতিদিনই কী লোক আসে এখনে ? জানতে চাইলে তিনি বলেন ,‘ বগুড়া , রাজশাহী, বরিশাল দেশের কত কত জায়গা থাইকা লোক আসে । একবার তো মেলেটারি মেজর পর্যন্ত আসছে । ডেইলি পাঁচ-সাত জন তো আসেই । কোন কোন সময় বাস ভইরা লোক আসে । (কথাগুলো বলেন, সোনাউল্লাহ শেখ নামে একজন ৫০-৫৫বছরেরল লোক)আর কথাগুলোর প্রমান মেলে কবির বাড়িতে থাকা অবস্থায় । সফেদা গাছের তলায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী স্থানীয় মেয়েদের সেলাই ও নকশীকাঁথা বুননের প্রশিক্ষন দেন । প্রতিদিন তিন ঘন্টা করে ক্লাস । কবির পুএ জামাল আনোয়ার এই প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন । প্রশিক্ষক ভদ্রমহিলা জানালেন , মেয়েরা এখানে ফ্রী কাজ শেখে ছাএী সংখ্যা বিশ । প্রশিক্ষন নিয়ে অনেক মেয়েই স্বনির্ভর হতে পেরেছে , দাঁড়িয়েছে নিজের পায়ে এক শিক্ষার্থী চম্পা বললেন , বিশ্বাস আছে এই কাজ শিখলে অবশ্যই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব অম্বিকাপুর বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে রেললাইন । ট্রেন আর চলে না এখন । রেলপথ শুধুই স্মৃতি ! রেলব্রিজের উওর পাশে কুমার নদের পাড়ে ‘সোজনবাদিয়ার ঘাট । কবির জম্মশতবর্ষে এই ঘাট বাঁধানো হয়েছে সরকারী উদ্যেগে , সেটা ২০০২ সালে ।

অম্বিকাপুর বাজার পৌরসভার অন্তগর্ত হলেও কবির বাড়ি পৌরসভার মধ্যে পরেনি । এক রিকশাচালক বললেন বিজ্ঞের মতো হেসে , জসীম উদ্দীন পল্লীকবি তো, সেজন্য তাঁর বাড়ি পল্লীতেই রাখা হয়েছে !