Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

গোপালগঞ্জের শ্রীধাম ওড়াকান্দির তীর্থপীঠ



গোপাল গঞ্জের শ্রীধাম ওড়াকান্দি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী তীর্থপীঠ। পুন্যভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দি পুর্নব্রম্ম হরিচাঁন ঠাকুরের লীলাক্ষেত্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মহাতীর্থ হিসেবে সনাতনধর্ম্মাবলম্বী হিন্দুদের কাছে এক পবিত্রস্থান। প্রায়২০০বছর আগে দলিত , নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে পরমানবতার আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্নব্রম্ম হরিচাঁদ ঠাকুর ১২১৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের মধু কৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে ব্রহ্ম মূহুর্তে মহাবারুণীর দিনে কাশীয়ানী উপজেলার শাফলীডাঙ্গা গ্রামে জম্ম গ্রহন করেন। মাত্র ৬৬বছর বয়সে তিনি ১২৮৪ সালে জন্মের একই তিথিতে মানবলীলা সম্বরন করেন। পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের জম্মের জন্য শাফলীডাঙ্গা গ্রাম ধন্য। এর পাশ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। গোপালগঞ্জ জেলার সদর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উওর-পশ্চিমে অবস্থিত শ্রীধাম ওড়াকান্দি সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে একটি পরিচিত নাম। হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্যনাম “হরি” হলেও ভক্তরা তাকে হরিচাদ বলে ডাকতেন। বাবাযশোবস্ত ঠাকুরের ৫ ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। হরিচাঁদ ঠাকুর শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দলিত শ্রেনীর মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। তার মতার্শে মানুষ জাগ্রত হয়। আস্তে আস্তে হরিচাঁদ ঠাকুরের নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

২০০বছরের ঐতিহ্য ধারন করে শ্রীধাম ওড়াকান্দি এখনো মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে প্রানাধিক হয়ে আছে। হরিচাঁদ ঠাকুরের মতাদর্শ অনুসারীদেও বলা হয় মতুয়া। প্রতি বছর ঠাকুরের জম্ম ও মৃত্যুতিথিতে মহা বারুনীর দিনে ওড়াকান্দি শ্রীধামে বিরাট স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পুণ্য লাভের আশায় অন্তত ১০ লাখ পূন্যার্র্থী এ স্নানোৎসবে অংশ নেন। মানুষের পদভাওে শ্রীধাম হয়ে ওঠে মুখরিত। এ বছর অন্যান্য বছরের ন্যায় শ্রীশ্রী হরি চাদঁ ঠাকুরের জম্ম ও মৃত্যু তিথিতে শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে বিশাল মেলা বসে। পালিত হয়েছে মহাধুম ধামে ঠাকুরের ১৯৯ তম জম্মোৎসব। তার জম্মোৎসব গোপলগঞ্জের ওড়াকান্দিতে ৩দিন ব্যাপী মহাবারুনীর মেলায় লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ হয়। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে পদব্রজে ঢাক ঢোল বাজাতে বাজাতে লাল নিশাণ উড়িয়ে হরিবোল হরিবোল ধ্বনিতে আকাশ কাপিয়ে মিছিল করতে করতে ভক্তরা মেলায় আসেন। সমবেত হন মন্দিরের সামনে। অংশগ্রহন করেন পূর্ণ্য স্নানে।
শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির এ স্নানোৎসবে ভক্তদেও স্নানের জন্য কামনা সাগর ও শান্তি সাগর নামে দুটি পুকুর রয়েছে। ঠাকুরের জম্মতিথির শুভ মুহুর্তে গদিনসীন ঠাকুর মতুয়াচার্য পদ্ম্নাভ ঠাকুরের জন্মতিথির কামনা সরোবরে স্নান করে স্নানোৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপর চলে অবিরাম ভক্তদের স্নান। চলে পরের দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত। ভক্তরা স্নান সেরে টাকা পয়সা কিংবা ধানের ছড়া ও মানতের দ্রব্য সামগ্রী ঠাকুরের মন্দিরে দিয়ে প্রনাম সেরে যে যার ঘরে চলে যান। স্নানকে কেন্দ্র করে ৩দিন ব্যাপী আয়োজন করা হয় মহা বারুনীর মেলা। মহা বাবুনীর এমেলায় ধর্মীয় আবহ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে লোকজ ঐতিহ্য। এ মেলা জেলার ঐতিহ্যের ধারক বাহক। ধর্ম ,বর্ণ, গোত্র,নির্বিশেষে এলাকার সব মানুষের মিলন মেলা। এ মেলায় লোকজ ঐতিহ্যে তথা বেত ,বাঁশ, নাগর দোলা, মৃৎ, ব্রোঞ্জ,পুতুল নাচ , সার্কাস, ও কুটির শিল্পের ব্যাপক সমাবেশ ঘটে ।বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে এমেলায়। কোনো কোনো বছর মন্ত্রী সাংসদ এমন কি বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা আসেন এ মেলায় ভারতের পশ্চিম বাংলা ও আসাম থেকে মতুয়া প্রতিনিধিরা এ মেলায় অংশ গ্রহন নেন। লাখ লাখ ভক্তের পদ ভাওে ও হরিবোল ধ্বনিতে ওড়াকান্দি হয়ে ওঠেমুখরিত ও জাগ্রত তীর্থ মতুয়াদেও কাছে মহা বারুনী স্নান ও ঠাকুরের দর্শন তীর্থ ভ্রমনের সমতুল্য।
মহাবারুনীর মেলায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বেচা কেনা হয়। গৃহস্থ সামগ্রী, কুটির শিল্প দ্রব্যাদি, তৈস পত্রাদি সহ নানা জাতের পন্যসামগ্রী ও মনোহারি মালামালে কেনা বেছা হয়। এখানে রয়েছে ছোট বড় ৫টি মন্দির। প্রধান মন্দির হচ্ছে হরিচাঁদ মন্দির ও গুরুচাঁদ মন্দির। এছাড়া ৩টি চন্ডী মন্দির রয়েছে। মতুয়া প্রেস ও ঠাকুর প্রেস নামে ২টি প্রেস রয়েছে। এ দুটি প্রেস থেকে ঠাকুরের বাণী সংবলিত বিভিন্ন পুস্তিকা ও জীবনী গ্রন্থ এবং মতুয়া সুহৃদ, মতুয়া দর্শন ও হরিদর্শন নামে ৩টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে থাকে।