Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ঝিনাই নদীর উৎসমুখ জঙ্গলদি ভ্রমণ






ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বেরিয়ে ঝিনাই নদী যমুনায় পড়েছে। উৎস মুখ জঙ্গলদি। জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার পাঁচ নম্বর চর অঞ্চল। অপূর্ব নিঃসর্গ। উত্তরের দিগন্ত ছুঁয়ে মেঘালয়ের গারো পাহাড় । দশানী নদীর মোহনা। দীর্ঘ দিগন্ত জুড়ে মেঘেদের খেলা। উড়ালী পাখির কিচিরমিচির। ধু-ধু বালি প্রান্তরে বাদাম, তিষি, যব, মসুর, কলাইয়ের ক্ষেত। নিরিবিলি এক সবুজ স্বর্গ সীমা। দশদিক জুড়েই আবহমান গ্রাম বাংলার নিসর্গের চালচিত্র। প্রাণজুড়ানো মিহি সুর বয়ে যায় বুকে যে কোন পর্যটকদের প্রকৃতি প্রেমাকর্ষণকে জাগিয়ে তুলবে ক্ষণিকেই। এখানকার দৃশ্যপট প্রতি ঋতুতেই পাল্টে যায়। বর্ষায় দশানী-ব্রহ্মপুত্র-ঝিনাই নদীর জল কল্লোল নদী দৃশ্য। শরতে কাশফুলের আদর কোমল দৃশ্য পাহাড় এবং নদী পর্যটকদের মন পাগল করে তুলবে প্রকৃতির আশ্চর্য জাদুতে!

দলযাত্রা অঞ্চল ইতিহাস
শীতভোরে পদযাত্রায় রওয়ানা হই ঝিনাই নদীর উৎস মুখ জঙ্গলদির উদ্দেশ্যে। স্বপ্ন ঘুমে বিভোর মেলান্দহ জনপদের সব মানুষ। কুয়াশায় আবছা পথ। রাতজাগা পাখির কিচিরমিচির। পদশব্দ তালে পথচলা। ১০ কি.মি. পথ।

রেইললাইন পেরিয়ে কিছুটা যেতে যেতে পথেই প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। শরীর গরম এতেও একরকম আনন্দের অনুভব। সহযোগে সহপ্রেমে সহমর্মিতায় এক রকম হƒদয় ঘষাঘষিতে বাড়িয়ে তোলে উদ্যম। জালালাবাদ বর্তমানে জালালপুর গ্রাম ছাড়িয়ে সাধুপুর ভাঙা ব্রিজে যেতে যেতে পথেই পুব আকাশ লাল হয়ে সূর্যোদয় হচ্ছে। অপূর্ব দৃশ্য বড় থালার মতো সকালের লাল সূর্য দিগন্ত ছুঁয়ে। খোলা আকাশের নিচে এ এক সম্মোহনী দৃশ্য। ধীরে ধীরে হাঁটা পথে এসে পৌঁছলাম জঙ্গলদি বহিরচর। ঝিনাই নদীর উৎস মুখে। উত্তরের গারো পাহার থেকে দশআনী নদী এসে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে। নদের দক্ষিণ পাড় ভেঙে ব্রহ্মপুত্র বুক থেকে প্রবাহ উৎসারিত হয়ে ঝিনাই নদী ছুটেছে প্রবলা যমুনা নদীর বুকে। সূর্যোদয়ে এবং সূর্যাস্তে এ নির্জন নিসর্গ হয়ে ওঠে নয়নাভিরাম পর্যটন স্বর্গ। এ নির্জনতায় মোহনার গোপন অঞ্চলে ডাকাতের ঘোপ চর ছিল ব্রিটিশবিরোধী দলের সন্ন্যাসী- ফকির বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয়। শুধু তাই নয় ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি সেনাদের গোপন ঘাঁটিও ছিল। এখান থেকে নৌপথে দুর্মুঠ পীর আউলিয়া শাহ কামালের মাজার দরগা শরিফে যাওয়া যায়, দূরত্ব ১০ কি.মি.। মেলান্দহে ডাক বাংলোয় রাতে ফিরে গিয়ে সিএনজিতে কাপাশহটিতে গান্ধী আশ্রম ও মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর দেখা যায়। একই পথে মেলান্দহ থেকে ২ কি.মি. দূরত্বে আলাই পাড়ের বাড়ির অঙ্গনে আমগাছে বক, সারস, পানকৌরির মুক্তকুঞ্জ মেলা দেখা যাবে পথে। সব মিলিয়েই মেলা আনন্দ মেলান্দহের এই অবকাশ পর্যটনে।

পর্বতারোহণের কৌশল অনুশীলনের জন্য নদীর খাড়া পাড় বেশ সুন্দর। থ্রি পয়েন্ট ফ্রি হ্যান্ড ক্লাইম্বিং, ঝুলন্ত বালুকা দেয়ালে ট্র্যাভার্স প্র্যাকটিস, দড়ি সাহায্যে র্যাপেলিং করে অবতরণ করা বালক বালিকাদের জন্য বেশ মনোগ্রাহী থ্রিলিং এক্সারসাইজ। প্রাইমারি ছাত্রছাত্রীদের জন্য চড়–ইভাতি ও শিক্ষা সফর এবং প্রাথমিকভাবে পাহাড় চড়ার আদর্শ প্রশিক্ষণ স্থান। এখানে পর্যটন কাঠ বাংলো (লগ-হাউস) নির্মাণ করলে অবকাশ যাপনের জন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব বাড়বে। এখান থেকে মেঘালয় পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য এবং সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত নীরব নিসর্গে মনমোহনীয় দৃশ্য। তাই ঝিনাই নদীর উৎসমুখে পর্যটকদের অমূল্য আকর্ষণ রয়েছে নতুনের ডাকে।
ঢাকা থেকে আসবেন কিভাবে

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ইন্টারসিটির টিকিট কাটুন মেলান্দহ পর্যন্ত। ঢাকা মহাখালী থেকে রাজীব বাসে মেলান্দহ আসুন। থাকবেন মেলান্দহ ডাক বাংলোয়। দুদিনের অবকাশ যাপন করে পথে পথে ঘুড়ে ঝিনাই নদীর উৎস মুখ জঙ্গলদি পর্যটন করে যান।