Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

জব্বলপুর: ইতিহাসের নগরী, পাথরের নগরী



ভারতের মধ্যপ্রদেশের শিল্পশহর জবলপুর, যা আসলে জব্বলপুর নামের পরিচিত। আরবি ভাষায় 'জব্বল' শব্দের অর্থ পাথর। জব্বলপুর হলো পাথুরে শহর। বিচিত্র আকৃতির ক্ষয়িঞ্চু পাথরের পাহাড় তার চারদিকে। এক সময় এখানে ছিল কালচুরি আর গোন্ড রাজাদের রাজধানী। শহরের একধারে রয়েছে গোন্ড রাজাদের তৈরি মদনমোহন দুর্গ। পাহাড়তলির পরিচ্ছন্ন বসতি ছাড়িয়ে টানা চড়াইপথ উঠে গিয়েছে চূড়া পর্যন্ত। কোথাও সিঁড়ি, কোথাও ঢাল। পাহাড়ের উপর মদনমোহন কেল্লা, রানি দুর্গাবতীর প্রাসাদ সময়ের আঘাতে ভেঙ্গে পড়েছে। বারো শতকে গোন্ড রাজারা এখান থেকেই শাসন করতেন তাদের গোন্ডয়ানা রাজ্য। দুর্গ দেখে পাহাড়ের মাঝামাঝি নেমে এলে হাতের বাঁ দিকে পড়বে শিবের মহামন্দির। গুহাটা অনেকটা ছোটখাট ঘরের মতো, তার মাঝে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ।

জব্বলপুর শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূর ভেড়াঘাট। যেখানে প্রকৃতির কয়েকটি ভয়ঙ্কর সুন্দর সৃষ্টি দেখার জন্য ভিড় করেন দেশ-বিদেশের বহু মানুষ। পাথরে বাঁধানো চওড়া রাস্তা পৌঁছেছে নদীর ধারে। পথের শেষে ধুঁয়াধার জলপ্রপাত। স্থানীয় মানুষের কাছে গঙ্গার মতো পবিত্র নর্মদা নদী এখানে জলপ্রপাতের রূপ নিয়ে, পাথরের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে আছড়ে, অনেক নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তাতে বহু দূর পর্যন্ত ধোঁয়ার মতো জলকণা উড়ছে বলেই নর্মদা প্রপাতের আরেক নাম 'ধুঁয়াধার' জলপ্রপাত। দাঁড়িয়ে থেকে সেই প্রপাত দেখার জন্য নিরাপদ দূরত্বে নদীর উপর রেলিংঘেরা ভাসমান প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। বৃষ্টির মতো উড়ন্ত জলকণা প্রতিনিয়ত এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে শরীর। কয়েকশো মিটার দূরে আরেকটি টিলার উপরে রয়েছে আরেকটি ভিউ প্ল্যাটফর্ম।

ধুঁয়াধার জলপ্রপাত থেকে ১ কিলিমিটার দূরে চৌষট্টিযোগিনী মন্দির। বড় বড় গাছে ভরা এক পাহাড়ের মাথায়। ১০৮টি সিঁড়ি বেয়ে ওঠার পর সেখানে সমতল চূড়া। উঁচু শিখরওয়া পাথরের তৈরি মন্দির। এই চৌষট্টিযোগিনী মন্দির খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে তৈরি। কেয়ূরবর্ষ নামে জনৈক কালচুরি রাজা যা তৈরি করিয়েছিলেন। মন্দির থেকে বেরিয়ে সামনের চাতালে নামলে, দূরে অনেক নিচে নর্মদা নদীর একটা বাঁক দেখা যায়। সেই বাঁকের মুখে নদীতীরে সাদা রঙের আর এক মন্দির। তার চূড়া তিন-চারতলার সমান উঁচু। জব্বলপুরের বিশেষ দর্শনীয় স্থান মার্বেল রক দেখার জন্য পাহাড় থেকে নেমে ওই জায়গাটিতেই যেতে হবে। নর্মদা ঘাটে পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে নানা ধরনের নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে মার্বেল রক দেখার জন্য। নর্মদা নদীর পাড়ে মার্বেল রক প্রকৃতির অনন্য এক সৃষ্টি। আসলে এটা ম্যাগনেসিয়াম বা চুনাপাথরের একটি খাড়া পাহাড়। পাথরের খাঁজে সূর্যের আলো পড়লে সেখান থেকে বিচ্ছুরিত হয় নানা রং। আরো দূরে গেলে একেবারে সাদা। তবে মার্বেল রকের রূপ না কি আরো খোলতাই হয় পূর্ণিমার রাতে। তখন রাতভর পাওয়া যায় নৌকা।