Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

চট্টগ্রাম গেলে যা যা দেখে আসতে পারেন



সীতাকুণ্ড :

চট্টগ্রামের মূল শহরে প্রবেশের আগেই সীতাকুণ্ড। বাসে বসেই দেখা যায় সুন্দর কিছু পাহাড়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ জায়গাটির গুরুত্ব অনেক। রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীর অন্যতম পটভূমি সীতাকুণ্ড। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ স্থান কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির। বৌদ্ধমন্দিরে গৌতম বৌদ্ধের পায়ের ছাপ রয়েছে। চন্দ্রনাথ মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব মানুষের পছন্দের জায়গা। এটি অবস্থিত পাহাড়চূড়ায়। বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে সিভা চতুর্দশী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

বার আউলিয়ার মাজার :

প্রাচীন বাংলায় এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আগমন ঘটে বারো ভূঁইয়ার। বারো আউলিয়ার মৃত্যুর পর তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে ওঠে বারো আউলিয়া মাজার। মাজারটি রাস্তার পাশেই।

মিলিটারি একাডেমি :

বিএমএ বা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি অবস্থিত ভাটিয়ারিতে। সারাদেশ থেকে আসা নবীন মিলিটারি সদস্যদের এখানেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

কৈবল্যধাম :

চট্টগ্রাম শহরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে পুরনো ও সুবিশাল তীর্থস্থান হচ্ছে কৈবল্যধাম। এটি পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত।

রানী রাসমণি বিচ :

প্রায় বছর তিনেক ধরে এটি জমে উঠেছে। পর্যটকরা এ স্পটটির কথা এখনও তেমন একটা জানেন না। মূলত স্থানীয় জনগণ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষজনই এখানে অবকাশযাপন করতে আসে। কর্ণফুলী নদীর তীরে বিশাল এরিয়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এটি। এছাড়া এখানে রয়েছে সুন্দর একটি ঝাউবন।

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত :

সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে দ্বিতীয় কক্সবাজার হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পৌঁছার আগে চোখে পড়বে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে ঝাউগাছের সারি।

জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর :

এশিয়া মহাদেশের দুটি জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের একটি অবস্থিত চট্টগ্রামে। এটি নগরীর আগ্রাবাদে অবস্থিত। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। এতে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, নানা কৃষ্টি-আচার। আরও রয়েছে ভিনদেশী সংস্কৃতির কিছু নমুনা।

ইকোপার্ক :

সীতাকুণ্ড থানার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত ইকোপার্ক। ৯৯৬ একরের এ উঁচু-নিচু পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং নানা ধরনের পশুপাখি।

ফয়েস লেক :

বন্দরনগরীর অন্যতম আকর্ষণ ফয়’স লেক। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে রেলকর্মীদের পানির চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে এলাকাটি। কেউ কেউ এটিকে প্রাকৃতিক লেক ভেবে ভুল করে। আসলে এটি কৃত্রিম লেক। স্থাপিত হয়েছে ১৯২৭ সালে। পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে বিনোদনকেন্দ্র। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে নাতিদীর্ঘ লেক, লেকের এপারে-ওপারে সৌন্দর্য নিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড় এ দৃশ্য সহজেই মুগ্ধ করার মতো।

ফয়েস লেকের মূল প্রবেশ গেটের বিপরীত দিকেই রয়েছে ইউএসটিসি তথা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চুয়েট ইঞ্জিনিয়ার ইউনিভার্সিটি। এগুলো ফেলে জাকির হোসেন রোড ধরে মিনিট দুয়েক হাঁটলেই চট্টগ্রাম টেলিভিশন ভবন। ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানই গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর যা নজরকাড়ার মতো।

এগুলো হাতের ডানদিকে। সিটিভি ছাড়িয়ে সামান্য একটু এগোলেই একাত্তরের বৃহৎ বধ্যভূমি। বধ্যভূমি বর্তমানে বাউন্ডারি করা রয়েছে। বধ্যভূমির পরই ওয়ারলেস নামক একটি জায়গা। এখানে রয়েছে ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি, সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হাঁস-মুরগির খামার। এগুলো ছাড়িয়ে একটু দূরেই বিএডিসি তথা বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। মিনিট দশেক হাঁটার পর চোখে পড়বে নয়নাভিরাম পাহাড়শ্রেণী। এটা ফয়’স লেকের বাউন্ডারি করা পাহাড়েরই অবশিষ্ট অংশ। পার্থক্য হচ্ছে, এখানে উঠতে টিকিট কাটতে হবে না! স্থানীয় জনগণের আন্তরিকতাও মুগ্ধ করবে। একটু সামনে পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ। সম্পূর্ণ কলেজ এবং সুবিশাল ক্যাম্পাস সবই পাহাড়ে। ঝাউতলা থেকে রিকশায় ১০ টাকা ভাড়া পাহাড়তলী পোস্ট অফিস এবং রেলওয়ে স্কুল। এগুলোর সামনেই প্রীতিলতা মনুমেন্ট। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রগণ্য সৈনিক মাস্টারদা সূর্যসেনের সহকর্মী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

এখানে, ইউরোপীয়ান ক্লাবে অবস্থিত অস্ত্রাগার লুণ্ঠন শেষে ধরা পড়ে যান বীরকন্যা প্রীতিলতা। একটি সরু নালায় পা হড়কে পড়ে যান প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তারপর ধরা পড়েন ব্রিটিশদের হাতে। কালের সাক্ষী হিসেবে সেই নালাটি আজও টিকে আছে। তার পাশেই আছে রেলওয়ে জাদুঘর। এটি পাহাড়ের ওপর একটি বাংলোয় অবস্থিত। এ জাদুঘরে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে রেলওয়ে তথা রেলগাড়ির দীর্ঘ ইতিহাস।

শহীদ জিয়া জাদুঘর :

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বিপরীত দিকে একটি শিশুপার্ক। শিশুপার্ক ছাড়িয়ে লালখান বাজার যাওয়ার পথ ধরে সামান্য হাঁটলেই রাস্তার ডানদিকে শহীদ জিয়া জাদুঘর। টিকিট কেটে জাদুঘরে ঢুকতে হয়। সার্কিট হাউসের যে ঘরটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। সেই ঘরের স্মৃতিচিহ্নসহ জিয়াউর রহমান ব্যবহƒত নানা জিনিসপত্র এবং তার বেশকিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে এখানে। রয়েছে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে খালকাটা কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানরত অবস্থায় শহীদ জিয়ার একটি ভাস্কর্য।

বাটালি পাহাড় :

টাইগার পাস এবং লালখান বাজারের মাঝামাঝি অবস্থান বাটালি পাহাড়ের। বোদ্ধা ব্যক্তিরা বলে থাকেন, চট্টগ্রামের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই টাইগার পাস আসতে হবে এবং বাটালি পাহাড়ে উঠতে হবে। বাটালি পাহাড়ে রয়েছে হরেক রকম গাছপালা। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য পাহাড় কেটে সুবিন্যস্তভাবে তৈরি করা সিঁড়ি। বাটালি পাহাড় থেকে পুরো চট্টগ্রাম দেখা যায়। মনে হবে, পাহাড়ের কোলে গা ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে চট্টগ্রাম।

চেরাগী পাহাড় :

চেরাগী পাহাড় পত্রিকাপাড়া নামেও পরিচিত। এখানে প্রায় সব জাতীয় পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও চ্যানেল, ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের অফিস রয়েছে। রয়েছে স্থানীয় পত্রিকার অফিসও। চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রাচীন পত্রিকা প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর অফিস এখানেই।
তারপরই আন্দরকিল্লা। আন্দরকিল্লায় রয়েছে শাহী মসজিদ, জেএম সেন হলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষমূর্তি।
এর একটু দুরেই চকবাজার। যেখানে দুটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সুপ্রাচীন অলি খাঁ মসজিদ ও নানক গুরুদুয়ার।

লালদীঘি :

লালদীঘির ময়দান নানা কারণে মানুষের কাছে বহুল পরিচিত। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ স্থল এটি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যে পরিমাণ মানুষ জমায়েত হয় তা বিস্ময়কর। এছাড়া সংগ্রাম-আন্দোলনের অন্যতম, প্রধানতম বললেও ভুল হবে না, সূতিকাগার এটি। ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা এখানেই হয়।

ওয়ার সিমেট্টি :

নগরীর প্রবর্তক মোড় পেরিয়ে বাদশা মিয়া রোডে এর অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একাংশ এখানে সমাহিত করা হয়েছে। ফুলের বাগান বেষ্টিত মনোরম এ স্থান স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব সৈন্যদের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বগাথা। ছোট ছোট সমাধিফলক সারিবদ্ধভাবে সাজানো।

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার :

মাতৃভক্তি এবং ধর্মীয় কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন বায়েজিদ বোস্তামী। মাজার পুকুরে রয়েছে দানবাকৃতির অনেকগুলো কাছিম। জনশ্রতি আছে, কাছিমগুলোর বয়স কয়েক শত বছর। এছাড়াও স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা হামিদিয়া তাজ মসজিদ। প্রায় তিনশ’ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটির সৌন্দর্য এখনও মানুষকে বিমোহিত করে।

পারকি সমুদ্রসৈকত :

চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরেই এটির অবস্থান। আনোয়ারা থানায় গড়ে ওঠা এ নয়নজুড়ানো সমুদ্রসৈকত তেমন একটা পরিচিতি পায়নি। সৈকতের পাড় ঘেঁষে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ঝাউবন। জায়গাটা সবসময় চিকচিক বালিতে ভরে থাকে বলে রসিকজনেরা বলে থাকেন বালুবনে ঝাউবন! সমুদ্রের কথা বাদ দিলেও শুধু ঝাউবনের আকর্ষণে অনেকেই ছুটে যান পারকিতে। সৈকতে সামুদ্রিক কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ নির্মল আনন্দদান করে। রয়েছে নোঙ্গর করা জাহাজ সারি।

সন্দ্বীপ :


 অনেকেই ভুল করে সন্দ্বীপকে নোয়াখালী জেলার অংশ ভাবেন। আসলে এটা চট্টগ্রামেরই একটি থানা। যদিও ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতি অনেকটা নোয়াখালীর মতোই। জলবেষ্টিত এ সুন্দর দ্বীপের আয়তন খুব একটা বেশি নয়, তুলনামূলক জনসংখ্যাও কম। দুইভাবেই সন্দ্বীপ যাওয়া যায়।


বিপ্লব উদ্যান :

ষোলশহর দুই নম্বর গেটের আকারে ছোট কিন্তু ছিমছাম পার্ক বিপ্লব উদ্যানের অবস্থান। এটি দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত করে দেয়া হয় বিকাল চারটার পর। নগরবাসীর এবং পর্যটকদের একটুখানি নিঃশ্বাস ফেলার এবং নেয়ার বিশ্বস্ত জায়গা এটি। ফুলবাগান, কয়েক ধরনের গাছের পাশাপাশি প্রধানতম আকর্ষণ স্বাধীনতা ভাস্কর্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস :



সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। শিক্ষার কথা বাদ দিলে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি অদ্বিতীয়। এ সৌন্দর্যের তুলনা নেই। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ের উপরে স্থাপিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। পাহাড় কেটে কেটে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। দুইপাশে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা যমজ পাহাড়, মাঝখানে পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে সরু রাস্তা। মনোমুগ্ধকর দৃশ্যই বটে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে শাটল ট্রেন ব্যবস্থাটি। একমাত্র চট্টগাম ছাড়া দেশের আর কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা নেই। এ শাটল ট্রেনের আড্ডা কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছে। সুযোগ হলে শাটল ট্রেনে চড়ে বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে। অবশ্য অছাত্রদের জন্য শাটল ট্রেনে চড়ার বিধিসম্মত কোন ব্যবস্থা নেই!