আমরা শ্বাস নেই বা নিঃশ্বাস ছাড়ি। তখন বক্ষচ্ছদা ওঠা নামার সঙ্গে সঙ্গে সহজেই নাক বা শ্বাসনালী দেয় বাতাস ভেতরে ডুকে বা বাইরে যায়। এখানে বক্ষচ্ছদার দায়িত্ব অনেক। এটি একটি শক্ত মাংসল পর্দার মতো বক্ষপিঞ্জর ও উদরের মধ্যবর্তী সীমানা হিসবে কাজ করে।
এর সংকোচন ও প্রসারণ বক্ষপিঞ্জরের ভেতরের ব্যাস উপর নিচ বাড়ায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অতি জরুরি। কিন্তু এর সংকোচন প্রসারণের অস্বাভাবিকতা হেঁচকি তৈরি করতে পারে।
হেঁচকি কিভাবে হয়?
বক্ষচ্ছদার স্বাভাবিক সংকোচন প্রসারণ ছন্দ এলোমেলো হয়ে গেলে হেঁচকি নেই। তখন মাংসল পর্দাটি সমতল হয়ে ফুসফুসকে প্রসারিত হওয়ার জায়গা করে দেয়। একই সময় আলজিভ নামক ছোট্ট মাংসপিণ্ডটি খাদ্যনালীর পথ বন্ধ করে দেয়। যেন তারা শ্বাসনালিতে ঢুকতে না পারে।
কিন্তু হেঁচকির সময় বক্ষচ্ছদা ও পাঁজরের হাড়ের মধ্যবর্তী মাংসপেশিগুলো মোচড়ানো ধরনের মাংসপেশির সংকোচন ঘটায়।এতে অজ্ঞাতসারই আলজিভকে বোকা বানিয়ে বাতাস ভেতরে ঢুকে যায়। বাতাস যখন সজোরে ভোকাল কর্ড পার হয়ে যায়, তখন হেঁচকির শব্দ হয়।
অতপর মুখ ও নাসিকা পথ খোলে। বক্ষচ্ছদা ও পাঁজরের হাড়ের মধ্যবতী মাংসপেশিগুলো তখন শিথিল হয়।বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা পানীয় মসলার প্রাচুর্যে রান্না করা খাবার, অতি দ্রুত খাওয়া, মদ্যপান, শীতল বাতাস গলধঃকরণ করা বা প্রচণ্ড ব্যায়াম করা ইত্যাদি হেঁচকির কারণ হতে পারে।
তবে অনেক সময় সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াও হেঁচকি হতে পারে। শিশুদের প্রতিবার খাবার পরপরই হেঁচকি দেয়ার প্রবণতা থাকে।তবে কিভাবে হেঁচকি হয় তা এখনও রহস্যাবৃত। তবে এটা নিশ্চিত যে, হেঁচকি হওয়ার জন্য ২/১টা স্নায়ুর অস্বাভাবিকতা জড়িত থাকছে।
এ স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কের ভুল জায়গায় উদ্দীপনা পাঠাতে পারে বা মাংসপেশির ছন্দময় স্বাভাবিক সংকোচন প্রসারণকে নষ্ট করে দিতে পারে। এ স্নায়ুগুলো প্রধানত বক্ষচ্ছদাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পাকস্থলি কেন সাড়া দেয়, তা এখনও পরিষ্কার নয়। হেঁচকির প্রধান স্নায়ু হলো ফ্রেনিক।
করণীয়:
শিশুদের হেঁচকির জন্য সাধারণত কিছু করতে হয় না। তবে একটানা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হেঁচকি উঠতে থাকলে ১ চামচ শরবত বা পানি পান করাতে হবে। কিছু কিছু লোক যখন ঘাবড়ে যায় তখন হেঁচকি হয়। তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেই, হিঁচকি দূর হয়ে যায়।
এদের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ার সময় এক টুকরো মিছরি বা চুয়িংগাম মুখে নিয়ে চিবোতে থাকতে হবে। যতক্ষণ দুশ্চিন্তা বা ঘাবড়ানোর কারণটি দূর না হচ্ছে।হেঁচকির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু প্রচলিত পদ্ধতি আছে। যতক্ষণ পারা যায় শ্বাসবন্ধ করে বসে থাকতে, এক টুকরো মিছরি চিবোনো, খুব ঠাণ্ডা জল অল্প চুমুকে পান করা। সবই কাজ করার কথা কেননা এরা স্নায়ুকে অন্যদিকে বিভ্রান্ত করে।
আরও একটি পদ্ধতি আছে। একটি পলিথিনের ব্যাগের ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে তার ভেতরেই যতক্ষণ পারা যায় শ্বাস নেয়া ও নিঃশ্বাস ত্যাগ করা। এটিও কাজ করার কথা কারণ নিঃশ্বাসের সঙ্গে ত্যাগ করা কার্বনডাই অক্সাইড আবার শ্বাসের সঙ্গে ঢুকে এবং তা স্নায়ুকে দুর্বল করে।
তা ছাড়া হেঁচকি বন্ধের একটি ভাল ব্যায়াম আছে। মেঝেতে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে পেটের ওপর নিয়ে আসতে হবে। এ অবস্থায় হাঁটু পেটের ওপর ২/৩ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখতে হবে। এটি বক্ষচ্ছদার ওপর চাপ দিয়ে তাকে ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পারে।
যেহেতু ফ্রেনিক স্নায়ুটি অনেক লম্বা এবং এটি অনেক অঙ্গকে সরবরাহ করে থাকে। তাই এটি নানাভাবে উত্তেজিত হতে পারে। তাই পেরিটনাইটিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ অথবা ঘাড়ে টিউমার ইত্যাদি হেঁচকির কারণ হতে পারে। কিছু কিছু সংক্রামক রোগও হেঁচকি ঘটায়। হেঁচকির কিছু কিছু ওষুধও পাওয়া যায়। আবার বিশেষ ক্ষেত্রে অপারেশনও করা হয়।