Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Technology Image

প্রযুক্তি বিশ্বের আইকন মারিসা মেয়ার




গুগলের ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা আছে কিনা জানা নেই। ঘটনাটি এরকম – ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগল এর নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেবে। তো এখানে কর্মচারীর ইচ্ছানুযায়ী তার ইন্টারভিউ নিতে হবে। অর্থাৎ কর্মচারীর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যদি গুগল ইন্টারভিউ নিতে পারে তাহলে সেই কর্মচারী ইন্টারভিউ এ অংশগ্রহণ করবে।

আরও একটু খোলাসা করে বলি। সময়টা ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাস। মারিসা মেয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষে করে স্ট্যানফোর্ডেই স্নাতকোত্তর কোর্সে কম্পিউটার বিজ্ঞান কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। একদিন ই-মেইল খুলে দেখেন তার মেইলে বেশ কিছু কোম্পানি থেকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য মেইল এসেছে। এর মধ্যে একটি মেইল ছিল গুগলের। মারিসা মেয়ার গুগলের সেই মেইলের উত্তরে লিখেছিলেন – সময় কম, সিদ্ধান্ত নিতে চাই আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই। যদি সব সাক্ষাত্কার একদিনেই নেন তবেই কেবল আসব।

মারিসার ইচ্ছানুযায়ীই ২৭ এপ্রিল সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ল্যারি পেইজ ও ব্রায়ান তাকে কিছুক্ষণ প্রশ্ন করার পর কোনো এক জরুরি কাজে তাদের দুজনকে অফিস থেকে বাইরে যেতে হয়। তাই সেদিন আর পুরো ইন্টারভিউ নেওয়া হয় নি। তার পরের দিন ক্রেইগ সিলভারস্টেইন মারিসার সাক্ষাৎকার নেন এবং গুগলে মারিসার চাকরি নিশ্চিত হয়। মারিসা মায়ার ১৯৯৯ সালের ২৩ জুন গুগলে যোগ দেন।




বামের ছবিতে বাবার সাথে ছোট্ট মারিসা এবং ডানের ছবিতে বান্ধবীর সাথে মারিসা মেয়ার (ডানে)



পিছনে ফিরে দেখা :
১৮ বছর বয়সের আগে পর্যন্ত মারিসার নিজের কোনো কম্পিউটার ছিল না। ১৯৯৩ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হন তখন তার পড়ার ঘরে স্থান পায় নিজস্ব একটি কম্পিউটার। এটি ছিল ম্যাকিনটোশ-১২০। প্রথম দিন মারিসা কিছুতেই কম্পিউটারের অন-অফ সুইচ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আর সেই মারিসাই কিনা এখন প্রযুক্তি জগতের অন্যতম আইকন!

শৈশবের দিনগুলো :
দুরন্ত স্বভাবের মারিসার শৈশবে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে তিনি পেডিয়াট্রিক নিউরো সার্জন হবেন। তবে কি এমন ঘটেছিল যার কারণে ডাক্তার থেকে হয়ে গেলেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। চলুন আরও একটু গভীর থেকে ঘুরে আসি।

একটা ক্যালকুলেটর ঘুরিয়ে দিল মারিসার ভবিষ্যৎ :
মারিসার বয়স তখন সাত। তখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের উইসকন্সিনে থাকতেন। একদিন পথ শিশুদের সাথে খেলছিলেন মারিসা। সেদিন তার এক খেলার সাথীর ভাইয়ের হাতে একটা ক্যালকুলেটর ছিল। ওই খেলনা ক্যালকুলেটরটি কিছুক্ষণ পর পর মানুষের মতো শব্দ করতো। মারিসার মনে কৌতুহল জন্ম নেয়। হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে মারিসা দেখে ক্যালকুলেটরটা তার স্কুলে শেখা অঙ্কটাও ঠিক ঠিক বলতে পারছে। এখান থেকেই মারিসার জীবন অন্যদিকে বাঁক নেয়। প্রযুক্তির প্রতি তার কৌতুহল জন্মে যায়। তাই ডাক্তার হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।




এও কি সম্ভব!
মারিসা মেয়ার তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। এই ছোট্ট বয়সেই মারিসা কম্পিউটারের ছোটখাটো কিছু প্রোগ্রাম লিখেছিলেন। যা দেখে সে সময় অনেকেই বলেছিলেন বড় হয়ে মারিসা বড় মাপের একজন ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই সব লোকের ভবিষ্যৎবাণী একটুও মিথ্যে হয় নি।


জন্ম পরিচয়:
মারিসা মেয়ার ১৯৭৫ সালের ৩০ মে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকন্সিন এ জন্মগ্রহণ করেন।

যেই কোর্সে কোনো আগ্রহই ছিল না সেই কোর্সেই সফলতা অর্জন
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রথম বছরের শেষদিকের ঘটনা এটি। এসময় শিক্ষার্থীদের কোর্স বাছাই করতে হয়। অন্যান্য কোর্সের সাথে একটি ঐচ্ছিক কোর্সও নিতে হয়। তো মারিসা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ঐচ্ছিক কোর্স হিসেবে নিলেন “কম্পিউটার সায়েন্স ফর নন মেজরস” কোর্সটিকে। শুধুমাত্র স্নাতক সম্পন্ন করতে দরকার বলেই বাধ্য হয়েই তিনি এই কোর্সটি নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই কোর্সটিই তার ভালো লাগা অর্জন করে নেয়। বছর শেষে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় এই কোর্সে মারিসা ‘এ’ গ্রেড অর্জন করেন। বলা চলে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নেওয়া এই কোর্সটির মাধ্যমেই তার গন্তব্য ঠিক হয়ে যায়।






আকস্মিকতায় ভরা মারিসার জীবন
এই কথাটি বলছি এই কারণে যে, মারিসার জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঘটেছে অন্য কোনো এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। সরাসরি কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই যেমন মারিসা একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাটালগ নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন। তো এমন সময় “সিম্বোলিক সিস্টেম” নামে একটি বিষয় তার খুব ভালো লেগে যায়। সিম্বোলিক সিস্টেম বলতে বোঝায়, যেখানে একই সঙ্গে কম্পিউটার বিজ্ঞান আর ভাষাবিজ্ঞান পড়ানো হয়। সাথে রয়েছে দর্শন ও মনোবিজ্ঞান। ভালো লাগলে তো আর বসে থাকলে চলবে না। নাম লিখিয়ে ফেলেন এই কোর্সে। প্রথম ক্লাসেই বাজিমাত! শিক্ষার্থীদের কোর্সটির প্রতি আগ্রহ জানার জন্য অধ্যাপক এরিক রবার্টস তিনটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এর মধ্যে গ্রাফিক্স পর্বে মারিসা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। যেই প্রোগ্রামটি লিখে মারিসা ২য় স্থান অর্জন করেছিলেন সেই প্রোগ্রামটিকে উন্নত করার জন্য পরবর্তী ১০ বছর শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপর অধ্যাপক এরিক রবার্টস প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নৈশভোজে ডাকেন এবং সেখানেই অধ্যাপক এরিক মারিসাকে এই বিষয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন। এরিক এর পরামর্শ অনুযায়ী এই বিষয়েই পড়াশোনা করে সলফতার উচ্চ শিখরে পৌঁছান মারিসা মেয়ার।


পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরির অফার
পড়াশোনা তখনও শেষ হয়নি মারিসার। তার আগেই ১৪টি কোম্পানি থেকে ডাক পেয়েছিলেন মারিসা মেয়ার। কেননা সেই সময় মারিসার যোগ্যতা সম্পর্কে সবারই জানা ছিল। একবার অধ্যাপক এরিক মারিসাকে গুগলের ল্যারি পেজ ও সের্গেই বিন এর সাথে দেখা করতে বলেন। কিন্তু মারিসা তাদের সাথে দেখা করেন নি।

গুগলে মারিসা মেয়ার
মারিয়া মেয়ার ১৯৯৯ সালে ২০তম এবং প্রথম নারী প্রকৌশলী হিসেবে গুগলে যোগদান করেন। কর্মজীবনের ১৩টি বছর তিনি গুগলের সঙ্গে কাটান। সে সময় তিনি গুগল সার্চ, গুগল ইমেজ, গুগল নিউজ, গুগল ম্যাপস, গুগল বুকস, প্রোডাক্ট সার্চ, টুলবার, আই-গুগল এবং জি মেইলের উন্নয়নে কাজ করেন। মোটকথা গুগলে তিনি একাধারে একজন ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার, প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। গুগলে যোগদানের পূর্বে মারিয়া সুইজ্যারল্যান্ডের ইউবিল্যাবের ইউবিএস রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।







মারিসা মেয়ার এর ইয়াহুতে যোগদান ও হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ:
২০১২ সালের ১৭ জুলাই ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন মারিসা মায়ার। মরতে বসা ইয়াহুকে কিন্তু তিনিই পুনর্জীবিত করেছেন। যোগদানের পরবর্তী বছরে তিনি পরিচালনা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হন। এপ্রিল ২০১৩ সালে তিনি ইয়াহু’র মাতৃত্বকালীন ছুটির নিয়মে বড় পরিবর্তন আনেন। তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়সীমা বাড়ান এবং নগদ বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তাঁর সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে বড় বড় কোম্পানিতে অনুসরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

মারিসা ইয়াহুতে এসে নতুন করে সাজিয়েছেন ইয়াহুর হোমপেজটি, ফ্লিকার সেবার নতুন নকশা করেছেন, বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন আপগ্রেড করেছেন এবং ইয়াহুকে অনলাইন সেবা হিসেবে জনপ্রিয় করতে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে, তাঁর অধীনে তিন বছর ক্রমাগত লোকসানের মুখ দেখতে থাকা ইয়াহু আবার লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হচ্ছে।






গুগলকে টপকালো ইয়াহু :
মারিসা মায়ার এর যোগদানের পর ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে গুগলকে টপকিয়েছে ইয়াহু। সার্চ ইঞ্জিন শিল্পে আধিপত্য বাড়াতে সম্প্রতি নিজেদের সাইটে বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মারিসা মায়ার। এর মধ্যে ইয়াহুর লোগো পরিবর্তনও ছিল। এরপর থেকে ইয়াহু বেশ কিছুটা উন্নতির মুখ দেখে। ২০১১ সালের পর ২০১৩ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশিবার ভিজিট হওয়া সাইট হিসেবে গুগলকে পেছনে ফেলে ইয়াহু। আগস্ট মাসেও এ ধারা বজায় রাখে সাইটটি।

এক প্রতিবেদনে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কমস্কোর জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে প্রায় ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ব্যক্তি। অন্যদিকে গুগল ব্যবহার করেছে প্রায় ১৯ কোটি ১৪ লাখ ব্যক্তি।

তবে আর্থিক দিক হতে এখনও ইয়াহু গুগলের অনেক পেছনে পড়ে আছে। রিসার্চার ফার্ম ই-মার্কেটারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিজ্ঞাপন থেকে গুগলের এ বছর আয়কৃত মোট বিক্রয়লব্ধ আয়ের পরিমাণ ৩৮.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফেসবুকের আয় ৫.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ইয়াহুর আয় ৩.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।


অন্য প্রতিষ্ঠান কেনায় ইয়াহুর মনোনিবেশ:
মারিসা মায়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার পর থেকে গত ১৩ মাসে ইয়াহু ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান কিনেছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নিউইয়র্ক ভিত্তিক ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টাম্বলার ১১০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নিয়েছে অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াহু। ইয়াহুর অধীনে গেলেও টাম্বলার আলাদাভাবেই ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং ডেভিড কার্প-এর দায়িত্বে থাকবেন। এ সাইটটিতে বিজ্ঞাপনসহ অর্থ আয়ের উত্সগুলো নিয়ে কাজ করবে ইয়াহু। এছাড়া রকমেল্ট নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকেও কিনেছে ইয়াহু। রকমেল্ট ফেসবুকভিত্তিক একটি ওয়েব ব্রাউজার তৈরি করেছিল, যা রকমেল্ট নামেই পরিচিত ছিল। ৪ কোটি ডলার এর বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে ইয়াহুকে।

বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের একজন
ফরচুন ম্যাগাজিনের পঞ্চাশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নারীর তালিকায় মারিয়া মেয়ারের নাম রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এ তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া ২০০৯ সালে মেয়ার গ্ল্যামার ম্যাগাজিনের সবচেয়ে কমবয়সী নারী হিসেবে ‘ওমেন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন।





সেরা আবেদনময়ীদের একজন
নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাই ইয়াহুকে লোকসানি থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া ছিল মারিসা মেয়ারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখন ইয়াহুকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন তিনি। ধ্রুপদি ব্যালে নাচে পারদর্শিতার পাশাপাশি ফ্যাশনবোধের কারণে আবেদনময়ী সিইওর তালিকায় এসেছেন ৩৮ বছর বয়সী মারিসা।






এক নজরে

• নাম : মারিসা মেয়ার
• বর্তমান প্রতিষ্ঠান : ইয়াহু
• পদ : প্রেসিডেন্ট এবং সিইও
• জন্ম : ৩০ মে, ১৯৭৫
• জন্মস্থান : উইসকন্সিন, যুক্তরাষ্ট্র
• উচ্চতা : ১৭৩ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ৮ ইঞ্চি)
• বিয়ে : ১২ ডিসেম্বর, ২০০৯
• স্বামী: জাখারি বগ
• পছন্দের বই : দ্য ডিজাইন অব এভরিডে থিংস (লেখক: ডোনাল্ড আর্থার নরম্যান)
• পছন্দের সিনেমা : ইট’স অ্যা ওয়ান্ডারফুল লাইফ (১৯৪৬)
• অবসরে : বরফে স্কিইং, নৌভ্রমণ