ভিক্স ব্যবহার করবার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন সেটা চোখে না চলে যায়। সেটা চোখের জন্য ক্ষতিকর। আবার অনেকের এলার্জি আছে দোকানের কেনা ভিক্সে। এ অবস্থায় আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনার ভিক্স বানিয়ে নিতে পারেন-
• জলপাই তেল বা নারকেল তেল- ১/২ কাপ,
• মৌচাকের মোম- ২ চামচ (তরকারি চামচের),
• ইউক্যালিপ্টাস গাছের তেল- ২০ ফোটা,
• মেন্থল তেল- ২০ ফোটা,
• দারুচিনি বা লবঙ্গ তেল- ১০ ফোটা,
• রোজমেরির তেল- ১০ ফোটা (এই তেল ব্যবহার করা হয় সুগন্ধির জন্য আপনি এটা না পেলে সুগন্ধি যে কোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন) ।
পদ্ধতিঃ
*প্রথমে চুলায় একটি পরিস্কার পাত্রে মোমটি জলপাই বা নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে গলাতে হবে।
*এরপর অন্যান্য উপকরণ গুলো একসাথে মিশিয়ে নিন (শিশুদের জন্য এ ভিক্স তৈরী করার সময় উপাদান গুলো অর্ধেক করে নিয়ে মিশাবেন) এবং নাড়ুন, যতক্ষণ না সব গুলো উপাদান ভালো ভাবে মিশে যায়।
*তারপর পাত্রটি নামিয়ে মিশ্রণটি ছোট ছোট পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা হতে দিন।
*ঠাণ্ডা হলে ঢাকনা লাগিয়ে সংরক্ষণ করুন। দরকারে ব্যবহার করুন প্রয়োজন মতো।
ব্যবহার-
*পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে বা নখের গোড়ায় ফাঙ্গাস হলে নখ আস্তে আস্তে হলুদ বা সবুজ হয়ে যায় এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। এ অবস্থায় রাতে ঘুমানোর আগে পা ধুয়ে, মুছে ক্ষত স্থানে ভিক্স লাগান। সকালে দেখবেন ঘা অনেক খানি ভালো হয়ে গেছে।
ভিক্স নখের বাক্টেরিয়া মেরে ফেলে,যদি দেখেন যে নখ কিছুটা কালো হয়ে গেছে এর অর্থ হচ্ছে ভিক্স কাজে দিয়েছে। এ ভাবে দুই সপ্তাহ ভিক্স লাগান আর ফলাফল নিজে দেখুন। মনে রাখবেন নখ যখন বাড়বে আপনি কালো অংশটি কেটে ফেলবেন নতুন নখ দেখবেন সাদা আর ফাঙ্গাস মুক্ত হচ্ছে।
*ব্রণ নানা রকমের হয়,এর মধ্যে সবচাইতে কষ্টকর হচ্ছে সিস্টিক ব্রণ যেগুলো ফোড়ার মত বড় হয় কিন্তু পাকে না, উচু হয়ে থাকে, ব্যথা করে এবং সপ্তাখানেক কম করে লাগে ভালো হতে।
এ অবস্থায় আপনি যা করতে পারেন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মুখটা ভালো করে ধুয়ে, মুছে ক্ষত স্থানে ভিক্স লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন, সকালে দেখবেন আপনার ব্রণ অনেকটাই সেরে গেছে। এভাবে রাতে ভিক্স লাগিয়ে ঘুমান দুই/তিন দিন পরে দেখবেন ব্রণ সেরে গেছে।
*মাথা ব্যথায়_ কপালে আর মাথার দুই পাশে ভালো করে ভিক্স লাগান, দেখবেন মাথা ব্যথা কমে গেছে।
*মশা নাই এমন কোনো স্থান নাই। মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে শরীরে আর গায়ের কাপড়ে কিছু কিছু স্থানে ভিক্স লাগান। মিন্থলের গন্ধে মশা আসবে না, যদি কোনো ভাবে মশা কামড়ে দেয় তবে সেখানে ভিক্স লাগিয়ে দিন আর ব্যান্ড এইড লাগিয়ে দিন ক্ষত স্থানে চুলকানোর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। দেখবেন আক্রান্ত স্থানে ঘা হবে না।
*মাঝে মাঝে এমন ছোট পোকা কামড় দেয় আমাদের যে আমরা সেটা দেখতে না পারলেও অনেক ব্যথা করে আর ফুলে যায়। এই রকম অবস্থায় ক্ষত স্থানে ভিক্স লাগান উপকার পাবেন।
*পা ফাটা একটি বিরক্তিকর সম্যসা, এর থেকে বাঁচার জন্য আপনি রাতে ভালো ভাবে পা ধুয়ে, মুছে গোড়ালিতে ভিক্স লাগান আর পা মোজা পরে ঘুমায় যান। সকালে উঠে দেখবেন ক্ষত স্থান অনেক খানি ভালো কয়ে গেছে।
এই ভাবে কিছু দিন ভিক্স লাগান। পা ফাটা ভালো হয়ে যাবে। আর একটা কথা এ পদ্ধতিতে আপনি ঠান্ডাতেও আরাম পাবেন। আপনারা জানেন যে ছোট্ট শিশুদের জন্য ভিক্স লাগানোটা কত কষ্টকর। একটু জ্বালা করে বলে ওরা পছন্দ করে না কিন্তু ভিক্স লাগানোটাও দরকার এ রকম অবস্থায় আপনি এ পদ্ধতি ব্যবহার করুন। রাতে পায়ের নীচে ভিক্স লাগিয়ে মোজা পরিয়ে দিন সারা রাত এভাবে থাকবার পরে সকালে দেখবেন যে ঠান্ডা কত ভালো হয়ে গেছে। মনে রাখবেন এটা শুধু শিশুদের জন্যই নয় আপনার জন্যও একই কাজ করবে, যারা ভিক্স নাকে লাগাতে পারেন না তারা এ ভাবে ভিক্স ব্যবহার করে দেখেন।
*আপনাদের অনেকেরই প্রিয় শখ বিড়াল, কুকুর পোষা। কিন্তু এই শখের জন্য অনেক সময়ই আম্মুদের কাছে বকা খেতে হয় ,কারণ কুকুর, বিড়ালের পছন্দের কাজ সোফা বা দরজায় নখ দিয়ে আচড়ানো অথবা যে কোনো জায়গা কে তাদের টয়লেট বানিয়ে ফেলা। যেখানেই সে সুযোগ পায় সেখানেই সে এ কাজগুলো করে, এর থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে সাহায্য করবে ভিক্স, আপনি যে সব স্থানে বিড়াল এ কাজগুলো করে সেখানে ভিক্স লাগিয়ে দিন। ভিক্স এর গন্ধে বিড়াল আসবাবের কাছে আসবেনা বা যেখানে চাননা সেখানে মল মুত্র করবে না আর আপনাকেও আম্মুর কাছে বকা খেতে হবে না।
*বয়স বাড়ার সাথে মানুষ লম্বা হয় তখন অথবা গর্ভাবস্থার পরে পায়ে, হাতে, পেটের চামড়া প্রসারিত হয়, চামড়া ঝুলে যায় আর একটা দাগ তৈরী হয় ইংলিশে যাকে বলে ‘stretch mark’ এ দাগ সহজে দূর হয় না আপনি এ দাগ দূর করতে দোকান থেকে নানা রকম দামী দামী ক্রিম না কিনে সস্তায় একটা ভিক্স কিনে ফেলুন ঘুমানোর আগে নিয়মিত ভিক্সটি দাগে মালিশ করুন কদিন পরে দেখবেন দাগ কেমন কমে গেছে আর গর্ভাবস্থার পরে পেটের চামড়াও টান টান হচ্ছে।
*এক্সিমা/Eczema একটি চর্মরোগবিশেষ যা বছরের বিশেষ কিছু সময় দেখা যায় চুলাকায়, দাগ পরে যায়, ঘা হয়ে যায়। এবং এর পিছে চিকিৎসায় অনেক খরচও হয়ে যায়। আপনি এ অবস্থায় ক্ষত স্থানে ভিক্স লাগিয়ে দেখুন আরাম পাবেন আর ক্ষত ও ভালো হয়ে যাবে।