আমরা বাঙ্গালীরা ভ্রমণ বিলাসী । আর তার তাড়নায় ঘুরে বেড়ায় দেশ এবং দেশের বাহিরে। কিন্তু দেশের অনেকাংশেই আমরা ঘুরে দেখিনা । এমনকি আমরা এটাও অনেকে জানিনা ব্যস্ত নগরীতে লুকিয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। আর এই ঢাকা নগরীকে আমরা রমণী হিসেবে ভাবতে শিখিনি। আজ আমরা আমাদের রমণীর এক ঐতিহ্যবাহী রূপের বর্নণা করবো,আর তা হলো লালবাগ কেল্লা। ঢাকা থেকে যে-কেউ খুব সহজে সদরঘাট গিয়ে, রিকশা করে লালবাগ কেল্লায় পৌঁছানো যায়। এছাড়া ঢাকার বাহিরের থেকে এসেও সদরঘাট পৌঁছে, রিকশা করে লালবাগ কেল্লায় পৌঁছতে পারবে।
ঐতিহাসিক স্থান :-
মোগল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো লালবাগ কেল্লা। যার মাঝে ব্যবহৃত হয়েছে কষ্টি পাথর, দুর্লভ মার্বেল পাথর, এছাড়াও হরেক রকমের টালি। বাংলাদেশের অন্য কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন দামি ও দুর্লভ পাথরের সংমিশ্রন আদৌ পাওয়া যায়নি একমাত্র লালবাগ কেল্লা ছাড়া। প্রায় প্রতিদিনই হাজারো দেশ-বিদেশী দর্শনার্থীর অবয়বের ভীড় মিলে লালবাগ এলাকার এই দুর্গে।
দেখার যা যা আছে :-
লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি। সচরাচর টেলিভিশনে, খবরের কাগজে, ম্যাগাজিনে আমরা লালবাগ কেল্লার যে ছবিটি দেখি সেটা মূলত পরী বিবির সমাধির ছবি।
কেল্লাতে একটি মসজিদ আছে, আজম শাহ দিল্লি চলে যাওয়ার আগেই তিনি এই মসজিদটি তৈরি করে গিয়েছিলেন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি যে কারো দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। মসজিদটিতে জামায়াতে নামায আদায় করা হয়, সময়-সুযোগ হলে সেখানে থেকে নামায পরে আসতে পারেন আপনি। ঢাকায় এতো পুরনো মসজিদ খুব কমই আছে।
লালবাগ কেল্লাতে এখানে ওখানে বেশ কয়েকটি ফোয়ারা আছে। কেল্লাতে সুরঙ্গ পথ ও আছে, সুরঙ্গ পথগুলো দিয়ে আগে যাওয়া যেতো, এখন যাওয়া যায়না।
লালবাগ কেল্লায় সর্বসাধারণের দেখার জন্যে একটি জাদুঘর রয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁ এর বাসভবন ছিল আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। জাদুঘরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। মুঘল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবির দেখা মিলবে সেখানে, যেগুলো দেখলে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। শায়েস্তা খাঁ এর ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্র সেখানে সযত্নে রয়েছে। তাছাড়া তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সেসময়কার প্রচলিত মুদ্রা ইত্যাদিও রয়েছে।
টিকেট সংগ্রহ :-
লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম দশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য একশো টাকা করে।
লালবাগ কেল্লার সময়সূচী :-
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শীতকালে দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।