হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগছে। বুক ধড়ফড় করছে কিংবা মাথা ঘুরছে। বাসার পাশের দোকান থেকে রক্তচাপ পরীক্ষা করালেন। ধরা পড়ল উচ্চ রক্তচাপ। চিন্তায় মাথায় হাত। ভেবে পাচ্ছেন না কেন হল উচ্চ রক্ত চাপ? আপনার তো এখনও তেমন বয়স হয়নি, তবে? যেকোন বয়সের যে কারোর উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একজন মধ্যবয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে আবার বয়স্ক মানুষেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। বয়স বেশি হলেই উচ্চ রক্তচাপ হবে এমন ধারণাটা ঠিক নয়
বিভিন্ন বয়সে শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন হয়। আবার একই মানুষের ক্ষেত্রে দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ বিভিন্ন রকম হতে পারে। একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০০-১৪০ মিলিমিটার পারদ সংকোচন চাপ ও ৬৫-৯০ মিলিমিটার পারদ প্রসারণ চাপ স্বাভাবিক মাত্রা নির্দেশ করে। আর রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ অথবা এর বেশি হয়, তবেই উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ:
৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। “অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, মোটা হওয়া এই সকল কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারেন। এছাড়া আর যে সকল কারণে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ-
১। ধূমপান
২। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
৩। মদ্যপান
৪। বংশগত কারণে
৫। মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ:
অনেকের শুরুতে রক্তচাপে কোনো উপসর্গ থাকে না। রুটিন চেকআপে বা অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন মাথাব্যথা, মাথার পেছন দিকে ব্যথা হতে পারে, সকালবেলা এবং হাঁটার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাথা গরম অনুভূত হতে পারে।
- ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া।
- বুকে চাপ অনুভব হওয়া।
- বুক ধড়ফড় করা।
- চোখের দৃষ্টিতে অসুবিধা বা ঝাপসা লাগা।
- সব সময় খিটখিটে মেজাজ থাকা।
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে করণীয়:
• জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
• অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে
• কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
• খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।
• সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।
• ধূমপান বাদ দিতে হবে।
• যাদের ডায়াবেটিস আছে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
• মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন
এ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপন করতে হবে। ওজন কমাতে হবে, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরও ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন। কিন্তু এটি ঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সম্যসা দেখা দিতে পারে। তাই শুরু থেকে এই ব্যপারে সাবধান থাকতে হবে। এ ছাড়া বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।