প্রতিটি কাজের শুরু যেমন আছে, শেষও আছে। একটা কিছু করা শুরু করে মাঝপথে সেটাকে ছেড়ে দিদেয়া খুব ভালো কাজ নয়। বিশেষ করে সেটা যদি হয় ইতোমধ্যেই লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে যাওয়া বিখ্যাত কোন স্থাপনা। কিন্তু অবাক করা হলেও সত্যি যে এমন কিছু স্থাপনা রয়েছে যেগুলো বেশ জনপ্রিয় হওয়ার পরেও অর্ধনির্মিত হয়েই থেকে গিয়েছে আজ পর্যন্ত। আর এমন কিছু বিখ্যাত অর্ধনির্মিত স্থাপনার কথাই জানাচ্ছি আপনাদেরকে।
১. সাগ্রাডা ফ্যামিলিয়া
বার্সেলোনায় অবস্থিত সাগ্রাডা ফ্যামিলিয়া নামক এই চার্চটি তৈরি করা শুরু করেছিলেন অ্যান্টনি গাউদি। তবে তৈরির খানিকটা হবার পরেই মারা যান তিনি। ফলে অর্ধেকেই আটকে থাকে নির্মাণকাজ। সেটা ১৮৮২ সালের কথা। এরপর কতো কিছু হল! ইউনেস্কোর কাছ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেল, পোপের কাছ থেকে সম্মানজনক উপাধি পেল, কিন্তু নির্মাণকাজ আটকে থাকল অতোটুকুতেই! কিছুদিন আগে গাউদির অনুপ্রেরণাকে সাথে নিয়ে আবার শুরু করার কথা হয়েছে সাগ্রাডা ফ্যামিলিয়াকে ঘিরে। বলা হচ্ছে কাজ ঠিকঠাক এগোলে এতদিন ধরে অর্ধনির্মিতাবস্থায় পড়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী এই স্থানটি পুরোটা নির্মিত হবে ২০২৬ সালে।
২. মার্বেল হিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট
অনেক অর্ধনির্মিত স্থাপনা রয়েছে যেগুলো কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমানে। কিন্তু মার্বেল হিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের কথাটা একেবারেই আলাদা। ১৯৭৭ সালে ইন্ডিয়ানায় শুরু হয় এর কাজ। এবং পরবর্তী ৭ বছরে প্রায় অনেকটাই কাজ হয়ে গিয়েছিল এর। কিন্তু এরপরেই বাঁধলো সমস্যা। ১৯৮৪ সালে ২.৫ কোটি ডলারের লস করার পর কোম্পানি আর এগোলো না প্ল্যান্টটি নিয়ে। পড়ে রইল এটি একেবারে খাপছাড়া ভাবে। অর্ধনির্মিত অবস্থায়। শেষ আব্দি নিজেদের ধার শোধ করতে এর ভেতরের তখন পর্যন্ত সাজানো যন্ত্রপাতিগুলোকেও বেচে দিল তারা। এখনো সে অবস্থাতেই আছে এটি।
৩. নিউজিল্যান্ড পার্লামেন্ট বিল্ডিং
মোট দুটো ধাপে কাজ করার কথা ছিল এই পার্লামেন্টের। প্রথম ধাপে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো নির্মান করা আর পরবর্তী ধাপে একটু কম গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারন জায়গাগুলোর নির্মাণ- এই ছিল পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা মতে মোট দুবছর লাগার কথা ছিল স্থাপনাটি তৈরির জন্যে। কিন্তু ১৯১১ সাল্ব শুরু করার কথা থাকলেও শুরু করতে করতেই ১৯১৪ লেগে যায় এটির। আর তারপর ১৯২২ সাল অব্দি প্রথম ধাপের কাজ কোনরকমে শেষ করা হয়। এখন পর্যন্ত এর পরের ধাপের কাজ শুরু হযনি। আর তাই যে কাজের জন্যে তৈরি করা হচ্ছিল সেটাও করা যায়নি কখনো এখানে। অর্ধেক নির্মিত হয়েই পড়ে আছে এখন এটি।
৪. উইনচেস্টার হাউজ
সারাহ্ উইনচেস্টার তার স্বামী মারা যাওয়ার পর হঠাৎ করেই আত্মার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন। তার ভয় ছিল মূলত পারিবারিক বন্দুকটিকে। যেটা দিয়ে মারা হয়েছিল অনেক মানুষ। সারাহ্র মতে ঐ মানুষগুলোই তার স্বামীকে মেরেছিল এবং তাকেও মারতে পারে। আর তাই ডাইনীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে একটা বাড়ি তৈরি করা শুরু করেন তিনি। তাকে বলা হয়েছিল এই বাড়ি শেষ না করতে। এর নির্মাণ চালিয়ে যেতে। কারণ নির্মাণ শেষ হবে যেদিন সেদিনই মারা যাবেন সারাহ্! আর ঠিক সে কথা অনুসারেই মৃত্যুর আগ অব্দি বাড়ি বানিয়ে চলেছিলেন সারাহ্। তবে তার মারা যাওয়ার সাথে সাথেই অসম্পূর্ণভাবে থেকে যায় বাড়ির কাজ। বর্তমানে সারাহ্ উইনচেষ্টারের ভূতের বাড়ি বলে বেশ পরিচিত এটি!
৫. সুপার পাওয়ার বিল্ডিং
১৯৯৯ সালে ফ্লোরিডাতে শুরু হয় এই চার্চের কাজ। দুবছর আর ৪০ মিলিয়ন টাকা দরকার ছিল চার্চটি সম্পূর্ণ করতে। ২০০৩ সালেই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। চার্চের মানুষদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২৫০ ডলার নেওয়া হত চার্চের নির্মানকাজের জন্যে। কিন্তু এখন অব্দি শেস হয়নি চার্চটি। বিরক্ত হয়ে একসময় অনেকেই চার্চে আসা বন্ধ করে দেন। ২০১৩ সালে চার্চের বিরুদ্ধে টাকা নষ্টের অভিযোগও আনা হয়।