Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

লীলাবতী পরী

১০ বছর আগে লিখেছেন

চিঠিঃ প্রিয় বুবু আমার

প্রিয় বুবু আমার,
কেমন আছিস জানিনা। কাগজে বুকে কলমের আচড়ে আকা নকশী কাথার নকশা একে তোর সমীপে পাঠিয়ে দিলাম। উত্তরে জানিয়ে দিস তুই ভাল আছিস। সময়ের ব্যবধানে বদলে গেছে অনেক কিছুই। আমি আর আগের সেই পিচুটি নেই। বেড়ে গেছি অনেক। বেড়েছে মানুষের চলার গতি। তবে বাড়েনি পৃথিবীর আকার। সেই সাথে সময়। বাড়েনি সুর্যের আকার। চন্দ্র এখনো আগের মতই আছে। আর তুই আমার কাছে নেই, চলে গেছিস অতল তলের শহরে না ফেরার দেশে বুকের ভিতর এই তৃষ্ণা আর হাহাকার এত টুকু কমেনি বুকের ভিতর দিন দিন বট বৃক্ষের আকার ধারন করেই চলেছে। এই বেদনার ভার একার আমার, শুধুই আমার, এর রেশ কিংবা শেষ ছায়া টুকুও অনুভব করার সাধ্য কারো নেই।

চারিপাশে কেউ নেই। নিরব নিথর চারিধার। উপরে চকচকে কালো রাতের আকাশ। চন্দ্র সে কবে গতি সুত্রের কবলে হারিয়ে গেছে তার হিসেব কখনো রাখিনি এমনই এক রাতে তোর কাছে কাগজের বুকে কলমের কালিতে বেদনা ভরা বুকের উত্তাপের খাক টুকু লিখে যাচ্ছি তখন তুই আমার কাছে থেকে সময়ের ব্যবধানে যোজন যোজন দুরে। পৃথিবী যখন বদলেছে পাল্লা দিয়ে। যন্ত্র দানবেরা ছুটে গেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। মানুষ খুজে পেয়েছে অতল তলের ঠিকানা। বিজ্ঞানের যাত্রায় মানুষ ধরে আনছে সাগর তলের রঙ্গীন মাছ থেকে শুরু করে তুলে আনছে পৃথিবীর পেটের ভেতরের যত অলংকার, বাদ যায়নি মানুষের শরীরের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কোষান্তরের ভেতরের লুকানো ভাইরাস কিংবা পরজীবি কোন জীবানু ঠিক তখনো বিধাতার অলীক ক্ষমতার অসীম নিদর্শনে মানুষ খুজে পায়নি তার মানবিকতা, মানবতা আর মানুষ হবার মুল মন্ত্র টুকু। নইলে পৃথিবী বিচরিত মানুষের প্রয়োজন থাকতো কিন্তু লোভ থাকতোনা। নিজেদের সচেতন দাবী করে অচেতনতায় কারো জীবন নাশের কারন হতোনা। তোকে অকালে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হতোনা। আমাকে আজো তোর তৃষ্ণা বুকে নিয়ে দিনযাপন করতে হতোনা। হিংস্র হায়েনারা তোর জীবন থেকে জীবন কেড়ে নিয়ে তাদের কি লাভ হলো আমি জানিনা তবে আমার শুণ্যতা বাড়িয়ে তাদের কোন লাভ যে হয়নি এই আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি। পৃথিবী আজ নিজেকে এতই সমৃদ্ধ দাবী করে অথচ আমার মত এক নগন্য সৃষ্টির ছোট বুকের যন্ত্রনা লাঘব করা কোন অনুসর্গ এখনো তার নেই এটাও আমি নিশ্চিত হয়েই বলেছি।

জানিস বুবু, পুকুরের পাড়ের হিজল গাছটা বেড়েছে অনেক। বাকা হয়ে মাঝে মাঝে স্পর্শ করে পুকুর স্বচ্ছ কালো জল। বহুদিন হয় নবরঙ্গে ফলদ হয়ে উঠেছে তোর হাতে রোপন করা কুলের গাছ গুলো। তোর রেখে যাওয়া ফুলের বাগানের কত ফুল ফুটেছে আর কত ফুল সুবাস ছড়িয়ে ঝড়ে গেছে চলে গেছে তোর পথ ধরে সেই হিসেব আমার জানা নেই। সাইনধারা নদীর বাকে বাকে বেড়েছে অনেক শতজাতের বেতের ঝোপ। জেগেছে অনেক চড়া সাথে ভেঙ্গেছে কারো কুল। কতশত জেলে এখনো জাল ফেলে নতুন জোয়ারের সাথে তার হিসেব আমি এখনো রাখিনা। কিন্তু ঘরের পিছনে বাশঁ বাগানে রাতভর ঝিঁঝি পোকার কোলাহল এখনো শুনি কক্কার ডাকে সকালে আসতেই আম বাগানের কর্কশ কাক নয়তো অন্য কোন পাখির তানে ঘুম ভাঙ্গলে মাঝে মাঝে একটা জানা চেনা টান অনুভব করি। তোর দেহের নাশীতিতোষ্ণ উষ্ণতা খুজে ফিরি যে কিনা মধ্য গ্রীষ্মের তাল পাকা দুপুরে আমাকে রোদের ভেতর লুকিয়ে থাকা ছোট ছোট ছায়ায় মত মায়া দিত, হাড় কাপানো শীতে মধ্য রাতে লেপের আড়ালে আমাকে সুকোমল উষ্ণতা দিত। আমি এমনি ভাবে বহুদিন হয় তোকে বুকের ভেতর বয়ে চলেছি। এর কোন ছায়া নেই আছে কেবল মায়া আর মায়া।

জানি বুবু,এই চিঠি তোর কাছে পৌছুবেনা তবুও বলে রাখি। বাবা গত হয়েছেন বছর তিনেক হয়ে গেছে। বাবার জীবনের শেষ দিন গুলো আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তোর জন্য তার সীমাহীন যন্ত্রনার ছায়া আমি বার বার অনুভব করেছি। অনুভব করেছি তার অপরাধ বোধ গুলো। আমরা এগুলো ভাইবোন এখনো পৃথিবীর বুকে ঠাই হলো অথচ তোকে বাবা ধরে রাখতে পারেনি এই যন্ত্রনা তাকে কুড় কুড়ে খেয়েছে দিনের পর দিন। বার বার ক্ষমা চেয়েছে তোর কাছে, বাদ যাইনি আমরাও। শুধু কি তাই। তুই জানলে খুশি হবি সেই হায়েনাদের অনেকেই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু যারা বেচে আছে তাদের নরক যন্ত্রনা আমি নিজ চোখে দেখছি আর তোর হয়ে প্রতিশোধের জ্বালা মেটাচ্ছি। কেউ কেউ উন্মাদ হয়ে ছুটছে কেউবা অচল হয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে আছে। ক্ষমা আমি তাদের করিনি। বহুবার বলেছে। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি যাকে ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই তার পক্ষ হয়ে কাউকে ক্ষমা করা যোগ্যতাও আমার নেই। যাকে তোমরা ফেরাতে পারবেনা। যার মৃত্যুকে পুজি করে বেচে থাকতে চেয়েছিল সেই তোমরাই যখন মরতে বসেছ তখন ক্ষমা চেয়ে লাভ কি? ক্ষমা যদি চাইতেই হয় তার কাছে চাও যাকে তোমরা তাবৎ দুনিয়া সুখ থেকে বঞ্চিত করেছ। আমিও বলছি আপু তোকে তুই কাউকে ক্ষমা করবিনা, কাউকে না।

বুবুরে,শুনেছি মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয়। অনিচ্ছায় মরতে হলেও কি তাই? আমার মনে হয় তাই হয়। তা না হলে প্রতিরাতে আকাশের তারাদের দেখলে এত ভাল লাগে কেন? কেন মনে হয় সেই তারাদের বুকে আমার প্রিয় বুবুর ছায়া রয়েছে। যখন দেখি তারা ছুটে চলেছে আমার মনে হয় তুই আমার জন্য ছুটে আসছিস। উল্কা কিংবা ছায়াপথের রেখার মাঝে খুজে পাই তোর আমার বৌচির খেলার দিন গুলির ছুটে চলা পথের ছায়া। খসে পড়া তারার মত একবার ছুটে আয় আমার কাছে। আমি আবার সেই ছোট্টটি হবো। ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুতে চাইবনা। তুই আমাকে কোলে তুলে পুকুর ঘাটে নিয়ে যাবি। হাত মুখ ধুইয়ে মাথায় দুপাশে ছোট দুটি বেনী করে দিবি। তারপর কেন্দুয়াই মেলা থেকে কেনা দুই পয়সার প্রজাপতি ওয়ালা লাল ক্লিপ। আম গাছের শাখে তোর টানিয়ে দেয়া দোলনায় আমি উত্তাল হয়ে দুলবো। আমি দিনমান সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াব। দিন শেষে ফিরে আসবো তোর কোলে। বুবু তুই কি আসবি? আমি তোর জন্য সন্ধ্যা রাত থেকে মধ্য রাত পেড়িয়ে ভোর অব্দি অপেক্ষা থাকবো। গ্রীষ্মের আকাশ থেকে শুরু করে শরতের আকাশ পেরিয়ে চৈত্রের খরা অব্দি অপেক্ষায় থাবো। বুবু এবার বল তুই আসবি। অন্তত একবার।

ইতি
তোর আদরের ছোট বোন পরী।
Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - রোদের ছায়া

    অসাধারণ জাস্ট অসাধারণ । বইমেলা নিয়ে এতো সুন্দর ছড়া আগে পড়েছি কিনা মনে পড়ছে না । অনেক শুভেচ্ছা । প্রিয়তে নিচ্ছি । 

    ( হ্নদ= হৃদ আর কেনে =কিনে  এমন হতে পারে)

    • - বালুচর

      ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো । জ্বী সংশোধন করেছি । কিন্তু ওখানে কিভাবে করতে হয় আমার জানা নেই । শুভেচ্ছা নিন ।

    - পিপীলিকা

    ছড়ায় ছড়ায় বইমেলার আমেজ ফুটাইয়া তুলছেন। বইয়ের কথাও কইছেন। ভালো লাগলো বালুচর ভাই। 

    • - বালুচর

      পিপীলিকা ভাই, মন্তব্য ভাল লাগলো ।

      শুভেচ্ছা সতত ।

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    khub valo laglo

    • - বালুচর

      ধন্যবাদ আপনাকে ।

    Load more comments...