Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জান্নাতুল নাঈম পিয়াল

১০ বছর আগে লিখেছেন

সম্মান

      বিজয়বাবু লোকটা বেশ একটু অন্যধরনের। কেমন একটা যেন! অতিরিক্ত লেখাপড়া জানেন বলেই বোধ হয় শুধু কথাবার্তায় না, লোকটার চলাফেরা ওঠাবসা, চোখের চাউনি সবজায়গা থেকেই যেন জ্ঞানের আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। তাছাড়া লোকটার হাবভাবও একটু অন্যরকম। হেঁয়ালি করতে ভালবাসেন। প্রথম আলাপে তাই তাকে যথেষ্টই চালিয়াত মনে হতে পারে। আমি আর হিমু ভাই যখন তার সাথে প্রথম দেখা করতে গেছিলাম, আমাদেরও ঠিক এমনটাই মনে হয়েছিল।

     সে দিনটা ছিল সোমবার। সন্ধে বেলা। আটটা সাড়ে আটটা বাজে। বিজয়বাবুর বাসার কাজের ছেলেটা আমাদের নিয়ে বসাল একটা রুমে। বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা চারিদিকে। তারই মধ্যে এক সেট সোফা আর কয়েকটা চেয়ার দেখে বোঝা গেল, এটাকেই এ বাড়ির ড্রইং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিজয়বাবু এলেন প্রায় দশ মিনিট পর। তার বয়স প্রায় আশির ওপরে। তাকে দেখে আমরা উঠে দাঁড়ালে প্রথমেই হাত জোর করে নমস্কারের ভঙ্গিতে বললেন, 'শুভসন্ধ্যা! বসো বসো।' আমরা প্রথমে সোফাতে বসেছিলাম। সেখানেই আবার বসতে যাব, ঠিক এমন সময় আমাকে বললেন, 'খোকা, তুমি চেয়ারে বসো। আমি তোমার ভাইয়ের সাথে সোফায় বসি। আমার আবার চেয়ারে বসার অভ্যেস নেই।' আমি মনে মনে ভাবলাম, তাই-ই সই! লোকটাকে দেখে যেরকম অভদ্র মনে হচ্ছে, তারপরও যে আমাকে অন্তত চেয়ারে বসার অনুমতি তিনি দিয়েছেন, সেটাই তো আমার পরম সৌভাগ্য। আসলে প্রথম দেখাতেই যেই ব্যক্তি বাসার অতিথিকে বলে, ‘এখানে না ওখানে বস’, নিজের অজান্তেই বোধ তাকে একটু একটু খারাপ লাগতে শুরু করে। তবে আমি চেয়ারে বসা মাত্রই তিনি বললেন, 'তুমি কিছু মনে করলে না তো খোকা?' আমি কিছু বলার আগেই হিমু ভাই বলে দিল, 'না না ও কি মনে করবে!'

     আমি অবশ্য মনে করেছিলাম। করব না কেন? ক্রমাগত আমাকে খোকা খোকা বলে যাচ্ছেন। পনের বছরের একটা ছেলে আর যাই হোক, খোকা নয় অবশ্যই। নেহাত আমি একটু ভাল ছেলে বলে তাই। নাহলে আমারও এতদিনে পাঁচ সাতটা গার্লফ্রেন্ড জুটে যেত।

     হিমু ভাই কথা শুরু করতে যাবে, এমন সময় পাশের রুম থেকে সুরেলা কন্ঠে ভেসে এল, 'তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা!' এই শুনে বিজয়বাবু নিজেই বললেন, 'ঐ যে শুরু হল আবার সেই প্যানপ্যানানি নাটক। গতকাল একটা দিন টিভিটা রেস্ট পেয়েছে। আজ আবার শুরু হয়েছে এইসব।' এই কথায় আবার আমার লোকটাকে বেশ ভালোই লাগতে শুরু করল। ইন্ডিয়ান হাবিজাবি নাটক যে অপছন্দ করে, সে নিশ্চয়ই খুব একটা মন্দলোক হবে না!

     বিজয়বাবু এবার হিমু ভাইকে বললেন, 'হিমু নামে যে ফোন করেছিল, তুমিই বোধ হয় সে? আর এইটি কে? তোমার ভাই?' আমার ব্যাপারে কথা হচ্ছে। তাই আমিই উত্তরটা দিলাম, 'জী হ্যাঁ, আমি সোহেল। হিমু ভাইয়ের ছোট ভাই।' বিজয়বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'সোহেল রানা কি?' আমি কিছুটা অবাক হলাম। কি ব্যাপার? লোকটা আমার নাম জানলেন কিভাবে? এর উত্তর আবার বিজয়বাবু নিজেই দিলেন, 'তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমার অনুমান ঠিক। আসলে আমি দেখেছি, শতকরা ৫০ ভাগ সোহেলেরই নামের শেষে রানা আছে। এই তো কদিন আগেও পত্রিকায় দেখলাম সোহেল রানা নামে এক ব্যাংক ডাকাত ধরা পড়েছে!'

     হিমু ভাই এবার বলল, 'আমার ভাইটি অবশ্য ব্যাংক ডাকাত নয়।' এই কথা শুনে হাসতে লাগলেন বিজয়বাবু। সে এক বিকট হাসি। হিমু ভাই এমন কোন কথা বলে নাই যে এভাবে হাসতে হবে। আবারো লোকটাকে খারাপ লাগতে শুরু করল আমার। কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে তিনি বললেন, 'সেটা তুমি ঠিকই বলেছ, হিমু। এই খোকাকে দেখে মনে হয় না ব্যাংক ডাকাত হিসেবে এর কোন ভবিষ্যৎ আছে!'

 

     হিমু ভাই এবার একটু হাসির ভান করে বলল, 'আচ্ছা বিজয়বাবু, এবার তাহলে কাজের কথায় আসি?' বিজয়বাবু বললেন, 'কাজের কথা মানে কি ঐ লিটল ম্যাগের ব্যাপারটা?' হিমু ভাই বলল, 'হ্যাঁ হ্যাঁ। লিটল ম্যাগই বলা চলে।' বিজয়বাবু এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'তা খোকা, তুমি আমায় বল দেখি লিটল ম্যাগ মানে কি? যদি তুমি উত্তরটা পারো, তাহলেই কেবল আমি তোমার ভাই যে অনুরোধটা করতে এসেছে তা রাখব।'

     আমার জিনিসটা জানা ছিল না। তাও ভেবে দেখলাম, এইবার যদি আমি বিজয়বাবুর উত্তরটা দিতে না পারি তাহলে হিমু ভাই তো আমাকে আর আস্ত রাখবে না। তাই অনেকটা সময় নিয়ে ভেবে বললাম, 'ছোট সাময়িকী কি?'

বিজয়বাবু হেসে দিয়ে বললেন, 'নাহ। উত্তরটা ঠিক নাকি ভুল বুঝছি না। তুই যেটা বলেছ, আক্ষরিক অর্থে লিটল ম্যাগকে বাংলায় তা-ই বলা যায়। তবে মনে রাখ, এর ভালো বাংলাটা হল ছোট কাগজ।'

     আমি অবশ্য তখন লিটল ম্যাগের ভালো বাংলা খারাপ বাংলা নিয়ে ভাবছি না। আমি শুধু আড়চোখে হিমু ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া কেমন তা জানার চেষ্টা করছি। হিমু ভাই অবশ্য স্বাভাবিক। এমন একটা ভাব যেন বেশ উৎসাহের সাথে একটা কৌতুক উপভোগ করছে। তারপর বলল, 'আমার ভাই অন্তত আক্ষরিক অনুবাদ তো করতে পেরেছে। তাহলে আমার অনুরোধ রক্ষায় আর আপত্তি নেই তো আপনার?'

বিজয়বাবু জবাবে বললেন, 'আগে অনুরোধটা যে কি সেটা তো শুনি। তবে কি বলতে চাইছ সে সম্পর্কে আমার একটা আন্দাজ অবশ্য আছে।'

     হিমু ভাই বলল, 'আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনাকে একটা গল্প বা কবিতা লিখে দিতে বলব?'

     'ন্যাচারেলি', বিজয়বাবুর উত্তর।

     হিমু ভাই এবার হাসল, 'কিন্তু তা না।'

     'তাহলে কি?', একটু যেন অবাক হলেন বিজয়বাবু।

     হিমু ভাই বলল, 'আমি আসলে চাই আপনি যাতে এই পত্রিকার সম্পাদকীয়র দায়িত্বটা নেন। আমি নিজেও সম্পাদনার কাজে থাকব। তবু আমি তো নিতান্তই নতুন। আপনার মত জ্ঞানী লোক সাথে থাকলে অনেক উপকার হত।'

     আমার ধারণা ছিল (এমনকি হিমু ভাইয়েরও) যে, লিটল ম্যাগের সম্পাদক হতে বললে হয়ত কিছুটা অবাক হলেও শেষমেশ রাজিই হবেন ভদ্রলোক। কেননা এমনিতেই এখন তার অখন্ড অবসর। তার ওপর আবার তিনি সাহিত্যানুরাগী। ফলে একটা লিটল ম্যাগের সাথে যুক্ত হতে অসম্মত হবার কোন কারণ আছে বলে আমাদের মনে হয়নি। কিন্তু না। রাজি বদলে তিনি বেশ রেগে গেলেন। আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, 'জাস্ট গেট আউট!' এই বলেই ভদ্রলোক ভেতরে চলে গেলেন। আমাদেরকে আর কিছু বলবার সুযোগ পর্যন্ত দিলেন না।

     শুরু থেকেই লোকটাকে খুব খারাপ লাগছিল আমার। শেষের ঘটনায় আমার ধারণা দৃঢ় হল। আসলেই লোকটা খুব খারাপ নয়ত উন্মাদ।

     এরপর প্রায় দুইমাস কেটে গেছে। হিমু ভাইয়ের লিটল ম্যাগের প্রথম সংখ্যাও বেরিয়ে গেছে। আমারও একটা আট লাইনের কবিতা (নাকি ছড়া?) ছাপা হয়েছিল তাতে। আমার লেখাটা বাদে আর সব লেখাই মোটামুটি ভাল ছিল। হিমু ভাই তো দারুণ খুশি। এমন একটা সময়, একদিন পিওন এল আমাদের বাসায়। একটা চিঠি দিয়ে গেল। আমরা বেশ অবাক হলাম। আজকালকার দিনে তো কেউ কাউকে চিঠি লেখা না! যাইহোক, হিমু ভাই চিঠির খামটা হাতে নিয়ে বলল, 'তোর আর আমার দুজনেরই নাম লেখা আছে!' এমনিতেই উত্তেজিত ছিলাম। আমার উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। কি মজা! জীবনে প্রথম কেউ আমাকে চিঠি লিখল!

     তবে চিঠিটা প্রথমে হিমু ভাই পড়ল। পড়তে গিয়ে বলল, 'বিজয়বাবু লিখেছেন।' পড়া শেষে চিঠিটা হাতে নিয়েই বেশ কিছুক্ষণ আপন মনে বসে রইল। কিন্তু আমার তো আর তর সইছে না। ছো মেরে তার হাত থেকে চিঠিটা ছিনিয়ে নিলাম। তারপর পড়তে শুরু করলাম।

 

 

 

স্নেহভাজন হিমু ও সোহেল,

 

আমার আশীর্বাদ নাও। আশা করি এই অধমকে ভুলে যাওনি। তোমাদের স্মৃতিশক্তি যদি খুব খারাপ না হয় তো মনে আছে নিশ্চয়ই, আমার বাড়িতে একদিন অতিথি হয়ে এসেছিল তোমরা দুই ভাই। আমি অবশ্য অতিথিকে প্রাপ্য সম্মান জানাতে পারিনি। অতিথির অসম্মান করার পেছনে কোন যুক্তি থাকতে পারে না। তবু সেদিনকার সেই ঘটনার ব্যাপারে ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই আমি। এমন কিছু কথা বলব, যা আগে কাউকেই বলিনি।

ছোটবেলায় আমার বাবা আমাকে ডাকতেন খোকা বলে। তার ইচ্ছা ছিল, তার খোকা একদিন বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু আমি কোনদিন তার দেখা স্বপ্ন পূরণ করতে যাইনি। যদিও আমি বেশ পড়ুয়া ছিলাম তবু যা পড়তাম তার সবই ছিল আউটবুক। খুব অল্প বয়সে রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিম থেকে শুরু করে শংকর-যাযাবর সবই পড়ে ফেলেছিলাম। সেসব পড়তাম আর ডাইরির পাতা বোঝাই করে এটাসেটা লিখতাম। নিজের মনে লালন করতাম লেখক হবার স্বপ্ন। সেইজন্য পড়ালেখাটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিইনি। ভেবেছি, দরকারের চেয়ে অনেক বেশি জেনে ফেলেছি আমি। পাঠ্যবই আলাদা করে পড়ার কি আর দরকার? তারপরও ম্যাট্রিক বা ইন্টারে খারাপ করিনি। তাই বাবা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাও থামাননি। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি বিরাট আঘাত পেলেন যখন দেখলেন আমি কোন মেডিকেল কলেজেই ভর্তি হতে পারলাম না। আমি নিজে অবশ্য তাতে খুব বেশি হতাশ হয়ে পড়িনি। শুধু ভেবেছি, লেখালেখির ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েছেন। ডাক্তার হয়ে রোগীর রোগের চিকিৎসা করতে না পারি, লিখে তো মানুষের মনের চিকিৎসাটা অন্তত করতে পারব! তাই বাবার অমত সত্ত্বেও জোর করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে। লক্ষ্য একটাই, সাংবাদিকতার পাঠটাও নেয়া থাকল, পাশাপাশি লেখালেখি তো চলছেই।

নিজের লেখার প্রতি বেশ আস্থা ছিল আমার। সেই আস্থা আরও বেড়ে যেত তখনই, যখন দেখলাম আমার লেখা পত্রিকার পাতায়ও উঠছে। সাহিত্য পাতায়। কিন্তু শুধু লেখা ছাপা হলেই বা কি? তার সাথে কিছু আয়ও তো চাই। ওদিকে ততদিনে সাংবাদিকতা নিয়ে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে ফেলেছি। এখন কেবল কিছু উপঢৌকন দিতে পারলেই কোন একটা পত্রিকায় চাকরি হয়ে যাবে। আমি অবশ্য তা চাইনি। ঐ যে বললাম নিজের লেখার ওপর আস্থা ছিল তাই ভেবেছি নিজের লেখা দিয়েই পত্রিকাওয়ালাদের মুগ্ধ করতে পারব। একটা চাকরিও বাগিয়ে নেব। এই উদ্দেশ্যে রোজ রোজ নিজের হরেক ধরণের লেখা নিয়ে যেতাম পত্রিকা অফিসে। সাথে থাকত সাংবাদিকতায় এমএ করার সার্টিফিকেটও। কিন্তু সেসবে কোন কাজ হত না। সবাই বলত, হাজার পচিশ টাকা আনো, চাকরি কনফার্ম। কিন্তু আমায় টাকা দেবে কে? বাবার কাছে টাকা চাওয়ার মুখ যে আমার আর নেই।

এমন এক দুঃসময়ে খোঁজ পেলাম একটা নতুন পত্রিকা চালু হচ্ছে। সেটার সম্পাদক নাকি আবার অনেক বড় মাপের এক সাহিত্যিক। ভাবলাম, একজন সাহিত্যিক নিশ্চয়ই আরেক উঠতি লেখককে তার প্রাপ্য সম্মানটা দেবে। এই আশা নিয়ে রোজ রোজ ধর্না দিতে লাগলাম ঐ পত্রিকার সম্পাদকের অফিসে। কোন কোন দিন দেখা হয়। কোনদিন আবার ভেতরে ঢোকার পারমিশনই পাই না। যেদিন ঢুকতে পারি, তার সাথে দেখা করতে পারি, সেদিননিজের লেখা দেখিয়ে তাকে ইমপ্রেস করতে চেষ্টা করি। আর সে আমাকে আশা দেয়, 'হুম সবই তো বুঝলাম। দেখি প্রকাশকের সাথে কথা বলে। আমার হাতে তো কিছু নাই। আর তুমি সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লেখা দিতে থাকো।' অবশ্য সাহিত্য পাতায় লেখা দিয়ে কিই বা লাভ? সেগুলো তো বিনে পয়সার লেখা। অমন লেখা লিখে যে আর পেট চালানো যাচ্ছে না।

তবু সম্পাদকের সাথে কিছুদিন অন্তর যোগাযোগ চালিয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু কোন লাভই হয় না। শেষ যেদিন তার কাছে গেলাম, মন মেজাজ তার খারাপ ছিল কিনা জানি না। রাজধানিতে সদ্য ঘটা একটা ঘটনার রিপোর্ট নিজের মত করে তৈরি করে নিয়ে গেছি। আমার ধারণা সেটা দারুণ হয়েছে। এমন রিপোর্ট লেখার পুরস্কারস্বরুপ আজ একটা না একটা আশা তিনি দেবেনই। কিন্তু তার কিছুই হল না। লেখাটা আমার মুখের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, 'এসব কি হাবিজাবি লিখে নিয়ে রোজ রোজ ডিসটার্ব করতে আস? আরেকবার আমার অফিসে তোমাকে দেখলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।'

সেদিন আমি বুঝে গিয়েছিলাম, ভালো লেখার কোন মূল্যই নেই এখানে। কিন্তু বেশি রাগ হল এই সম্পাদকদের ওপর। তারা অন্যের লেখা ছাপাতে পারেন ঠিকই, কিন্তু লেখককে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিতে পারেন না। ওইদিন থেকেই লেখালেখির অভ্যাস একেবারে বাদ দিয়ে দিলাম। মাস্টারি শুরু করলাম একটা গ্রামের স্কুলে। এরপর মাঝেসাঝে লিখলেও তা কেবল নিজের নোটবুকের পাতায়। নতুন কোন ম্যাগাজিন বা লিটল ম্যাগে হয়ত লেখা দিয়েছি কখনো সখনো কিন্তু পত্রিকায় আর না। আর তারপর থেকে কাউকে যদি শুনি যে সে কোন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের সম্পাদক, ওমনি তাকে দেখে নাক সিটকেছি। জানি না শুধু এই সম্পাদকদের ওপর রাগ করা যুক্তিযুক্ত কিনা। তবু আমার সমস্ত রাগ একচেটিয়াভাবে এই সম্পাদকদের ওপরই।

আর সেই আমাকেই যখন তোমাদের পক্ষ থেকে সম্পাদক হবার অনুরোধ করা হল, হোক না সেটা কেবলই একটা লিটল ম্যাগ, তবুআমার মানসিক অবস্থা তখন কিরকম হয়েছিল তা বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই। সেজন্যই তোমাদের ওপর সেদিন কিছুটা ওভার রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছিলাম। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি এই বৃদ্ধকে তোমরা ক্ষমা করে দেবে।

 

ইতি

বিজয়রঞ্জন মিত্র

 

পুনশ্চঃ সোহেলের লেখা কবিতা দেখলাম তোমাদের ঐ লিটল ম্যাগে। বলতে খারাপ লাগছে, ছোট্ট কবিতাটি খুব একটা জুতের হয়নি। তবু সোহেলকে বলব, কখনো হাল ছেড়ো না। আজকের দিনে লেখকরা তাদের প্রাপ্য সম্মানটা পাচ্ছে। তাই তোমরা চেষ্টা চালিয়ে গেলে হয়ত সম্পাদকদের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানট্যকু আদায় করে নিতে পারবে। আর হিমু, আজকের তোমাকেই এখন আমার পক্ষ থেকে অনুরোধ, আজ লিটল ম্যাগের সম্পাদক হয়েছ। কাল হয়ত আরও বড় কিছুর সম্পাদক হবে। কিন্তু কখনো কাউকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে ভুলো না।

Likes ১৪ Comments
০ Share

Comments (14)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    খুব ভালো হয়েছে ।

    - সুখেন্দু বিশ্বাস

    সাবাস তোরে হে বাঙালি
    কেমনে সবার মন রাঙালি
    বিশ্বে তোর উন্নত শির,
    কার বলে তুই করলি সাহস
    স্বাদ নিতে মুক্তির।

     

     

    দারুণ শুরু। প্রথম পোস্টের শুভেচ্ছা ভাই সাকি। 

    - আলমগীর সরকার লিটন

    ছড়ার মাঝে সংগ্রামি সংগ্রামি ভাবময়

    অভিনন্দন--

    Load more comments...