আচ্ছা, ছেলেটার কি আমার কথা মনে আছে? তার কি মনে পড়ে আজ সকালে একটা মেয়ের সাথে তার কথা হয়েছিল? নাকি সে ভুলে গেছে? রাস্তায় চলতে ফিরতে আমার মত অনেকের সাথেই তার কথা হয়, সেজন্য আলাদা করে আমাকে তার মনে রাখার কথা না? আমার কিন্তু ঠিকই তার কথা মনে আছে। শুধু মনেই যে আছে, তা কিন্তু না। আমার মনে এখন শুধু তার কথাই ঘুরছে। সেই সকাল থেকে অন্য সব কিছু ভুলে কেবল তাকে নিয়েই ভাবছি। আচ্ছা, এমন কেন হচ্ছে আমার? এরকম তো আগে আমার হয়নি! এই একুশ বছরের জীবনে আগে তো কখনো কোন ছেলেকে নিয়ে এত ভাবিনি। কত ছেলেই তো আমাকে কাছে পেতে চেয়েছে। আমি কখনোই তাদের পাত্তা দিইনি। অথচ আজ সারাদিন শুধু এমনই একজনের কথা ভেবে চলেছি, যার সাথে আগে কোনদিন আমার দেখা হয়নি। ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবু একবারের দেখাতেই বারবার ছেলেটার মুখের ঝাপসা প্রতিচ্ছবি আমার মনে উঁকি দিয়ে চলেছে। একেই কি ভালবাসা বলে?
মেয়েটি এসব কথা তার ডায়রিতে লিখেছিল। লেখার কিছুক্ষণ পরই তার মনে হতে লাগল, সে বোধহয় একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। আজ সকালে একটা ছেলের সাথে সত্যিই তার দেখা হয়েছিল। তাকে দেখে বুকের মধ্যে কেমন একটা মোচড়ও দিয়ে ওঠে। ছেলেটার সাথে দুই একটা বাক্যবিনিময়ও হয়। কিন্তু সেসব তো কেবলই ভদ্রতার খাতিরে। সেই কথোপকথনকে যেমন কোনমতেই হাইলাইট করা উচিৎ নয়, তেমনি সেই ছেলেটাকে নিয়েও এতটা মোহগ্রস্ত হওয়া উচিৎ না। সবচেয়ে বড় কথা, ছেলেটা হয়ত এতক্ষণে তার কথা ভুলেই গেছে। যে তাকে ভুলে গেছে, তাকে নিয়ে এত ভেবে ভেবে কি সে নিজেকে নিজের কাছে ছোট করছে না?
এইসব মেয়েটা ভাবছিল হয়ত ঠিকই। কিন্তু সেই সাথে আরেকটি চিন্তাও তার মনে উঁকি দিয়ে গেল। সে হয়ত মনে মনে ভাবছে ছেলেটাকে নিয়ে তার ভাবা উচিৎ না। কিন্তু সেই সমান্তরালে সে যে ঠিকই ছেলেটার কথা মনে করে চলেছে। কখনো প্রত্যক্ষভাবে। আবার কখনো পরোক্ষভাবে, এই ভেবে যে ছেলেটাকে নিয়ে তার আর ভাবা উচিৎ না। অর্থাৎ কোন না কোন ভাবে ছেলেটার কথা তার মন থেকে কিছুতেই দূর হচ্ছে না। এই ব্যাপারটা নিয়ে মেয়েটা কিছুটা আত্মশ্লাঘায় ভুগতে থাকল। নিজেকে বারবার ধিক্কার দিয়ে বলল, 'ছিহ! নিজেকে এইভাবে ছোট করার কোন অধিকার আমার নেই!' কিন্তু সে শুনেছে মানুষ ভালোবাসার কাঙাল। ভালবাসা পাওয়ার জন্য যখন সে মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন সেই মরিয়াপনার কাছে আত্মসম্মানও বিলীন হয়ে যায়।
মেয়েটা আরও একবার নিজেকে ধিক্কার দিল। নিজের কল্পনার ডানা মেলতে গিয়ে কি সে ভালবাসা শব্দটাকেও ছোট করে ফেলছে না? ছেলেটার প্রতি তার যে মনোভাব, সেটা আবার ভালবাসা হল কখন? এটাকে ভাল লাগা হয়ত বলা চলে। কিন্তু ভালবাসা তো অনেক পরের কথা। দুটি মনের মিলন হলেই না ভালবাসা হবে। কিন্তু সে তো অন্য মনটার সন্ধানই এখনো পায়নি। কখনো হয়ত পাবেও না। তবে এটা অসত্য নয় যে সে সত্যিই আজ ভালবাসার কাঙাল হয়ে উঠেছে। আজ ছিল ফাল্গুনের প্রথম দিন। অন্য সবার মত সেও হলুদ শাড়িতে নিজেকে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়েই একটা বিশাল একাকীত্ব তাকে গ্রাস করে। হাজার মানুষের ভিড়েও সে ছিল একা। অন্য সবাই যে প্রকৃতপক্ষেই ছিল 'দোকা'! আর তাই একটা ভালবাসার মানুষের অভাব খুব করে অনুভুত হচ্ছিল তার মনে। সেই মন ভাবছিল, 'আজকের এই ভালবাসার দিনে আমারও কি একটা ভালবাসার মানুষ থাকতে পারত না?'
কিন্তু সেই ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা যে হঠাৎ করে এমন হাস্যকর রূপ ধারণ করবে, তা মেয়েটা স্বপ্নেও ভাবেনি। কি অদ্ভুত ব্যাপার! ভার্সিটিতে সেই একাকীত্ব অনুভবের পর বাড়ি ফেরার পথে প্রথম যেই ছেলেটার সাথে বাসে দেখা হল, খানিকটা কথা হল, তাকেই কিনা সে তার ভালবাসার মানুষ হিসেবে কল্পনা করছে! এ আসলেই তার অসম্ভব কল্পনা। কোটি মানুষের এই শহরে আবার কোথায় দেখা পাবে সেই ছেলের? এটা তো গল্প উপন্যাস নয়। এ হল বাস্তব জীবন। এই জীবনে নিশ্চয়ই অলৌকিক ব্যাপার স্যাপার ঘটবে না। আজ যাকে প্রথমবার দেখল, তার সাথে নিশ্চয়ই এরপর থেকে রোজ রোজ দেখা হবে না। কোনদিন দেখা হলেও একে অন্যকে চেনার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। এই তো একটু আগেই সে চোখ বুজে অনুধাবন করল, ছেলেটার চেহারা সে আর মনে করতে পারছে না।
কিন্তু আবার সে ভাবতে বসল, তবু তো একটা সান্ত্বনা পাওয়া গেল! আজ থেকে আর তাকে ভাবতে হবে না যে তার কোন ভালবাসার মানুষ নেই। আজ থেকে সে ভাববে, তারও একটা ভালবাসার মানুষ আছে। ভালবাসা তো বাহ্যিক ব্যাপার নয়। মানসিক ব্যাপার। তাই সেও একটা ছেলেকে মনে মনেই ভালবাসে। ছেলেটা তাকে ভালো না বাসুক, সে তো বাসে!
যতদিন তার জীবনে সত্যিকারের ভালবাসা না আসে, ভালবাসার বিশেষ দিনগুলোতে সে তার এই মনগড়া ভালবাসাকে সঙ্গী করেই সন্তুষ্ট থাকবে।
Comments (1)
ভাল লাগল ভাই। কেমন আছেন?
দাদা
আছি ভাল আপনি
মন্তব্য করার
অসংখ্যা ধন্যবাদ
ভাল থাকুন-----
চমৎকার হয়েছে, ভালো লাগলো
অনকে ধন্যবাদ