Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কবি ও দার্শনিক

১০ বছর আগে লিখেছেন

♥ ♥ ♥ পরাবাস্তব রচনা ; দু’দণ্ড শান্তি ! ♥ ♥ ♥


সকাল থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বায়না ধরেছেন , তিনি গাঁজা খাবেন ! এই সাতসকালে গাঁজা কোথায় পাই ? বললাম, এতোকিছু থাকতে গাঁজা কেন গুরু ? গুরু বললেন , ইদানিং কবিতা লিখে আর আরাম পাইনা রে ! মন কেমন যেন ম্যাদা মেরে গেছে । গাঁজা খেলে একটু আরাম পাই, তখন কবিতা লেখায় জোশ আসে । দুইটা পুরিয়া এনে দে না বাপু , আচ্ছা করে শান্তিনিকেতনি টান দিই ।
হাজার হোক গুরুর নির্দেশ ! অগত্যা গাঁজার সন্ধানে যেতেই হলো । গেলাম কাজী নজরুলের রুমে । সাহিত্যের ভাষায় বলতে গেলে এভাবে বলা যায়-
''কাজী নজরুল ইসলাম
গাঁজার জন্য তার রুমে গিছলাম ''!
তিনি এক ভাড়াটে মেসে থাকেন । মেসের সব সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি এক ঘেঁটুগানের দল খুলেছেন । সেখানে রাতভর গানের রিহার্সেল চলে । গানের তালে-তালে চলে মেয়েলি অভিনয় । গানের কথাবার্তা সব আদিরসাত্মক । '' নিশিরাইতে আইয়্যো বন্ধু খাইয়্যো বুকের মধু !'' - সব এই টাইপের গান । গিয়ে দেখি কবি সাহেব বেঘোরে ঘুমেচ্ছেন । সম্ভবত তিনিও মধু খেয়ে ঘুম দিয়েছেন । কবির পরনে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি । লুঙ্গির অবস্থা বিপজ্জনক ! এখন সেটা হাঁটুর দুই বিঘত উপরে ছোট পুঁটলি বেঁধে আছে । যেকোন মুহূর্তে চিচিং ফাঁক হয়ে যেতে পারে । তাই দেরি না করে কবিকে ডাকলাম । এমনিতেই তিনি ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ । কাঁচাঘুম নষ্ট হওয়ায় তিনি আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালেন । তার তাকানোর সে রুপ বড়ই ভয়ঙ্কর ! তারপরও তিনি শান্ত । তবে গম্ভীর গলায় বললেন , পাষাণের ভাঙালে ঘুম ?! কাহিনী কি ঝটপট বলে ফেল্‌ । আমি কাহিনী খুলে বললাম , কবিগুরু গাঁজা খাবার বাসনা প্রকাশ করেছেন । এটা শুনে তিনি রেগেমেগে বজ্রকণ্ঠে বললেন ,
''ওরে নরাধম খোদার কসম গাঁজা নেই মোর কাছে ,
খোঁজ গিয়ে তুই সাঁইজি-গোঁসাইর আখড়া যেখানে আছে'' ।
ওনার তেজী কণ্ঠ শুনেই বুঝে ফেললাম অবস্থা বেগতিক । ভাবলাম গাঁজাগুঁজা পরে হবে আগে পালাই । যেই পালাবো বলে হাটা শুরু করেছি তখন কবি সাহেব আমার হাত ধরে ফেললেন । বললেন, পেলে আমাকেও একটু দিস রে ! ইদানিং গাঁজা না খেলে আমারও গান আসে না । আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম , অবশ্যই-অবশ্যই ।

লালন গোঁসাই এর আখড়ায় চলে এলাম । গিয়ে দেখি ধুন্ধুমার অবস্থা ! গোঁসাইজি নেংটি পরে জলচৌকিতে বসে আছেন । শিষ্যরা তার গায়ে সরিষার তেল ডলছে । সাঁইজির চোখ বন্ধ । তার সারা গা লোমে লোমারন্য ! কয় হাজার বছর যে চুল-দাড়ি কামান না আল্লাহই মালুম । গায়ের গন্ধে কাছে যাওয়া যায় না । চিড়িয়াখানায় সিংহের খাঁচা থেকেও এমন উৎকট গন্ধ আসে কি না কে জানে ! তবে তিনিও তো সিংহপুরুষ ! তাই ওরকম ঘ্রাণ আসাটা অস্বাভাবিক না । লালন গোঁসাইকে ঘটনা খুলে বললাম । তিনি শুনে তো মহা খুশি । বললেন , তাহলে আজই আমার আখড়ায় একটা পার্টি হয়ে যাক । আমি খানিকটা ইতস্তত বোধ করলাম । বললাম , সাঁইজি আজই কেন ? সবাইকে ম্যানেজ করবো কেমন করে ? আর কয়েকদিন পরে না’হয়...
সাঁইজি আমার মুখের কথা কেড়ে নিলেন । সুর দিয়ে বললেন , উহু... সময় গেলে গাঁজন হবে না ...।। তুই সবাইকে আনার ব্যাবস্থা কর । গাঁজার দিকটা আমি দেখছি । আমি জবাবে বললাম , জ্বী সাঁইজি । যাবার সময় একফাঁকে আমাকে বললেন , চুলকানির ভালো মলম আছে কি’না জানাস তো । লোম-ঝুটা কামাই না আজ দুই যুগ । রানের চিপা-চাপা বড্ড চুলকায় রে ভোলামন ! আর হ্যা ভালোকথা ! পারলে আমার জন্য একটা সেনসোডাইন টুথপেস্ট নিয়ে আসিস তো । সেদিন চাল-ভাঁজা খেয়ে বারোটা বেজে গেছে । ভীষণ দাঁতব্যাথা । আমি তো কেঁদেই মরি । শেষে গান বেঁধে ফেললাম , '' দাঁত গেলো দাঁত গেলো বলে , একী আজব চাল-ভাঁজা ! ’’ আমি মনে-মনে বললাম, এই সেরেছে !

জীবনানন্দ দাশকে ফোন দিলাম । দুই-তিনবার রিং হওয়ার পর তিনি ফোন ধরলেন । তারসাথে যে কথা হলো তার সারমর্ম এই , তিনি এখন লঞ্চে করে বরিশাল থেকে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন । সঙ্গে তার দুটি ডেকি মুরগি আর একহালি কচি ডাব । বনলতা সেনের স্বামী এই মুহূর্তে বিদেশে আছেন । এই ফাঁকে তিনি তার সাথে দেখা করবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছেন । তার নাকি বনলতার স্তনের প্রশংসা করে একটা কবিতা লেখার কথা । তবে লালনের আখড়ায় পার্টি হবে দেখে সেই প্ল্যান আপাতত বাদ । তিনি আসবেন ।

মহাকবি মাইকেলের সাথে রাস্তায় দেখা । তিনি কপোতাক্ষ নদীতে স্নান সেরে সবেমাত্র রোঁদে গা শুকাচ্ছেন । সেইসাথে কাদের সিদ্দিকিকে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন । শালার ভাই আমার গামছা নিয়ে গেলি কই ?
লালনের আখড়ায় পার্টির কথা শুনে তারমধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না । তার কথা হচ্ছে তিনি চোলাই মদ খেয়ে অভ্যস্ত । গাঁজার গন্ধ তিনি সহ্য করতে পারেন না । তবে আমি অভয় দিলাম । বললাম , ঈশ্বরদীর চিনিকল থেকে ব্লাকে কিছু বাংলা মদের ব্যাবস্থা করে রাখবো । পার্টির ফাঁকে-ফুঁকে দুইপেগ মেরে দেয়া যাবে । মাইকেল সাহেব এতে আনন্দিত হলেন বলেই মনেহলো । বললেন, ঠিক আছে তাহলে । এখন তুই যা । আমার আবার কেশবপুরে একটা সার্কাসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে হবে । শুনেছি সার্কাসে ময়ূরী নামক এক বিশালবক্ষা রমণী এসেছে । আগে সে বাংলা সিনেমায় কাজ করতো । লোকমুখে শুনেছি সে নাকি দুগ্ধস্রোতরুপী ! তার ভাণ্ডারে নাকি বিবিধ রতন । তা সবে অবোধ আমি কীভাবে অবহেলা করি ?! আমি বললাম, আর যাই করেন টাইম টু টাইম চলে আসবেন মহাশয় । দুগ্ধস্রোতে আবার সাঁতার দিতে যাইয়েন না । মহাশয় জিব কেটে বললেন , নো ওয়ে নো ওয়ে ।

হেলাল হাফিজকে ফোনে বললাম গঞ্জিকা উৎসবের কথা । হাফিজ সাহেব বললেন, ওসব আমি চিনি না–বুঝি না । আজ বউ খিচুড়ি আর ইলিশ রেঁধেছে । ঐটা খাবো । তাই এখন যৌবন যার খিচুড়ি খাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় । আমি মনেমনে বললাম, আ হা হা , ব্যাটা মিনসে ! খিচুড়ি-ইলিশ বোঝো-গাঞ্জা বোঝো না !

রাতে সাঁইজির আখড়ায় গঞ্জিকার আসর বসে গেলো । তাকে কেন্দ্র করে আমরা গোল হয়ে বসলাম । কবিগুরু হাজির । নজরুল সাহেব তার ঘেঁটুদলের সব চ্যালাপ্যালা নিয়ে উপস্থিত। জীবনবাবুর সাথে ডেকি মুরগি আর কচি ডাব ছিলো । আশ্রমের খানকায় জমা দিয়ে তিনিও সাঁইজির পাশে বসে পড়েছেন । তার পাশে বনলতা সেন চারফিট লম্বা চুল পেছনে ছড়িয়ে বসে আছেন । অভিনেতা আবুল হায়াত বেশ হতাস ভঙ্গিতে সেই চুলের বাহার দেখছেন আর নিজের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন । মাইকেল মহাশয়ও এসেছেন । তার সাথে নায়িকা ময়ূরী ! এক ফাঁকে দেখলাম আল-মাহমুদ আর মহাদেব সাহা কোত্থেকে এসে হাজির । ঘাড় ঘুরিয়ে যতোই দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি । এতো মানুষ কীভাবে আসলো ! যাকেই দেখি সেই পরিচিত । বাহ ! সবাই সাঁইজিকে ঘিরে গোল হয়ে বসে পড়ছে । সাকিব খানকে দেখলাম স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরে সবাইকে চা বিলি করছে । তাকে বাকের ভাই ধমক দিলেন, এই ব্যাটা চা সাপ্লাই বন্ধকর ।

এবার সাঁইজি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন , গঞ্জিকার আসরে গান না হলে জমে না গোঁসাই । কুদ্দুস বয়াতিকে বলো গান শুরু করতে । বলামাত্রই কুদ্দুস বয়াতি ঢোল বাজিয়ে গান শুরু করে দিলো । গানের তালে-তালে গঞ্জিকা উৎসবের সূচনা হলো । প্রথমে সাঁইজি বুকভরে বড় দম নিয়ে কল্কিতে দিলেন বেদম টান । সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠলো । এরপর একজনের পর একজনের হাতে কল্কি চালান হতে থাকলো । সবাই সাধ্যমতো টান দিচ্ছে । আকাশে ধোঁয়ার বিরাট কুণ্ডুলি উঠতে লাগলো । গানের তালে তালে সবাই কল্কিতে টান দিয়েই যাচ্ছে । সবার মুখে একধরণের প্রশস্তির হাসি । চোখে এক ধরণের ধোঁয়াশা । এই অবস্থায় পৃথিবীর সবকিছুকে অপার্থিব মনে হয় । হঠাৎ করে বাঁশির ফুঁৎকার শোনা গেলো । সম্ভবত পুলিশ আসছে । সাঁইজি ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে সটকে পড়লেন । রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে শুরু করলো । এই মুহূর্তে তাদের মালকোঁচা মেরে দৌড়ানো ছাড়া উপায় নাই । জীবনবাবু তার বনলতাকে নিয়ে বাংলার নদী-মাঠ-ক্ষেত ভালোবেসে যেদিকে পারছেন পালাচ্ছেন । যে কেলেঙ্কারি অবস্থা ,তাতে সম্ভবত তিনি আবার আসিবো ফিরে কথাটি আর দ্বিতীয়বার বলবেন না । মাইকেল সাহেবের অবস্থাও একই । পরগাঁজা লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ আখড়াতে- গাঁজাবৃতি কুক্ষণে আচরি ! মোটকথা সবাই যে যেভাবে পারছে পালাচ্ছে । আমাকেও পালাতে হবে । সেরকমই প্রস্তুতি নিচ্ছি । কবি - সাহিত্যিকদের একটাই আফসোস ! এদের কোন কালেই দু’দণ্ড শান্তি মিললো না !

Likes Comments
০ Share

Comments (5)

  • - জাহাঙ্গীর আলম

    অনেক ধন্যবাদ কষ্টসাধ্য পোস্ট শেয়ারের জন্য ৷ সবগুলো উকির লিন্ক দিয়েছেন ৷ মূল ছবির জন্য কিছু imdb দিতে পারতেন ৷ ভাল থাকবেন ৷

    • - দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

      ধন্যবাদ ভাই। আমি ডাওনলোড লিংক দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ভাই এটা পুরাটা করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে , অ্যামেচার মানুষ।

    - আখতারুজ্জামান সোহাগ

    তথ্যবহুল পোস্ট। যথেষ্ট শ্রম দিয়ে এবং সময় নিয়ে করা পোস্টটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

    • - দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

      ধন্যবাদ সোহাগ ভাই।