Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

অমিত বাগচী (অন্তহীন)

১০ বছর আগে লিখেছেন

গাঁজার নৌকা......

গাঁজার আসরটা রতনকে ছাড়া চলে না। ওর মত করে গাঁজা কেউ বানাতে পারে না। আজ রাতের আসরটাও তারই আয়জন। তবে, ওরই বন্ধু নির্ঝর ওর চেয়ে বড় ভবের পাগল। বলতে গেলে প্রায় সারাদিনই সে কাটিয়ে দেয় গাঁজা খেয়ে। আর এখন গাঁজাটা ওর কাছে পানির মত হয়ে গেছে। সারাদিনই খায়। রাতে অবশ্যই অন্যকিছু দরকার। আজ রাতে পর্যাপ্ত পরিমানে আছে ফেন্সিডিল।

ওরা সাতজন একসাথে বসেছে। একজন আজ নতুন যোগ হয়েছে। ছেলেটা এই বছর ভর্তি হয়েছে। নির্ঝর কখনই কোন কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। ও সবসময় একটা ভাবের জগতে থাকে। তারপরও একবার মনে হলো, ছেলেটা ভর্তি হতে না হতেই ওদের সাথে বসে গেলো, কেমন কথা? তবে, এতকিছু ভাবার সত্যি সময় নেই। ওর সমস্ত ভাবনা একজনকে ঘিরেই।

আসর ছেড়ে হঠাত করেই উঠে আসলো নির্ঝর। একসাথে বসে থাকতে ভাল লাগছে না। নিজের রুমে চলে আসলো সে। আজ রুমে একাই আছে ও। ওর রুমমেটগুলোও আসক্ত হয়ে পরেছে, বলতে গেলে ওকে দেখেই। যদিও, ও অনেকবার নিষেধ করেছে। কিন্তু, কিছু করার নেই। ওর মত হতাশা থেকে এরা খায়না। এরা খায় কৌতুহল থেকে। খাওয়ার পরে হতাশার একটা কারন আবিষ্কার করে নেয়। ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর।

আজ নিজের রুমে শুয়ে গাঁজা টানছে নির্ঝর। গাঁজার ধোঁয়ার মাঝে হটাতই ভেসে উঠলো একটা মুখ। খুব চেনা পরিচিত একটা মুখ। ব্যপারটা নতুন নয়। গত পাঁচ বছরে অনেকবারই এই মুখ দেখতে পেয়েছে ও। মুখটা ভাসে ওর সামনে। কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে ওর আশেপাশে। তারপর চলে যায়। আজ কেন জানি, খুব ইচ্ছে হলো একটু কথা বলতে। প্রথমে পারছিল না। একটু চেষ্টার পর সফল হলো।

নির্ঝরঃ তনু, কেমন আছো?
তনুঃ ভাল। অনেক ভাল। তুমি?
নির্ঝরঃ দেখতেইতো পাচ্ছো!
তনুঃ মেয়েদের জীবনটা এরকমই। সারাজীবন, কারোর না কারোর কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে  হয়।
নির্ঝরঃ আমার কাছে তুমি অপরাধী নাতো।
তনুঃ সেটাতো তোমার দয়া! কিন্তু, তুমিই বলো, কি করার ছিল আমার? বলো?
নির্ঝরঃ কিছু করার ছিল না। পৃথিবীটা টাকার। এরকম পৃথিবীতে তুমি টাকার না হয়ে আমার হবে কীভাবে?
তনুঃ আমি কখনও টাকার চিন্তা করিনি। তুমি আমাকে ভালবাসতে, এটাই আমার কাছে যথেষ্ট ছিল। আমাকে গভীরভাবে ভালবাসে, এরকম কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যপার। কিন্তু, বাবা মা’র অমতে বিয়ে করাটা কি সম্ভব? নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে কোন মেয়েটা চায় বলো?
নির্ঝরঃ হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলাম। জীবনের কঠোর বাস্তবতাকে আমার চেয়ে কাছ থেকে খুব কম মানুষই দেখেছে। তোমার প্রতি সত্যি আমার কোন অভিযোগ নেই। ভালবাসার জন্য শাস্তির বিধান পৃথিবীর কোন দেশের সংবিধানে নেই।

তনুঃ সবকিছুর মাঝে রসিকতা করার অভ্যাস যে তোমার এখনও আছে, এটা দেখে ভাল লাগলো।
নির্ঝরঃ জীবনটা আমাকে নিয়ে রসিকতা করে চলেছে সর্বক্ষন। গোটা দুনিয়ার কাছে আমি রসিকতার পাত্র।
তনুঃ তুমি অনেক ভাল ছেলে নির্ঝর। তোমার বাবা রিকশা চালায় বলে নিজেকে তুমি কেন ছোট ভাববে? একটা সরকারি ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতে পারাটা কত বড় ব্যপার বলতো?
নির্ঝরঃ আর পড়ালেখা। আমিতো তোমার জুনিয়র। তুমি পাশ করে গেলে দুই বছর হলো। আর আমি এখনও ক্যাম্পাসে পরেই আছি। এবারই আমার শেষ সুযোগ। এবার পাশ করতে না পারলে ভার্সিটি থেকে বের করে দেবে।

তনুঃ প্লিজ ভাল করে পড়ালেখা করো। নির্ঝরঃ কথাটা তুমি বললে আমি চেষ্টা করতাম। কিন্তু, গাঁজার ধোঁয়ায় তোমাকে আমি পেতে চাইনি কখনও।

তনুঃ কিছু বলার নেই।
নির্ঝরঃ তোমার কবেই বা কিছু বলার ছিল?

তনুঃ না ছিল না। আমার হাত পা বাঁধা থাকলে আমি কি করবো?? বোঝ না কেন??
নির্ঝরঃ তোমার বাবা তোমাকে বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে দেবে তাই না? আমার বাবা রিকশাওয়ালার বেশি কিছুতো আর হতে পারবে না। তা, এখানে বোঝার আছেটা কি?
তনুঃ সবই বুঝলে এত কষ্ট পাও কেন?
নির্ঝরঃ কোথায় কষ্ট পাই? গাঁজা, ফেন্সি, হিরু এগুলো কেন খাই? তোমাকে ভুলে থাকার জন্যইতো।
তনুঃ তাই? অথচ, দেখো এই গাঁজা খেয়েই কিন্তু তুমি আমার সাথে কথা বলছো। নির্ঝরঃ তোমাকে ভোলার এবং পাওয়ার জন্যই এসব।
তনুঃ ভাল খুব ভাল। তুমি থাকো। আমি গেলাম।
নির্ঝরঃ যাবে? যাও। তুমি ছিলেই বা কবে? এরপরও হয়তো তনু কিছু বলতো। কিন্তু, নির্ঝর ওকে আর দেখতে পেলো না। আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেলো তনু।

এক বছর পরের কথা। ভার্সিটি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের করে দেয়া হয়েছে নির্ঝরকে। পরপর চারবার ফেল করেছে সে। শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। ওর বাবা মা এসবের কিছুই জানতো না। ওর বাবা ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়ে বলেছিল, “বাবা, তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিলাম। টাকা সব আমি দেবো। কিন্তু, পড়ালেখা ভালভাবে করার দ্বায়িত্ব সব তোমার।” ইদানিং বাড়িতে একদমই যেতো না ও। বাসায় জানেও না ওর অবস্থা কেমন। কিন্তু, এবার একেবারে মৃত্যু শয্যায় ও। বাবা মাকে খবর দিয়েছে কেউ। ওর বাবা মা দেখতে এসেছে ওকে। বাবা থমথমে মুখ করে বসে আছে ওর পাশে। মা’র মুখেও কোন কথা নেই। কাঁদতে কাঁদতে শরীরের সমস্ত শক্তিই শেষ তার। রাত পর্যন্ত এভাবেই চলছিল। রাতে হঠাত করেই ওর বাবা অদ্ভুত একটা কথা বলে বসলো, “বাবা, তোমাক এবার বিদেশে নিয়ার ব্যবস্থা করতিছি!!” শরীরে অবস্থা এত বেশি খারাপ নির্ঝরের যে, অবাক হওয়ার শক্তিটাও নেই ওর।  তবুও কোনমতে বললো, “টাকা কৈ পাবা?” বাবা হেসে বললো, “মাত্র একবছর আগে লটারীতে ৪০ লাখ টাকা পাইছি বাবা। মনে খুব আশা ছিল, তুমি পড়ালেখা করে ভাল চাকরী করবা। আর এই টাকা দিয়ে ঢাকায় বড় বাড়ি করব। বাঁকি দিনগুলো শান্তিতে থাকবো” হতভম্ভ হয়ে গেলো নির্ঝর। মাথাটা কেমন যেন গুলিয়ে গেলো ওর। কি শুনলো এটা? ঠিক শুনলো? কীভাবে সম্ভব? “তুমি আমাকে কিছু কও নাই কেন?” বিষ্ময়ে অভীভূত হয়ে প্রশ্ন করলো বাবাকে। “বাবা, তুমি পড়ালেখা করতেছো। এরকম একটা কথা শুনলে তুমি এই নিয়েই চিন্তা করতে, তাই তোমাকে কিছু বলতে চাই না। ইচ্ছা ছিল কষ্ট করে যেহেতু এত দূর আসছো, কষ্ট করেই নিজের পায়ে দাঁড়াবা। তারপর, বলবো সব কিছু। কিন্তু............ টাকাটা কিন্তু বাবা তোমার নামেই রাখা আছে।” কিছু বলার আর শক্তি নেই ওর। চুপ করে রইলো ও। দৃষ্টি শূন্যে। সেদিন রাতে আরও একটা চমক অপেক্ষা করেছিল ওর জন্য। রাত দশটার দিকে হঠাত করেই ওর রুমে ঢুকলো তনু। সাথে আরেকজন ভদ্রলোক। তনুকে অবশেষে দেখতে পেলো ও! কে খবর দিলো ওকে? কীভাবে জানলো? অবশ্য জানতেই পারে। ফেসবুকে নাকি ওর বন্ধুরা ওকে নিয়ে অনেক স্ট্যাটাস দিচ্ছে। সেখান থেকেই জানতে পেরেছো হয়তো। তনুর মনে কত দয়া! তনু ওর পাশের ভদ্রলোককে বললো, “চেহারাটা কি হয়েছে দেখেছো? তুমি ওর আগের ছবি দেখেছো না? আর এখন কি অবস্থা দেখো!” ভদ্রলোক মুখ থমথমে করে ছিল। কিছু বললো না। তনু নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমার হাজবেন্ড। ও কিন্তু অনেক ভাল ডাক্তার” নির্ঝর ম্লান হাসি হেসে বললো, “ভাইজান, আমি আর কয়দিন বাঁচবো? এই সপ্তাহটা পার করতে পারবো?” ভদ্রলোক চুপ করেই ছিলেন। একটু পর বললেন, “আপনাকেতো সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি আপনার সব রিপোর্ট দেখেছি। আপনার চিকিতসা যিনি করছেন উনি আমার খুব ভাল বন্ধু। একসাথেই পড়ালেখা করেছি আমরা। আপনার পাকস্থলীর অবস্থা খুবই খারাপ। এই চিকিতসা দেশে সম্ভব না। সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেলে সুস্থ হবেন অবশ্যই। কিন্তু, খুব তারাতারি যেতে হবে। মানে, অপারেশন করতে হবে একটা। খুব তারাতারি। আজকালের মধ্যেই”

হাসলো নির্ঝর। “আজকালের মধ্যে? আমার ভিসা পাসপোর্ট কিচ্ছু নাই। আমি আজকালের মধ্যে কীভাবে যাব?”  ভদ্রলোক চুপ করে রইলেন। তনু চিৎকার করে উঠলো, “মানে কি? মানে কি এসবের?” ভদ্রলোক তনুর কানে কানে কিছু একটা বললেন, যেটা বেশ ভালভাবেই শুনতে পেলো নির্ঝর। উনি বললেন, “আজ রাতটা বাঁচবে। কিন্তু, কাল কি হবে বলা মুশকিল” থমথমে চোখে তাকিয়ে রইলো তনু। নির্ঝরের বাবা আর মা হঠাত করেই ঘরে ঢুকে পরলো। “বাবা, অনেক দৌড়ালাম। আগামী সপ্তাহেই তোমাক নিয়ে যাবার পারবো। কোণ চিন্তা করো না। কাল টাকাটা দিয়ে দেয়া লাগবো। তোমাক আমি চেক নিয়ে আসে দিবো। তুই সাইন করি দিও।“ বাবার কথা শুনে হাসলো নির্ঝর। তনু আর ওর হাজবেন্ড অনেকক্ষন ছিল রুমে। রুম থেকে যাওয়ার সময় জানিয়ে গেলো, সারা রাত তারা হসপিটালেই থাকবে।                                     ****

নির্ঝরের কবরের সামনে বসে আছে তনু। চোখে জল। চোখের জলে ঝাপসা দেখছে সবকিছু। এর মাঝেই দেখতে পেলো কবরের গায়ে লেখা নির্ঝরের নাম। নামের নীচে বড় করে লেখা, “Say NO to Drugs” . বেশি সময় বসে থাকতে পারলো না অবশ্য। অনেক বড় একটা দ্বায়িত্ব নিয়েছে তনু। একটা রিহ্যাব প্রতিষ্টা করেছে সে। টাকাটা অবশ্য নির্ঝরের দেয়া। ওর সাথে শেষ যেদিন দেখা হয় ওর, তার পরের দিনই মারা যায় নির্ঝর। ওর মাথার কাছে একটা চিঠিতে সে জানিয়ে ছিলা তার শেষ ইচ্ছের কথা। ওর এলাকায় একটা রিহ্যাব হবে, ওর চিকিতাসার জন্য যে টাকা, সেই টাকা দিয়েই। আর সেটার সার্বিক তত্ত্বাবধানে যেন থাকে তনু।                                     ***সমাপ্ত***

 

                                    

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - ছড়াবাজ

    উরি বাবা, ভুত দেখি বড়ই রোমান্টিক,
    হু হু, হা হা হাসি নাই, লাগে না যে মোটে ঠিক।
    মূলাকার দাঁত নাই, ভাটা-জ্বলা চোখ নাই,
    চোখে নাকি জল ঝরে, ব্যাপারটা মানি নাই!

    শেষমেষ হলো এটা, আমি-তুমি কাহিনী,
    ছ্যাকা ছ্যাকা ভাব নিয়ে, শুধু প্যান-প্যানানি....
    এই যদি হয় ভুত, ছা-পোষা ও দূঃখী,
    ভয় পাবে তবে বল, ভীতু বোকা লোক কি?

    - মো: মালেক জোমাদ্দার

    রোমান্টিক ভুতের গল্প খুবই ভাল লেগেছে । চালিয়ে যান। শুভকামনা রইল।