Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

অমিত বাগচী (অন্তহীন)

১০ বছর আগে লিখেছেন

উদয়দার অনেক বড় দ্বায়িত্ব!

আমাদের ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেটের সামনে ছোট্ট চা’র দোকান উদয়দার। উদয়দা লোকটা নেহাত মন্দ না। আমি আর সিফাত মাঝে মাঝেই এই দোকানে বসি আর লোকটাকে দেখি। একজন চা’র দোকানদার হিসেবে ব্যপক স্মার্ট বলতে হবে লোকটাকে। তার কাজের ধরন, কাজের গতি সবকিছু বলে দেয় সে একজন স্মার্ট লোক। শুধু তাই না, তার মুখের ভাষা প্রশংসা করার মত। উদয়দা যখন তার নিজের বন্ধু বা তার শ্রেনীর মানুষদের সাথে কথা তখনও লক্ষ্য করেছি, ভাষা যথা সম্ভব শুদ্ধ রাখার দিকে তার সদা নজর। মজার ব্যপার হলো, আমাদের এই বাঁশেরহাট এলাকায় অনেকগুলো চা’র দোকানের মধ্যে উদয়দার দোকান কিছুটা কম চালুই বলতে হবে। কারন, অন্যান্য দোকানগুলোতে এর চেয়ে অনেক বেশি কেনা বেচা হয়। সেসব দোকানের দোকানীরা তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছে যথেষ্ট। বিকালবেলা নাস্তাও তারা তৈরি করছে। অথচ, উদয়দা পরে আছে সেই চা, বিস্কুট নিয়েই। মজার ব্যপার, চা কিন্তু সে খারাপ বানায় না। আমার মনে হয়, উদয়দার দোকানের লোকেশন এর একটা কারন। বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ক্লাস করে বের হওয়ার সময় যে গেট দিয়ে বের হয়, সেই গেট থেকে তার এই দোকানটা বেশ দূরে। যাইহোক, দোকান চলুক আর না চলুক, আমি আর সিফাত উদয়দার চা বেশ পছন্দ করি। লাল চা, দুধ চা সবই সে ভাল বানায়। আমি অবশ্য বেশি পছন্দ করি তার দোকানের পরিবেশটা। যেহেতু, দোকানটা চালু কম, তাই নিরিবিলি মনে হয় বেশ। চা খেতে খেতে বেশ ভাল সময় কাটে। আর, খুব অল্প কয়েকজন নিয়মিত খরিদদারের মধ্যে অন্যতম হওয়ায়, আমার আর সিফাতের সাথে উনার সম্পর্কও বেশ ভাল এখন। গতকিছুদিন আগে, বেশ খারাপ একটা ঘটনা ঘটে গেছে এখানে। উদয়দা’র দোকানের ঠিক পেছনে প্রভাত নামে একজনের পানের দোকান। তো, দেশের এই উত্তাল অবস্থার মধ্যে, শিবির ছাত্রলীগের এক মারামারিতে এই প্রভাতদা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। আমরা অনেকে ভেবেছিলাম, মারাই যাবে হয়তো। কপাল ভাল, বেচে গেছে লোকটা। এখনও হাসপাতালে অবশ্য, তবে শরীর সুস্থ হওয়ার পথে। তো, কীভাবে এসব হলো তাই বিস্তারিত শুনছিলাম উদয়দার কাছে। আমি ভাবছিলাম, যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে একটা জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে দেবে উদায়দা। তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের প্রতিশোধের চিন্তা ভাবনা চলছে এরকম কিছুই জানা যাবে হয়তো।

অথচ উদয়দার বক্তব্য কিন্তু বেশ অন্যরকম, “দেখেন ভাই, প্রভাতদা অকারনে বেশি রিস্ক নিল। সে আমার সাথে একবার পরামর্শও করে নাই। তার ফ্যামিলি আছে। বৌ আছে বাড়িতে। আজ ওর কিছু হলে ওর বৌ কই যাবে? আমি ভাই এসব পছন্দ করি না। আমার সাহস আছে তাই কি? পরের মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসছি মানে তার সব দ্বায়িত্ব আমার। এখন আপনিই বলেন তাকে কোন বিপদে ফেলার অধিকার আমার আছে? আমার আজ কিছু হলে, আমার বৌ, ছেলে, মেয়ের কাছে আমার অন্যায় করা হবে না?? সাহস আমার কম নেই ভাই। আপনারা হয়তো আমার অনেক ইসস্টরি শুনছেন এর আগে। কিন্তু, এখন আমি এসব কিচ্ছু করি না। বিয়ে করছি না? প্রভাতদা যে কেন এই ঝামেলার মধ্যে গেলো!” আমি অবাক না হয়ে পারিনি এই কথাগুলো শুনে। এত অল্পবয়সী, অশিক্ষিত একজন মানুষের এমন গভীর চিন্তা! এভাবে ভাবতে ক’জন মানুষ পারে? এতটুকু একটা চা’র দোকানের মাঝে যার বিচরন, বছরের পর বছর ধরে যে তার এই দোকানেরও তেমন কিছু করতে পারছে না, সে যে তার দ্বায়িত্ব কর্তব্যগুলোকে এভাবে দেখতে পারে, এটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। পরদিন আমি একাই এসেছিলাম সেখানে। দেখি, উদয়দা চাইনিজ মোবাইলে স্পীকার দিয়ে কথা বলছে। একটা বাচ্চার গলা পাওয়া গেলো। এটা উদয়দার মেয়ে নিশ্চয়। বাচ্চাটা উদায়দাকে বলছে, “বাবা, আমার জন্যে মিষ্টি আর জুস নিয়ে এসো।” আমি কাউকে ছোট না করেই বলছি, বাচ্চাটার আবদার শোনালো একদম সচ্ছল পরিবারের শিশুর মতই। এখানেই শেষ না, উদয়দা’র উত্তর, “মিষ্টি আর জুস?? আচ্ছে মা, হবে। আর কিছু খাবা?” অপর প্রান্তের উত্তরে বোঝা গেলো, তার আবদার এটুকুই। এবারে, উদয়দা বললো, “আচ্ছা, আমি দোকানদারি করে, ফেরার পথে আনবো। এখন তুমি মা’কে দাও আর পড়তে বসো।”; নিজের স্ত্রীর সাথে তার কথপকথনও বেশ চমৎকার। উদয়দাঃ তোমার শরীর কেমন? স্ত্রীঃ এখনতো ভালই। উদয়দাঃ ওষুধতো শেষ, তাই না? স্ত্রীঃ হু। শরীরতো ভালই, ওষুধ আর কি হবে? উদয়দাঃ নাহ, ডাক্তার বলছে, সোমবার পর্যন্ত খাইতে। আমি ওষুধ নিয়েই আসি। ওর জন্যে জুস আর মিষ্টি কিনবো। ওই সময়েই আনা যাবে। এরপর আরও কিছু কথা হলো তাদের মাঝে। আমার জরুরি ফোন আসায় আর শোনা হয়নি। তবে, যেটুকু শুনলাম তাতে বিষ্ময় আমার কম কিছু হলো না।  চোখের সামনে দেখতে পেলাম একটা পরিবারকে যারা আমাদের দেশের আর পাঁচটা পরিবারের মতই দারিদ্রের কষাঘাতে নিমজ্জিত। সেই পরিবারের কন্যা সন্তানের মত হতভাগ্য আর কারোর হওয়ার কথা নয়। অথচ, উদয়দা কোন অবস্থাতেই নিজের পরিবারকে, বিশেষ করে তার মেয়েকে বুঝতে দিচ্ছে না তাদের অভাবের কথা। নিজের স্রীর অযন্তও সে স্বজ্ঞানে কখনও করবে না। সে দ্বায়িত্ব নিয়েছে! অনেক বড় দ্বায়িত্ব!  

XX

Likes ১০ Comments
০ Share

Comments (10)

  • - রোদেলা

    ওহ , অনেক জানলাম।খুব প্রয়োজনীয় পোষ্ট।শুভেচ্ছা

    - মাঈনউদ্দিন মইনুল

    ভালো বিশ্লেষণ। কৃষিতে রবি বাবুর অবদানের কথা কিছু কিছু জানতাম। সম্প্রতি ‘ইংরেজি ভাষার শিক্ষায়’ রবীন্দ্রনাথের অবদান দেখে বিস্মিত হয়েছি।

    - ঘাস ফুল

    দারুণ গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ। কবি গুরুর সৃষ্টির নুতন নুতন রহস্য ক্রমেই বের হয়ে আসছে আর বিশ্ব অবাক হচ্ছে। ভালো লাগলো পোষ্টটি। লেখিকা সৈয়দা আইরিন জামানকে অভিনন্দন। ধন্যবাদ সনাতন পাঠক। 

    Load more comments...