আজ কপালে খারাপই আছে, গত তিন দিন ধরে চন্দ্রার সাথে দেখা করব বলে কথা দিয়েছি, দেখা করতেই পারি নি।, শুক্রবার মেয়েটা এত আশা করে বের হয়েছিল কিন্তু হটাৎ করে অফিস থেকে ফোন আসায় আমি আর যেতে পারি নি।, শুক্রবার আমাকে অফিস করতে হল এটা কি সে বিশ্বাস করবে?, আবার শনিবার তার শুটিং ছিল আমারই অফিসের নিচে ATN বাংলায়, তখনো ১ ঘন্টার জন্যে তার সাথে দেখা করতে পারি নাই।, কিভাবে পারব, এত কাজের চাপ!!!! আজ তার সাথে দেখা করতেই হবে, প্রয়োজনে চাকুরীটাই ছেড়ে দিব।
-যাক, আজ অন্তত তুমি আসলে?
-এভাবে বলছ কেনো? আমি তো সব সময়ই আসতে চাই, চাই তোমার পাশে থাকতে।
-হয়েছে হয়েছে, গত দুই দিন ইকটু দেখাই করতে পারলে না, আবার ভাব নিচ্ছ!
-আহা রাগ করো কেন? OK baby, SORRY.
-কান ধরো
-তোমার কানে তো দুল, কিভাবে ধরব?
-আমার কান ধরতে বলি নি গর্ধব, তোমার কান ধরো।
- হাঃ হাঃ হাঃ ঠিক আছে বাবা ধরলাম।, এবার বাইকে উঠ, তোমার মত সেলিব্রেটি বেশিক্ষন রাস্তায় থাকলে লোক জমা হয়ে যাবে।
-Ok চলো, আজ আশুলিয়ার দিকে যাই।
- পৃথিবীর সব চেয়ে বড় হ্যাপিনেস কি জানো ডার্লিং?
-কি?
- এই যে তুমি যখন বাইকের পিছনে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরো।
- হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
- দ্বিতীয় হ্যাপিনেস কি জানো?
-না, তুমিই বলো।
- এই তোমার খিল খিল হাসি।
- ওরে দুষ্ট!!
আজ আমাদের ভালবাসার ১ম বছর পুর্ন হল, গত বছর এই দিনে চন্দ্রা লাক্স ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, স্টেজে উঠার ঠিক আগ মুহুর্তে আমি ওকে বলে ছিলাম পৃথিবীর সব চাইতে মিস্টি সেই ওয়ার্ড তিনটি, বলে ছিলাম তুমি ফাস্ট হও বা না হও, আমি তোমাকে ভালবাসব, তুমি আমাকে ভালোবাসো বা নাইবা বাস্, আমি তোমাকে ভালোবাসব অনন্ত।
-এই, তোমার আম্মুকে বলেছ আমার কথা?
-হুম বলেছি, আম্মু তো তোমার ফ্যান, সেদিন দেখি অনেক মনোযোগ দিয়ে তোমার নতুন নাটক দেখছে।
-তুমি দেখনি?
-না, তোমার সাথে অন্য কোনো ছেলে প্রেম করবে সেটা আমি দেখতে চাই না, সেটা অভিনয় হোক বা অন্য কিছু হোক, মনে মনে ছেলেটাকে খুন করে ফেলি।
- বাব্বা!! এত হিংসে!!!!............খুব ভালবাসো আমাকে তাই না?
-হুম, ভিষন ভালোবাসি জান।
- তাহলে প্রমান দেও
- প্রমান!!!! কিভাবে?
-কি ভাবে দিবে সেটা তুমি জানো, আমি প্রমান চাই।
- এতো অদ্ভুত ঝামেলা! ভালোবাসার প্রমান দেওয়া যায় নাকি!!!
-না, না, আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না, তুমি প্রমান দাও।
-ওকে, দিব, তবে আজ না, বিয়ের পরে বাসর রাতে দিব।
-ফাজিইইইইইল।
চন্দ্রা খুবই হাস্যউজ্জল মেয়ে, ও হাসলে ওকে অসাধারন সুন্দর লাগে।, সব চাইতে সুন্দর লেগেছিল লাক্স ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনালের দিন। অবশ্য এই হাসি নিয়ে ওর ভিন্ন একটি ব্যাখ্যা আছে।, ওর মতে আমি যদি সেদিন সাহস করে ওকে প্রপোজ না করতাম, তাহলে ঐ দিন ঐ রকম সুন্দর করে মন থেকে হাসি দিতে পারত না, আর ঐ হাসি না দিলে নাকি ফাস্ট হতে পারত না। ওর ফাস্ট হওয়ার পিছনে নাকি আমিই আছি।
- এই কি ভাবছ?
- কিছু না।
- বল না কি ভাবছ?
- (দুস্টমি ভরা হাসি দিয়ে বলি) ভাবছি আমাদের বাচ্চা কাচ্চার নাম কি রাখব।
- হুহ, গাছে কাঠাল গোফে তেল।
-তা হবে কেন? গাছ তো আমার সাথেই আছে!!
-থাক হয়েছে।, পিছনে তাকিও না, সাবধানে বাইক চালাও।
আমার মনে একটা ভয় ছিল।, চন্দ্রা সেলিব্রেটি হবার পর যদি আমাকে ভুলে যায়? যদি আমার ভালবাসা অস্বীকার করে? কিন্তু না, চন্দ্রা সেটা করেনি বরং আরো বেশি ভালবেসেছে।, আসলে ভালবাসা হল একটি "স্পর্স-কাতর ফুলগাছ", যেটাকে নিয়মিত পরিচর্চা করে "প্রতিপালন" করতে হয়। এবং আমরা দু’জনেই সেটা করেছি। আমরা আমাদের ভালোবাসার গাছটিকে সদা প্রানময় করার জন্যে সচেস্ট থাকি। আমি একটি বিদেশি কম্পানিতে কর্মরত আছি, খুব একটা সময় পাই না। চন্দ্রাও তার শুটিং ডাবিং মডেলিং নিয়ে ব্যাস্ত, তথাপি আমরা অন্তত সপ্তাহে একদিন দেখা করি, দু জনে দুজনার পুর সপ্তাহের ভাল লাগা, মন্দ লাগা শেয়ার করি।, প্রতিদিন রাতে নির্দিস্ট সময় করে মোবাইলে কথা বলি, দিনে সময় পেলেই SMS করি। আমরা আমাদের ভালবাসাকে খুব শিগ্রই সামাজিকতার মর্জাদা দিব, অর্থাৎ বিয়ে করব। আগামি বছর ওর প্রথম পুর্নদৈর্ঘ্য ছবি মুক্তি পাবে এবং ইনশাল্লাহ ঐদিনই আমরা বিয়ে করব।, আমাদের দুই পরিবারই সেটাই চায়।
-এই শোনো, তোমাকে আমি অজস্র ভালোবাসি।
- আমিও ডার্লিং।
- কবিতা শুনবেঃ প্রথমত, আমি তোমাকে চাই দ্বিতীয়ত, আমি তোমাকে চাই তৃতীয়ত, আমি তোমাকে চাই শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই।। নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই সন্ধের অবকাশে তোমাকে চাই।।
-আর আমি সব সময়ে তোমাকে পাশে চাই
-শুধু পাশেই চাও? আর কিছু চাওনা?
-চাই তো, দাও
-কি?
-দাও
-না
-প্লিজ
- যাও, রাস্তার মধ্যে কি ভাবে দিব?
-আহা, দাওনা, প্লিজজ্জজ্জজ্জজ্জ
-OK, উম্মম্মআ!!!! এই সামনে দেখ ট্রাক!!!!!!!!!! নাআআআআআআআআআ!!!!
হটাৎ বিকট শব্দ।, মানুষের জমায়েত, একটু পরেই নিস্তব্ধতা।
একটু অসাবধানতায় এভাবেই হারিয়ে যায় শত ভালবাসা, শত সপ্ন, হাজারো প্রান।
উৎসর্গঃ ইয়াং স্মার্ট “মটর বাইক” আরোহীদের।
আশাকরি আমার এই লেখা যারা পড়েছেন তারা এরপর থেকে সাবধানে রাস্তায় বাইক চালাবেন।
Comments (1)
সুন্দর গল্প শিবাশীষ । ভালো লেগেছে।
শুভকামনা রইলো
ধন্যবাদ দাদা।
দারুন লাগলো লেখাটি পড়ে,শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ ভাই। ভাল থাকবেন।
ব্যাপারকে কী শিবাশীষ আপনার প্রায় প্রতিটা লেখায় রনির উপস্থিতি টের পাচ্ছি? এই নামটার প্রতি মনে হচ্ছে বিশেষ কোন কারণে আপনার বিশেষ কোন দুর্বলতা আছে। তা যাই হোক, গল্প ভালো লেগেছে। আরও ভালো লেগেছে রনির মধ্যে ভালোবাসা বাসা বেঁধেছে বলে। কিন্তু কীভাবে বাসা বাঁধলো রনির বুঝার উপায় নাই। আসলেই ভালোবাসাটা বড়ই অদ্ভুত।
প্রিয় ঘাসফুল, ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য। আসলে এমন দুই একটি মন্তব্য অনেক ভাললাগা যোগায়।
ধন্যবাদ।