সময়টা ২০০৬ সাল। মোবাইল সহজ লভ্য হলেও স্কুল কলেজের বাচ্চাদের হাতে তখনো আসেনি। পুর্বের কথা অনুযায়ী কিশোরী মেয়েটি নীল শাড়ী পরে দারিয়ে আছে। আগোছাল হাতে শাড়ী পরা, যায়গায় বে জায়গায় সেফটি পিন দেওয়া, তথাপি নীল শাড়ী ও নীল চুড়িতে মেয়েটিকে অপরুপ লাগছে, যেন বেহেস্তের হুর পরী দারিয়ে আছে। কিশোর ছেলেটি অপলক নয়নে দেখছে।
-কি তাকিয়ে থাকবে? নাকি আমাকে রিক্সায় উঠতে বলবে?,
এই বলে মেয়েটিই নিজেই রিক্সায় উঠে বসল। তারা আজ হানিমুনে যাচ্ছে।
হ্যা, গতকাল তারা খুব সাহাসী একটা কাজ করেছে। গোপনে বিয়ে করেছে। ছেলেটি মেয়েটিকে পাগলের মত ভালোবাসে, তাই তাকে হারাতে চায় নি। ছেলেটি খুদ্র পরিসরে বড় হয়েছে, কাউকে আপন করে পায়নি, মেয়েটিকেই আপন হিসেবে পেয়েছে তাই দুঃসাহস দেখিয়ে তাকে আপন করে নিয়েছে।
সদ্য বিয়ে করা বৌকে আজ দেখছে। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা শঙ্কা মিশ্রিত মনে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে ছেলেটি, হাত ধরার অবস্থাও নেই তার, হাত কাপছে। মেয়েটি বুঝতে পেরে নিজেই নিজের স্বামীর হাত ধরল। রিক্সা চলছে।বসে আছে অবুঝ দুই কিশোর কিশোরী।
বাস স্ট্যান্ড থেকে তারা নন্দনের বাসে চরে বসল, ট্যাক্সিতে যাবার পয়সা ছিলনা, ছেলেটি হয়ত বাসার বাজারের টাকা মেরে বা আব্বুর পকেটের টাকা চুরি করে এসেছে। মেয়েটি কলেজ পালিয়ে এসেছে, তাকে আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে, তাই হানিমুনে দুরে কোথাও যাবার সুযোগ নেই।
জানালার পাশে বসা মেয়েটির মৃদু বাতাসে চুল উড়ছে, সাদা হাত দুটিতে নীল চুড়ি রিনিঝিনি শব্দ করছে। ছেলেটি অসম্ভব সুখি আজ, কোনোদিনও এতটা সুখ অনুভব করেনি। স্বর্গের সকল সুখ আজ এই দুজনাতে এসে আবদ্ধ হয়েছে।
কিন্তু উপরে বসে ঈশ্বর আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা খেলছিল এক ভিন্ন খেলা, তিনি এই কিশোর মনের ভালোবাসা ও সুখ সহ্য করলেন না। তিনি স্বর্গের সুখ এই দুনিয়াতে দিতে চান নি। তাই তো তার নিষ্ঠুর খেলায় নস্ট হল এই দুটি নিষ্পাপ প্রেম পূজারীর পবিত্র ভালোবাসা। ভাল থাকুন সৃষ্টিকর্তা, মগ্ন থাকুন আপনি আপনার নিষ্ঠুর খেলা নিয়ে।
.
.
(চলবে)
Comments (1)
কবিতাটা খুব ভালো লাগলো শ্রদ্ধাভাজন, আত্মার কথামালার আওয়াজ কানে ভাসছে।
আপু, এত হতাশা কেন, অভিজ্ঞতা কি মানুষকে শুধু হতাশ করে ?
no, not at all. Thanks for reading.
রুষ্ট, ভীত হৃদয় নিয়ে, লিখলে ভীষন কড়া,
মুক্ত হয়ে হোক না শুরু, স্বপ্ন জগত গড়া।