হিংস্র প্রাণী এবং শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য হাজং পুরুষরা শক্তির দেবতার কাছে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রার্থনা করতো । তারা অমাবশ্যার রাতে সহস্র প্রদীপ প্রজ্জলিত করে প্রাণশক্তির দেবতার উদ্দেশ্যে যুদ্ধবিদ্যা অনুশীলন, বলি উৎসর্গ এবং প্রতিযোগিতায় অবতির্ন হতো । দেবতার উদ্দেশ্যে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য তারা সপ্তাহব্যাপী গ্রামে গ্রামে অর্থ সংগ্রহ (চারন সংগ্রহ বা চরমাগা) করতো । সপ্তাহব্যাপী অন্যান্য দিনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সপ্তাহের প্রথম দিনের যে অর্থ সংগ্রহ তাকে হাজং ভাষায় `থুবামাগা ' পর্ব বলা হয় । সহস্র প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে সপ্তাহান্তে অমাবশ্যা রাতের বিশেষ দিনের এই উৎসবটিকে `দেউলী ' বলা হয়ে থাকে । দলবদ্ধ ভাবে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এই চরমাগা পর্বটি কালের বিবর্তনে হাজং সংস্কৃতিতে উৎসব হিসেবে স্থান করে নিয়েছে । সপ্তাহব্যাপী চরমাগা পর্বটির শেষের দিনের দেউলী উৎসবকে সফল করার জন্য সপ্তাহের প্রথম দিনে অর্থ সংগ্রহের জন্য `থুবামাগা পর্ব ' হয়ে থাকে । এই পর্বে দলবদ্ধ ভাবে গৃহস্থ্যের বাড়ী ঘুরে ঘুরে মনোরঞ্জনমূলক গীতিনৃত্য পরিবেশন করা হয় । এখানে বাংলা ভাষীদের জন্য থুবামাগা পর্বটির গীতিনৃত্যের সামান্য অংশ অনুবাদ করলাম ।
........................................................
থুবামাগা আইলাম রে ,একটাকা পাইলাম রে ,
একটাকা পাইয়া আমি, গাই কিনতে গেলাম রে ।
গাইয়ের নাম তাঁরাবতী , দুধ দেয় আঠার বাটি ,
রাজা খায় প্রজা খায় , সেই দুধ যে আর না ফুরায় ।
থুবা-থুবা-থুবা, থুবা-থুবা-থুবা ।।
................................................
বিল বিলে পাখিরা, বিলে খায় না ঘাস ,
বিলের মধ্যে পড়ে আছে নয় জোড়া হাঁস ।
নয় জোড়া হাঁসগুলি মনে মনে হাসে ,
কালো কালো যুবতীরা এক সাথে নাচে ।
বাঁচাল বউ বড় বউ, বাঁচালেরই কথা ,
তোমার কথায় পেলাম আমি মনে বড় ব্যাথা ।
বাঁচালের কথা ভুলতে তুমি করো না'কো ভুল ,
তোমার জন্য আনবো আমি নীল পদ্মফুল ।
থুবা-থুবা-থুবা, থুবা-থুবা-থুবা ।।
.................................................
এক যুবতী রাঁধেবাঁরে দুই যুবতী খায় ,
চন্দ্র বেটা জমিদার ঘোড়ায় চড়ে যায় ।
ঘোড়ায় চড়ে যেতে যেতে মাথায় নিলো থালি ,
এই থালি লইয়া যাবো সেই চন্দ্রবালী ।
চন্দ্রবালীতে ফুটেছে লক্ষ লক্ষ তাঁরা ,
আজকে থুবামাগতে এলাম তোমাদেরই পাড়া ।
থুবা-থুবা-থুবা, থুবা-থুবা-থুবা ।।
.................................................
(পরবর্তীতে)
Comments (0)
মন ছুয়ে গেল। শুভকামনা জানবেন।
একারনেই সত্য কাহিনী শুনতে বা পড়তে আমার ভয় হয়। কারন কল্পনাপ্রসূত গল্প পড়তে গিয়ে চিন্তা করা যায় এর পর কি হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। অনেক সময়ই এমন কিছু ঘটে, যা কল্পনার বাইরে চলে যায়।
ভাল লিখেছেন ভাই। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
খুব খুব ভাললাগা জানালাম...