Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

এবং হিমু

১০ বছর আগে লিখেছেন

একটি অলিখিত প্রেমের গল্প

রোহান আজ খুব ব্যস্ত।সারাদিনের প্ল্যান রেডি করে ফেলেছে ঘুম থেকে উঠেই।আ্জ ওর জন্য বিশেষ দিন।আর সেই বিশেষ দিনে প্রিয় মানুষটিকে কিভাবে বিশেষ ভাবে আনন্দ দেয়া যায় তা ভেবেই রোহান উত্তেজিত হয়ে পড়ছে।

 

তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে বের হওয়ার পথে রোহান।রাস্তায় পা দিতেই ফোন আসলো শ্রেয়ার-

 

‘কোথায় তুই?’-ওপাশ থেকে শ্রেয়া বললো।

 

‘এইতো বের হয়েছি।তোকে ফোন দিতাম।তার আগেই...’-রোহানের উত্তর্।

 

‘এতক্ষণে বের হয়েছিস?কাল না তোকে বললাম আজ খুব জরুরী কিছু কাজ আছে।কতক্ষণ লাগবে?’-শ্রেয়া জিজ্ঞেস করলো।

 

‘আরে ঘুমাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেল।তাই,বেশিক্ষণ লাগবে না।এইতো বড়জোর এক ঘন্টা।আর জ্যাম থাকলে..বুঝিসই তো’-একটু হেসে বললো রোহান।

 

‘রাত জেগে করিস কি?তোর তো গার্লফ্রেন্ডও নাই যে ফোনে রাত পার করবি।’

 

‘আরে ওসব হয়ে যাবে শীঘ্রই...আর বেশিদিন নেই।’-হাসতে হাসতে বললো রোহান।

 

‘হুহ!আর হয়েছে তোর।যার মুখ থেকে কথাই বের হয় না সে গার্লফ্রেন্ড পালবে কি করে?’

 

‘হাহাহা...কথা দিয়েই সব হয় না বান্ধবী।’

 

 ‘বলছে তোকে।জলদি আয়।আমি রেডি হয়ে নেই।’-বলেই ফোন রেখে দিল শ্রেয়া।

 

ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রীণ ওয়োলপেপারের দিকে তাকালো রোহান।তারপর মুচকি হাসলো।মনে মনে বললো ছবিটার দিকে তাকিয়ে-

 

‘রোহান আজ পারবে।’

 

শ্রেয়া-রোহান।সেই কলেজ  থেকে ওদের বন্ধুত্ব জীবন শুরু।কলেজ এক হলেও ভার্সিটি ছিল আলাদা।তাতে কোনো সমস্যা হয়নি।সবকিছুর পরেও ওরা নিজেদের জন্য আলাদা করে সময় রাখতো।সেসময়টা একান্তই ওদের দুজনের।রোহান কথা বলে খুব কম।খুবই বিনয়ী টাইপের।আর শ্রেয়া বলতে গেলে রোহানের পুরো বিপরীত।এতক্ষণ ফোনে কথা বললো কিন্তু আজকে রোহানের জন্মদিনে এখন পর্যন্ত একটিবারও উইশ করেনি।শ্রেয়া এমনই...কখনোই সামনে না থেকে উইশ করে না।তার আগ র্পন্ত এমন ব্যবহার করবে যেন দিনটা খুব সাধারণ।এইতো গতবার।রোহান ভেবেছিল শ্রেয়া ভুলেই গেছে ওর জন্মদিনের কথা।কিন্তু দেখা করার পর রোহানকে দিল বিশাল এক সারপ্রাইজ।কে জানে আজ আবার কোন সারপ্রাইজ রেখে দিয়েছে শ্রেয়া..

 

রোহান সিএনজিতে উঠলো।আজ ওর গায়ে হালকা নীল রংয়ের টি-শার্ট।এই শার্টটাও শ্রেয়ার গিফট করা।রোহান চিন্তা করে রেখেছে সারাদিন শ্রেয়ার সাথে ঘুরবে।ঢাকার বাইরেও কোথাও যেতে পারে যেখানে বিশাল জায়গা জুড়ে থাকবে কাশফুলে ভরা মাঠ।যখন ঠিক গোধূলী বেলা হবে তখন শ্রেয়াকে ওর মনের কথা জানাবে।ওই সময়টা ওদের দুজনের খুব পছন্দ।কলেজ লাইফে এই সময়টাতে ছাদে বসে ওরা কত না আড্ডা দিত।

 

*****

 

আজিমপুরে নেমে শ্রেয়ার গাড়িতে উঠলো রোহান।শ্রেয়া আজ পরেছে হালকা মেরুন রংয়ের শাড়ি।কপালে টিপ পরেছে।টিপ রোহানের খুব পছন্দ।

 

‘কিরে অমন হাবার মতোন তাকিয়ে আছিস ক্যানো?’-শ্রেয়া জিজ্ঞাসা করে রোহানকে।

 

‘টিপ টা খুব সুন্দর।’-বললো রোহান।

 

‘এত কিছু থাকতে তুই ঐ টিপের দিকেই গেলি?আমাকে সুন্দর লাগছে না?’-শ্রেয়া বলে অভিমানী কন্ঠে

 

‘না না,তোকেও খুব সুন্দর লাগছে।’-হেসে বললো রোহান।

 

‘তা আমরা এখন কই যাচ্ছি?’

 

‘একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে তারপর সোজা ঢাকার বাইরে।’-বললো রোহান।

 

‘ঢাকার বাইরে?কোথায় যাবো?’-জিজ্ঞাসা করলো শ্রেয়া।

 

‘গাজীপুর।ওখানে খুব সুন্দর একটা জায়গা আছে।তোর খুব পছন্দ হবে।’-রোহান উত্তর দিলো।

 

‘তা্ই নাকি?আচ্ছা।এখন তাড়াতাড়ি চল।ক্ষুধা লেগেছে আমার।তোর সাথে বের হবো বলে খাইওনি।জানি তুই খাওয়াবি।’-হাসতে হাসতে বললো শ্রেয়া।

 

শ্রেয়ার হাসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রোহান।বহুদিনের চেনা হাসি।তারপরও কেমন যেন  ভাললাগা কাজ করে।শ্রেয়া যতোই বড় হচ্ছে ওর আহ্লাদ,হেয়ালি বেড়ে চলেছে।আর সেটা রোহানের সাথেই বেশি চলে।চলুক না,রোহানের তো খারাপ লাগে না..

 

লাঞ্চ শেষ করে ওরা গন্তব্যের দিকে যাত্রা করলো।হালকা মিষ্টি রোদ আর বাতাস।গাড়িতে রবীন্দ্র সঙ্গীত চলছে ‘আমারো পরানো যাহা চায়।’ রোহানের পছন্দের গান।কলেজে একবার গেয়ে সেকেন্ড হয়েছিল।কিন্তু শ্রেয়া তো এই গান তেমন শুনে না।তাহলে?

 

‘কিরে,তুই রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনিস কবে থেকে?’-জিজ্ঞাসা করলো রোহান।

 

‘আজ থেকে।সিডিটা আজকেই কেনা।’-হাসতে হাসতে বললো শ্রেয়া।

 

‘ওহ!তাই নাকি?’

 

‘হুহ!কি ভাবিস তুই আমাকে?আমি জানি এটা তোর পছন্দের গান।তাই বের হওয়ার সময় হঠাৎ মনে পড়লো তোর জন্য কিনে নিয়ে যাই।আপনি তো আবার শিইইইইল্পী।’-বলেই হেসে কুটিকুটি শ্রেয়া।

 

‘মজা নিচ্ছিস না?নিতে থাক,নিতে থাক।’-বললো রোহান

 

‘আরে বাবা স্যরি স্যরি।মাইন্ড করিস না।তুই আমার দশটা না,পাঁচটা না একটা মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।তোর সাথে মজা না নিলে কার সাথে নিবো?’-অঅবার হাসি মুখে শ্রেয়া বললো।

 

রোহানও হেসে উঠলো।ওরা পৌছাল যখন তখন প্রায় বেলা পড়ে গেছে।জায়গাটা শ্রেয়ার খুব পছন্দ হয়েছে।সূর্যের সোনালী আভায় আলোকিত চারপাশ।কাশফুলে ঢাকা চারদিক।

 

‘ওয়াওওও!!!জায়গাটা তো বেশ...কাশফুল তো আমার অলটাইম ফেবারিট।’-বলেই দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো শ্রেয়া।

 

রোহান শ্রেয়ার হইচই দেখতে লাগলো।এই পাগলীটা আজীবন এমন থাকবে তো?এসব ভাবতে ভাবতে..

 

‘এই রোহান,এদিকে আয়।এখানের ছবি না তুললে অন্যায় হয়ে যাবে।দে না তুলে...প্লিজ’-আহ্লাদ ভরা কন্ঠে শ্রেয়ার আবেদন

 

ওদের ছবি তোলাতুলি শেষ।সূর্য অস্ত যাবে কিছুক্ষণ পর।ওরা দাঁড়িয়ে আছে সূর্যের দিকে মুখ করে।

 

‘রোহান।’

 

‘হুম বল।’

 

‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার রোহান...হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...।

 

‘অবশেষে...তাই না?’

 

‘হুম...কি ভেবেছিলি?করবোই না?’

 

‘না,তা না।তবে ঠিক এই সময়েই আশা করিনি।’

 

‘তাই?তুই জানিস এই গোধূলী বেলা আমার কত পছন্দের।তাই যখন এখানে আসলাম তখনই ঠিক করে রেখেছি্লাম।আচ্ছা,এবার হাতটা দে।তোর গিফট...’ বলেই একটা কার্ড বাড়িয়ে দিল রোহানের দিকে।

 

রোহান কার্ডটার দিকে তাকিয়েই রইলো।কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না ও।শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই-

 

‘হুম..অবশেষে আমি নিজেকে গোছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তুই অবাক হচ্ছিস তাই না?তোর এই পাগলী বান্ধবীকে কে বিয়ে করবে এই ভেবে।ছেলে ইউএসএ তে থাকে।আমার কাজিন।নেক্সট উইকে এংগেজমেন্ট।গতকাল সবকিছু ফাইনাল হলো।কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার রিলেটিভস কেউ জানে নি।আমি জানাতে দেইনি।কারণ,আজ তোর জন্মদিন।তাই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম সবার প্রথমে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটা জানবে।তারপর বাকী সবাই।তোর বান্ধবীর জীবনের এত বড় একটা সংবাদ এর থেকে ভাল পরিবেশ আর ভাল উপলক্ষ ছাড়া দেয়া সম্ভব হতো না।তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ রোহান আমার সাথে থাকার জন্য,আমার শত পাগলামি সহ্য করার জন্য।যত কিছুই হোক না কেন আমাদের বন্ধুত্ব কখনোই শেষ হতে দিব না আমি। ’-কথাগুলো বলে গেল একনাগাড়ে শ্রেয়া।

 

কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল রোহান- ‘হোয়াট এ গ্রেট সারপ্রাইজ!!!খুব থ্যাংকস দোস্ত তোকে।আসলেই তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।’ কথাগুলো বলতেই রোহানের গলার স্বর কেমন যেন হয়ে গেল।

 

‘তুই খুশি হোস নি?’-শ্রেয়া জিজ্ঞেস করলো।

 

‘ধূর পাগলী!খুশি হবো না কেন?আমি খুশি না হলে তোর বিয়ে হতে দেব নাকি?’-হাসতে হাসতে বললো রোহান।

 

‘চল ফেরা যাক।সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে।দেরী করলে আংকেল-আন্টি টেনশন করবে।’-বলেই তাড়াতাড়ি হেঁটে গাড়ির দিকে চলে গেল রোহান।

 

*****

 

শ্রেয়ার বিয়ের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।আজ রাতে শ্রেয়ার বিয়ে।শ্রেয়া আজ খুব খুশি।রোহানকে ফোন দিচ্ছে।সব কিছু আয়োজন করে এখন মেইন সময়ে হাড়ামিটার খবর নেই;ভাবছে শ্রেয়া।

 

ফোন পাশে রেখে বেঞ্চটার পাশ ঘেঁষে বসে আছে রোহান।গাছের পাতা ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছে রোহানের চোখে।সেই আলো বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে...

Likes Comments
০ Share

Comments (1)

  • - বাঙলা বেলায়েত

    - আলমগীর সরকার লিটন

    জানালা ভেঙ্গে দক্ষিণা বাতাস

    দেহ জুড়ায় ছড়ায় সুভাস