আদু,মধু যদু আর লাবু ওরা ৪জন খুব ভাল বন্ধু । আদু বোমা বানায়, মধু মিছিলে থেকে বোমাগুলোর সদ্ব্যাবহার করে। লাবুকে কেউ এক প্যাকেট বিরিয়ানি দিলেই তার হয়ে কয়েকজনকেই খুন করে রক্ত দিয়ে গোসল করতে পারে ! আর যদু এ সব কিছুতে নেই । সে দিন মজুর হয়ে পরিবারকে নিয়ে দু'মুঠো খেয়ে সুখ নিদ্রা দিতে চায়।
এদের ৪জনের পরিচয় কোন অলৌকিক ঘটনার মধ্য দিয়ে নয়। এদের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব পেটের দায়ে একমুঠো খাবার সংগ্রহ করতে জীবন যুদ্ধে নেমে। এদের মধ্যে কেউ অল্প শিক্ষিত আবার কেউ খুব বেশীই শিক্ষিত। অক্ষর জ্ঞ্যানের সাথে ওদের সবার পরিচয় আছে। ওরাও আর দশজন সাধারণ মানুষের মত গুন গুন করে গান গায়,মনখুলে হাসে আর আড্ডা তামাশায় মেতে উঠে। কেবল যদু ছাড়া অন্যদের মাঝে একটাই ব্যতিক্রম-ওরা সুখ নিদ্রা কী এবং এর পরিতৃপ্তি কেমন হতে পারে তা অনুভব করতে পারে না! তবে মাঝে মাঝে সবার অগোচরে,নিজেদের অজান্তেই ইচ্ছেরা জেগে ওঠে ঠিক সেই কৈশোর বেলার মত করে মায়ের কোলে মাথা রেখে একটুখানি ঘুম নিতে।কিন্তু ধীরে ধীরে একদিন পৈশাচিকতার চাঁদরে সব অনুভুতিকে ঢেকে রক্ত নেশায় মায়ের কোলটাও মন থেকে মুছে যায়!
একদিন আদু বোমা বানাতে গিয়ে নিজের হাত পা উড়িয়ে দিল। মধু আর লাবু মিলে তাকে হাসপাতালের সামনে ফেলে দিয়ে ছুটে পালালো ! আদুর খবর কেউ নেয়নি কোনদিন! সে এখন কারো কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করবে সে উপায়ও নেই । তবে সন্তানকে এক মুঠো খাবার দেবার তাগিদে বুড়ো অসুস্থ্য বাবা ভিক্ষা করে যায় … আদু যাদের জন্য বোমা বানাতো তারা কেউ একবারের জন্যও তার ও তার পরিবারের কোন খোঁজ কোনদিন নেয়নি !
একদিন মধু মিছিলের সামনে। তাকে যারা এই মিছিলে এনেছে তারা সবাই শুধুই নির্দেশ দিয়েছে কী করতে হবে। নির্দেশ দাতা নিরাপদেই আছে । মিছিল নিয়ে যেতে যেতে তাকিয়ে দেখে একটি জ্ব্লন্ত বাস। তারই দলের একজন গর্বিত উল্লাসে পেট্রোল বোমা মেরেছে।মধু তাকিয়ে দেখে সেই জ্ব্লন্ত বাসের জানালা দিয়ে একটি হাত বাড়িয়ে আছে তার দিকে ! লেলিহান আগুনের মাঝ থেকে ঘৃণাভরা চোখ দুটো দেখে মনে পড়ে- সকালেই যদু ফোনে বলেছিল "দোস্ত ঘরে এক্ফোটাও খাবার নেই । আজ কাজে না গেলে কাজটাও থাকবে না। বৌ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরে যেতে হবে" দাও দাও করে জ্বলে যায় বাস আর বাস ভর্তি মানুষ । এমন সময় রাবারের বুলেট এসে লাগে ঠিক মাথার পিছনে। মধু ঢলে পড়ে মাটিতে। দিক্বিদিক শুন্য তারই সাথীরা পায়ে দলে চ্লে যায় যে যেদিকে পারে । মধুর খবর কেউ নেইনি .. শুধু তার কবরের পাশে বুড়ি মা কেঁদে কেঁদে প্রলাপ বকে যায়!
লাবুও বেশ কিছু দিন ধরে নিখোঁজ ! শোনা যায় যাদের খুশি করতে সে এক প্যকেট বিরিয়ানী পেলেই রক্তস্নান করত সেই তাদের দেয়া একটা সিগারেট খেয়ে কেউ একজন তার রক্তে উল্লাস করেছে। লাবুর ছোট ভাই বড় ভায়ের খবর যতবার নিতে এসেছে ততবার একজন খুনির ভাই বলে অপমানিত হয়েছে…। একজন খুনির পরিবারের কাউকেই কেউ আর কাজ দেয়নি। অথচ একসময়ে লাবুর দৌরাত্ম্যে পরিবারের সবার দাপটও একেবারে কম ছিলনা! এখন লাবুর পরিবার ফুটপাতের বাসিন্দা।
সব্কিছুই আছে আগের মত...শুধু সেই চার বন্ধু আজ আর কোথাও নেই .. তারা হারিয়ে গেলেও জন্ম দিয়ে গেছে আরো হিংস্র কিছু দানব...। "বাংলাদেশ"! মনের মাঝে উচ্চারিত হবার সাথে সাথে অন্যরকম এক অনুভুতি দোলা দিয়ে যায়! "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি" আবেগে কন্ঠ ভীজে উঠে! চোখের গভীরে ভেসে ওঠে লাল-সবুজ পতাকার নাচন। গর্বে মন ভরে যায় ভেবে- কত আত্মত্যাগের বিনিময়ে, কত রক্ত দিয়ে পাওয়া এ আমার দেশ, আমার মাটি এ কেবলই আমার,কেবলই আমাদের। আমাদের এই স্বাধীন দেশের দৃশ্যপট অন্য রকম হওয়া দরকার ছিল। আমরা তো সাহসী বাঙালি বীর তাহলে কেন হল না..? আমরা যদি সেই প্রথম যেদিন এইসব ঘটনা বা গল্পের শুরু হয়েছিল সেই সময়ে সবাই মিলে- এই আমরা ও আমাদের পুর্বসূরীরা প্রতিবাদী হয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিহত করতে পারতাম। তাহলে আজ সমাজের মাত্র কয়েকজনের স্বার্থে এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডগুলো দেখ্তে হত না! পিতা মাতার কোলে জ্বলন্ত শিশু! রক্তাক্ত শরীর ছটফট করছে আর ঠিক তার থেকে কয়েক গজ দুরে সেই শরীর থেকে ছিন্নভীন্ন হয়ে থর থর করে কাঁপছে একটা পা অথবা হাত! অথবা শরীরের যেকোন একটা অংশ! কী নৃশংস ভয়ংকর দৃশ্য! এই আমি তুমি আমরা মিলে সমাজে একটার পর একটা অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করেছি, সহ্য করে যাচ্ছি। কেউ ভাবিনি! কেউ ভাবছি না ! আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে থেকে এই আমরা;আগামীকে কত ভয়াবহ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি!
(লেখাটি সম্পুর্ন কল্পনা করে লেখা হলেও বাস্তবতা কী একেবারেই নেই!)
Comments (3)
তাৎপর্যপূর্ণ, আশা জাগানিয়া ও অনুপ্রেরণামূলক অসাধারণ একটি লেখা।
শ্রদ্ধা জানবেন।
অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ওযাহিদ ভাই। শ্রদ্ধা রইলো
আমাদের গড়া গোলকধাঁধায়
সামলে রেখেছি নিত্য তোমায়,
পাখির ডানার ভালোবাসায়
আগলে রেখেছি যত্নে তোমায়,
চমৎকার একটা কবিতা লিখেছেন কেতন দা।অভিভূত হয়ে গেছি।ধনবাদ চমৎকার কবিতাটি লেখার জন্য।শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ধন্যবাদ মুন। তোমার ভালো লাগা আমার প্রেরণা।
অনন্য প্রতিটি চরণ, অসাধারণ প্রতিটি কথা; শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম শ্রদ্ধাভাজনের শ্রী চরণে
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয়কবি মাইদুল। জীবন হোক মঙ্গলময়।