Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সেলিনা ইসলাম

১০ বছর আগে লিখেছেন

ছন্দহীন ছায়া পথে চাইব না আর পিছু ফিরে…

প্রতিটি গাছের পাতার ডগায় একটু একটু করে জমা হচ্ছে শিশির। তারপর যখন বেশ খানিকটা একসাথে জমা হয়ে একটু ভারী হচ্ছে ঠিক তখনই পাতাটা কি সুন্দর নুয়ে পড়ছে। আর টুপ করে একফোঁটা শিশির বিন্দু ভিজিয়ে দিচ্ছে নীচে থাকা কচি ঘাসগুলোকে।পরম আনন্দে শিশিরের এই ভালবাসা মেখে নিয়ে সবুজে সবুজে আরো বেশী যৌবনবতী হয়ে উঠছে বাগানে থাকা ঘাসগুলি। এদিকে সূর্য এখনও কুয়াশার চাঁদর সরিয়ে ভাঙেনি তার আলসেমী ঘুম।পাখীরাও জাগেনি শীতের মধুময় এই সকালে। হয়ত প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে ওম নিয়ে সুখের আবেশে বুজে আছে চোখ!

বিন্দু বিন্দু শিশিরের মত জমে রাখা কষ্টগুলো বুকের গভীরে ভারী জমাট বেঁধে পাঁথর সমান ভার হয়ে আছে। শিশিরের ভালোবাসায় সবুজ আরো সবুজ হয় কিন্তু কষ্টের মেঘে যে বৃষ্টি ঝরে দুচোখে, সেই বৃষ্টি ভালোবাসার বীজটাকে সতেজ করার বদলে ধীরে ধীরে হলুদ করে দেয়!  কিন্তু  কেন? কেন সে ভালবাসা হৃদয়কে ছুয়ে যায় না ? - ভাবনাগুলো নীলাকে এলোমেলো করে দেয়!  যা চলে যায় তা যেমন আর ফিরিয়ে  আনা যায়না,ঠিক তেমনি জীবনের পিছনে চলন্ত ছবির মত রিমোট টিপে রিওয়াইন্ড করে পিছনে ফেরা যায়না! যে ভুল সে অনেক আগে করেছে,যে ভুলের সমাধীতে  ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরে  বাঁচতে চেয়েছে, তা আজ এতোটা বছর পরে এসে আগুনের দাবানলে জ্বলে পুড়ে সবকিছু ছারখার করে দিতে পারে এ ছিল তার ভাবনাতীত। এমনটা হোক  নীলা তা কখনোই চায়নি…। জীবন বোধহয় এমনই - না চাইতেও প্রাপ্তির খাতায় কিছু কিছু পাওয়া লেখা হয়ে যায় যা স্বপ্নেও হয়ত কেউ কোনদিন ভাবেনি..!

জানালায় বসে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিজেকে আবারও বড় নিঃসঙ্গ মনে হয়! জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় কেউ নেই তার পাশে! সামান্য কষ্ট শেয়ার করার মত আজ তার কাছে নেই কেউ! নিয়তি নামের জীবন অভিধান বড় কঠিন আর নিঃসীম স্বার্থপরতার মোড়কে ঢেকে গেছে...!

জীবনের এই সন্ধ্যিক্ষণে তোমার বলা কথাগুলো ভীষণভাবে মনে পড়ছে -“দুঃখ কষ্টকে জয় করতে শেখ মা,দুঃখ আসবে জীবনে কিন্তু তাকে ধৈর্য দিয়ে বশে আনতে হবে। মনে রেখ দুঃখকষ্টকে যে জয় করতে পারে সেই-ই আসল মানুষ আর এই দুঃখ কষ্টকে জয় করে পাওয়া সুখ,তার তৃপ্তি সীমাহীন’। বাবা কেন তুমি মিথ্যে বলেছিলে? দাম্পত্য জীবনের আজ ১০ বছরে এসেও দুঃখকে তো জয় করা দূরে থাক,সামান্য যে আলোটুকু দেখেছিলাম তাও আর দেখতে পাচ্ছিনা! সহনশীলতার একেবারেই শেষ সীমানায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি।

তুমি আরো বলতে "মেয়েদের জন্য লেখাপড়াটা অনেক জরুরী মা। যাতে বিপদের সময়ে নিজের প্রতিভা দিয়ে, অর্জিত জ্ঞান দিয়ে বিপদের মোকাবেলা করতে পারো । লেখাপড়াটা শেষ কর মা ! কোন কারনে এই পথকে থামিয়ে দিও না!" বাবার এই কথাটাও সে রাখেনি,রাখ্তে পারেনি ! রুদ্র বাবাকে কথা দিয়েছিল বিয়ের পরে লেখাপড়াটা শেষ করতে যত রকম সাহায্য তা সে করবে।  এই শান্তিতেই বাবা চীরনিদ্রা নিলেন। কিন্তু সেই রুদ্র ফিরে পেয়েছে হারানো প্রেম ছুড়ে ফেলেছে জীবন সঙ্গীকে ! কী নির্মমভাবে পদদলিত করেছে নীলার বিশ্বাস আর ভালবাসাকে !

হাতের উপরে টুপটুপ শিশিরের অনুভূতি হতেই সেদিকে তাকিয়ে হৃদয়ের খুব গভীর থেকে ঝড় বাতাস বের হয়ে মনটাকে কিছুটা হালকা করে দেয় …হাতের মুঠোয় খুব শক্ত করে ধরে রাখে মফঃস্বলের একটা প্রাইমারী স্কুলে পড়ানোর এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা। নয় বছরের "জুঁই"-এর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে অসীম আলো ছড়িয়ে যায় মনে।"রুদ্র  যে সম্পদ আমি সাথে নিয়ে গেলাম তার অবহেলা আমি সইতে পারব না। তোমার ভাগের টুকুও ওকে  আমি পুষিয়ে দেব ভেবনা তুমি"  অন্যরকম সুখ ভরিয়ে দেয় সারা পৃথিবী..জুঁই ফুলের সুবাসেই আবার নতুন করে বাঁচার শক্তিতে কচি হাত দুটো তুলে নেয় হাতে...চোখভরা  জল নিয়ে ধীরে ধীরে ছুয়ে দেয় থরথর কেঁপে যাওয়া ঠোঁটে।  ঝিক ঝিক ঝিক ছন্দে দুরন্ত গতিতে ছুটে যায় ট্রেন .....।

Likes ২৮ Comments
০ Share

Comments (28)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    খুব ভালো লাগলো