Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আবু সাঈদ আহমেদ

১০ বছর আগে লিখেছেন

রোগী আসিবার পূর্বেই ডাক্তার মরিয়া গিয়াছেন

১।

গোপাল ভাঁড় মহাশয়ের ভাড়ামীর পাত্র নি:শেষ হয় নাই। কিন্তু তাহাকে হইলোকের মায়া ত্যাগ করিয়া যমালোকের দিকে যাত্রা শুরু করিতে হইল। তিনি ইহলোক আর যমালোকের মধ্যবর্তীস্থানে প্রথমবারের মতন অনুধাবন করিলেন যমদূতের সহিত রসিকতার ফলাফল কখনই ভালো হয়না।

২।

গোপাল ভাড় মহাশয় যমরাজের চেম্বারের বাহিরে লাইনে দাড়াইয়া আছেন। যমালোকের একজন সুন্দরী কাস্টমার কেয়ার অফিসার হাস্যমুখে তাহার হাতে একখানা ফাইল ধরাইয়া দিলেন। গোপাল ভাড় দেখিলেন ফাইলের উপরে লাল কালিতে ‘চূড়ান্ত হিসাব’ এবং হিসাব সম্পাদনকারীর ঘরে ‘চিত্রগুপ্ত এন্ড এসোসিয়েট’-এর নাম লিখা রহিয়াছে। বিশাল লাইনের সহিত গোপাল ভাড় মহাশয় আগাইয়া যাইতে যাইতে যমরাজের চেম্বারে প্রবেশ করিবার অনুমতি পাইলেন। যমরাজ গোপালের হাতের ফাইলটি গ্রহন করিয়া পড়িতে পড়িতে প্রশ্ন করিতে লাগিলেন।

 

যমরাজ : তোমার পেশা হইল ভাড়ামী। তাহা বলিয়া তুমি যমদূতের সহিতও রসিকতা করিবে?

গোপাল : মহারাজ, যমদূতের সহিত রসিকতা ইচ্ছা করিয়া করি নাই। ভুলে হইয়া গিয়াছে। মহারাজ, সকল মায়া ত্যাগ করিয়া নিজের ইচ্ছায় কে আর যমালোকে আসিতে চাহে?

 

গোপালের দার্শনিক প্রশ্নে যমরাজের মন বেদনায় আর্দ্র হইয়া আসিল।

যমরাজ : মন খারাপ করিওনা গোপাল। তোমার একটা ইচ্ছা বল। আমি তাহা পূরণ করিব।

গোপাল : মহারাজ, আমি পৃথিবীতে গরীবের জীবন যাপন করিয়াছি। অনেক কষ্ট করিয়াছি। সামান্য অর্থ আর খাদ্যের জন্য নিজের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তোষামোদ করিয়াছি আর ভাড়ামী করিয়াছি। আমি অন্য রকম একটা জীবন পৃথিবীতে কাটাইতে চাই।

যমরাজ : অন্যরকম একটা জীবন মানে কি?

গোপাল : আমি এমন একটা জীবন কাটাইতে চাই যে জীবনে আমি রাজা বা মন্ত্রী থাকিব।

যমরাজ : ঠিক আছে। তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হইবে। সময় আসিলে আমি তোমাকে মন্ত্রীর জীবন দান করিব। ততদিন তুমি যমালোকে আরাম আয়েশ কর।

 

গোপালের চোখে পানি আসিয়া গেল। তাহার ইচ্ছা এত সহজে পূর্ণ হইবে তাহা সে ভাবিতে পারে নাই, আশাও করে নাই। যমরাজের মহানুভবতায় সে বিস্ময়ে বিমূঢ় হইয়া গেল।

 ৩।

অনেক সময় চলিয়া গিয়াছে। গোপাল ভাড়ের নিকট যমালোকের আরাম আর আয়েশ বিরক্তিকর হইয়া উঠিয়াছে। প্রতিদিন সে একবার যমরাজকে জিজ্ঞাসা করে তাহার মনের আশা কবে পূর্ণ হইবে। যমরাজ মৃদু হাসিয়া ধৈর্য্য ধারন করিতে বলেন। কিন্তু গোপালের আর ধৈর্য্য ধরিতে ইচ্ছা করেনা। সে যমালোক হইতে পালাইবার ফন্দি ফিকির খুঁজিতে থাকে। এমন পরিস্থিতে হঠাৎ একদিন যমরাজ গোপাল ভাড়কে নিজের গোপন কক্ষে ডাকিয়া লইলেন।

 

যমরাজ : গোপাল, তোমার ইচ্ছা পূরণ করিবার সময় আসিয়াছে।

গোপাল : মহারাজ, আপনার অশেষ করুণা।

যমরাজ : আমি তোমাকে মুক্ত করিয়া দিলাম। যমদূত তোমাকে এক রাজ্যে রাখিয়া আসিবে। তুমি সেই রাজ্যের রাজা, প্রধান মন্ত্রী, মন্ত্রীসহ যাহার শরীরে ইচ্ছা তাহার শরীরে অবস্থান করিয়া জীবনকে উপভোগ করিতে পারিবে।

গোপাল : মহারাজ, আপনার মহানুভবতায় আমার চোখ জলে ভিজিয়া আসিতেছে।

যমরাজ : জীবনকে উপভোগ করা শেষ হইলে তুমি আমার নাম ধরিয়া তিনবার ডাকিবে। যমদূত তোমাকে আবার যমালোকে লইয়া আসিবে। বিদায় গোপাল।

গোপাল : মহারাজ, বিদায়।

৪।

যমদূত তাহার সহিত রসিকতার শাস্তিস্বরূপ গোঁপাল ভাড়কে ইচ্ছা করিয়া অন্য এক রাজ্যের মন্ত্রী পাড়ায় রাখিয়া গেল। ইহা যে এক আজব রাজ্য তাহা যমদূত জানিলেও গোপাল জানিতনা। প্রথম কয়েকটা দিন সে মন্ত্রী পাড়ায় দাপাইয়া বেড়াইতে লাগিল। আজ এই মন্ত্রীর ভিতরে অবস্থান লয় তো কাল অন্য মন্ত্রীর দেহের ভিতরে বিশ্রাম লয়। মন্ত্রীদের পেটের ভিতর হইতে মাঝে মাঝে মন্ত্রীদের মুখ দিয়া বেফাঁস মন্তব্য করাইয়া জনতাকে নির্মল বিনোদন দেয়।

৫।

অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। অলস মস্তিষ্কে গোপাল সিদ্ধান্ত লইল কয়েকটা দিন নীরব থাকিয়া দেখিবে জনতার বিনোদনের কি হয়। কিন্তু নীরব থাকিয়া গোপাল যাহা আবিষ্কার করিল তাহার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। সে আবিষ্কার করিল পিন্টু রোডের সকল মন্ত্রীরা তাহার চাইতে অনেক উঁচু দরের ভাড়। ইহাদের নিকট সে দুগ্ধপোষ্য শিশুতুল্য বটে। ভাড় হিসাবে তাহার নিজের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ আর গাঢ় গর্ব ছিল মন্ত্রীসহ তিনশত ত্রিশ জন ভাড়ের পারফরমেন্স দেখিয়া তাহা চিরতরে দূর হইয়া গেল। বিশেষত পারুক খান, পাহারা খাতুন, মালমালামাল মাল, মখালমগীর, সুরংছিট, ঠুকু, জামরুলসহ সকল মন্ত্রীদের প্রাণবন্ত ভাড়ামী দেখিয়া সে মাথা হেট করিয়া যমালোকে ফিরিয়া যাইবার সিদ্ধান্ত লইল। গোপাল ভাড় যমরাজের নাম ধরিয়া তিনবার ডাকিলে যমদূত আসিয়া উপস্থিত হইল।

যমদূত : গোপাল, মন্ত্রী হিসাবে একটা জীবন কাটানোর সাধ মাত্র সাড়ে তিন বছরে মিটিয়া গেল?!

গোপাল : যেই রাজ্যে মন্ত্রীরা ভাড়ের জীবন যাপন করে সেই রাজ্যে ভাড়ের পক্ষে মন্ত্রীর জীবন যাপন সম্ভব নহে।

যমদূত : ইহার অর্থ বুঝিতে পারিলাম না।

গোপাল : ইহার অর্থ বুঝিতে হইলে ইংরেজীতে ট্রান্সলেট কর “ডাক্তার ডাক্তারী পাশ করিবার পূর্বে রোগী মারা গেল বলিয়া রোগী আসিবার পূর্বে ডাক্তার যমালোকের দিকে যাত্রা করিল।”

যমদূত : গোপাইলা, তুই আবার আমার সহিত রসিকতা করিতেছিস!

গোপাল : রসিকতা করিলাম কোথায়! মন্ত্রী হিসাবে একখানা বক্তব্য দিলাম মাত্র।

যমদূত অবাক হইয়া কয়েক সেকেন্ড গোপালের দিকে তাকাইয়া রহিল। তাহার পরে হিস্ট্রিয়াগ্রস্থ রোগীর মতন কাঁপিতে কাঁপিতে মাথা ঘুরাইয়া পরিয়া গেল। যমদূত আবার দাড়াইতে এবং গোপালকে ফিরত লইয়া যাইতে পারিয়াছিল কি না তাহা জানা যায় নাই।

Likes Comments
০ Share

Comments (9)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    বাহ সুন্দর অনুভূতির কবিতা

    • - ইঞ্জিঃ আহম্মেদ রফিক

      শুভ কামনা আপনার জন্য ।

    - মাসুম বাদল

    হ্যাং হয়ে যাই  ।

    ঝুলে থাকি মানসপট ছেড়ে,

    কেউ তার খবর নেয়নি কোন কালে।

     

    মামু, বেশ ভালো লাগলো...

    • - ইঞ্জিঃ আহম্মেদ রফিক

      ধন্যবাদ মামু ।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    আসলে আমরা হ্যং হয়ে গেছি। পেন্ডুলামে ঝুলতেছি।

    • - ইঞ্জিঃ আহম্মেদ রফিক

      সত্যি তাই ।

    Load more comments...