Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শাহিন মোহাম্মাদ ফয়সাল

১০ বছর আগে লিখেছেন

মুগ্ধ-মৃত্যু

# ১


হাটু গেড়ে বসে আছি আমি।

অনেকক্ষণ যাবতই মাথা নিচু করে এভাবে বসে আছি। মাথা তুলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকাবার সাহস পাচ্ছি না। কারণ সামনে দাঁড়ানো লোকটা আমার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চেয়ে বেশি বেশি তীব্রভাবে তাকিয়ে আছে তার হাতে ধরা পিস্তলটা!

ঠিক আমার কপাল বরাবর।

আমি জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করব। চিরতরে!!!

আমার সামনে দাঁড়ানো লোকটা আমাকে বলল, "আমার দিকে তাকাও।"
আমি মাথা তুলে তাকালাম। হাত পিছন থেকে বাধা থাকলে বোধহয় মাথা তুলে তাকালে ঘাড়ের শিরায় টান পড়ে। সে কারণেই হয়তো একটু ব্যথা পেলাম ঘাড়ের কাছে।

সামনে দাঁড়ানো লোকটার মধ্যে একটা উদাস কবির মতো ভাব আছে। শুধুমাত্র তার দৃষ্টিটা একেবারে শীতল। এমন চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।

লোকটা বলল, "তোমারে কেন আমি খুন করবো জানো?"
আমি কিছু বললাম না। স্থিরভাবে লোকটার হাতে ধরা পিস্তলটার দিকে তাকিয়ে আছি। অবশ্য কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারতাম না। কারণ আমার মুখে শক্ত করে স্কিন টেপ মারা।
লোকটাই উত্তর দিল, "জানো না তো? আসলে আমিও জানি না। আমার জানার প্রয়োজনও নাই। আমি ট্যাকা নিছি। ট্যাকাটারে হালাল করতেছি। আমি নিমকহারাম না!" বলেই সে হা-হা করে হাসতে শুরু করলো।

জীবনে অনেক হাসি দেখেছি ও শুনেছি। কিন্তু কোন হাসিই এত ভয়ঙ্কর লাগে নি আমার কাছে। আমি কেঁপে উঠলাম। শরীরের লোম সবকয়টা দাঁড়িয়ে গিয়েছে। হাসির সাথে সাথে লোকটার সমস্ত শরীর কাঁপছে। শুধুমাত্র তার চোখ ও হাতে ধরা পিস্তলটা একদম স্থির।

"তবে যেদ্দুর বুঝলাম, তুমি আমার বসের সাথে খুব বড় বেয়াদবি করছো। আমার বসটা মানুষ খারাপ না। দিলটা এক্কেবারে পরিষ্কার। কিন্তু বেয়াদবি আমার বস বরদাস্ত করে না। বড় ভুল করছ তুমি!"

আমি কথাগুলো শুনলাম কিন্তু কিছু বুঝলাম না। বোঝার চেষ্টাও করলাম না। মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে নিশ্চয়ই এসব কথা বুঝবার প্রয়োজন থাকে না। অবশ্য আমি বাঁচবার চেষ্টা যে করি নি তা তো নয়। আমাকে যখন ওরা একটা অন্ধকার ঘরে বেধে ফেরে রাখে তখন আমি অনেক চেষ্টা করেছি হাতের বাঁধন খোলার। একটা লোক যখন আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য ঐ ঘরে ঢুকে, তখন তার সাথে বেশ ধস্তাধস্তি করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। উল্টো আমার মাথার পেছনটা এখন বেশ ব্যথা করছে। লোকটা পিস্তলের বাট দিয়ে বেশ জোরে আঘাত করেছিল সেখানে।

আর এখন যার সামনে বসে আছি তার চেহারা দেখেই কেন জানি আমি বুঝে গিয়েছি আমার সময় শেষ। অথচ সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার, কি কারণে আমি মারা যাচ্ছি তাও আমি জানি না। মনে হয় এটা একটা ভুল বোঝাবোঝি। কিন্তু সেটা বুঝাবার মতো সময় আমার হাতে নেই। বুঝাবার উপায়ও নেই। হাত-মুখ শক্ত করে বাধা আমার।

আমার সামনের লোকটা এবার হেচকা টানে আমার মুখের স্কিন টেপটা খুললেন। চামড়ায় বেশ টান লাগলো, কিন্তু কোন ব্যথার অনুভূতি হলো না আমার। এদিকে লোকটা বলেই চলেছে, "একটা মানুষের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গাই মনে হয় যথেষ্ট। কি দরকার এই দুনিয়ার ময়লার মধ্যে পইরা শুধু শুধু নিজেরে দুজখের বাসিন্দা করার? তোমার বয়স কম। বেশি গুনাহ্‌ করার করার সময় পাও নাই। দোয়া করি আল্লাহ্‌ তোমারে বেহেশত নসিব করুক।"

কথাগুলো শুনে হঠাৎ সমস্ত পৃথিবীর প্রতি, পৃথিবীর মানুষের প্রতি আমার মনের মাঝে এক প্রবল ঘৃণার জন্ম হলো। সীমাহীন অতৃপ্তি মনকে ঘিরে ফেললো। জীবনের সব না পাওয়াগুলো যেন একসাথে মাথায় এসে আঘাত করলো। সামনে দাঁড়ানো লোকটা এখনো আমাকে দেখছে। এখন সে আর হাসছে না। স্থিরভাবে ঠিক আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন আমার মনের মধ্যে কি ঘটছে সেটা সে বুঝতে পারছে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর লোকটা আবার বলল, "আমি দিল থেকে দোয়া করতেছি, তোমারে আল্লায় বেহেশত নসিব করুক। আমার উপর রাগ রাইখো না। সবই আল্লার ইচ্ছা। আমি খালি উসিলা। তাঁর পুতুল।" বলে সে সুর করে গেয়ে উঠলো, "যেমনি নাচাও, তেমনি নাচে, পুতুলের কি দোষ?"

আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছি। যত সময় যাচ্ছে আমার ঘৃণার পরিধি ততই বাড়ছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। অথচ আমি তা করছি না। স্পষ্ট দেখলাম সুরে সুরে গান গাইতে গাইতে লোকটা পিস্তলের ট্রিগার চেপে ধরেছে। খুব ধীরে ধীরে- প্রায় কচ্ছপ গতিতে বুলেটটা বের হয়ে আসছে।

চিরকালের জন্য চোখ বুঝলাম আমি। বিদায় হে ঘৃণিত পৃথিবী!

 

# ২


বেশ অনেকক্ষণ পর চোখ মেলে তাকালাম। উজ্জ্বল আলোতে চোখ খুলে সামলাতে বেশ সময় লাগছে। এতক্ষণ কি কারণে চোখ বন্ধ করে ছিলাম মনে করতে পারছি না। মনের মধ্যে একটা প্রবল ঘৃণার স্রোত বারবার আমাকে আঘাত করছে। তবে ঘৃণাটা কিসের জন্য বা কার জন্য বুঝতে পারছি না।

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম আমি একটা বেশ বড় ঘরে দাঁড়িয়ে আছি। ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা হাসপাতালের একটা কেবিন। আমার সামনে একটা বেডে অনেকগুলো
মানুষ ভীড় করে আছে। দেখলাম বেডে একজন মহিলা আধশোয়া অবস্থায়। কোলে একটা শিশু। সদ্যভুমিষ্ট শিশু। মহিলার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমি একটা ধাক্কা খেলাম। আধশোয়া হয়ে থাকা মহিলাটি আমার মা। কি পরম স্নেহের সাথে তাকিয়ে আছে কোলে ধরা শিশুটির দিকে। চারপাশে দাঁড়ানো সবার মুখে হাসি। সে হাসিতে কোন দ্বিধা নেই, কোন জড়তা নেই। চারিদিকে কেমন একটা স্বর্গীয় আনন্দ! চারপাশে দাঁড়ানো সবার দিকে তাকিয়ে আমি আবার ধাক্কা খেলাম। তারা সবাই আমার পরিচিত। আমার মামা, চাচা, দাদী, খালা সবাই-ই আছে। কিন্তু সবার চেহারা মনে হচ্ছে হঠাৎ যেন বিশ বছর কমে গিয়েছে।

আমার মা'র কোল থেকে আমার দাদী শিশুটিকে কোলে তুলে নিল। গালে চুমু খেল। তাঁর হাত থেকে সবাই একে একে শিশুটিকে কোলে নিতে লাগল। কেউ চুমু খেল, কেউ মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করে শিশুটির মনোযোগ লাভের চেষ্টা করল। কেউ শিশুটির দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত রকমের রসিকতা করলো। আমার রসিকতাগুলো পছন্দ হলো না। দেখলাম শিশুটিও তারস্বরে চিৎকার করে উঠল। তাড়াতাড়ি আমার মা শিশুটিকে নিজের কোলে টেনে নিল। শিশুটি কান্না থামিয়ে চুপ করে ঘুমোচ্ছে এখন। আমি স্থির দাঁড়িয়ে আছি, দাঁড়িয়ে আমার মা আর তাঁর কোলের শিশুটিকে দেখছি। কি পরম মমতায় আমার মা শিশুটির শরীরে হাত বুলাচ্ছে, তাঁর চোখে কি অসাধারণ স্নেহশীল দৃষ্টি।

এমন সময় কেবিনের দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো একজন লোক। চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লোকটা আমার সদাব্যস্ত বাবা। ভেতরে ঢুকেই তাঁর সদাচঞ্চল চোখ সমস্ত ঘরে একবার চোখ বুলালো। এতক্ষণে লক্ষ্য করলাম, আমার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। যেন আমি যে এই ঘরে আছি সেটা কেউ জানেই না। আমার বাবা বেডের সামনে গিয়ে শিশুটিকে আস্তে করে কোলে তুলে নিলো। তাঁর চোখ-মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত। তিনি শিশুটির গালে আলতো করে ঠোট ছোয়ালেন। যেন একটু জোরে ঠোট লাগালে শিশুটি ব্যথা পাবে। শিশুটিকে দেখলাম তার ছোট্ট হাত দিয়ে বাবার হাত খামচে ধরার চেষ্টা করছে। এটা দেখে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। তাদের সাথে আমিও হেসে উঠলাম। তবে আমার হাসিটা বোধহয় কেউ শুনতে পেল না। হয়তো আমার দেখার ভুল, কিন্তু মনে হলো শিশুটিও সামান্য হেসে উঠলো।

আমার দাদী আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, "আসতে এতো দেরী করলি কেন?"

বাবা উত্তর দিলে, "আর বলো না। চিটাগাং থেকে ঢাকা আসাটা কি মুখের কথা। জ্যামে বসে থাকতে থাকতে......" কথাটা শেষ না করেই তিনি আবার শিশুটির গালে ঠোট ছোয়ালেন।

দেখতে দেখতে আমি হঠাৎ বুঝে গেলাম, এটা আমার জন্মের পরবর্তী মুহূর্ত। আমার বাবার কোলের শিশুটি আসলে আমি নিজেই। কোন কারণে আমি আমার শিশুকালের স্মৃতি দেখতে পাচ্ছি। এটা কি স্বপ্ন? আমি কি এখন স্বপ্নের মধ্যে এসব দেখছি? হয়তো... কিন্তু স্বপ্নে কি কেউ অতীতের স্মৃতি দেখে? এটা ভাবতে ভাবতেই আমি সামনে পা বাড়াতে গেলাম, কিন্তু এগুতে পারলাম না। উল্টো সমস্ত ঘর মনে হয় উল্টে-পাল্টে গেলো। যখন আবার সবকিছু স্থির হলো তখন আমি দেখলাম আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার বাসাতে। এবার দেখলাম সামনে একটা ছোট্ট বাচ্চাকে আমার মা হাটতে শেখাচ্ছে। বাচ্চাটা যতবার পড়ে যাচ্ছে ততবার মা ছুটে এসে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে আদর করে দিচ্ছেন।

এবার আমি মোটামোটী নিশ্চিত যে এটা স্বপ্ন। তবে এটা স্বপ্নই হোক, আর যাই হোক, আমার দেখতে মোটেও খারাপ লাগছে না। আমার মায়ের সাথে আমিও হাসছি। তাঁর স্নেহময় দৃষ্টি দেখে বারবার অবাক হচ্ছি। তাঁর এই স্নেহময় দৃষ্টির মাঝে কি এক অপরূপ সৌন্দর্য।

আবার ঘরটা পাল্‌টে যেতে শুরু করল। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেলো। এবার দেখলাম আমার বাবাকে। বাচ্চাটাকে (আমাকে) কোলে নিয়ে ঘরের মধ্যে হাটছেন। শিশু আমি ঘুম ঘুম চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি। ছোট্ট হাতে খামচে ধরে রেখেছি বাবার শার্ট। যেন কোথাও হারিয়ে না যান তিনি। স্থির আমি এ সব-ই স্পষ্ট দেখছি।

আবারও ঘরটা পালটে গেল। চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। আমি স্থির দাঁড়িয়ে দেখে গেলাম কিভাবে সবার ভালোবাসায় আমি বড় হয়েছি। যতই দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। চোখের সামনে আমার জীবনের সব সুখস্মৃতিগুলো একের পর এক ঘটে যাচ্ছে। যেন আমি টেলভিশনের সামনে বসে আছি। একের পর এক চ্যানেল বদলাচ্ছি।

আস্তে আস্তে আমি বড় হয়ে গেলাম সবার ভালোবাসার মাঝে। মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার আত্মীয়-স্বজন সবার ভালোবাসা নিয়ে আমি বড়ো হলাম। অপরদিকে স্থির আমি সবকিছুই দেখে গেলাম মুগ্ধ হয়ে। আমি দেখলাম আমার দাদী আমাকে গল্প শুনাচ্ছেন, আমার নানা আমার সাথে খেলছেন, আমার মামা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। আমার মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন, আমার স্কুলের বন্ধুরা সবাই একসাথে খেলছি, পড়া না পারায় টিচার আমাদের শাস্তি দিয়েছেন, অথচ সে শাস্তির পরও আমাদের সবার মুখেই চাপা হাসি, দেখলাম আমরা টিফিন ভাগাভাগি করে খাচ্ছি। সারাক্ষণ এরওর সাথে দুষ্টুমি করছি। দেখলাম সামান্য অসুস্থ হলেও আমার মা সারা দিন-রাত খেয়ে না খেয়ে আমার সেবা করছেন। এসব দেখতে দেখতে আমি আবিষ্কার করলাম, আমার জীবনে আসলে কোন কষ্ট নেই, কোন দুঃখ নেই, কারো প্রতি ঘৃণা নেই!

 

# ৩


চোখের সামনের ঘটনাপ্রবাহে এবার আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। সামনে তরুণ আমি হেটে যাচ্ছি। আকাশ মেঘলা, কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি নামবে। আমার সাথে একটি মেয়েও হাটছে। আজ আমি তাঁকে একটা কথা বলব। আমার মনে মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করছে। এমন ভয় আগে কখনো অনুভব হয়নি। কিছুক্ষণ চুপচাপ হাটার পর হঠাৎ করেই সব ভয়-জড়তা কাটিয়ে আমি মেয়েটাকে বলে দিলাম কথাটা। স্থির আমি দেখতে পেলাম যে অন্য আমি লজ্জায় মেয়েটার দিকে তাকাতে পারছি না। এতো লজ্জা পেয়েছিলাম আমি!!! মেয়েটিকে দেখলাম আমার দিকে তাকালো। সে দৃষ্টিতে এমন কিছু একটা আছে যা ব্যাখ্যাতীত। মেয়েটার ফোলা ফোলা গানগুলো সামান্য লালচে হয়ে গিয়েছে লজ্জায়।

স্থির আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি। মনে মনে বারবার প্রার্থনা করছি যেন এই দৃশ্যটা আবার পালটে না যায়। মেয়েটার দৃষ্টি লাজুক, কিন্তু মুখে একটা স্মিত হাসি। সে হাসির অর্থ আমি জানি না। আমি জানতে চাই না। তার মুখের এ হাসির পর আমার জীবনের আর কোন অপূর্ণতা নেই, কোন চাওয়া নেই। সেই দুর্বোধ্য হাসির মাঝে আমি আমার জীবনের সব সুখ খুঁজে পেলাম, তাঁর লাজুক দৃষ্টির মাঝে আমার ছন্নছাড়া মনের আশ্রয় খুঁজে পেলাম। আমি আর কিছু চাই না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়ে আছি আমি।

ঠিক এই সময় আমার চোখের সামনে সবকিছু লাল হয়ে গেলো। মাথার মধ্যে একটা প্রচন্ড ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল। মনে হচ্ছে মস্তিষ্কের মাঝে লক্ষ লক্ষ সুঁই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রচন্ড ঝটকা খেয়ে যেন স্বপ্ন ভাঙছে আমার, চোখ মেলছি বাস্তবতায়, কিন্তু এখনও আমার স্ত্রীর সেদিনের হাসিমুখটা আমার চোখে ভাসছে।

মাটিতে আছড়ে পড়লাম আমি। তবে আছড়ে নিচে পড়বার আগেই আমার শরীরের সমস্ত ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বুলেটের শব্দটা যখন আমার কানে এসে পৌছালো, তখন আমার দেহে আর প্রাণ নেই।

 

# ৪


পিস্তলটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদেক। সামনে পড়ে আছে একটা দেহ, কপালে একটা লাল গোল ফুটো। কপাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সাদেক। রক্ত দেখছে না সে। তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো যুবকটির চোখের দিকে। কিছুক্ষণ আগেও সে যুবকটির চোখে স্পষ্ট ভয় আর ঘৃণার সংমিশ্রন দেখেছে। সেটাই স্বাভাবিক, ভয় মৃত্যুকে, ঘৃণা সাদেকের প্রতি। কিন্তু এখন মৃত যুবকটির চোখে ঘৃণা বা ভয়ের ছিটেফোটাও নেই। তার চোখে এখন স্পষ্ট মুগ্ধ দৃষ্টি। মুখটা এমনভাবে রয়েছে যেন সে হাসছে। একজন পেশাদার খুনি হয়েও হাসিটা দেখে কেঁপে উঠে সাদেক। পিস্তলটা পকেটে ভরে তাড়াতাড়ি সড়ে গেলো সে দূরে। হেটে চলে যাওয়ার সময় আবার তাকালো পিছনে।

যুবকটি এখনো পড়ে আছে সেখানেই। মুখে দুর্বোধ্য হাসি, চোখে মুগ্ধ দৃষ্টি। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে শুন্যতার দিকে। সে দৃষ্টিতে কোন ভয় বা ঘৃণা নেই।


কপালের ফুটোটা দিয়ে এখনো রক্ত বেরোচ্ছে। কিন্তু তা তার মুগ্ধ দৃষ্টিটা ঢাকতে পারছে না।

Likes Comments
০ Share

Comments (7)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    ভালোবাসা  
     একটা শক্তি
     যার বলে সব বাধা চূর্ণ হয়ে যায়     

    হতেই পারে অনেকের কাছে তা কেবল অলীক
     কিন্তু ভালোবাসার অস্তিত্ব সব কিছুর উধে্র্ব ।

    ...............very nice

     

    • - তাসনিমা আহমদ শেফা

      ধন্যবাদ

    - জাবেদ ভুঁইয়া

    চিরকুট কাব্য খুব ভাল লাগল

    • - তাসনিমা আহমদ শেফা

      ধন্যবাদ