Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোঃ মুতাসিম উদ্দিন

৯ বছর আগে লিখেছেন

স্মৃতির পাতা থেকে

- কেমন আছো মীরা?
- এইতো চলছে, তোমার কী খবর?
- ভালোই আছি।

কথাটি বলেই আমি থমকে গেলাম। আসলেই কি ভালো আছি? নাকি প্রতিনিয়ত ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছি?

আজ কত বছর পর মীরার সাথে দেখা হল। হালকা নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে এসেছে ও, কপালে একটা ছোট্ট নীল টিপ। বেশ মানিয়েছে ওকে। মীরাকে দেখেই আমার ফেলে আসা দিনের বিস্মৃত স্মৃতিগুলো নড়েচড়ে উঠলো। হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত সুখ-দুঃখের টুকরো টুকরো মুহূর্তগুলো সব জেগে উঠলো। তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। মনের মাঝে হাজারো রঙিন স্বপ্ন প্রতিনিয়ত আঁকিবুঁকি খেলে চলেছে। চারপাশে যা দেখি তাই ভালো লাগে। এর মধ্যেই একদিন মীরাকে দেখে আমার সমস্ত পৃথিবী ওলট-পালোট হয়ে গেল। ছিপছিপে গড়ন, শ্যামলা গায়ের রঙ, চশমাপরা মেয়েটির খুবই সাধারণ মুখাবয়বের মধ্যে কোথায় যেন এক পৃথিবী সমান মায়া লুকিয়ে আছে। মেয়েটিকে দেখলেই খুব দুঃখী মনে হয়, বড় বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে হয়।

তারপর ধীরে ধীরে মীরার সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। ক্লাসে চুপচাপ থাকা মেয়েটি আবার কথাও বলতে পারতো প্রচুর। বন্ধুদের আড্ডায় কথার ঝাঁপি খুলে বসতো মীরা। আমাকে সবসময় ‘তুই’ সম্বোধন করতো ও। আমি অবশ্য ওকে ‘তুমি’ বলেই  ডাকতাম। আজ এতো বছর পরে মীরা আমাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করলো। সময় কতকিছুই বদলে দেয়।

আমি মীরাকে খুব ভালবাসতাম। কিন্তু আমার মুখচোরা স্বভাবের কারণে কখনোই বলতে পারতাম না। তবে আমার ধারণা, ও আমার মনের সব কথাই বুঝতো। তারপর হঠাৎ বসন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে, ক্লাসশেষে আমি যখন মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন কোথা থেকে যেন মীরা ছুটে আমার কাছে এলো। আমার মনে হল, একটা প্রজাপতি যেন উড়ে উড়ে এলো। ওর হাতে তিনটি টকটকে লাল গোলাপ। সেগুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।’ তারপর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে, আমার উত্তর শোনার অপেক্ষা না করেই যেমন ব্যস্তভাবে এসেছিলো তেমন ব্যস্তভাবেই ছুটে চলে গেল। আমি সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠের মাঝখানে হাতে তিনটি রক্তলাল গোলাপ নিয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম।

সেদিনের পর আমাদের একসাথে বহু সময় কেটে গিয়েছে। কী অদ্ভুত সুন্দর ছিল সে দিনগুলো! কত সকালে দু’জনে হাত ধরাধরি করে শিশিরভেজা নরম ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছি, কত বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে পরস্পরকে অপলক চোখে চেয়ে দেখতে দেখতে, কত চাঁদনী রাত মাতাল হাওয়ার মাঝে খোলা ছাদে পায়চারী করতে করতে মীরার সাথে ফোনে কথা বলে পার করে দিয়েছি। ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে কীভাবে দিন-মাস-বছর চলে যাচ্ছিলো তা টেরই পাই নি।

এরপরে যেন কীভাবে কী হয়ে গেল। এক শ্রাবণের বিকেলে মীরা আমার কাছে এলো। সেদিন ওর মুখে যে অভিব্যক্তি দেখেছিলাম তা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না। এতটা ক্লান্ত, বিষণ্ণ কোন মানুষের মুখ হতে পারে? তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো। আকাশ খুব কাঁদছিলো, আর সেই আকাশের সাথে কাঁদছিলো মীরাও। সেদিন ঝাপসা চোখে আমি বৃষ্টির জল আর মীরার চোখের জলকে আলাদা করতে পারি নি। আমরা দু’জনই পরস্পরকে খুব ভালবাসতাম। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, আমরা দু'জন দু'পথের যাত্রী ছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদের অনেক কারণ হয়তো ছিল, কিন্তু সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হল আমরা পরস্পরকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। সে সব নিয়ে এখন আর ভাবতে ভালো লাগে না। বরং সেই উচ্ছ্বল দিনগুলোর সোনালী স্মৃতি বুকে নিয়ে ভালোই আছি।

'কী হল, চুপ করে গেলে যে?', মীরার ডাকে আমার চমক ভাঙলো। ততক্ষণে দেখি মীরার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার সুপুরুষ স্বামী, তার কোলে একটি ফুটফুটে মেয়ে। ভদ্রলোকের সাথে স্মিতহাস্য বিনিময় করে আমি আমার অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। সন্ধ্যা বেশ ঘন হয়ে এসেছে। কৃষ্ণপক্ষের রাত বোধহয়, চাঁদহীন আকাশে অজস্র তারা ঝিকমিক করে জ্বলছে। আমার মনের গহীনের ব্যক্ত-অব্যক্ত স্মৃতিগুলোও তখন খুবই সংগোপনে ওই তারারাজির মতই জ্বলছে।
Likes Comments
০ Share

Comments (8)

  • - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    অনেকদিন পর কবিতা পড়লাম, পড়ে ভালো লাগলো। emoticons

    - সুলতানা সাদিয়া

    সুন্দর শব্দ গাঁথুনি ভাল লাগলো। শুভকামনা।