" অপরাধের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে কেননা তা শূন্যের কৌঠায় নামিয়ে আনাঅসম্ভম”। এ ধরনের বাণী যারা দেন এবং শুনে বিশ্বাস করেন আমি তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। আমার মতে তাঁরাই কেবল এমন মন্তব্যে বিশ্বাসী যারা ভাবেন যে অপরাধীকে কঠোরতম শাস্তি দিলেই ভবিষ্যতে এ ধরণের অপরাধ করার সাহস কেউ পাবে না। এই যে “সাহস পাবে না” কথাটা কিছুটা হলেও যৌক্তিক। চুরি করলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ডান হাত কেটে দেওয়া হয় যা অনেক কঠোর শাস্তি। কিন্তু বাস্তব কথাটা হল পেটে যখন খুদা লাগে আর অভাবের কারনে সামান্য পরিমাণ খাবারও মেলে না তখন কেও ঐ হাত কাটা যাবে এই ভয় পাই না। কেননা অন্যের অভাবে যার প্রাণই হারাবে তার আবার হাত কাটার কিসের ভয়?
অপরাধ কেন হয়? কারও প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টির কারনে? ক্ষোভ কেন সৃষ্টি হয়? যখন কেও তার প্রতি অবিচার, অবহেলা কিংবা অন্যায় করে থাকেন। এভাবে দিনের পর দিন নানা মুখী অত্যাচার কিংবা অন্যায় সহ্য করার পর তার মধ্যে প্রতিশোধ নেবার তাড়না সৃষ্টি হয় যা “হিউম্যান সাইকোলজি”র একটা স্বাভাবিক বিষয়। কোন একটা অপরাধ সংগঠিত হলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই “ভিকটিম” এর প্রতি সহানুভূতি দেখায় এবং তার পক্ষ নেয় পাশাপাশি অপরাধীকে মনুষ্যজগত থেকে বিতাড়িত করে দেই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি, তার নামে নানান মুখরোচক কথা ছড়িয়ে নিজে এবং অপরের “তথ্য অধিকার” এর বিনোদন মেতায়। সেই সাথে দেশের আইন তাকে শাস্তি দেয় যদি কিনা তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় না থাকে। কিন্তু এভাবে সামান্য পরিমাণ অপরাধ কমেছে এমনটা কি কেউ দাবি করতে পারবে? পারবে না। কেননা আমরা কোন ঘটনার গভীরে যায় না। “ভিকটিম” এর “ভিকটিম” হওয়ার কারন যে কখন কখন তার নিজের অন্যায় অবিচারের ফসল তা আমাদের সভ্যসমাজের নজরে পরে না।
“অপরাধ কমাতে চান বাস্তবেই” তাহলে অপরাধী কে তথাকথিত বিচারের আওতায় আনার চেয়ে তাকে নিয়ে আরও বিস্তর কাজ করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে আমাদেরকে। “তার” জীবনের গল্পটা শুনতে হবে সবার আগে, জানতে হবে তার ক্ষোভের কারণ যার ফলে তার ভিতর “অপরাধী” সত্তার জন্ম হয়েছে। পুরো ব্যাপারটায় হবে একটা “রিসার্চ প্রোজেক্ট” এর মত। এ ধরনের কাজ করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান গঠ্ন করতে হবে যারা রিসার্চ করে মূল কারণ জানার পর সমাজের এ ধরনের আরও যারা ভুক্তভুগি আছে অর্থাৎ যাদের মধ্যে অপরাধী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে তাদের সমস্যা সমাধানে তাকে মানসিক, শারীরিক, চিকিৎসা দেওয়া এবং তার ক্ষোভ কিংবা কষ্টের কথা শুনে তাকে বিকল্প পথ দেখান।
আর কোন অপরাধীকে “ফাঁসি দেওয়া” খুব সহজ একটা শাস্তি; নানানমেয়াদী কারাদণ্ড হল “ট্যাক্সের টাকায় বোঝা বহন করা”। তাই বলে আমি তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছি না। বরঞ্ছ বলছি তাকে প্রায়সচিত্তের সুযোগ দিতে। যেমন, তাকে দিয়ে এমন কিছু প্রোগ্রাম আয়োজন করা যেতে পারে যেখানে সে অন্যদেরকে সচেতন করে তুলতে পারেন। অর্থাৎ বিচারের পর তার বিচারটায় হবে যে সমাজের অপরাধ নির্মূলে নানানধরনের সামাজিক কাজ করা। এতে দেশের বৃহত্তর লাভ হবে আমার ধারনা।
এটি “অপরাধ নির্মূলে” আমার প্রথম লেখা। নিয়মিতভাবে আমি লিখে যাব এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত ভাবে।
Comments (5)
অনেক কিছু জানলাম
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার জহির রায়হানের ৪৩তম অন্তর্ধান দিবসে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ধন্যবাদ নুরু ভাই।
অনেক হয়েছে জানা ।