Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Azimul Haque

৯ বছর আগে লিখেছেন

আমাদের মূল্যবোধ

মেইন রাস্তার সাথে সরাসরি অথবা পরোক্ষে সংযূক্ত রাস্তাগুলোর একটা দিয়ে হাঁটছিলাম। দু’পাশে দালান, অট্টালিকাগুলো দাঁড়িয়ে পাশাপাশি। রাস্তার পিচ্ ছাড়িয়ে মাটির অংশের ১০/১২ ফিট দুরে দাঁড়িয়ে বাড়িগুলো। মাটির অংশে অবস্থিত যে গাছগুলো, সেগুলির একটার ছায়ায় বসে চা বিক্রি করছেন তিনি। একটি ইটের উপরে বাজারের ব্যাগ বিছিয়ে বসে আছেন, সামনে একটা বড় ফ্লাক্স। ফ্লাক্সের গলায় বাঁধা একটা দড়ি, সেই দড়ির সাথে বাঁধা তিনটি পলিথিন। একটায় বড় বড় টোষ্টবিস্কুট, একটায় পান এবং আরএকটায় সিগারেট আর কিছু শুকনা সুপারী। নীচে বালুর উপরে ছোট ছোট দুইটা পলিথিন পাতা, একটায় কাঁচা সুপারী এবং আরেকটায় তিনটা ছোট কৌটা। এক কৌটায় চুন, আরেকটায় জর্দা এবং আরেকটায় কী যেন। লোকটার সামনে বামে পাঁচ লিটারের একটা বড় বোতল, পানিভরা। বোতলের মাথায় উপুড় করে রাখা একটা গ্লাস। পানি খেতে কেউ চাইলে বাম পায়ের পাতা আর বাম হাত দিয়ে বোতলটা একটু উঁচা করে ডান হাত দিয়ে গ্লাস ধরে গ্লাসে পানি ঢালেন তিনি। ফ্লাক্সটার মাথায় একটা সিগ্রেট-লাইটার। কেউ সিগ্রেট ধরালে লাইটার নিয়ে আবার ঐখানেই রেখে দিচ্ছেন তারা লাইটারটা।

রিক্সাওয়ালারাই দোকানের মূল খরিদ্দার, তা বলাই বাহুল্য। বহুদুর ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এসে বসেন তারা। না, বসার মত কোন জায়গা নাই এখানে তাদের। দু’পায়ের উপর ভর করে বসে কেউ টোষ্ট খান, পানি খান, লাল চা খান এবং শেষে হয়ত একটা সিগ্রেট অথবা একটা পান। আবার কেউ শুধুবা একটা লাল চা, তারও আগে এক গ্লাস পানি এবং শেষে একটা সিগ্রেট।

নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি তাঁর, খুব কী প্রয়োজন আছে সেটার! পাশে দাঁড়িয়ে লাল ঐ চা খেতে খেতে দেখা হয় দৃশ্যগুলো আমার। রাজধানীজুড়ে এরকম দোকানের বিস্তৃতি অনেক। অনেকে আবার ভ্রাম্যমান দোকান করে থাকেন, তবে এত জিনিস নিয়ে নয়। যেমন পানের আইটেমটা তারা রাখেননা। পানে অনেকরকম জিনিস লাগে, ভার না হলেও গুছিয়ে বহন করতে যেগুলি কষ্ট হয়।

শ্যামলী শিশুমেলার মোড় নামক স্থানে বিরাট এক ১৫-তলা ভবন, নাম “আশা ভবন”। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পরিপাট্টি করে অফিসিয়াল ড্রেস পরিহিত গাডর্দের দেখে একটু দাঁড়ালাম। বাথরুমের দোহাই দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। প্রায় কিছুই না দেখে বের হবার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের একজনের সাথে কথা হলো। মনে স্বভাবত:ই প্রশ্ন জাগে, কী এটা! জিজ্ঞেস করি এবং উত্তর পাই, এটা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি। এমন নয় যে, আশা ইউনিভার্সিটির নাম শোনা হয়নি। পত্রিকা মরফৎ বছর দুই আগে জেনেছিলাম, ওখানে নিয়োগ-সংক্রান্ত জটিলতা হয়েছিল। সে-সম্পর্কে জানতে চাই। উনি যা বললেন, সংক্ষেপ করলে তা দাঁড়ায়, ওটা হয়েছিল পদসংখ্যার তুলনায় চাকরীপ্রার্থীর বিপুল সংখ্যার কারনে। আরো শুনেছিলাম সেসময় যে, চাকরীপ্রার্থীদের কাছ থেকে অনথর্ক বিপুল পরিমান টাকা জোর করে এবং কৌশলে আদায় করা হয়েছিল।

এই বিরাট বিল্ডিংয়ের সবই কী আশা ইউনিভার্সিটি?

দু’টি ফ্লোর বাদে সবই আশার, উত্তর আসে। ১২/১৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর বিশাল পদচারণা আশা ইউনিভার্সিটির এই ফ্লোরগুলিতে।

আমাদের দেশে তরুনদের সংখ্যার বর্ধিত হারের সাথে সাথে তাদের শিক্ষার সুযোগগুলো বাড়ার পথ যখন পাচ্ছিলনা, যখন সংকুচিত হয়ে পড়ছিল তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগগুলো, বেসরকারী ইউনিভার্সিটিগুলোর যাত্রা শুরু তখন থেকেই। এগুলি না হলে দেশে উচ্চশিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ত, তা বলাই বাহুল্য। দু’একজন শিক্ষার্থী ছাড়া সবাই তারা মধ্যবিত্ত অপেক্ষা অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান। এদের মধ্যে মাদক গ্রহনের প্রবণতা বিদ্যমান, যা তাদের তারুন্য আর সজীবতাকে ক্রমেই নষ্ট করে দিচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, মানের বিচারে কিছুটা নিম্নমানের শিক্ষা-ই পেয়ে থাকে তারা। সবচেয়ে বড় যে অভিযোগটি রয়েছে তাদের সম্পর্কে তা হলো দরিদ্র, হতভাগ্য ঐ চায়ের দোকানদার, রিক্সাওয়ালা, এসমস্ত মানুষ তাদের নিকট কোন সহানুভূতি পায়না, তাচ্ছিল্লের একটা ভাব পরিলক্ষিত হয় এঁদের প্রতি ওদের ব্যবহারে।

নৈতিকতার চর্চাই পারে শুধু তাদেরকে এসমস্ত পরিত্যাগ করে ন্যায়ের পথে নিয়ে আসতে। আমাদের সাথে কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত তারা। ছোট্ট এই ভূখন্ডে তারা আমাদের আত্মীয়তার সূত্রেই বাঁধা কোন একভাবে। অনেকের এদের পরিবারে নৈতিকতার চর্চা হয়, আবার অনেক পরিবারে হয়ইনা। অনেকে সঙ্গদোষে পরিবর্তিত হয়। অনেকে আবার পরিবারে নৈতিকতার চর্চা না হওয়ার কারনে নষ্ট হয়ে যায়। বিরাট-বিশাল শিক্ষার্থী এই তরুন সমাজকে আমরা কাছে টেনে নিতে চাই, এদের দিয়েই আমরা এদেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বানাতে চাই। এদের আমরা মানবিক নাগরিকে পরিণত করতে চাই।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে এই বিশাল দায়িত্ব নিতে হবে। তাঁরা না নিলে আর কে নিবে মহান এই দায়িত্ব? দেশ-সমাজের পাঠ এই ছাত্রদেরকে দিতে হবে যে তাঁদেরই। সহনশীলতা, মাণবিকতা, উদার মনোভাবের শিক্ষা, মানুষ কেন দরিদ্র হয় এবং অসহায়, হতাশাগ্রস্থ মানুষদেরকে কোন দৃষ্টিতে, কোন ভাবাদর্শে দেখতে হয়, সে-পাঠদানের ভারতো তাঁদেরই উপর ন্যস্ত। আশেপাশের দরিদ্র চা-বিক্রেতা, রিক্সাওয়ালা, মুটে-মজুর শ্রেণির মানুষজনদের মুখের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে ওদের শ্রমের-ঘামের কষ্টগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের অনূধাবন করতে হবে। নিজের হাতখরচ থেকে কিছু বাঁচিয়ে বিড়ম্বিত এসমস্ত মানুষের দিকে সাহায্যের হাতটা কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া এদের কর্তব্য বলে মনে করি। খুবই কষ্ট এই মানুষগুলির, বাঁচতে তো হবে এঁদেরও।

আগের আমলের স্কুল ও কলেজের কিছু মহান শিক্ষকের কথা আমরা শুনেছি। তাঁরা বাড়ীতে বাড়ীতে খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে পাঠ দিয়ে আসতেন, অনেকেই বিনে পয়সায়। শুধু তা-ই নয়, আদর্শ ও নৈতিকতার শিক্ষাও তঁরা অকাতরে বিলিয়ে যেতেন। অনেক শিক্ষার্থীর নৈতিকতার শিক্ষা লাগতোইনা, ঐসমস্ত শিক্ষকদের দেখে অনুকরনের চেষ্টা করত তারা। তার সুফল আমরা পেযেছি। বিগত শতকের ছাত্রনেতাদের কমর্কান্ডের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দেই, তবেই বুঝব তা পেয়েছি আমরা। তাঁরা এবং তাঁদের উত্তরসূরীরাই তো এখন শিক্ষক। নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান তাঁরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের মাঝে সঞ্চারিত করবেন, এই আশা আমরা করে যেতে চাই। নষ্টের দ্বারপ্রান্ত এযুগে এই ছাত্রসমাজই যে এদেশের ভরসা।

বেসরকারী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দকে আমরা এরকম আহ্বান জানিয়ে যেতে চাই। এসমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও আহ্বান জানাই মানবিকতার এসকল পাঠ গ্রহণ করতে অতি নিবিষ্টমনে। উদারতা, মহানুভবতা, সহনশীলতা এসমস্তগুনের পাইওনিয়ার হয়ে থাকুক তারা।

 

Likes Comments
০ Share