নাদের শাহ আফছার বা নাদের শাহ ইরানের শাহ হিসেবে শাসন করেছেন ও তিনি ছিলেন আফছারিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রখর সামরিক দক্ষতার কারনে কোন কোন ইতিহাসবিদ তাকে পারস্যের নেপোলিয়ন বা দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার হিসেবে আক্ষ্যায়িত করেছেন। নাদের শাহ তুর্কীর আফছার উপজাতীর সদস্য ছিলেন। যারা প্রথম শাহ ইসমাইলের সময় থেকেই সাফাভি রাষ্ট্রে সামরিক রসদ সরবরাহ করতেন।
হুতাকি আফগানদের দ্বারা বিদ্রোহ শুরু হলে ইরানে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তারা পারস্যের শাহ সুলতান হুসাইনকে সহজেই ক্ষমতাচুত্য করে। অটোমান ও রাশিয়া উভয়েই পারস্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নেয়। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে নাদের শাহ ক্ষতায় আসেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর পারস্যের অঞ্চলগুলোকে পুনরায় একত্রিত করেন ও সেখান থেকে দখলদারীদের উচ্ছেদ করেন। তিনি এতো ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন যে ২০০ বছর ধরে পারস্য শাসন করা সাফাভি রাজবংশের শেষ শাসককে পদচুত্য করার পরিকল্পনা করেন। ১৭৩৬ সালে সাফাবিধ রাজবংশের শাসককে ক্ষমতাচুত্য করে নিজেকে ইরানের শাহ হিসেবে ঘোষণা করেন। তার অনেক সামরিক অভিযান তার সাম্রাজ্য বহুগণে বৃদ্ধি করে ও চতুর্দিকে তার সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বর্তমান ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান,তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ভারত, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, ওমান ও পারস্য উপসাগরের অঞ্চলকে তার সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন কিন্তু তার সেনাবাহিনী পারস্যের অর্থনীতিতে ধ্বংস ডেকে আনে।
নাদের তার আদর্শ হিসেবে মধ্য এশিয়ার আরো দুজন অন্যতম বিজেতা চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লংকে অনুসরন করেন। তিনি তাদের সামরিক ক্ষমতা, তাদের রাজত্ব পরিধির ধারা ও পরবর্তীতে তাদেরমত নিষ্ঠুরও হয়ে উঠেন। তার এই বিজয় তাকে মধ্য-প্রাচ্যের সার্বভৌম ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু ১৭৪৭ সালে তাকে হত্যা করার পরপরই তার সাম্রাজ্য ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে। নাদের শাহকে এশিয়ার ইতিহাসের সর্বশেষ মহান সামরিক বিজেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাকে অটোমান ও মুঘল সাম্রাজ্যের মাঝেও ইরানের ক্ষমতা পূণ:প্রতিষ্ঠার জন্য কৃতিত্ত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
কোহিনূর হীরার রাজকীয় ইতিহাস শুরু ১৩০৪ সালে, নির্দিষ্ট করে বলা যায় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ থেকেই উদ্ভব এই রত্নের, এই চমৎকার হীরাটির ওজন ২১.৬ গ্রাম এবং এটি ১০৫.৬ মেট্রিক ক্যাডেটস হীরক খণ্ড। এর মূল্য ধরা হয় ১ দিনে পৃথিবীর সমস্ত উৎপাদন খরচের অর্ধেক।
ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনূর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল। পরে এটি মোগল সম্রাট বাবরের হাতে আসে, বাদশা হুমায়ুন কোহিনুর উদ্ধার করে পিতাকে উপহার দেন, পিতা বাবর পুত্রের ওপর খুশি হয়ে পুনরায় হুমায়ুনকে উপহার দেন, পরে সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ুর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করেছিল এই মহা মূল্যবান রত্ন। এছাড়াও বাবর, শাহজাহান, আকবর, জাহাঙ্গীর , আওরঙ্গজেবের সিংহাসন আলোকিত করেছে কোহিনুর। মোগল সাম্রাজ্য যখন বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখননাদির শাহকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জ্বল দিন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে। কিন্তু তাকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয় মোঘল রাজা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাদির শাহ কৌশলে মোগলদের কাছ থেকে কোহিনূর উদ্ধার করে নিয়ে যান ইরানে।
নাদির শাহের মৃত্যুর পর আফগান রাজা হুমায়ুনের পুত্রের দখলে আসে এই কোহিনুর। আফগানিস্তান থেকে মহারাজা রণজিত্ সিং সেটি গ্রহণ করেন।
শেষ পর্যন্ত রণজিত্ সিংএর পুত্র সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫০ সালে তুলে দেন রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে। মূলত আফগান থেকে এটিকে বাজেয়াপ্ত করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। রানী ভিক্টোরিয়া এটি তার হাতে ব্যবহার করেছেন, পরে এটি স্থান পায় ব্রিটিশ রাজমুকুটে, কত রাজার হাত ঘুরে আজ কোহিনুর অবসর নিয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে।
১৯৯৭ সালে কোহিনুর ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতীয় পার্লামেন্ট থেকে জোর দাবি উঠে। এ সময় ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত এর সত্ত্ব দাবি করেছিল।
২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এসে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এ সকল দাবী অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে।
তথ্যসুত্র : উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ নাদের শাহ
Comments (0)
অনেক অনেক ভালো লাগা রইলো।
Many Many thank
ভালো লিখেছো, বন্ধু...
thank u so much friend..
শুভকামনা রইল।
thank's