Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বুলি

৯ বছর আগে লিখেছেন

বটবৃক্ষ

প্রবীণ নিবাস, শব্দটি এখন আর অপরিচিত কিছু নয়। আগে মনে হত এই নিবাসে মাছি উড়বে। কে যাবে ওখানে। খুব অবাক হয়েই লক্ষ্য করেছিলাম, দিন কয়েকের মধ্যেই প্রবীণ নিবাসে আর কোন খালি সিট নেই।

আগে মনে হত এটা বিদেশি কালচার। বিদেশি মানুষগুলো একাকীত্ব, ব্যাস্ততার দোহাই দিয়ে ঘরের প্রবীণ ব্যাক্তি টিকে ওল্ড হোমে ফেলে আসে। আমাদের দেশে এর চর্চা শুরু হয়ে গেছে। এদেশের মানুষ আর কিছু পারে আর না পারে খারাপ জিনিসগুলো খুব ভালো আয়ত্ত করতে পারে। খুব দ্রুত সিখে ফেলেছে কেমন করে ঘরের সবচেয়ে দামি মানুষ টিকে আস্তাকুরে ফেলে দিতে হয়। একক পরিবার, privacy ইত্যাদির দোহাই দিয়ে কি সুন্দর করে এই নিস্তুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।

আমিখুব কাছ থেকে এরকম প্রবীণদের দেখেছি। প্রবীণ নিবাসে থাকে, কিন্তু মন পড়ে থাকে সন্তানের কাছে। নিজের পরিচয়, সন্তানের পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা অনবরত। পাছে আমি বলি, আপনার লালন পালনে ভুল ছিল। কিংবা কেমন করে পারল আপনার সন্তান আপনাকে এভাবে রেখে যেতে।

নিজের সম্মান নয়, এখনও তিনি/ তারা সন্তানের সম্মানের কথাই ভাবেন।

ভীষণ স্মার্ট এক ৭০ ঊর্ধ্ব প্রবীণের সাথে কথা বলে জানলাম, কর্ম জীবী পুত্র ও পুত্র বধুর সময় নেই তার জন্য রান্না করার, দেখাশুনা করার। তাই তিনি এখানে। এর বেশি কিছু বলতে চাইলেন না। চোখ জুরে বিষণ্ণতা। তাদের ঘরে বাচ্চা এলে সময় মেনেজ করবে কিভাবে জিজ্ঞেস করা হয়নি।

এক মাত্র ছেলে এম বি এ করতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল। বুড়ো বুড়ি ভালোই ছিল। বুড়ি মরে যাবার পর থেকেই এখানে। ছেলে জানিয়েছে ফিরবেনা।

ছেলের বউ দের খোটা ভালো লাগেনি, প্রতিবাদ করায় ছেলে বলেছে নিজেও শান্তি পাওনা, আমাদের শান্তি দেখলেও তোমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। নিজের রাস্তা নিজে দেখ।

নাতি নাতনি বড় হচ্ছে, তাদের জন্য আলাদা রুম দরকার। ছোট্ট ফ্ল্যাটের এক রুম দখল করে থাকলে, কেম্নে হয়। তাই ঠিকানা প্রবীণ নিবাস।

এই রকম আরও বহু। কারন গুলো সবার ই জানা। খুব সাধারন। তবে আমি যাদের সাথে কথা বলেছি। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত, অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল পরিবারের মানুষ। তার পরেও তাদের ঠিকানা প্রবীণ নিবাস। ঘরের একটা রুম এই মানুষ টির জন্য বরাদ্দ করা যায় না। ঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি নিজের চোখে দেখে অবহেলা, অপমান।ছেলে মেয়ে নাতি পুতি নিয়ে একসাথে... এ যেন আজ কাল ভাবাই যায় না।

খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই হয়ত আমার মনে হয়েছে, ঘরের যে নারী সদস্য বা করতি রয়েছেন তার একটু মমতা, ধৈর্য, একটা ঘরের প্রবীণ কে তার সম্মান দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ঘরের পুরুষটির কাছে প্রবীণ মানুষটিকে উপস্থাপন করেন তিনি। তিনি চাইলেই সব পারেন। সন্তানের বুকে একটু হলেও অপরাধ বোধ থাকে এই নিষ্ঠুর পদক্ষেপ নিতে। তার ও মনে হয় অফিস থেকে ফিরে বাবার সাথে একটু গল্প করতে। কোন গিফট পেলে বাবা কেমন খুশি হয় তা নিজ চোখে দেখতে। নিজের ছোট বেলার গল্প শুনতে। মায়ের কোলে মাথা রেখে কিছুক্ষন শুয়ে থাকতে।

অফিস, বউ, কন্যা, বাজার, সংসার... এই করতে করতে আর বাবা মায়ের দিকে তাকানো হয় না। মাকে জিজ্ঞেস করা হয় না, মা তোমার বাতের বেথা কি কমেছে? অনেক পরিবারেই দেখেছি, বউ কি ভাবে, তাই ভেবেও অনেকে মমতা দেখায় না। সে জানেও  না। মা তার আশায় বসে আছে। ছেলে এসে জিজ্ঞেস করবে, মা- তোমার কিছু লাগবে? এতুকুই তো। এতো কার্পণ্য????????? 

ঘরে ফেরা মাত্র সাসুরির নামে শ্বশুরের নামে বিচার দিতে দিতে অস্থির করে ফেলান বউয়ের সংখ্যা ও সমাজে কম না। বাবা মায়ের বিরুদ্ধে মন বিষিয়ে তোলার ফল ই আজকাল প্রবীণ নিবাস।

এক চেতিয়া কাউকে দোষ দিতে চাইনা। আমি আসলেই অস্থির বোধ করছি এই সব প্রবীণ দের দেখে। বড্ড অপরাধ বোধ নিজেকে ছোট করে দিচ্ছে। আমি গুছিয়ে লিখতে পারছিনা, আমার অনুভূতি। সন্তান যত যন্ত্রণাই দেক না কেন, আমরা কি তাদের ঘর থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলি? তবে বাবা, মা কে কেন? 

মমতার এতো অভাব কেন? ভালবাসার ছড়াছড়ি চারদিকে, অথচ প্রবীণ দের জন্য একটু সহমর্মিতা। এতই অভাব????????

আমরা কেন ভুলে যাই, তারাই আমাদের মমতার বটবৃক্ষ। আমরাও প্রবীণ হব, এই কথাটা নতুন করেয়ার মনেকরিয়ে না দেই এই কুলাঙ্গার গুলোকে ...

Likes ১০ Comments
০ Share

Comments (10)

  • - টোকাই

    সন্ন্যাসীও এবার মুখ লুকিয়ে ফেলে লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননীর মতো করে
    কবির কাব্যাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখে মাথা নুইয়ে বার বার সেলাম ঠুকে।