Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নূর মোহাম্মদ নূরু

১০ বছর আগে লিখেছেন

আধুনিক সাহিত্যের জীবনমুখী কথা সািহিত্যিক কিংবদন্তিতূল্য কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


আধুনিক বাঙালা সাহিত্যের এক স্তম্ভপ্রতিম কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ শুধু উপন্যাসিক হিসেবেই নন, ছোট গল্প রচয়িতা হিসেবেও সমান কৃতিত্বের অধিকারী। তিনি অল্প বয়সেই সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ছাত্রাবস্থায় কলকাতায় তার প্রথম গল্প গ্রন্থ ‘নয়নচারা’ প্রকাশিত হয়। সমালোচকগণ এই গল্পগ্রন্থের নতুনত্ব ও স্বকীয়তা স্বীকার করেছেন। তাঁর অধিকাংশ গল্পের পটভূমি বাংলাদেশের গ্রামীন জীবন। গ্রামের সমাজ জীবনের অনাচার, নানা কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার সার্থক চিত্র অঙ্কন করেছেন তিনি তার গল্পে। সাধারণ মানুষের প্রতি আন্তরিক দরদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ভণ্ডামির ওপর দ্বিধাহীন কষাঘাত তার রচনার অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর রাতে প্যারিসের নিজস্ব ফ্ল্যাটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজ তার ৪২তম মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ ১৯২২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রাম শহরের নিকটবর্তী ষোলশহরের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ এবং মা নাসিম আরা খাতুন। ওয়ালীউল্লাহ্‌র বাবা-মার পরিবার ছিলো পূর্ব বাংলার উচ্চ-শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান ও অভিজাত পরিবারগুলোর একটি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র বাবা ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের চাকুরে। সেইসময় ব্রিটিশ ভারতের কোন সরকারি চাকুরেকে ইংরেজ সাম্রাজ্যের আত্মপক্ষ বলেই বিবেচনা করা হতো। ওয়ালিউল্লাহর আট বছর বয়সের সময় তার মাতৃবিয়োগ ঘটে। দুই বছর পর তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। বিমাতা এবং বৈমাত্রেয় দুই ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে ওয়ালিউল্লাহর বেড়ে ওঠা। বিমাতার সাথে ওয়ালীউল্লাহর সম্পর্ক ছিলো খুবই নিবিড়।
সরকারি পদস্থ কর্মকর্তার সন্তান হিসেবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র শিক্ষাজীবন কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাই ওয়ালীউল্লাহ্'র শিক্ষা জীবন কেটেছে তৎকালীন পূর্ব বাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। পিতার কর্মস্থল পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটেছে তাঁর স্কুলের। তাঁর স্কুলগুলি ছিলো মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, ঢাকা, কৃষ্ণনগর, কুড়িগ্রাম, চিনসুরা, হুগলী, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জায়গায়। বিভিন্ন স্কুল ঘুরে ১৯৩৯ সালে কুড়িগ্রাম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।

১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন ওয়ালীউল্লাহ্। ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ডিসটিংশনসহ বি.এ. পাশ করেন। তখন ওয়ালীউল্লাহ্'র পিতা ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। কিছুদিন পড়েছেন কৃষ্ণনগর কলেজেও। বি.এ. পাশ ক'রে তিনি কলকাতায় যান এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. অর্থনীতিতে ভর্তি হন। ওয়ালিউল্লাহর তেইশ বছর বয়সকালে কোলকাতায় চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান তার বাবা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ। বাবার মৃত্যুর সময় তেমন কোন সম্পদ রেখে যেতে পারেননি। তাই বাবার মৃত্যুতে ওয়ালীউল্লাহ্‌র পড়াশোনার ক্ষতি হয় এবং জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি আসে। সংসার চালানোর ভার এসে পরে তাঁর বড় ভাই নসরুল্লাহ ও ওয়ালীউল্লাহ্‌র উপর তাই তাঁর পড়াশুনার সমাপ্তি টানতে হয়। শুরু হয় কর্মজীবন।

১৯৪৫ সালে তাঁর মামা খান সিরাজুল ইসলামের সহায়তায় ওয়ালীউল্লাহ্ কলকাতায় কমরেড পাবলিসার্স নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা চালু করেন। সে বৎসরই ভারতের ইংরেজী দৈনিক 'Statesman' পত্রিকায় সাব এডিটর হিসেবে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাজগতে প্রবেশ করেন। তারপর ১৯৪৭ সালে আগস্টে পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক হয়ে ঢাকায় আসেন। এরপর ১৯৫১ সালে দিল্লীতে পাকিস্তানি মিশনে। ১৯৫২ সালে দিল্লী থেকে বদলি হয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়াতে। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত দুই বৎসর অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। তারপর আবার আসেন ঢাকার আঞ্চলিক তথ্য দপ্তরে। ১৯৫৫ সালে ওয়ালীউল্লাহ আবার করাচি তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হন। ১৯৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তথ্য পরিচালক রূপে জাকার্তায় প্রেরণ করা হয় তাঁকে। দেড় বছর তিনি সেখানে পরিচালক পদে ছিলেন। দেড় বছর পর তাঁর পদটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় সেক্রেটারির পদমর্যাদায় ওয়ালীউল্লাহ্-কে জাকার্তার দূতাবাসে প্রেস এটাচি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৫৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাকার্তায়ই ছিলেন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। সেখান থেকে পুনরায় করাচি আসেন। সেখানে ১৯৫৯ সালের মে মাস পর্যন্ত তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের ও.এস.ডি. (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) থাকার পর তাঁকে লন্ডনে অস্থায়ীভাবে প্রেস এটাচি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই সময় তাঁর দায়িত্বকাল ছিলো ১৯৫৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। অক্টোবরেই আবার বদলি হয় তাঁর। এবার চলে যান পশ্চিম জার্মানির বন-এ। সেখানেই পদোন্নতি হয় তাঁর ফার্স্ট সেক্রেটারি পোস্টে। সেখানে ফার্স্ট সেক্রেটারির পদমর্যাদায় ছিলেন ১৯৬১ সালের মার্চ পর্যন্ত। এপ্রিলে চলে আসেন প্যারিসে। সেখানে ১৯৬৭ সালের আগস্টে ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। এই পদে ছিলেন ১৯৭০ সালের শেষ দিন পর্যন্ত। তারপর তাঁর পদের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পাকিস্তান সরকার ওয়ালীউল্লাহ্-কে ইসলামাবাদে বদলির প্রস্তাব করে, কিন্তু রাজি না হওয়ায় মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চাকরি ছাড়া জীবন-যাপন করেন প্যারিসেই।

চাকরি সূত্রে যাওয়া ফ্রান্সেই ফরাসি দূতাবাসের কর্মকর্তা এ্যান মারির সাথে পরিচয় ঘটে ওয়ালীউল্লাহ্‌র। গড়ে উঠে হৃদ্যতাও। বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলেও তিনি কুটনৈতিক হওয়ায় রাষ্ট্র তাঁকে বিদেশী নাগরিক বিয়ে করার অনুমতি দেয় না। তাই পুনরায় বদলি হতে হয় তাঁকে। করাচিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে এলে এ্যান মারি তিবোও প্যারিস থেকে চলে আসে করাচি। সেখানেই ১৯৫৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয় ইসলামী ধর্মমতে। এসময় ধর্মান্তরিত হন এ্যান মারি। তাঁর নাম রাখা হয় আজিজা মোসাম্মৎ নাসরিন। তবে ব্যাক্তি এ্যান মারি ঐ কাবিন নামা পর্যন্তই মুসলিম ছিলেন। ধর্ম কোন বড় বিষয় হতে পারেনি তাঁদের সংসারে। ব্যক্তিগতভাবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাই ধর্মান্ধতাকে তিনি ঘৃণা করতেন চরমভাবে। নিজের সংসারের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সাংসারিক জীবনে ওয়ালীউল্লাহ্ ছিলেন দুই সন্তানের জনক। প্রথম সন্তান কন্যা- সিমিন ওয়ালীউল্লাহ্ এবং দ্বিতীয় সন্তান পুত্র- ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ্।

শৈশব থেকে শুরু করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে তাঁর বড়ো মামা খানবাহাদুর সিরাজুল ইসলামের সান্নিধ্যে। তাঁর সাহিত্য জীবনের শুরুর প্রেরণা তিনি এই মামার কাছ থেকে পেয়েছেন। ছাত্রাজীবনে তিনি একাধিক মাসিকপত্রে লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। সাহিত্য সাধনায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ছিলেন সিরিয়াস ধরনের একজন লেখক। জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উত্তরসূরী এই কথাসাহিত্যিক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করলেও বিষয়, কাঠামো ও ভাষা-ভঙ্গীতে নুতন এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন। তাঁর রচিত গল্পের মধ্যেঃ ‘নয়নচারা’, ‘না কান্দে বুবু’, ‘শত্র“ নাই’, ‘একটা তুলসী গাছের কাহিনী’, ‘পাগড়ি’ প্রভৃতি একজন প্রথম শ্রেণীর গল্পকার হিসেবে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ প্রথম উপন্যাস 'লালসালু'। বাংলা কথাসাহিত্যে লালসালু একটি প্রথাবিরোধী উপন্যাস। মূলত গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদানরূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির মূল বিষয়। ধর্মকে যারা স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে বা শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, লালসালু উপন্যাসে সেই ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে মজিদ নামক চরিত্রের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষের যে ব্যক্তিগত লড়াই এবং তার অস্তিত্বের জন্য বা টিকে থাকার জন্য তার যে নিরন্তর সংগ্রাম; সেটিকেও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার উপন্যাসে অত্যন্ত জোরালোভাবে নিয়ে এসেছেন। পীরের বাড়িতে একটা মেয়ের স্বাভাবিকভাবে পর্দানশিন থাকার কথা। যেমনটা দেখা গেছে, প্রথম বউ রহিমার ক্ষেত্রে। স্বামী মজিদের প্রতিটি কথা তার কাছে অবশ্য পালনীয়। কোথাও কোনো নড়চড় নেই। মজিদের কোনো ধূর্ততা, শঠতা, ভণ্ডামি কোনোটাই তার চোখে পড়ে না। অন্যদিকে জমিলা একেবারেই উল্টো পথে চলে। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে, দ্বিতীয় প্রকাশকাল ১৯৬০। এর পটভূমি ১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ হলেও এর প্রভাব বা বিস্তার কালোত্তীর্ণ । উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৪৮ সাল। এটি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রথম উপন্যাস। এটি পরে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। 'লালসালু'র ইংরেজি অনুবাদ 'Tree Without Roots' । ২০০১ সালে তানভীর মোকাম্মেল-এর পরিচালনায় উপন্যাসটি চলচ্চিত্ররূপ লাভ করে। প্রধান চরিত্র: মজিদ, খালেক ব্যাপারী, জমিলা, রহিমা, হাসুনীর মা, আক্কাস। ছবিটি একাধিক জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। উপন্যাসের মতো চলচ্চিত্রেও মাজার চিত্রিত হয়ে প্রচন্ড শক্তিশালী রূপে- যা একই সাথে মজিদের ক্ষমতার উৎস এবং ধর্মভীরু গ্রামবাসীর সকল মুসকিল আসানের প্রতীক।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র আরেকটি বিশেষ গুণ ছিলো তিনি ভাল ছবি আঁকতেন। সাহিত্যের প্রতি যেমন তিনি শৈশব থেকে আগ্রহী ছিলেন, তেমনি স্কুলে পড়ার সময় থেকে ছবি আঁকা বা চিত্রশিল্পের দিকেও আগ্রহী ছিলেন। স্কুলের হাতে লেখা ম্যাগাজিন 'ভোরের আলো'র সমস্ত অলংকরণ ও অঙ্গসজ্জা তিনি নিজের হাতে করেছেন। অল্প বয়সেই সাহিত্যিক খ্যাতি না পেলে হয়তো তিনি চিত্রশিল্পীই হতেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ও পটুয়া কামরুল হাসানের সাথে সখ্য গড়ে উঠে তাঁর চিত্রশিল্পের আগ্রহের কারণেই। ওয়ালীউল্লাহ্ বেশ কিছু ছবিও এঁকেছেন। কিন্তু বিভিন্নজনের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার ফলে তাঁর ছবির কোন প্রদর্শনী হয় নি। চিত্রশিল্পী হিসেবে ওয়ালীউল্লাহ্‌র সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো তিনি তাঁর বেশ কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নিজেই এঁকেছেন। যেসব বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজে এঁকেছেন সেগুলো হলো- 'চাঁদের অমাবস্যা' (১৯৬৪), 'দুইতীর ও অন্যান্য গল্প' (১৯৬৫), 'কাঁদো নদী কাঁদো' (১৯৬৮), 'লালসালু'র ইংরেজি অনুবাদ 'Tree Without Roots'- এর প্রচ্ছদও তিনি নিজে এঁকেছেন। শৈশবে ছবি আঁকার স্বীকৃতি স্বরূপ পুরষ্কারও পেয়েছেন তিনি। ওয়ালীউল্লাহ্‌র আরও একটি দুর্লভ গুণ হলো- তিনি ভালো কাঠ খোদাই ও ভালো ছুতোর মিস্ত্রির কাজ জানতেন। নিজের ঘরদোরের টুকিটাকি আসবাবপত্র তিনি নিজের হাতে বানাতেন। জীবনকে, জীবনের পরিবেশকে, যতটা সম্ভব শিল্পিত করার প্রয়াসই ছিলো ওয়ালীউল্লাহ্‌র একমাত্র সাধনা।

সাহিত্যে তার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৫৫ সালে ঢাকায় পি.ই.এন ক্লাবের উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন 'বহিপীর' নাটকের জন্য তিনি পি.ই.এন পুরস্কার পান। এছাড়া ১৯৬১ সালে উপন্যাসে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৫ সালে 'দুই তীর ও অন্যান্য গল্প'-এর জন্য আদমজী পুরস্কার এবং ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রাজনীতিসম্পৃক্ত মানুষ ছিলেন না, কিন্তু সমাজ ও রাজনীতিসচেতন ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চাকরিহীন, বেকার। তা সত্ত্বেও বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করেছেন, সঙ্গতিতে যতোটুকু কুলোয় তদনুযায়ী টাকা পাঠিয়েছেন কোলকাতায় মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে।

অত্যন্ত অকালে প্রয়াত হন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে, ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ-জনিত কারণে প্যারিসে নিজস্ব ফ্ল্যাটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার সন্তানদের ধারণা, তাদের পিতার অকাল মৃত্যুর একটি কারণ দেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা, আশঙ্কা ও হতাশা। তিনি যে স্বাধীন মাতৃভূমি দেখে যেতে পারেননি সে বেদনা তার ঘনিষ্ঠ মহলের সকলেই বোধ করেছেন।

জীবনমুখী কথা সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ৪২তম মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

Likes Comments
০ Share

Comments (3)

  • - Developer

    comment

    • - আহমেদ রব্বানী