Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা

১০ বছর আগে লিখেছেন

ইতিহাসের উপেক্ষিতাঃ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারি রবিপত্নী মৃণালিনী

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাত্রী নির্বাচন। রবির মতো গুণবান, রূপবান,ভাগ্যবান, ধনবান এবং খ্যাতিমান বিলেত ফেরত তেইশ বছরের যুবকের জীবনে এমন একজনের দরকার যিনি দেহসৌন্দর্যে আন্না তড়খড় বা লুসি স্কট, এবং মানসপ্রবণতায় হবেন কাদম্বরী দেবী বা ইন্দিরা। বাংলাদেশের খুলনা (তৎকালিন যশোর) জেলার দক্ষিণডিহি-ফুলতলা গ্রামের শুকদেবের বংশধর- ঠাকুর এসটেটস্ এর দরিদ্র কর্মচারি বেণীমাধব রায় চৌধুরীর ন বছর ন মাসের মেয়ে ভবতারিনী রায়চৌধুরীকে রবির পাত্রীরূপে নির্বাচন করা হলো। ভবতারিনী দেখতে যেমন সুন্দরী ছিলেন না তেমনি অল্পশিক্ষিত। অনেকে অবাক হয়েছেন। কারণ এ ভবতারিনীর মধ্যে আন্না তড়খড় বা লুসি স্কটদের কিংবা কাদম্বরী দেবী বা ইন্দিরার কিছুই ছিলো না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিনাবাক্যে রবীন্দ্রনাথ পত্নী হিসেবে বরণ করে নিলেন ভবতারিনীকে। বিবাহের মন্ত্রপাঠের পর অবশ্য পদবীর সাথে সাথে নামও পাল্টে বদলে শ্রীমতী মৃণালিনী ঠাকুর করা হয়েছিলো। বোধ হয় রবির সাথে মিলিয়ে এ নাম দেয়া হয়েছে। সবার ধারণা ছিলো উভয়ের যেমন বয়সের ব্যবধান বেশী তেমনি মানসসাম্রাজ্যের দুরত্ব বিস্তর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে অসাধারণ সব গুণাবলী দিয়ে এ শারিরিক এবং মানসিক ব্যবধান কমিয়ে এনে মৃণালিনী কেবল রবীন্দ্রনাথের যথার্থ সহধর্মীনি নয় যথার্থ সহকর্মি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। মৃণালিনী পতিদেবের বৃহত্তম স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে তা প্রমান করেছেন। একটি উৎকৃষ্ট স্মারক শান্তি নিকেতনের আশ্রম-বিদ্যালয় যা আজকের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

মৃণালিনী ররীন্দ্রনাথকে পতিদেবতারূপে পেয়েছিলেন- নিজের পাঁচটি সন্তানের জনকরূপে পেয়েছিলেন- ঠাকুরবাড়ির কনিষ্ঠ সন্তানরূপে পেয়েছিলেন; পেয়েছিলেন “বঙ্গদর্শনের সম্পাদক, ব্রাহ্মসমাজের কর্তৃপক্ষ, পেয়েছিলেন খ্যাতিমান রবি ঠাকুরকে। বিবিধ বিপুল ভারাক্রান্ত রবীন্দ্রনাথ মৃণালিনীকে খুব বেশী সময় দিতে পারতেন না বলে অভিমান ছিলো কিন্তু অভিযোগ ছিলো বলে মনে হয়না। গাজিপুরের নিভৃত নিবাসে, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে কাটানোর পর মৃণালিনীর জীবনের শেষের তিন বছর তিন মাস বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৩০৭ চৈত্র(১৯০১) পর্যন্ত শিলাইদহে কাটিয়ে মৃণালিনী চলে আসেন কলিকাতায় এবং শান্তিনিকেতনে। ১৩০৮ সালে দুই মাসের মধ্যেই দুই মেয়ে বেলা এবং রেণুকার বিয়ে হয়ে যায়। একই সাথে স্থাপিত হয় “ব্রহ্মাচর্যাশ্রম”। এ আশ্রম বা বিদ্যাপীঠটি গড়ে তোলার কাজে কবির পাশাপাশি মৃণালিনীর ভূমিকা ছিলো অসামান্য। মৃণালিনীর শারিরিক, মানসিক এবং আর্থিক সহায়তা ব্যতিত এ আশ্রম টিকে থাকতো না তা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়। পুত্র রথীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতি কথায় লিখেছেন, “—কলকাতা ছেড়ে শান্তিনিকেতনে এসে থাকা তাঁর পক্ষে আনন্দকর হয় নি। অস্থায়ীভাবে অতিথিশালায় কয়েকটা ঘরে বাস করতে হল, সেখানে গুছিয়ে সংসার পাতার উপায় ছিলো না। কিন্তু নিজের পক্ষে সেটা সম্ভব যতই কষ্টকর হোক, তিনি সব অসুবিধা হাসিমুখে মেনে নিয়ে ইস্কুলের কাজে বাবাকে প্রফুল্লচিত্তে সহযোগিতা করতে লাগলেন।তার জন্য তাকেঁ কম ত্যাগ স্বীকার করতে হয় নি।” শান্তিনিকেতনের আশ্রম বা আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক খরচ যোগাড় করতেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর যা-কিছু মূল্যবান সব বিক্রি করে দিয়েছেন। এক সময় ঋণে ঋণে জর্জরিত হয়ে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। চারিদিক থেকে এমনকি ঠাকুর পরিবারের সবাই রবিকে কান্ডজ্ঞানহীন অবিবেচক মনে করতেন। অবস্থা এতই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে, ইস্কুল বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম- “চারিদিকে ঋণ বেড়েই চলেছে, ঘর থেকে খাইয়ে-পরিয়ে ছেলে যোগাড় করেছি, কেউ ছেলে তো দিবেই না-গাড়ি ভাড়া করে অন্যকে বারণ করে দিয়ে আসবে।” (মংপুতে রবীন্দ্রনাথঃ মৈত্রেয়ী দেবী) শান্তি নিকেতনের ইস্কুলের ব্যাপারে পরিবারের সাথে সাথে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো। কবিগুরু অত্যন্ত দুঃখ করেই বলে ছিলেন, “ এর রকম সাহাযই স্বদেশবাসীর কাছ থেকে পেয়েছি। একটির পর একটি মৃত্যুশোক, সে দুঃখের ইতিহাস সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে গেছে। লোকে জানে উনি শৌখীন বড়োলোক। সর্ম্পূর্ণ নিঃসম্বল হয়েছিলুম। আমার সংসারে কিছুমাত্র বাবুয়ানা ছিল না।” (প্রাগুক্ত) বলতে গেলে পারিবারিক, সামাজিক এবং আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে ইস্কুল চালানো অসম্ভব হয়ে যায়। ঠাকুরাড়ির ভর্ৎসনা বিরূপ পরিবেশে পতিদেবের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে এলেন মৃণালিনী। ঠাকুর বাড়ির ছোট বৌ এর বিয়ের যৌতুক ছাড়াও শাশুড়ির প্রচুর গয়না পেয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের খরচ যোগাতে সব শেষ হয়ে গেল। আগেই বলেছি পরিবার এবং সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেদিন মৃণালিনী অলংকার বিক্রয় করে শান্তি নিকেতনের ইস্কুল পরিচালনার খরচ অব্যাহত না রাখলে কেবল ইস্কুল বন্ধ হতো তা নয় সাথে ঋণের বিরাট ভার কবিগুরুকে বহন করতে হতো ।

প্রথমে আশ্রম বা বিদ্যালয়ে ছাত্রের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫ জন কারণ তৎকালিন সমাজে মা-বাবা যতই দরিদ্র হোক তাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের দৃষ্টির বাইরে যেতে দিতেন না। মৃণালিনী দুরদর্শীতার কারণে বুঝতে পেরেছিলেন কেবল টাকা দিয়ে মানুষগড়ার বিদ্যাপীঠ হয় না। দরকার অনেক কিছুই। তাই রবীন্দ্রনাথের সাথে সহকর্মি হিসেবে ছাত্রদের সার্বিক তত্ত্ববধানের কাজ নিজের হাতে তুলে নিলেন। তাদের খাওয়ার ও জলখাবারের ভার মৃণালিনী দেবী নিজ হাতে করতেন। ছেলেরা ঘর ছেড়ে এসে ঘর পেত, মাতৃস্নেহ পেত, রোগে সেবাযত্ন পেত, আর সুখে-দুঃখে সহানুভূতি পেত। এভাবে ঘরছাড়া ছেলেরা চরম মাতৃস্নেহে পেয়ে মায়ের অভার অনেকটা পূরণ করতে পারতো।(কবিপ্রিয়াঃ উর্মিলা দেবী) উল্লেখ্য যে, রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠা কন্যা মীরা এবং কনিষ্ঠপুত্র শমীন্দ্রনাথ তখন শিশু। মা মৃণালিনীই এ শিশুদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। মা হিসেবে মৃণালিনী সন্তানদের দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করেই স্বামীর আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য সব অসুবিধা এবং কষ্ট হাসিমুখে বরণ করেছিলেন। বিদ্যালয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেই মৃণালিনী   দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে এ্যালোপ্যাথ আর হোমিওপ্যাথ কোনটিই মৃণালিনীকে সারিয়ে তুলতে পারলো না। মাত্র ২৯ বছর বয়সে মৃণালিনী মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের যশোরের সেই দরিদ্র পরিবারের অল্পশিক্ষিত সাদামাটা মৃণালিনীর আর্থিক, শারিরিক এবং মনস্তাত্বিক সহায়তা ছাড়া শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়টি আজ এ পর্যায়ে আসতে পারতো কিনা সমাজচিন্তকরাই ভালো জানেন। জানতাম শান্তিনিকেতনের একটি শিশুবিদ্যাপীঠ এবং হোস্টেলের নামের সাথে তাঁর নাম জড়িত ছিলো। কিন্তু আজ ইতিহাসের কোথাও ভবতারিনী বা মৃণালিনীর নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে,   বিশ্বভারতীর অফিশিয়াল ওয়েভ সাইটে  অবদানের জন্য অনেকের নাম লেখা হয়েছে, একমাত্র ভবতারিনীর নাম ছাড়া।

Likes ৪২ Comments
০ Share

Comments (42)

  • - ধ্রুব তারা

    • - নাজনীন পলি

      ইমোর অর্থ বুঝতে পারছিনা । 

    - রুদ্র আমিন

    আমার লেখা একটি কবিতার শেষের কিছু অংশ শেয়ার করলাম। সম্পূর্ণ লেখা এখানে

    দোষ কিন্তু একার নয়, একহাতে তালি বাজেঁ না আপু। ভুল বললে ক্ষমা করবেন। জীবনের হাজারও রং

     

    সারাদিন ছুটো ছুটি সংসারের তাগিদে
    ঘরে এসে বিতৃষ্ণা ঘরনীর অভিযোগে,
    কে বড় কে ছোট ভাবে না কোন কিছু
    কিভাবে একা খাবে স্বামীর টাকা ? ব্যাংক যেন আজ তার বাবা।

     

    অশান্তির সংসার কুলহীন ভাবনায়
    কলুর বলদ সেজেও একত্রিত থাকা দায়,
    ভালোবাসায় জীবনটা যদি পার করা যেত
    বেহেশত এর চেয়ে বেশি সুখ সংসার জীবনে।

    • - নাজনীন পলি

       সব পুরুষেরা তো আর একই রকম না এটা আমিও জানি । তবে কেউ কেউ আছেন যাদেরকে উদ্দেশ্য করে আমার এই লেখা ।

    - নীল সাধু

    শুভেচ্ছা পলি।

    লেখাটি পড়েছি। লেখাটি একপেশে মনে হতে পারতো কিন্তু তা হয়নি কারণ লেখাটি সকল পুরুষকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি। শুধু মাত্র কিছু পুরুষ পোষ্টের শুরুতেই (সেই সব পুরুষদেরকে বলছি ..........) বলায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। যাইহোক আমরা চাইলে শুদ্ধ সুন্দর হতে পারি তেমনি হতে পারি তার উলটো। এটা নীর্ভ্র করে ব্যক্তিবিশেষের উপর -

    ধন্যবাদ

     

     

    • - নাজনীন পলি

      সবাই কখনোই একই রকম না , তাহলে এই পৃথিবীটা এত দিনে ধ্বংস হয়ে যেত । 

    Load more comments...