সেদিন সম্ভবত বৃষ্টির রাত ছিলো
বাইরে মেঘের গর্জন শুনছিলাম
হয়ত ঝড়ো হাওয়াও বইছিলো…
কিন্তু সব উৎকন্ঠার পরও
আমার ছোট্ট মামনিটার চেহারাই ভেসে উঠছিলো বার বার
ঝড়ের দিনে ও খুব কুঁকড়িয়ে
আমার বুকে না থাকলে ঘুমোতে পারেনা
ও তখনও বুকের দুধ খায়
যখন একটা করে মেঘের গর্জন দেয়
আমি আমার খুকিটার চিন্তায়ই বিদ্ধস্থ্য হই
বুকটা ফেটে কান্না আসছে
চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে
এর সাথে চলছে আমার বস্ত্র হরন
আমাকে উদাম করা হয়েছে
আমি দিক বিদিগ হয়ে আমার খুকীর মুখে আবৃত
তখন আমাকে নিয়ে তাদের উলঙ্গ নৃত্য
আমি বুঝিনি সেদিন
মানব নাকি পশু ছিলাম অথবা কোন ব্যবহার্য্ বস্তু
সারা রাত ধরে দেহ অর্পণ…!
আসলে কি অর্পন না সমর্পণ বুঝিনি
রক্ত ঝরেছে সারা শরীর থেকে
নাকের দুল টেনে খুলেছে,
আমার চোখের জলকে
তারা তাদের পৌরষত্বকে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে
আমি যত বার চিৎকার করেছি তারা ততবার
হুংকার ছেড়ে বীর্জের স্থলন করেছে…!
নষ্ট, ভ্রষ্ঠ চেহারা করে ভোরের সূর্যদয়ের সময়
আস্তাকুড়ে আমাকে ফেলেছে…!
জাগ্রত হয়ে যখন দেখেছি দিনের আলো
সাদা শাড়ীতে লাল রংয়ে খুজেঁছি মুক্তির ঝলকানো
আমার উপরে নীল আকাশ আছে
মেঘের পরেই বোধ হয় সূর্যটা উঠেছে
তাপও অনেক বেশী
আমার খুকীটা বুকে নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা হয়নি আমার
ও বোধ হয় চিৎকারে ফেটে পড়েছে…!
আমি অক্ষম হয়েও ঢল ঢল ভাবে হাঁটার চেষ্টায় মশগুল
তার সকালের মুখটা দেখবো বলে….
ঐতো বাড়ি দেখা যাচ্ছে
এ মেঠো পথটা আমার খুব চেনা
খুকীর বাবা সকালে সারারাত ধরে নৌকা চালিয়ে
এ পথ ধরেই আসতো…
তার অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে কত রাত যে নির্ঘুম কাটিয়েছি
হ্যা, ঐতো আমার সোনা বাবুটা
কাঁদতে কাঁদতে তার সারা মুখ কালচে বর্ণ ধারন করেছে
আমি উঠোনে যেতেই চিৎকার দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরা
দুধের গন্ধ নেওয়ার জন্য তার আকুতি
আমার বুকের পাজর গুলোকে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে বার বার
আজ আমার স্তনগুলো দুধে ফুলে নেই
ক্ষত বিক্ষত মাতৃ স্তন আমি তার তৃষ্ঞা মেটানোর মত রাখতে পারিনি…
তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি সেদিন
তাকে বোঝাতে পারিনি কি হয়েছিলো
রাতে মেঘের গর্জনের সময় আমার,
তাকে শোনাতে পারিনি আমি আমার পরাজয়ের, নিঃশ্বেষের কথাগুলো
অক্ষমভাবে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে
সেই যে নিশ্চুপ অবস্থান আমার
আজো বয়ে বেড়াচ্ছি এক বুক জ্বালা আর গর্ব নিয়ে
আমি স্বাধীনতার অংশীদার বীরাঙ্গণা মাতা হয়ে….
সাঈদ চৌধুরী ( ছবি: সংগৃহীত)