আমার নানুর ছোট বোনের বাসা কল্যাণপুর।অনেক অনেক বছর আগেই বাড়িসহ এই জায়গা কিনেছিল আমার কল্যানপুরের নানু। আমাদের আত্মীয় স্বজনের বেশির ভাগ, যারা ঢাকাতে পড়াশুনা করেছেন, সবাই মোটামোটি এই কল্যানপুরের বাড়িতে থেকেই পড়াশুনা করেছেন।
ঘরের সামনে বিশাল বড় উঠান, আম গাছ, নারিকেল গাছ, মেহেদি গাছ, কাঁঠাল গাছ, সুপারি গাছ, পেয়ারা গাছ সহ আরও অনেক রকম গাছ। গেইট দিয়ে এই বাড়িতে গেলেই মন ভালো হয়ে যেত এই ভেবে যে, ঢাকার মত জায়গায় আমরা উঠানে দাঁড়িয়ে গল্প করতে পারি, গাছের পেয়ারা খেতে পারি, ছোট বাচ্চারা উঠানের মাটি নিয়ে খেলতে পারে।
আমার সাথে নানুর আবার খুব ভাল সম্পর্ক। উনি সময় পেলেই রিক্সা করে আমার বাসায় চলে আসতেন সারাদিনের জন্য। আমরাও যেতাম প্রায়ি।নানুর ছেলে একটাই,বিদেশেই পড়াশুনা করেন। আমি বাসায় গেলেই নানু রান্নাঘরে ছুটেন আর নানা দোকানে। বাসায় কিছু করে খাওয়ানোর মত কোন মানুষ নেই, নানুর হাতের চা আর নানা দোকান থেকে যা আনেন তা খেয়েই চলে আসতাম।
দেশ বিদেশের প্যাচে পড়ে অনেক বছর যাওয়া হয়না কল্যানপুর, নানুর বাসায়। কিন্তু ফোনে খোঁজ রাখি। দেশে এসে এত ব্যস্ত সময় যাচ্ছে যে কোন ভাবেই সময় করতে পারিনা কল্যানপুর যেতে। নানু ফোন করে আর রাগ করে বলে ‘’ কিরে তোদের কি একটু ও সময় হয়না আমাকে দেখে যেতে, আমি এখন অনেক অসুস্থ, রিক্সায় উঠতে পারিনা, কোথাও একা যেতে পারিনা, তুই জামাইকে নিয়ে আয়, তোদের একটু দেখি’’।
আজ ভাবলাম যেভাবেই হোক যাবই নানুর বাসায়। আজকে নানুর বাসার গেইট দিয়ে যখন ঢুকলাম দেখি পুরো বাড়িতেই অযত্নের ছাপ। উঠানে দাঁড়ানোর কোন উপায় নেই, অনেক হাবিজাবি ঘাসে ভরে আছে।ঘরের দরজা খোলাই ছিল, ভেতরে অন্ধকারে নানু শুয়ে আছে। আমি বললাম ‘’নানু লাইট অন করেন’’। নানু বলে আমি তো বিছানা থেকে একা উঠতে পারিনা যে উঠে লাইট অন করব। কাজের লোক সময়ে সময়ে এসে আমাকে ধরে উঠায়। নানাও অসুস্থ তাই ডাক্তার দেখাতে গেল। সমস্ত ঘর অগুছানো।
নানুর ঘরবাড়ি আর নানুর এই অসহায় অবস্থা দেখে মনের ভেতর খুব ধাক্কা লাগলো। মনে হতে লাগলো যে, এক সময় তো আমিও নানুর বয়সে এসে পৌঁছবো, তখন জীবন কি ঠিক এই পর্যায়েই আসবে।ছেলে, অর্থ বিত্ত থাকার পরও একটা সময়ে এসে আমরা কত অসহায়।
Comments (5)
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। প্রিয় সাহিত্যিকের জন্য ভালোবাসা।
ভালো থাকবেন।
অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে এমন একটা লেখা শেয়ার করার জন্য। অনেক ভাল লাগল, অনেক বিষয় জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ।
ভাল লেগেছে আপনার পোষ্ট।