Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেরিফ আল সায়ার

১০ বছর আগে লিখেছেন

হাল্কা প্রেমের গল্প

রাত হয়েছে। হিম শীতল হাওয়াতে জড়িয়ে যায় সাবেত। কিছুক্ষণ পরপর গাড়ির হর্নের আওয়াজ আসে। খুব জোরে নয়। মনে হয় আওয়াজগুলো খুব চুপে চুপে রাতের নিরবতা ভেদ করে এগিয়ে আসে। কিংবা আওয়াজটা সাবেতের কাছ হয়ে আরও দূরে গিয়ে হারিয়ে যায়।

সাবেতের হাতে সিগারেট। ধোঁয়া উড়ে। ধোঁয়াও হারিয়ে যায় বাতাসে।

বিষাক্ত ধোঁয়া কি বাতাসে চিরকাল থেকে যায়? এমন প্রশ্ন হুট করেই তার মনে আসে। সে ভাবে; আর সিগারেটে ফু-লাগায়। ধোঁয়া আবার বের হয়। আবার হারিয়ে যায়। ধোঁয়ার সাথে বাতাসের খেলা। মজা লাগে।

এমনই খেলা সে শুরু করেছিল মাসখানেক আগে। বন্ধুদের সাথে খেলা। অফিসে নতুন জয়েন করা সিনিয়র ম্যানেজার ম্যাডামের সাথে খেলা।

ম্যাডাম দেখতে সুন্দর না। চেহারাতে বয়সের ছাপ আছে। বয়স হবে ৩৫ কিংবা ৩৬।ম্যাডাম খুব স্মার্ট। কথা বলার ভঙ্গিটা খুব সুন্দর। মায়া লাগে।

সেই মায়া লাগা থেকেই সাবেত তার কলিগদের বলত, ম্যাডাম কত্ত সুন্দর করে কথা বলে দেখেছেন? কলিগরা শুরুতে হাসতো।

এই ভালো লাগা থেকে সাবেত ম্যাডামের ঘনিষ্ঠ হতে চায়। চায়, ম্যাডামের সাথে তার ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠুক। উঠেছেও। ম্যাডাম যে কোন কাজে সাবেতকে আগে ডাকে। এই তো সেদিন, চিটাগাং-এ কয়েকজন বিদেশীদের সাথে মিটিং ছিল। হিসেব অনুযায়ী ম্যাডামের অ্যাসিসটেন্ট যাওয়ার কথা। কিন্তু ম্যাডাম হিসেবটাকে পাল্টে বলেছে, ঐ মিটিংয়ে যাবে আমাদের সাবেত। কারণ ফরেনারদের সাথে মিটিং। ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করতে হবে। কথাবর্তা- ব্যবহারের দিক থেকে সাবেত অনেক মার্জিত। তাই সাবেতই যাক।

এইটা শুনে সাবেতের খুব ভালো লাগছিল। ম্যাডামকে গিয়ে বলেছিল, ম্যাডাম আপনাকে ধন্যবাদ। ম্যাডাম মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে- ইউ ডিসার্ভ ইট।

অফিসের সবাই ম্যাডামকে বলে- সাবেতের বউ। সাবেতও দুষ্টুমীতে অংশ নিতো। কলিগদের মজা নেয়াটাও সাবেতের খুব ভালো লাগতো।

ম্যাডাম খুব একটা সাজে না। একদিন লাল শাড়ী পরে এসেছিল। সেদিন সাবেত ম্যাডামের জন্য একটা লাল গোলাপ কিনে আনলো। ফুলটি পকেটে নিয়ে ম্যাডামের রুমে ঢুকলো।
ম্যাডাম বলল, কিছু বলবে সাবেত?
সাবেত বলে, ম্যাডাম আপনি কিছু মনে না করলে একট কথা বলব।
ম্যাডাম হাসতে হাসতে বলে, শিউর,বলো।
সাবেত বলে, ম্যাডাম আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে। একটা তাজা লাল গোলাপ মনে হচ্ছে।
ম্যাডাম শুনেই হেসে দিলো। বলল- থ্যাংক ইউ।

সাবেত এবার পকেট থেকে গোলাপটা বের করে বলে, আপনাকে একটা গোলাপ দিতে চাই।
ম্যাডাম এবার যেনো একটু বিব্রতবোধ করলো। এদিক-সেদিক তাকালো। তারপর বলল- আহা এটার তো দরকার ছিল না। যাইহোক। আবারও ধন্যবাদ।

ম্যাডামের সাথে এভাবে সাবেত আটকে যাচ্ছিল। সাবেত প্রেমে পড়েছে বহুবার। কখনও কাছের কোন বান্ধবীর প্রেমে। কখনও নিকট খালাতো বোনের প্রেমে।

কিন্তু প্রেম করাটা হয়ে উঠেনি। পড়েছে মাত্র। এইবার কেন যেনো মনে হচ্ছে সে ফাঁদে পড়ে গেছে। ম্যাডামকে না দেখলে সাবেতের সেদিন কষ্টে বুকটা খা খা করে। মনে হয় মরুভুমির মতো শুকিয়ে রয়েছে তার অন্তর।

এই প্রেমে পড়ার বিষয়টা সাবেত প্রথম আবিস্কার করে যখন কলিগরা একদিন ম্যাডামের শরীর নিয়ে আলাপ করছিল। সেদিন রাগে সাবেতের সারা গায়ে মনে হচ্ছিল কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু সে কিছুই বলতে পারেনি। তারপরও মাঝে মাঝে ম্যাডামের শরীরের দিকে চোখ যায় সাবেতের। মোলায়েম চোখে। ভালোবাসার চোখে।

কখনও ম্যাডামের চোখের দিকে। কখনও পেটের দিকে। কখনও অব্যবহৃত স্তনের দিকে। হুম। অব্যবহৃত। ম্যাডামের বিয়ে হয়নি। সাবেত একদিন ম্যাডামকে বলেছিল, ম্যাডাম এখনও বিয়ে করছেন না কেন? ম্যাডাম হাসতে হাসতে বলে- কারণ বয়সকালে তোমার মতো একটা সুইট ছেলে পাইনি যে!

এইটা শুনে সাবেতের বুকে আনন্দের খেলা খেলে। অন্তরের সমস্ত ভালোবাসায় ম্যাডামকে জড়িয়ে দূরে কোন অজানায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়।

সাবেত মাঝে মাঝে ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলতে চায়- ম্যাডাম আপনাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি। আসলে বলেও ফেলেছিল। আই থিংক আই এম ইন লাভ। ম্যাডাম গম্ভীর হয়ে বসেছিল। কম্পিউটারের দিকে এক দৃষ্টিতে হয়তো সাবেতের এই বক্তবটির মর্ম খুজছিল।

সাবেত মাঝে মাঝে যমুনা নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে। ঢাকা থেকে খুব দূরে নয় যমুনা নদী। বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত গিয়ে বসে থাকে। বেশীরভাগ সময় তার বিকেলে যাওয়া হয়। সূর্যটা ডুববে ডুববে। এমন সময়ে। নদীর স্থবীরতা সাবেতের মনে হাহাকার তৈরী করে।

নদীর টান বলে একটা কথা সাবেত প্রায়ই শুনেছে। সেই টানে মাঝে মাঝে সাবেতের খুব ইচ্ছে হয় নদীতে ঝাপ দিতে। এর গভীরে কী কী রহস্য আছে তা জানতে। মেয়েদের অন্তর একটা নদীর মতোই রহস্যে ঘেরা। যে মানুষ একবার নদীতে ডুবে যাবে। সেখানে হারিয়ে যাবে। অনন্ত রহস্যে আবৃত হয়ে মরণ নিশ্চিত হয়ে যাবে।

একদিন সাবেত চিন্তা করলো আজ সে মদ খাবে নদীর পাড়ে গিয়ে। হাতে করে স্কচ নিয়ে গেলো। নদীর পাড়ে বসে বসে মদ খেতে থাকলো। হঠাৎ সে দেখলো একটা এনাকন্ডা তাকে পেচিয়ে ধরছে। তার বিশাল আকৃতির হা তার মাথার উপর। যে কোন সময়ে সেই হা-য়ের মধ্যে ঢুকে যাবে সাবেত। এরপর খুব একটা কিছু তার মনে নেই। উঠে দেখে একটা টং দোকানের বেঞ্চিতে শুয়ে আছে। বুঝতে পারলো মাতাল অবস্থায় চেতনা ওলট-পালট করে দিয়েছিল।

প্রেম সাবেতের কাছে এভাবে আসবে এমনটা সে কোনদিনও ভাবতে পারেনি। মাঝে মাঝে সে তার পুরোণ ডায়েরীটা বের করে। সেই ডায়েরীতে ম্যাডামকে নিয়ে অনেক কবিতা লেখে। একবার ম্যাডামের প্রতি তীব্র আবেগ নিয়ে সাবেত লিখেছিল- তোমার ছায়াতে পৃথিবীর সমস্ত শান্তি খুজে ফিরি/ তোমার মায়াতে আমার জীবন হয়ে উঠে অবিনশ্বর!

২.
প্রেম সাবেতকে সেই এনাকন্ডার মতো ঘিরে ধরছিল। সাবেত সেই এনাকন্ডার হা-য়ের ভেতর হয়তো ঢুকেও গিয়েছে।

সাবেতকে একদিন ম্যাডাম ডেকে পাঠায়।

ম্যাডাম বলে, সাবেত তুমি কি আজকে ফ্রি আছ?

সাবেত একটু ভেবাচেকা খেলেও হ্যা সূচক মাথা নাড়ে। ম্যাডাম বলে, তাহলে চলো তো আজকে খুব অস্থির লাগছে। একটু কোথাও ঘুরে আসি।

সেদিন ম্যাডাম টাইট শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরেছিল। কর্পোরেট কালচারে এ পোশাক কোনো ব্যপার না। মেয়েদের ক্ষেত্রে বরং ভালো। প্রমোশনটা তাড়াতাড়ি হয়। যাইহোক, ম্যাডাম গাড়ি ড্রাইভ করছিল। সাবেত পাশে।

মেয়েদের গাড়ি ড্রাইভ করতে সাবেত বহুবার দেখেছে। কিন্তু সেটা গাড়ির বাইরে থেকে। ভেতরে, পাশে বসে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এ অভিজ্ঞতা সাবেতের নেই। সে কিছুক্ষণ পর পর ম্যাডামের দিকে তাকায়।

শেষ বিকেলে ম্যাডাম সানগ্লাস পরেছে। শেষ বিকেলের রৌদ্রটা ম্যাডামের গালে এসে পড়ে। কোনো নারীর গালে শেষ বিকেলের রৌদ্র যে কতটা সুন্দর হয়ে ওঠে সেটা কেউ না দেখলে বুঝবে না।

ম্যাডাম একটা পর্যায়ে বলে, সাবেত, তুমি এতো চুপচাপ কেনো? আর ইউ আপসেট?

সাবেত বলে, নাহ্ তো ম্যাডাম। আপসেট হবো কেনো?

না মনে হচ্ছে তুমি আপসেট। ম্যাডাম আবার বলে।

সাবেত এবার হাসে। বলে, না ম্যাডাম। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনি আমার পাশে বসে আছেন।

ম্যাডাম এবার কিছুক্ষণ হাসে।

গাড়িটি ড্রাইভ করে নিয়ে যায় ম্যাডাম। যদিও সাবেত জানে না কোথায় যাওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে আশুলিয়ার দিকে কোথাও।

আশুলিয়া পার হয়ে একটি গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে ম্যাডামের গাড়ি চলে। তখন সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে। ম্যাডামের চোখে তখনও সানগ্লাস।

একটি অসাধারণ নদীর ধারে গাড়িটি থামে। এলাকার নাম সাবেত জানে না।

ম্যাডাম বলে, এই যে নদীটা দেখছো কত সুন্দর।

সাবেত মাথা নাড়ে।

এই গ্রামটার নাম আমি জানি না। তবে কেমন যেনো একা গ্রাম। দেখো আশেপাশে কোনো দোকান নেই। কোলাহল নেই। এই নদী শুধু বয়েই চলছে। কোনো নৌকা নেই। কি অদ্ভুদ। এমন গ্রাম আমি সত্যিই কখনও দেখিনি, জানো। আমি যেদিন প্রথম এখানে আসি তখন অবাক হয়ে শুধু এ গ্রাম আর এ নদীটির নিসঙ্গতা দেখেছি। আর মনে হয়েছে মানুষের জীবনও এমন নি:সঙ্গ।

সাবেত অবাক হয়ে ম্যাডামের কথাগুলো শুনছিল।

ম্যাডাম এক পর্যায়ে সাবেতকে প্রশ্ন করে, সাবেত ডু ইউ লাভ মি?

সাবেত এই অসাধারণ একটা সময়ে, বিস্ময় জাগানোর মতো জায়গায় দাড়িয়ে ভুলে যায় সব কিছু। সে শুধু মনে করতে পারে সে ম্যাডামকে ভালোবাসে। এবং সে বলে, ইয়েস্ ম্যাডাম, আই লাভ ইউ মোর দ্যান এনি থিং ইন মাই লাইফ।

ম্যাডাম একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, সাবেত। দুনিয়াটা অনেক কঠিন। তুমি অনেক সুইট। এই নদী, এই গ্রাম অনেক সুইট। বলতে পারো ফেসিনেটিং। কিন্তু পৃথিবীর বাস্তবতা অনেক ভয়াবহ। তোমরা যে অফিসে আমাকে নিয়ে দুষ্টমী করো। এই সব কথা কিন্তু তোমাদের ভেতরেরই কেউ আমাকে ইনফর্ম করে। তোমাকে আমি পছন্দ করি। এই পছন্দ করাটাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বহু লোক তোমার বিরুদ্ধে আমাকে নানা ধরনের কথা বলে। তুমি কি সেগুলো জানো?

এ ধরনের বিস্ময় জাগানো কোনো কথার সাথে সাবেতের মন মিশতে পারে না। সে ম্যাডামকে নদীর পাড়ে বিস্ময়ের চোখে শুধু দেখেই যায়।

ম্যাডাম বলে, কর্পোরেট পলিটিক্স বিষয়টা আমাদের ন্যাশনাল পলিটিক্স থেকেও খারাপ। আমরা সবাই রাজনীতিকে অপছন্দ করি। কিন্তু আমরা সবাই জীবনের কোথাও না কোথাও পলিটিক্স করেই যাই। নোংরামিটা আমরাই সবচেয়ে বেশী করি। শুধু শুধু দোষ দেই রাজনীতিবিদদের উপর। অবশ্য বাঙালীর অভ্যাসই হচ্ছে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া।

সাবেত এবার বলে, ম্যাডাম আপনি আজকে আমাকে এজন্যই এখানে ডেকেছেন?

ম্যাডাম এবার হেসে দেয়। বলে, নাহ্। এজন্য আনি নি। কোনো কারণে তোমাকে আনি নি। একা একা ঘুরতে আসবো? ভাবলাম তার থেকে তোমাকেই নিয়ে আসি।

সাবেত বলে, অফিসের এতো লোক থাকতে আপনি কেনো আমাকে চুজ করলেন?

ম্যাডাম বলে, কারণটা খুব সিম্পল। অন্য কাউকে আনলে কথাটা গোপন থাকবে না। কিন্তু তুমি বিষয়টা গোপন রাখবে। বোঝই তো। অফিসিয়াল ম্যাটার।

সাবেত আবার বলে, আপনার সম পর্যায়ে একজন পুরুষ ম্যানেজার আছেন। তার সাথেও আপনার অনেক ভালো সম্পর্ক। তাকেও আনতে পারতেন।

- হ্যা। তাও করা যেতো। কিন্তু ঐ যে। কর্পোরেট কালচার। তাকে আনলে সে এই ঘুরতে আসার বিষয়টার ফায়দা নিতে চেতো। হয়তো এই আবেগঘন মুহূর্তে আমার শরিরে হাতও দিতে চাইত।

সাবেত একটু ধীরস্থীর হয়। আস্তে আস্তে ম্যাডামের সাথে তার তর্ক করার সাহস সঞ্চারিত হয়। সে বলে, এটা আপনার ভুল ধারণাও হতে পারে। তাছাড়া আমি তো আপনার শরিরে হাত দিতে পারি!

ম্যাডাম এবার রহস্য জড়ানো হাসি দিয়ে বলে, অবশ্যই। ইউ ক্যান ডু ইট সাবেত। আই উইল এনজয়।

বলেই ম্যাডাম চিৎকার করে হাসে। হাসির শব্দ নদীর সাথে মিলিয়ে যায়। ঠান্ডা একটা বাতাস। সেই বাতাসের সাথে মিশে যায় ম্যাডামের হাসি। যে বাতাস দূর দূরান্তে হারিয়ে যাবে। মিশে যাবে সমুদ্রে। যে সমুদ্রে মানুষ হারিয়ে যায়। যে সমুদ্রের পথ নেই। ঘাট নেই। রহস্য ঘেরা।

ম্যাডাম হাসতে হাসতে বলে, সাবেত, তুমি সুইট। জেন্টাল। যাইহোক। শুনো। প্রেম বলে এ পৃথিবীতে কিছু নেই। প্রেম বিষয়টাই ফেসিনেশনের মতো। আগ্রহ কিংবা কৌতুহলের উপর প্রেম নির্ভর করে। প্রেমকে তাই কেউ ডিফাইন করতে যায় না। আমি কিন্তু ম্যারিড। অফিসে তোমরা জানো আমি বিয়ে করিনি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ম্যারিড। লাইফে এই বিয়ে জিনিসটা খুব মর্মান্তিক। মানুষ থেকে মানুষের দূরত্বটা অনেক বাড়িয়ে দেয়। কম্প্রমাইজিং করতে করতে নিজ স্বত্বা মানুষ হারিয়ে ফেলে। নিজেস্বতা বলে কিছুই থাকে না।

সাবেত একটু বাধা দিয়ে বলে, এই ভাগাভাগিটাই তো ভালোবাসা।

ম্যাডাম আবার বলে, নো। ভাগাভাগি ফর ওয়াট? কিসের জন্য ভাগাভাগি? হিজ হিজ হুজ হুজ। বিষয়টা কেনো সমাজে নেই। কেনো সংসারের জন্য আমি আমার স্বপ্নকে মেরে ফেলবো?

সাবেত আবারও বলে, আপনার বিষয়টি যদিও আমি জানি না। কিন্তু স্বপ্নকে তো সব ক্ষেত্রে মেরে ফেলতে হবে এমন কথা নেই।

ম্যাডাম বলে, আসলে তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তুমি এগুলো বুঝবে না। জীবনের কঠিন কিছু বিষয় থাকে যা মানুষ স্বীকার করতে চায় না। কারণ স্বীকার করলে সমাজের বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যেতো।

সূর্য ডুবে গেছে। নদী এখন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। আসেপাশে শুধু ঝিঝি পোকার ডাক।সেই সাথে ম্যাডামের গায়ের গন্ধটা খুব গাড়ো হয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই সাবেতের খুব ইচ্ছে হলো ম্যাডামকে একটু স্পর্শ করতে। সাহসে কুলাচ্ছে না। কিন্তু শরীর দৌড়ে ম্যাডামের বাহুতে যেতে যাচ্ছে। সাবেত শরীরটিকে ধরে রাখতে পারলো না।

নদী যেমন সমুদ্র হারিয়ে যায়। কিংবা নদী যেমন অন্ধকারে হারিয়ে যায়। ঠিক তেমনি সাবেত হারিয়ে গেলো ম্যাডামের বাহুতে।
৩.
পরদিন অফিসে যাওয়ার পর ম্যাডামের সামনে যেতে পারছিল না সাবেত। লজ্জা লাগছিল। কিংবা ভয়ও কাজ করছিল।

কিন্তু ম্যাডামের কোনো পরিবর্তন নেই। প্রতিদিনের মতই সাধারণ তার আচরণ। যে আচরণে গতকালের কোনো ছাপ নেই।

সেদিন বিকেল সাবেত আরেকটি স্কচ নিয়ে বসে সেই নদীর তীরে। যে নদীর তীরে সে ম্যাডামের দেহে হারিয়ে গিয়েছিল। সেখানে সন্ধ্যা নামতেই সাবেত অনুভব করে, জীবন ঠিক যেনো এই নদীর মতো। দিনের বেলায় তার মায়ার জালে জড়াতে পারে আর রাত্রিবেলা জীবন থাকা সত্বেও তাকে মনে হয় মৃত।

অদ্ভুদ। অদ্ভুদ জীবন। অদ্ভুদ সব কিছু। বিষন্ন সাবেতের প্রেম যেনো এই অন্ধকারেই হারিয়ে গেলো। যেভাবে সে হারিয়ে গিয়েছিল ম্যাডামের বাহুতে।

Likes Comments
০ Share

Comments (4)

  • - নীল সাধু

    সুন্দর জীবনে তারে দেখার আশায় বেলা চলে গেছে তবু দেখা মিললো না। দেখতে চাই বলেই সময়ের দিকে খেয়াল। সময় কি আরা আমার স্বপ্ন স্বাধ বোঝে ? সে চলে তার নিয়মে। তাইতো জীবন ফুরিয়ে গেলেও তারে দেখার আশ মেটে না। যদি দেখা মেলে, যদি পাই তারে - এই আশাতেই চলা!!

     

    শুভেচ্ছা মেজদা। বরাবরের মতন চমৎকার লেখা

    • - নীল সাধু

      জ্বী মেজদা গিয়েছিলাম। সেই তারিখে পাবলিক লাইব্রেরীর কোন মিলনায়তন খালি নেই। সব বুকিং দেয়া  যেহেতু আগে তকেই বুকিং দেয়া আছে তাই আপনাকে আর জ্ব৩য়ালাইনি। আমরা অন্যভাবে ভাবছি এখন। হয়তো কোণ অডিটোরিয়ামে না করে আমরা চাইনিজ বা অন্য কোণ রেস্তোরায় করবো এমন ভাবছি। আপনাকে আপডেট জানাবো। 

      লেখাটির জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা নিরন্তর 

      জয় গুরু! 

    - মেজদা

    ধন্যবাদ নীলদা। এই মাত্র পোস্ট দিলাম আর সাথে সাথে আপনার মন্তব্য---খু--ব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।

    কাল কি পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়েছিলেন? কাজ কি হয়েছে, নাহলে আমাকে বলবেন। 

    - ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী

    ভাবতে ভাবতে সময় গেল
    সময়ের কি দোষ
    যার জন্য ভাবি আমি
    সে থাকে বেহুশ রে
    কি সুন্দর রঙ্গিলা জীবন রে

    অসাধারন।মেঝদা শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা ।

    নক্ষত্রব্লগে যদি ভবিষ্যৎ এ এমন সুযোগ হয় গান শুধু পড়া নয় সুর সহকারে শুনাও যাবে।সেই অপেক্ষায়।

    • - মেজদা

      আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সুর সহ শুনাইবো। দোয়া করবেন। শুভেচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ

    Load more comments...