Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেরিফ আল সায়ার

১০ বছর আগে লিখেছেন

অসম্পূর্ণ জীবনের ছবি

এ জীবনটা কয়জন মানুষ সম্পূর্ণ করে যেতে পারে কে জানে। আজ অবধি সব মৃত্যুর মধ্যেই ছিল অসম্পূর্ণ জীবনের গল্প। মানুষের দেহের শেষ আছে। তার চলা-ফেরা ভালোবাসার গল্প থেমে যায় বা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জীবনটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মানুষের জীবনের গল্পও অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এতোগুলো কথা বললাম ঠিকই। কিন্তু কথাগুলো ঘুরেফিরে একই।

যাইহোক। অসম্পূর্ণ জীবন কিংবা অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প নিয়েই রাজ চক্রবর্তীর ছবি ‘বোঝে না সে বোঝে না’।

ছবির শুরুতেই দুটি বাসের সংঘর্ষ দেখা যায়। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া দুটি বাসের দিকে গ্রামের মানুষ দৌড়ে আসছে। আশেপাশের গাছ থেকে পাখি উড়ে যাচ্ছে। গরুগুলোও দৌড়ে পালাচ্ছে। গল্পের শুরুতে এমন দুর্ঘটনা দেখার জন্য নিশ্চয় দর্শক সিনেমা হলে যায়নি। তবুও পরিচালক দেখালেন। সংখ্যায় বাস দুটি। কিন্তু সে বাসের ভেতর যাত্রী কতজন? প্রতিটি যাত্রীরই গল্প থাকে। জীবনের গল্প থাকে। স্বপ্ন থাকে, মন থাকে। অনেক না পাওয়ার পেছনে ছুটে যাওয়ার ঘটনা থাকে। ঠিক তেমন কয়েকটি গল্পই পরিচালক সিনেমাতে ফুটিয়ে তুলেছেন। 

গল্পের ভেতর চারটি চরিত্রের বেড়ে ওঠা আমরা দেখতে পাই। প্রতিটি চরিত্রের আইডেন্টিটি আছে। নুর ইসলাম এবং রিয়ার গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। নুর খুব সাধারণ। একা থাকে। ছোট্ট একটা চাকরি করে। বেতন মাত্র ৬ হাজার টাকা। সাদাসিধা মানুষ। গো-বেচারা টাইপ ছেলে। তবে অন্যদিকে রিয়া যেন নুরের উল্টো। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী, জেদি। নিজের সিদ্ধান্তে অটল। শক্ত সামর্থ নারী।

নুরের বাসা থেকে রিয়ার বাসার ছাদ বেশি দূরে না। নুর প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেই রিয়াকে দেখে। হাত নাড়ে। ছয় মাস ধরে এ কাজ সে করেই যাচ্ছে। নুর ভাবে হয়ত একদিন রিয়া দেখবে। সত্যিই রিয়া দেখে ফেলে। নুর একদিন বাথরুম থেকে বের হয়েই দেখতে পায় তার ঘরে রিয়া বসে আছে। রিয়া সোজাসাপ্টা কথা তখনই বলে দেয়। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও কিছুটা ‘হ্যা’ সুলভ ইঙ্গিত রিয়ার কাছ থেকে পাওয়া যায়।

নুর-রিয়ার গল্পের শুরুতেই গল্পলেখক অসাধারণ একটি কাজ করেন। রিয়া হিন্দু। নুর মুসলিম। ধর্মের ভিত্তিটাকে হাল্কাভাবে নাড়িয়ে দেন গল্পলেখক। ভালোবাসা প্রেম, এসবের কাছে ধর্ম কখনও বড় হয়ে উঠতে পারে না। বড় হয়ে ওঠে ব্যক্তিত্ব। মানুষের হৃদয়ের আসল প্রেমটুকুই মানুষের আসল পরিচয়। রিয়া ধর্মকে এড়িয়ে নুরের ব্যক্তিত্বে মনোযোগ দেয়। সহজ সরল নুরকে শক্ত সামর্থ করার চেষ্টা করে। নিজের সিদ্ধান্ত নুরের উপর চাপিয়ে দেয়। এসব দেখে রিয়ার মনকে শক্ত মনে হতেই পারে। কিন্তু যখন আড়ালে রিয়াকে আমরা হাসতে দেখি তখন বোঝা যায় রিয়ার মন নরম। রিয়াও নুরের ভালোবাসায় ভেলা ভাসিয়ে দিয়েছে।

ওদিকে এক গল্পের সঙ্গে আরেক গল্পও চলতে থাকে। জয়িতা আসে অবহেলার শহর কলকাতায়। অবহেলার শহর বলতে শুধু কলকাতা নয়। পৃথিবীর সব শহরই অবহেলার। এখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। কংক্রিটের শহরে মিথ্যার বেড়াজালে জড়ানো। এখানে দম ফেলা কঠিন। এমন এক অজানা অচেনা শহরে হাজির হয় জয়িতা। শহরে এসেই ঠিকানা সঙ্কটে পড়ে সে। তাকে যে বাসস্ট্যান্ডে নিতে আসার কথা তিনি আসেননি শ্বশুরের অসুস্থতার কারণে। এদিকে ফোনে ঠিকানার আগা মাথা কিছুই জয়িতা বুঝে না। তখনই তার সঙ্গে দেখা হয় একজন মানুষের। ছেলেটির নাম অভিক। প্রথমে চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশ নিতে জয়িতাকে পৌঁছে দিতে নিয়ে যায় অফিসে। সেখান থেকে জয়িতার বোনের বাসায়। দিনভর অভিক-জয়িতা ঘুরে বেড়ায় অবহেলার শহর কলকাতায়। চাকচিক্যের এ শহরে মিথ্যা ভালোবাসা, মিথ্যার উপর চলতে থাকা শহর জয়িতা দেখতে থাকে। মেয়েদের অবাধে চলাফেরা কিছুটা হলেও জয়িতাকে সঙ্কটে ফেলে দেয়। নারী একা মানেই সঙ্কট। আমাদের বাঙালি সমাজে সেটাই হয়ে আসছে। সেখানে জয়িতাও সঙ্কটে পড়ে। যেখান থেকে অভিকের দায়িত্ববোধ তাকে রক্ষা করে। দুজনের মনের ভেতর তখনই ভালোবাসা বাসা বেঁধে ফেলেছে। অবশ্যই দুজনই বোঝেনি। বুঝেছে আরও পরে।

এখানে দুজন নারীর দুধরনের চরিত্র দেখা যায়। কেউ সঙ্কটে পড়ে। কেউ সঙ্কটকেই ভয় পায় না। সঙ্কটে লড়ে যাওয়াই জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নেয়। রিয়া এবং জয়িতা দুজন দুমেরুর মানুষ। তবুও গল্পের ভেতর দুজনের মেলবন্ধন রয়েছে। একদিকে বাঙালি লাজুক নরম মনের নারী। অন্যদিকে বাঙালি সাহসী এবং শক্ত মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা নরম মনের নারী। দুটি নারী চরিত্রই ভালোবাসায় মিশে যায়। তারা দুজনই একাকার হতে চায়। দুজনের মধ্যেই রয়েছে নিজের কাছের মানুষকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এজন্যই জয়িতাকে আমরা দেখতে পাই, সে তার গ্রামের বাড়ি থেকে আবারও কলকাতা রওনা দেয় অভিকের সঙ্গে দেখা করতে। আবার অন্যদিকে অভিকও জয়িতার গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। দুজনের মধ্যেই দুজনকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমরা দেখতে পাই।

আমরা তো রিয়া-নুরের কথাও বলতে পারি। দুজনই বিয়ে করবে বলে একসঙ্গে রওনা দেয় নুরের গ্রামের বাড়িতে। বাসের মধ্যেই বসে নানান গল্প আমরা দেখতে পাই। ঠিক সে সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। দুটি বাসের সংঘর্ষে আমরা হারাই নুরকে। অপরপ্রান্তের বাসে ছিল জয়িতা। আমরা হারাই জয়িতাকেও। অসম্পূর্ণ থেকে যায় ভালোবাসা। অসম্পূর্ণ থেকে যায় কতগুলো মানুষের জীবনের গল্প। জীবন তো শেষমেষ এমনই। 

ছবির প্রতিটি সময় দর্শক মিষ্টি প্রেমের অনুভূতি টের পাবেন। মুচকি মুচকি হাসবেন। সিনেমেটোগ্রাফির কাজে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন শুভঙ্কর ভোর। প্রতিটি সময়কে তিনি অসাধারণভাবে দৃশ্যায়ন করেছেন। বিশেষ করে গানগুলোর স্টোরি টেলিংয়েও ছিল ভালোবাসার ছোঁয়া। এ ছবিতে মিউজিক দিয়েছেন অরিন্দম চ্যাটার্জি এবং ইন্দ্রদ্বিপ দাশগুপ্ত।

২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটিতে অভিনয়ে সবগুলো চরিত্র অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। নুরের চরিত্রে সোহম চক্রবর্তী, রিয়ার চরিত্রে মিমি চক্রবর্তী, অভিক চরিত্রে আবির চ্যাটার্জি এবং জয়িতার চরিত্রে পায়েল সরকার। প্রত্যেকে নিজ নিজ চরিত্রে নিজেদের অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। খানিক সময়ের জন্যও তাদের চরিত্রের বাইরের কেউ মনে হয়নি। মনে হয়েছে এদের জন্মই হয়েছে এ চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের জন্য।

‘বোঝে না সে বোঝে না’ গল্প লিখেছেন তামিল লেখক এম সারাভানান। এটি অবশ্যই তামিল একটি ছবিরই রিমেক। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া তামিল ছবিটির নাম ছিল ‘Engaeyum Eppothum’। সে বছর তামিল প্রদেশ মাতিয়েছে এ ছবিটি। কলকাতায় মুক্তি পাওয়ার পরও এ ছবিটি দু’বাংলায় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পায়।

সব শেষে কলকাতার ছবি নিয়ে প্রশংসা করতেই হয়। দিন দিন কলকাতার ছবির মেকিং, কাস্টিং যথেষ্টভাবে বদলে যাচ্ছে। চোখে পড়ার মতো বদল যাকে বলে। অভিনয়েও দেখা যাচ্ছে নতুনদের জয়জয়কার। বিশেষ করে তাদের গল্পগুলোতে নতুনত্বের ছাপ দেখা যাচ্ছে। সাধারণ গল্প থেকে বের হয়ে এসে অন্যরকম নিজস্ব গল্প বলার ঢং তারা শিখে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    ইয়াম্মি ইয়াম্মি ... 

    - লীলাবতী পরী

    থ্যংকু থ্যংকু

    - নীল সাধু

     শুভেচ্ছা ও স্বাগতম লীলাবতী

    এই নুডলস খেয়ে দেখতে হবে একদিন

    • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

      আমারে দাক দিয়েন , আমি ও খাইতে চাই 

    Load more comments...