আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ
।। এবিএম সোহেল রশিদ।।
প্রেম কুমার,
অবশেষে পর পর দু’টি চিঠি পেলাম। প্রথম চিঠির উত্তর দিইনি। ভেবে ছিলাম তোমর খামখেয়ালীপনাটা আবার বেড়েছে। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে বোধয় তোমার এই চিঠি নামের দু:খ ঢিল মনপুকুরে ছুড়ে দিয়েছ। দ্বিতীয় চিঠি পেয়ে অবাক হয়নি। তুমি জানো এখানে প্রত্যাবর্তন শব্দটি নিষিদ্ধ। চিঠির উত্তর দেয়ার নিয়ম নেই। সম্ভবত না ফেরা দেশ থেকে প্রেরিত এটাই প্রথম চিঠি। ভাবলাম কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুব জরুরী।
আশ্বস্ত হলাম এইভাবে আমিহীন দিব্যি ঘুমাও। পারও বটে। পুরো লেখা জুড়ে একাকীত্বের কাব্যকথা। আর আচার আচরণে মহাশয়। যার কলমে এতো বিরহের সুর তার চোখে ঘুমপরী কী করে খেলা করে।
তোমার ভেজা লেখায় উত্তর নিহিত আছে। দেখ পোষা কবুতরটি সঙ্গীর যন্ত্রণায় কেমন করে ছটফটয়। আর তুমি ব্যথার বালিশ পৈথানে দিয়ে কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাও। এরই নাম ভালবাসা! আচ্ছা এ কেমন তর ভালবাসা।
প্রথম প্রথম নীল আকাশে মাঝে মাঝে তারার মাঝে আমাকে খুঁজতে। দূর থেকে অন্য তারাদের দেখিয়ে বলতাম। দেখ মর্ত্যে আমার জন্য এখনও কেউ রাত জেগে অপেক্ষা করে। ওরা হিংসা করতো কিনা জানি। কিন্তু এখন আমাকে দেখে তারার দল মুচকি মুচকি হাসে। বল এখানেও অবহেলার যন্ত্রণা আমাকে কেমন করে সইতে হয়।
সম্রাট শাহজাহানের মত অবহেলার উপাখ্যান মাটিচাপা দিয়ে তাজমহল বানিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে প্রেমিক পুরুষ সাজার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছ কিনা জানি না।
স্মৃতির চাদরে কি দুষ্টচক্র বাসা বেঁধেছে? যে প্রেমকুমার আমি ছেড়ে এসেছি সে কি খোলস পাল্টায়ে ফেলতে চাইছে? না না এমন কথামালা বিশ্বাস করার সাহস আমার নেই।
পর সমাচার, যে আকুতি তোমার চিঠিতে পেয়েছি তাকেই সত্যি বলে ভাবতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই। তুমিতো জানো, না ফেরার দেশে এই অহংকারই আমার একমাত্র সম্বল। প্রতিদিন অন্তত একবার আকাশে তাকাইয়ো । তারার মাঝে আমাকে খুঁজো। অভিমানের ঝাঁপি আমি কোন দিন স্পর্শ করিনি। নিয়মকে মেনেই আমাকে চলে আসতে হয়েছে। আয়ু নামের বৃক্ষ কেন উপড়ে গেল তা জানেন একমাত্র বিশ্ব রক্ষক।
আলো আঁধারের খেলায় আমি পরাজিত। অন্তত আমার মিনসেটা এই খেলায় জয়ী হোক এই প্রত্যাশায় রইলাম। ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ।
ইতি
না ফেরার দেশ থেকে
পরী