Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কবির য়াহমদ

১০ বছর আগে লিখেছেন

ধুর এভাবে কী কেউ ভাবে কিছু, যত্তসব!

বেশ কিছু দিন ধরে ঠিক সাড়ে ছয়টায় মাথাব্যথা শুরু হয়। সহকর্মীর কাছে জিজ্ঞেস করি- কেন হচ্ছে এমন? তিনি ডাক্তার নন তবু সার্টিফিকেট দিয়ে দেন অবলীলায়, হাই ব্লাডপ্রেসার! চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে টের পাই মাথাটা আরো বেশি করে ঝিম ধরেছে, চোখ দিয়ে নামছে ঘুম, শরীর ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে। ভাবি, যদি চেয়ার থেকে ঠাস করে পড়ে যাই মেঝে তবে নিশ্চয়ই কয়েকজন ধরাধরি করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। তার আগে ব্যস্ত লোকগুলো ভুলে যাবে তাদের প্রাত্যহিক ব্যস্ততা। কেউ নিশ্চয়ই মাথার ওপর ঢালতে থাকবে কয়েক মগ পানি। মগের প্রসঙ্গ আসতেই থেমে যাই- ধুর। এখানে মগ আসবে কোথা থেকে? তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে কলতলায়। আচমকা পানির তীব্র বেগ এসে আমার মনের মধ্যে ঝাঁকুনি খায়। চোখ মেলে দেখি ঈষৎ অপরিস্কার লাগছে সামনের অংশ। চোখ কচলাই ফিরে আসি পৃথিবীতে। পৃথিবীতে ফিরে মনে হয় অনেক হয়েছে এবার বাসা ফেরা দরকার।

রিক্সায় চেপে বসলে সারা রাজ্যের জড়তা আর অসহায়ত্ব এসে ভর করে। আমার বন্ধু-স্বজন-পরিজন কত বার বলে দিলো- এভাবে না, ওভাবে। কারো কথা মনে নিইনি। মুখের কথা হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার নিয়ম। সব কথা মনে নিতে নেই- এমন অতি বিশ্বাসী ভাব নিয়ে কত দিন চলা যায় তার হিসাব করে দেখিনি।

শ' মিটার দুরত্বে এসে চোখ পড়লো একটা পান-সিগ্রেটের দোকানে। পান সিগ্রেটের দোকান দেখে পরিবারের কাছে গোপনীয় অভ্যাস সিগ্রেটের নেশা পেয়ে যায়। খালি পেটে সিগ্রেটের ধুয়া চালান করতে করতে আবারও রিক্সা। চোখ পড়ে রিক্সাওয়ালার রগ শক্ত করে ওঠা পায়ের দিকে। সব সব টাকা-পয়সা এই শক্তলৌহদণ্ড পায়ের কাছেই ঘুরপাক খেতে থাকে, চিন্তার দেয়ালে।

মাথার মধ্যে থাকা কিছুক্ষণ আগেকার চিন্তাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। পথ চলতি পথিকের মুখের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি ঈষৎ অন্ধকারে কারো মুখদর্শন সম্ভব হয়ে ওঠে না। চলতে চলতে ট্রাফিকের সিগন্যালে থমকে যায় শ'কয়েক রিক্সা-গাড়ি, এর মাঝে আমিও।

গত কয়েক বছরের অভ্যাসে দুপুরে কিছু খাইনা। মোটামোটি সচেতন বন্ধুদের সাথে এ নিয়ে খানিকটা তর্ক জিইয়ে রেখেছি কেন খাইনা এ নিয়ে। বন্ধুমহল ভাবে ভুঁড়িসংযম। আমি কিছু না বলে হেসে যাই আড়ালে-আবডালে। কেউ কী জানে সংযমের মানে কৃচ্ছতাসাধন, অর্থের। তর্কের খাতিরে বলে যাই গত মাস থেকে কিছুটা কমেছে ভুঁড়ি। কেউ কেউ হোহো করে হেসে ওঠে বলে- আলবৎ কমেছে। তুমুল বাতাসে বাইরে বেরুতে মানা করে- যদি ওড়ে যাই হাওয়ায় হাওয়ার। প্রশ্ন করি- কেন, কেন? উত্তর আসে- আছে, আছে!

রিক্সাওয়ালা রিক্সা টানে। ভাবি- যদি কন্ঠে ধরে গান তবে তা যেন বিরহী সঙ্গীত হয়। এত এত গান থাকতে বিরহসঙ্গীত কেন- উত্তর পাইনা খুঁজে। আমার চোখগুলো বার বার চলে যায় শক্ত হয়ে ওঠা পেশীর দিকে। রিক্সাওয়ালা জানে না, আমি কেন দেখি তাকে? আমিও হয়তো জানি না কেন দেখছি তাকে।

আমি ভাবনার কুলকিনারা করতে পারিনা। সিগ্রেট মুখে ভাবনার সময়ে মাঝে ভাবনার ছন্দ-সুর-তাল-লয় সব হারিয়ে ফেলি। দুই-তৃতীয়াংশ টানা পর তিতা হয়ে ওঠে সিগ্রেটটা। হাতে রেখে দিই আর কিছুক্ষণ। ভাবি- আর কতক টানের পর ফেলে দেব। হাতে থেকে আর কিছু অংশ পুড়ে, ফেলে দিই ভরা রাস্তায়। ভাবি ভদ্রলোকেরা পুরো সিগ্রেট টানবে কেন? অদূরে রাস্তার মাঝে আছাড় খায় জলন্ত সিগ্রেট। ওখানে নিশ্চয়ই ঠাণ্ডায় হিম হয়ে যাবে তা। পেছনে তাকিয়ে দেখি, পেছনে নেই কিছু শুধু শধু সারি সারি কিংবা অগোছালো রিক্সা, গাড়ি এবং মানুষ।

রিক্সা ঢুকে পড়ে পাড়ার গলিতে। গলির মুখে কয়েকটা ছেলে ডিম্বাকৃতি হয়ে সিগ্রেট টানে। পাশ দিয়ে একটা মেয়ে চলে যায়। কয়েকটা ছেলে সে দিকে মুখ ঘোরায়। কিছু বলে না! আমিও দেখি মেয়েকে, আমিও কিছু বলিনা। শুধু ভাবি- হায়, মেয়েটা আমার বউ থেকে কত সুন্দরী! মনের মধ্যে একটা গোপন আকুতি মাথাচাড়া দেয়, ইস আমার বউ এত সুন্দর নয় কেন? একবারও ভাবিনা প্রতিদিন অসংখ্যবার মিথ্যা বলি বউকে- তুমিই সুন্দরী বলে! মেয়েটি চলে যায় চোখের আড়ালে। যে কটা ছেলে আড়চোখে কিংবা সামান্য ঘুরে দেখেছিল তাকে তাদের গালি দিই মনে মনে- বদমাশ কোথাকার! ওদের জন্যে মেয়ে ছেলেরা কী ঘর থেকে বেরুবে না কখনো? আমি ভাবি না আমার কথা অথচ খানিক আগেও কত কী চিন্তা করছিলাম সে মেয়েকে নিয়ে!

রিক্সা চলে আসে বাসার কাছে। ভাড়া মিটিয়ে পা ফেলি রাস্তায়। পেছন থেকে ঘরের পাশের সিগ্রেট দোকানী শাহাদাত ডেকে বলে- কবির ভাই, সিগ্রেট নেবেন না? বিরক্তি নিয়ে পেছন তাকাই। পকেটে পুরো প্যাকেট সিগ্রেট রেখে সাফ সাফ জানিয়ে দিই- ছেড়ে দিয়েছি রে!

Likes Comments
০ Share

Comments (1)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    বা রাব্বানী দা

    কেমন আছেন

    মনে হয় একটু ব্যস্ত

    কবিতা বেশ লাগল----------

    • - আহমেদ রব্বানী

      আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি বাউল ভাই।বেশ ব্যস্ত আছি এই মাসটা।দোয়া রাখবেন।

    - চারু মান্নান

    এমন বসন্তে ভাল থাকুন কবি,,,,,,,,

    • - আহমেদ রব্বানী

      ধন্যবাদ প্রিয়।আপনিও ভাল থাকবেন।

    - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    ভাই রব্বানী কবিতার টাইপ এতো বড় হলো কি করে?

    • - আহমেদ রব্বানী

      জানিনা ভাই।আমি ১৬ ফন্টে লিখি।হয়ত সেজন্যে এমন বড় দেখাচ্ছে কি না!

    Load more comments...